somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোর মাঝে আলো খুঁজি- কিন্তু অন্ধকার কোথাও নেই...

২৫ শে জুন, ২০১১ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আপনি বলুন তো ও drunken কিনা"?
খানিকটা তথমত খেলাম। মুঠোফোনের ও প্রান্তে একজন নারী আমাকে এরকম প্রশ্ন করবে আমি ভেবে উঠতে পারিনি। আসলে ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যাচ্ছিল যে আমি নিজেও তালগোল পাকিয়ে ফেলছিলাম। কি বলতে গিয়ে কি বলে বসবো আর তাতে ভবিতব্য কি হবে এটা হিসেব করে নিতে পারিনা। বিশেষ করে কোন জরুরী মুহুর্তে পড়ে গেলে আর যাই হোক মাথার মধ্যে কোন বুদ্ধি থাকেনা।
যাই হোক একটু সামলে নিলাম। বললাম- আপনি আসলে পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। এবার খেলাম ধমক-'আমি আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি ও drunken কিনা"? -
আমি এবার কোন ভনিতা করে বললাম- "হ্যাঁ। এখন যা ঘটেছে তার জন্য অন্তত দুই হাজার টাকা লাগবে। এই রাতে আপনি সেটা ম্যানেজ করে এখানে চলে আসতে পারবেন কিনা অথবা কি করবেন তা জানান"।

বললেন " বাসায় এখন নগদ টাকা নেই। এটিএম থেকে তুলে দিতে হবে। ততক্ষন কি থাকতে পারবেন? আচ্ছা ওকে দিন। আচ্ছা শুনুন- -- ও ওখানে পড়ে থাক। আপনার কিচ্ছু করতে হবেনা। ফোনটা ওকে দিন।"
ফোনটা মালিকের হাতে দিয়ে দিলাম। বারবার একটাই কাকুতি মিনতি- "দিপা ভাই্কে একটু বলো না এখন কি করবো? আমার কাছে তো নগদ টাকা নেই। ......দিপা একটু বোঝার চেষ্টা করো"।----

বেশ রাত হয়ে গেল কাজ শেষ করে বের হতে। এক মাইক্রোবাসে চড়ে আসছিলাম পাঁচ জন। রাত বাজে প্রায় সাড়ে এগারোটা। সুপ‌্রীম কোর্টের গেট পার হয়েছি। আমাদের গাড়িটা একটা কালো রঙের প্রাইভেট কারকে পাশ কেটে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এমনিতেই রাস্তা ফাঁকা। কিন্তু খুব অস্বাভাবিক রকম আস্তে চলছিল প্রাইভেট কারটি। আবার রাস্তার মধ্যে একবার এপাশে আরেকবার ওপাশে এভাবে আগাচ্ছিল ।ড্রাইভার বলল 'ভাই ঘটনাটা ভালো মনে হচ্ছে না। শালা মনে হয় মাল খাইছে"।

কারটিকে পাশ কাটাবার সময় ঘটলো ঘটনাটা। রাস্তার বাঁ দিক ধরে যাচ্ছিল একটি রিকশা। এমন সময় আমাদের গাড়িটি ওভারটেক করবে। কিন্তু হঠাত করে প্রাইভেটকারের ড্রাইভার বাঁ দিকে চাপিয়ে দিল। আল্লাহর মেহেরবানী আমাদের গাড়ির গতি যথেষ্ট কম ছিল। তারপরও বাঁদিকে চাপতে গিয়ে রিকশাটাকে এমনভাবে চাপাতে লাগল যেন রিকশা আইল্যান্ডের সাথে পিশে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। আমাদের ড্রাইভার অনেক কষ্টে রিকশা এবং আমাদের সবাইকে এরকম আল্লাহর মেহেরবানীতে সেভ করলো।

