somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এখন ধর্ষিতা.... দ্বৈত আত্মা

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডায়রিতে এ পর্যন্ত লেখার পর ফোন আসলো সুধার ফোনে, কড়কড়ে আওয়াজ দিলো মোবাইলটা। সে কল ধরতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।শান্ত গলায় উত্তর দিল সে, ওপাশ থেকে একটা পুরুষকন্ঠে উত্তর আসলো, মৃদু হাসির সাথে!
সুধাকে ফোন দেবার আগে ডায়রী লেখছিল মৌন,
মৌনের ডায়রি থেকে,
সুধা, নামটা শুনলেও অমৃতা বলে মনে হয়। নিটোল মেয়ে, স্থির মনের অধিকারী বলে মনে হয়েছে ওকে। ও, হাহাহাহা। হয়ত একদিন নয়, চিরদিনের জন্য মেয়েটা আমার ও হয়ে উঠবে। তখন কি হবে? খুব করে বকবে মেয়েটা আমাকে, নাকি অনেক ভালবাসবে? প্রেম করবে আমার সাথে? ধুর, কি ফাল্তুতামি করছি। এত মেয়েদের মত ন্যাকা কথা লেখে অযথা আমার গোল্ডেন ডায়রির মুড খারাপ করার কি দরকার, তাও একটা মেয়েকে উপলক্ষ্য করে? ডিসপ্লেস দ্যাট, একটা কবিতা হয়ে যাক, লেট'স চিয়ার্স ডায়রি,

সুধা সুধা সুধা,
আর ইউ লাইক রাধা?
আমি তখন কৃষ্ণ বনে, বাইবো
যখন তুমি-আমি নৌকা শিপে চড়বো?

ধ্যাত! কি আজগুবি কবিতা লেখছি! আর ঐ মেয়েটাকেই কেন বারবার লেখছি, আরেহ সমস্যা! আমি তো ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি না!
অন্য কিছু লেখি ডায়রি।

লেট'স বি এ হেরেসি
লেট'স মেক এ ম্যাস,
লেট'স ডাই টুগেদার,
এন্ড ডোন্ট ইউ গেস.
দিস ইস রিয়েলি স্টুপিড!

এ পর্যায়ে মৌন ডায়েরি বিছানায় ফেলে রেখে বারান্দায় গেলো। সুষম সফল চাঁদ এখন ইলেক্ট্রিকিউটেড হয়ে বেশ আলো ঝড়াচ্ছে। আজ মন অশান্ত, কে কাকে বলিদান দিবে কে জানে। সে আজকে একটা রেস্টুটেন্টে দেখেছে সুধা কে। ওর নামটা মেয়েটার সাথে মুখোমুখি হয়ে বসা ছেলেটার কথা লক্ষ্য করে জানতে পেরেছে। নাম কি যেনো ছেলেটার, মনে করতে চাইলো মৌন। পারলো না। তারপর সে ভাবলো, কি এমন দরকার ঐ ছেলেটার নাম জেনে, ওকে তো দেখছিলো না সে। সে লক্ষ্য করছিল সুধাকে। সুধা, ভাবলো মৌন। ভাবতে ভাবতে সিগারেট ধরানোর জন্য পকেটে হাত ঢুকালো। হঠাত মনে পড়ল, আজ বিকেলে সুধা ওর দিকে একবার চেয়েছিল, তাও এই সিগারেটের কল্যানে। থ্যাংক্যু, মাই ডিয়ার সিগারেট, বেশ রসাত্মক ভঙ্গিমা নিয়ে বলল মৌন। খুব ভালো লেগেছিলো নিজেকে নিজের কাছে মৌনের তখন, যদিও সুধার চোখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখেছিল সে। নাহ, গায়ে পড়ে সুধার দিকে সিগারেট এর ধোয়া ছাড়ে নি, ধোয়া নিজেই সুধার কাছে ছুটে গেছে। ধুম্রজালে একবার আবদ্ধ হয়েছিল তখন সুধা। নস্টালজিয়া, সব নস্টালজিয়া, ভাবতে লাগলো মৌন। নাম কারো কারো এতো কাছাকাছি হয়, যেমন সুধার। কেমনে যেনো মাতাল অনুভুতি হয় মেয়েটাকে দেখলে, আর মেয়েটার নাম ও সুধা! অমৃতা সে, সুধা! ভাবলো কিছুক্ষন মৌন।

