আমার বাঁশি শেখার গল্প -১
আমার বাঁশি শেখার গল্প - ২
সপ্তাহে একবার কিংবা দুইসপ্তাহে একবার হয়ত বাঁশিতে ফুঁ দিতাম। ইতোমধ্যে লাবু ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম কীভাবে সারেগামাপাধানিসা বাজাতে হয়। তার জন্য আরো কয়েকটি বাঁশি কিনতে হয়েছে। গল্প করতেন - বাংলাদেশের বিখ্যাত বাঁশিশিল্পীরা তাঁরই বানানো বাঁশি বাজান। এমনকি দেশের বাইরেও তিনি তাঁর বাঁশি রপ্তানী করেন। সঙ্গীত এর প্রতি এরকম ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারনে বেশ কিছু বই কিনেছিলাম। সেখান থেকে তাত্বিক অনেক বিষয় জানলাম। সারেগামাপাধানির্সা কে যে স র গ ম প ধ ন র্স দিয়ে বুঝানো হয় সেটা শিখলাম। কন্ঠসঙ্গীত কিংবা যন্ত্রসঙ্গীতে ব্যবহৃত মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন পার্থক্য যে নেই সেটা উপলব্ধি করলাম। বইয়ে বিভিন্ন গানের স্বরলিপি দেখতাম। কিন্তু কোমল স্বরগুলো শুনতে কেমন কিংবা বাঁশিতে কীভাবে বাজাব জানতাম না। তাল এর বিষয়টিও বুঝতে পারতাম না। ভাবলাম ভাল কোন ওস্তাদের কাছে বাঁশি শিখতে হবে। আমার স্ত্রীও বললেন শিখতে চাইলে ভাল কোন ওস্তাদের কাছে স্ট্রাকচার্ড ওয়েতেই শিখা উচিত। কিন্তু কোথায় পাব ভাল ওস্তাদ? ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন জায়গায় খুজতে লাগলাম বাংলাদেশের বিখ্যাত বাঁশিশিল্পীদের। যাদের সিডি ছিল আমার কাছে, তালিকা ধরে তাদের খুঁজতে লাগলাম। বারী সিদ্দিকী, গাজী আব্দুল হাকিম, ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান এদের কোন একজনকে। একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, সঙ্গীত বা নৃত্যশিল্পে কারো কারো নামের পাশে পন্ডিত, কারো নামের পাশে ওস্তাদ উপাধি থাকে। যেমন পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খাঁ, ওস্তাদ জাকির হোসেন ইত্যাদি। বাংলাদেশের ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম চিটাগং থাকেন। বাংলাদেশের আর কোন বাঁশিশিল্পীর নামের পাশে ওস্তাদ নেই। ভাবলাম উনিই হচ্ছেন সবচেয়ে বড় বাঁশিশিল্পী। টিভিতে উনাকে আমি কখনো দেখিনি। মনিরুজ্জামান সাহেব কে মাঝে মাঝে বিভিন্ন গানের সাথে বাজাতে দেখি। কিন্তু সলো কোন প্রোগ্রামে দেখিনি। গাজী আব্দুল হাকিম এর কোন খবরই পাইনা। লালনগীতির ভক্ত ছিলাম, সেই সুবাদে ফরিদা পারভীনএর সিডির অনেক কালেকশন ছিল। প্রতিটি সিডিতেই দেখতাম বাঁশি বাজিয়েছেন গাজী আব্দুল হাকিম। কোত্থেকে যেন বারী সিদ্দিকীর নাম্বার পেয়ে গেলাম। ফোন করলাম উনাকে। বললেন মাসে দুহাজার টাকা করে নিবেন, সপ্তাহে একদিন করে শেখাবেন। পরের শুক্রবার উনার বাসা মোহাম্মদপুরে যেতে বললেন । আমার যে কি আনন্দ! সেদিন রাতে আমার ঘুমই হলনা। দিনগুলো যেন অতিরিক্তরকম দীর্ঘ হচ্ছিল। কবে আসবে শুক্রবার। বারী সিদ্দিকীর সব কয়টি বাঁশির সিডি আমার কালেকশনে ছিল। আমি উনার গানের খুবই ভক্ত। হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনের পূবালী বাতাসে বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি এই গান গেয়ে গেয়ে কত সময় কাটিয়েছি! উনার সব কয়টি গানের সিডিও আছে আমার কালেকশনে। পড়াশুনা করে বিভিন্ন ফোরামে জেনেছি, উনি মূলত একজন বাঁশি শিল্পী। পরিস্থিতির কারনে তিনি এখন কন্ঠশিল্পী। বাংলাদেশী শিল্পীদের মধ্যে উনার বাজানোতে এবং গায়কীতে আলাদা একটা ঢং আছে। মনে হয় উনি যেন পুরা আবেগটাই ঢেলে দিচ্ছেন উনার পরিবেশনায়।