গাড়ী থামানোতে রিকশা আরোহী দু'জন রীতিমত মারমুখী হয়ে তেড়ে আসলো। সাথে শ্রাব্য অশ্রাব্য গালিগালাজ ফ্রি। তাদেরকে বোঝানোই যাচ্ছেনা যে দোষটা আসলে ঐ প্রাইভেটকারের। আমাদের ড্রাইভারকে এবার দিলাম একটা ধমক। বললাম ঐ প্রাইভেটকারকে ধাওয়া দিতে। রিকশা আরোহী দু'জনের আসলেই কিছু হয়নি। তাই দে ধাও্য়া।

খুব আশ্চর্য হলাম এইটা দেখে যে ঐ প্রাইভেট কারটা আগের মতই উদাসীন ভাবে চলছে। এমনকি আমাদের গাড়িটা যখন জোরে ওর দিকে ছুটছে তখনও তার কোন বিকার নেই। আমাদের গাড়িটা সামনে আসলো। এসেই বাঁদিকে মোড়। বেশ খানিকটা সামনে গিয়ে কড়া ব্রেক। কিন্তু ঐ প্রাইভেট কারটা খুব আশ্চর্যজনক ভাবে আমাদের গাড়িটার পেছনে মেরে দিলো। ব্যস! সাথে সাথে ব্যক লাইট চুরচুর।

এবার সবাই ধুমধাম নামলাম গাড়ি থেকে। কিন্তু প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে সামনে আগাবো কিনা সেটা নিয়ে একটু ঘাবড়ে গেলাম। অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আমাদের ড্রাইভারও নেমে আসলো। সবাই এক সাথে যেয়ে পড়লাম প্রাইভেট কারের উপর। শুরু হলো চাবি বের করা নিয়ে ধস্তাধস্তি। গালাগালি- শালা...সহ যে যা জানে কিছুটা জোর গলায় প্র্যাকটিস করে নিল।

একটু পরেই খেয়াল করলাম গাড়ির ভেতরে মাত্র একজন আরোহী। আর কেউ নেই। মধ্যবয়সী লোকটা এবার হাতজোড় করে অনুনয় করা শুরু করলো। কিন্তু আমাদের ড্রাইভার ছাড়বে না। সে গাড়ির চাবি নেবে পুলিশকে ডাকবে - নানান হাঁকডাক। সময় বয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাশে টহলরত একজন পুলিশ চলে আসলো। এসেই দেখলো ভালো চান্স। যার দোষ তাকে দেখলে এমনিতেই টাকা ওয়ালা মনে হচ্ছে । আবার সেই্ সাথে মদের গন্ধ বের হচ্ছে মুখ থেকে। এমন মওকা একজন সাধারন পুলিশ সদস্য কতবারই বা পায়?

এতক্ষন অনেকটা চুপ ছিলাম। কিন্তু পুলিশের কাহিনী দেখে আর লোকটার অনুনয় দেখে কেমন জানি লাগলো। এবার সামনে গিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম ' এখন কি করবেন?" কোন উত্তর নেই। আমাদের ড্রাইভারকে বললাম " কি করতে চাও? " সে এবার বুঝলো এতক্ষন ধরে খালি চিল্লাপাল্লা করছে। আবার বললাম তোমার ক্ষতির পরিমান কত হবে। উত্তর দিল দুই হাজার টাকার মত । ব্যাক লাইট কিনতে হবে।

এবার লোকটাকে পরিস্থিতি বললাম। " যদি আপনি এখন এই ড্রাইভারকে ২০০০ টাকা দেন ও চলে যাবে । আপনিও ছাড়া পাবেন। আর যদি পুলিশে যান তাহলে এই টাকাও যাবে। সাথে থানার খরচা, পুলিশ বাবাজীদের চা নাস্তার টাকা দিতে আরো ২০-৫০ হাজার টাকা যাবে। আর আপনাকে দেখলে যা মনে হয় তাতে আপনাকে খুব কমে ছাড়বে না। সাথে মান সম্মান সব যাবে"।
কিন্তু পুলিশ ব্যাটা আমার ওপর চটে গেল। বললো 'বিষয়টা তো এইভাবে হয়না।" এবার পুলিশ মশায়কে বললাম' " দেখেন আমাদের সমস্যা আমরা মিটায়ে নিচ্ছি। আপনি সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ। " আমার এ্যপ্রোচ দেখে বেটা আর কিছু না বলে বললো ' ঠিক আছে আপনাদের সমস্যা আপনারা মিটাইয়ে নেন। আর পুলিশ তো জনগনের বন্ধু"।
এবার সত্যিই মজা পেলাম। আর পুলিশ চলে যাওয়াতে লোকটা্ও একটু সাহস পেল। আমার হাতে ধরিয়ে দিল একটা বিজনেস কার্ড। নাম আর পদবীটা বিশেষ করে নামকরা ঐ পাঁচতারকা হোটেলের জ্বলজ্বলে ব্র্যান্ড দেখে পুলিশ ব্যাটার মওকা লসের কথা মাথার মধ্যে আরো প্রকট হয়ে উঠলো।