মেয়েটার ফোনের নাম্বার পেতে একটুও সমস্যা হয়নি, এ শহরে ফোন নাম্বার পাওয়া দুধ-ভাত খাওয়ার সমান। দুধ ভাতের কথা মনে পড়তেই মনে পড়ে গেল মাকে মৌনের। মা। আম্মু ডাকতো মৌন। আম্মুর শেষ স্মৃতিটা খুব করুন ছিল মৌনের জন্য। মৌন খুব ছোটবেলায় মা হারিয়েছে, তবে মৌনের ভাবনা অন্যরকম। বাবা মাকে ছেড়ে দিয়েছিল, তারপর বাবা বংশরক্ষা না কি করে যে তারা, তা করতে মৌনকে রেখে দিল। এরপর মৌনকে দুধ-ভাত কেউ খাইয়ে দিত না। বাবা তো ওকে একটা বাড়িতে চাকরদের হাতে রেখে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে লাগলো। আর মৌন একা যেটাকে ইংরেজীতে বলেনা, স্পয়েলড, সেটা হতে লাগলো! টাকা উড়াতো না মৌন, ছুড়ে ফেলতো চারপাশে, আবর্জনার মত! ভাবলো মৌন হঠাত করেই, বাবা কে? মৌন হাসলো প্রশ্নটা করে। বাবা নামের মানুষটার অস্তিত্ব নেই তার জীবনে, শুধু নাম হয়ে রয়ে গেলেন।

এরপর ফোন দিল সুধার ফোনে মৌন। মৌন হাসলো কথা বলতে বলতে! ওপাশ থেকে হয়ত সুধার ভ্রু কুচকে গেল মনে হল মৌনের।

