ফিস ফিস করে একটানা শব্দ হচ্ছে। একনাগাড়ে । আর শুনতে ভালো লাগছে না। মেজাজটাও বিগড়ে যাচ্ছে। ধ্যাত! এক জিনিস কতক্ষন ভালো লাগে? এখন এমনিতেই অনেক রাত। ঘুম ধরেছে চোখে। তার ওপর আবার টানা এই শব্দ। কিটকিটির মত লাগছে। আসলে কিটকিটি কি আমি নিজেও জানিনা। মাথার মধ্যে এমন একটা শব্দ এসেছে আর অন্য কোন শব্দ এর জন্য আপাতত মনে পড়ছে না তাই এটাই ব্যবহার করলাম।
নেটবুকটা বন্ধ করতে হবে। ফেসবুক বারবার খুলছি আর বন্ধ করছি। কিন্ত কোন কাজই হচ্ছেনা। আবার বন্ধ করাও হচ্ছে না। শুধু বসে আছি আর বসে আছি। এমন ভাব যেন মহা ব্যস্ত। আসলে কাজ নেই তাই ভাব নিচ্ছি। এর মাঝখানে আবার এই বিটকেলে শব্দ। কোথা থেকে আসছে তা ঠিক বুঝতে পারছি না।
কাল সারারাত ঘুমুতে পারিনি। লিবিয়ার খবর পড়ে বারবার আতকে উঠেছি। মনে হলো কেউ যেন এই মাত্র আমার ঘাড়ের উপর বোমা মেরেছে। আসলে ঘুম আসেনি কারণ বসে ছিলাম। আসলে ঝিমুচ্ছিলাম।
সকালে যখন ঘুমোলাম তার খানিকক্ষন পর দেখি তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে প্রথম অভ্যাস মানিব্যাগটা ঠিক জায়ড়া মত আছে কিনা দেখা । আসলে নিজের পরিচয়পত্রটা চেক করে নেয়া। দেখলাম জায়ড়া মত আছে। এত জোরে শব্দ হচ্ছিল তখন যে মানি ব্যাগে আদৌ কোনো রসদ আছে কিনা তা খেয়াল করিনি। পরিচয়পত্রটা দেখার কারণ আর কিছু নয়- যদি মরে যাই পরিচিতজন যেন খবর পায় আমি মরে গেছি।
কিন্তু কাকে জানাবো আমি মরে গেছি? আসলে এখানে সবাই তো যুদ্ধের মধ্যে। মানুষ পালাচ্ছে জীবন নিয়ে। ট্যাংকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আর দেরি নয়। যেভাবে পারা যায় সেভাবে উঠেই দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে দৌঁড়। যদি আর কিছুটা সময় বেঁচে থাকা যায়! জানি মারা যাবো তারপর সব শেষ।
জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পালালাম। পরিবারের অন্য কারোর খবর জানিনা। একবার মনে হলো মায়ের কথা । জানিনা কোথায় আছেন। প্রচন্ড কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। পানি খাওয়ায় লেগেছে। মার কথা মনে হলো বলে একবারের জন্য শান্তি পেলাম। যেখানে যাও আল্লাহ যেন তোমার মঙ্গল করেন। তার দোয়ার কথাটা মনে পড়ে কিছুটা সাহস পেলাম। এর মধ্যে দৌঁড়ে অনেক দুর চলে এসেছি। দৌঁড়াচ্ছি। পিছনে তাকালে নির্ঘাত মারা পড়বো।
-পুরোটাই ছিল স্বপ্ন। তাড়াতাড়ি উঠে নেটবুক খুলে নেট কানেক্ট করলাম। ফেসবুকে তোমার ছবিটা!