এবার কড়াভাবে লোকটাকে ধরলাম। " রাত অনেক হয়েছে। হয় আপনি এখন ক্ষতিপুরণ দেন নয়তো আপনার গাড়ির কাগজপত্র ওকে দেন। নয়তো সবার জন্যই ঝামেলা হবে। এরপর আবার পুলিশ আসলে বিসয়টি আরো জটিল হবে।"
লোকটা মানি ব্যাগ বের করলো। কয়েকটা কার্ড আর শ'পাঁচেক টাকা। হবেনা । এবার দিতে চাইলো সেলফোন আর রিস্টওয়াচ। আমাদের ড্রাইভার বলল "না ঐ গুলো নেয়া যাবেনা ।এমনিতেই বড় লোক মনে হয়। পরে যদি ছিনতাই মামলায় দেয়। গাড়ীর কাগজপত্র দিতে বলেন। কোম্পানির গাড়ি। আমি পরে অফিসকে দেখাতে পারবো"।

উত্তম যুক্তি । লোকটা এবার ফোন করলো বাসায়। খুব সম্ভবত ওপাশ থেকে খুব আশা ব্যাঞ্জক উত্তর পেল না। এবার আমাকেই ফোনটা ধরিয়ে দিল।
" এক্সিডেন্ট টা একদমই তেমন কিছু না। সবাই সেফ। এখন আপনি কি ক্ষতি পুরণের বিষয়টা ম্যানেজ করতে পারবেন?
" আচ্ছা আপনি ওকেই ফোনটা দিন। বাসায় এখন টাকা নেই।"
তারপর। মুঠোফোন দিয়ে দিলাম। লোকটা এবার মিনতির সবটুকু একসাথে করো বলল ' দিপা প্লিজ---"
আবার মুঠোফনো এ হাতে ও হাতে।
শেষমেশ ব্লু বুক বের হলো। সাথে একজন নারীর ছবি। ছবিটা যত্ন করে সরিয়ে নিল। আর আমাদের ড্রাইভারকে দিল কিছু কাগজ আর এটা সেটা। নিয়ন আলোর নিচে ড্রাইভার দেখে নিল সব ঠিক আছে। লোকটাকে দিল তার অফিসের ঠিকানা, যোগাযোগ, ফোন নাম্বার....।
লোকটা আবার ছবিটার দিকে একবার দেখলো। আমাদের সবাই গাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছে। কেন জানি বললাম - Have a safe drive!
খুব করুণ কন্ঠে উত্তর- So many thanks for the help. I will remember you. I am indebted to you so much for saving me from so many potential problems.
Wish me a happy life!

একটা উতকট গন্ধ, একজোড়া প্রার্থনার চোখ, একজন নারীর ক্ষোভ- যেন পথেই পড়ে থাকে, আর একজনের সযতনে রাখা একটা ছবির মত সুন্দর মানুষের ছবি আলতো করে রাখা- এবার গাড়িতে উঠে বসলাম।

মধ্যরাতের রাজপথের নিয়ন আলোয় অচেনা জীবন। উত্তর আধুনিককালের সময় যেন বলছিল " - উইশ মি এ্যা হ্যাপি লাইফ"




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×