তা তোমার নাম কে রেখেছিল? মৌন আর কোন ভূমিকা না করেই প্রশ্ন করল সুধাকে।
আপনি কে বলছেন? সুধা অপ্রস্তুত হয়ে বলল।
আমি কি তোমাকে তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি? মৌন বলল।
না। সুধা কিছুটা বিভ্রান্ত বোধ করল।
তাহলে আমার নাম জানতে চাইছ কেন? মৌন হাসলো আরেকবার।
আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন? সুধা রেগে গেল।
আরেহ, সুধা নাম যার, সেই মেয়ের রাগ করতে হয় না, কেননা তারা কেবল তরঙ্গতার প্রতীকি অর্থে থাকবে। মৌন শান্ত কন্ঠে বলল।
আপনি অযথা আমার সময় নষ্ট করছেন, বলেই সুধা একটু চিন্তিত হল। বিভোর ফোন করেছে নাকি ভাবতে লাগলো। বিভোর তার নাম্বার আজ নিয়েছে, কিন্তু নিজেরটা দেয়নি। তাহলে বিভোর ফোন করেছে? নাহলে তার নাম জানলো কিভাবে লোকটা?
নাহ, আপনি আমার করাচ্ছেন। মৌন বলল।
কিভাবে? সুধা উৎসাহী হয়ে বলল, এবং সে ধরে নিল সে বিভোরের সাথে কথা বলছে।
বাহ, এইত কথা। এইযে দেখ আমি ডায়রি লিখতে বসেছিলাম, অথচ তোমার নামটা বারবার লেখে ফেলছি। সাথে ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে।
কেন? অবাক হয়ে উত্তর দিল সুধা।
তখন আমি কোন শব্দ না পারলে বারবার লিখে শিখে নিতাম, এটা বিশেষত বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে বেশি হত। বাংলা কম পারতাম তো। অট্টহাসি হাসলো মৌন।
আমার নাম মুখস্ত করে আপনার লাভ? সুধার মনে প্রশ্ন হতে লাগল লোকটা বিভোর হলে, সে এত রাতে তার সাঠে ঠাট্টা করছে কেন।
আমি তোমাকে ভুলতে পারছি না সুধা। সরাসরি বলে ফেলল মৌন।
আপনি কে? এবার সুধার মনে হল তার ধারনা ভুল, এটা বিভোর হতেই পারে না। বিভোর অনেক ভদ্র একটা ছেলে, ও এভাবে নিজের মনের কথা এক্সপোস
করত না সুধার কাছে।
আবার একি প্রশ্ন? আমি মানুষ, তা বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই। আর পুরুষ যোগ করতে পারো, যা মনে করি গলার স্বরে বুঝে নিয়েছ। মৌন কিছুটা বোঝার চেষ্টা করল সুধার গতি।
আমি কি আপনাকে চিনি? সুধার গলায় অবিশ্বাস।
আমি তোমাকে চিনি, তুমিও আমাকে দেখেছ, আজই, আর আপনি আপনি ডেকো না, আপন লাগে না মোটেও! মৌন উত্তর দিল।
তুমি কি বিভোর? সুধা প্রশ্ন করল।
একপলক ভেবে নিল মৌন। এই বিভোরটা আবার আসলো কোথা থেকে, আর তখনি মনে পড়ল সেই ছেলেটোর কথা, যার সাথে সে সুধাকে কে দেখেছিল। মৌনের মাথায় বেশ কুবুদ্ধি আসলো। বিভোর সেজে মৌন সুধার সাথে কথা বলবে ঠিক করল। যদিও সেটা বেশিদিন চলবে না, তাতে কি। মেয়েটাকে অসম্ভব রকম ভালো লেগেছে মৌনের। এ সুযোগ ছাড়া চলবে না।
কি হল, আমার উত্তরটা? সুধা ভাবতে ভাবতে বলল।
হ্যা, বাবা মায়ের দেয়া নাম বিভোর। কিন্তু আমাকে মৌন বলে ডাকলে খুশি হব। মৌন চালাকি করল ছোট্ট একটা, এতে করে সে মুখ ফসকে নিজের নাম বলে দিলেও সুধা সন্দেহ করতে পারবেনা।
আমার নামতো জানাই আছে, সুধা। বলেই সুধা লক্ষ্য করল তার পেছনে একটা ছায়া দাড়িয়ে।
আচ্ছা, এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, আজকে রাখি। সুধা উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা না করেই তখনি ফোন রেখে দিল। সে মনে মনে অনেক বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিল, যার জন্য তার মনে কোন কথা জমছিল না, শুধুই স্বপ্ন আর স্বপ্ন! সেসব স্বপ্নে সে বিভোর হতে লাগলো। তার মা তাকে প্রশ্ন করল কার সাথে কথা বলছিল। সুধা বিভোরের নাম নিল। মিসেস আমিনা তখন জিজ্ঞেস করতে লাগলো বিভোরের সম্পর্কে। সুধা মায়ের দিকে না তাকিয়ে বলল, আমি হয়ত ওকে ঠিক চিনতে পারি নি আজকে। এখন ও অন্যরকমভাবে কথা বলল। কিন্তু আমার খারাপ লাগে নি। খুব ভালো মনে হল ওকে। নির্দিধায় বলে ফেলল মাকে সুধা সব। মায়ের কাছে সে কখন কিছু লুকায় না। আমিনা মেয়ের কপালে আদর করল।

অপর প্রান্তে হতচকিত হয়ে ফোনটা ধরে রইল মৌন। বুঝতে পারলো না, মেয়েটা কি তার কথা বিশ্বাস করলো, নাকি করল না, মনের মধ্যে চিন্তা ঘুরতে লাগলো মৌনের। একটা টেক্সট করবে সে? প্রশ্ন করল, আর দোটানায় পড়ে শেষ পর্যন্ত সে একটা টেক্সট করতে লাগলো সুধা কে। মৌনের মনে হল সুধা ওর কথা বিশ্বাস করেছিল।
তখন টাইপ করল মৌন, আই থিংক আই এম ইন লাভ উইথ ইউ সুধা ডিয়ার।
______________________________(চলবে)

প্রথম পর্ব: Click This Link
ছবি আমার আঁকা ও তোলা!
ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×