"যে রাজ্যে কন্যাদের মৃত্যুদন্ড দিত, সেখানে রাজকন্যার শাসন শুরু হল কিভাবে?" রিন্সের মুখে অবিশ্বাস। "হ্যা, কিন্তু আসলে সেটাই ছিল মুল মন্ত্র! তারচেয়ে বড় কথা, সবাই রাজার শেষ বয়সে তাকে ঘৃনা করতে লাগল এই জন্য। তখন রাজকন্যা ইরা রাজ্যের চারদিকে ঘুরে ঘুরে সবার সাথেই সখ্যতা গড়ে তুলতে লাগল। কুমারী ইরাকে নিয়ে অনেক তরুনদের স্বপ্নদেখাদেখি চলল। তারা রাজকন্যার ভবিষ্যত দেখতে পেল যেনো! রাজার শাস্তি দেবার জন্য বাধ্য করল তরুনরা, এতে তাদের কারো ভবিষ্যত গড়তে পারবে ভেবে। তারপর, সে শাস্তি ছিল রাজকন্যাকে রাজ্য শাসনভার দিয়ে রাজা বিশ্রাম করবে। রাজা অমন্যন্স নিজেও এ নিয়ে ভাবছিল, কেননা রাজকন্যা ইরা'র কথা প্রায় সবার মুখে ছিল, তিনি তার জীবিত কন্যাদের মাঝে ইরাকেই নির্বাচন করেননি যদিও। তার ইচ্ছা ছিল এলাইসা'র স্বামী প্রিন্স ডিয়ানকে রাজ্যভার দিবেন।কিন্তু নিরুপায় রাজাকে তাই করতে হল যা সবাই বলল। যদিও সেসব তরুন দ্বীপবাসি জানতো না তারা নিজেদের জন্য কি ভবিষ্যত ডেকে এনেছিল রাজ্যে! এর জন্য তারা অনেক আফসোস করবে পরবর্তিতে!" ইনোসা রহস্যমায় হাসি হাসলো, সাথে যোগ দিল মিরা!
"একটা কথা আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, তোমাদের দ্বীপের মানুষদের আচরন আমাদের পৃথিবীর মানুষের সাথেও মিলে! তাছাড়া কোথাও কোথাও পৃথিবীতে এমনটা হয়েছে অনেক! তবে পুরো বিষয়টা কিন্তু অবাক করা, কেননা তুমি যা বলছিলে, তা হলে তো পুরো একটা টুইস্ট আসবে! আমাদের এখানে এমন কোথাও হয়নি কখন!" রিন্স তাকালো, জিঞ্জেসু চোখে।
"হুম জেইন, রিন্স আর মিরা এ বিষয়ে কিছুটা জানে কেননা ওরা একটু আগেই এসেছে তোমাদের। কিন্তু এসব নিয়ে ভেবোনা, আমরা এখন ধীরে সুস্থে পুরো অতীতটাকে দেখব এই দ্বীপের। তো যেখানে শেষ করেছিলাম, প্রিন্সেস ইরার কথা। কুমারী রাজকন্যার রাজ অভিষেক সম্পন্ন হল দ্রুত এবং পুরোপুরি রাজ নিয়ম ভেঙ্গে। এই দ্বীপে কোন নারী শাসন হয়নি কখন। তাছারা অবিবাহিত ব্যক্তি রাজত্ব অর্জন করতে পারবেনা নিয়মে ছিল। কিন্তু রাজকন্যা ইরা অল্প সময়ে তার মধুর বাক্যে সবাইকে তার আয়ত্বে এনেছিল। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাইতো না। তাছাড়া বলেছিলাম না, যুবকদের একজন রাজকন্যার ডানপাশে বসতে পারবে, এই ইচ্ছা পোষন করে সবাই রাজকন্যাকে বড় সমাদর করেছে প্রথমে। সবচেয় অবাক বিষয় হল, রাজকন্যা থেকে রানী হতে ইরার একটিও সৈন্য তলোয়ারবাজি করেনি। যা এই রাজ্যে এই প্রথম হয়েছে। এতটা শান্ত শুরু সবাইকে একটু উতলা করেছিল, বিষেশত প্রবীনদের। কথিত আছে ইরা তার ভীনদেশি মায়ের খুব ভক্ত ছিল। রানী ইরার মায়ের সম্পর্কে তেমন বেশি কিছু জানা নেই, তবে ধারনা করা হয় জেনোভা আফ্রিকার কোন দেশ হতে এসেছিলেন, যেখানে মাতৃশাসনে পরিবার চলে।" ইনোসা বলতে লাগল।
"হ্যা, এমনটা ইতিহাস ক্লাসে পড়েছিলাম। মাতৃতান্ত্রিক ছিল বেশ কিছু দেশ। বলা হয় এর কারন ছিল, ঘরের পুরুষরা যুদ্ধে গিয়ে ফিরে না আসলে পরিবারের দেখাশুনা মা'ই করত। আর মাতৃপরিচয়ে তাই তারা বড় হত, এমনকি কোন কোন খানে পিতা নয়, মাতার শেষ নাম জুড়ে বাচ্চার নাম দেয়া হত, এমনকি ফ্যামিলি ট্রি মায়ের পরিবারের সাথে জুড়ে থাকত।" অড্রি যোগ করল। "ঠিক, অনেকটা তেমন কোন দেশের মেয়ে ছিলেন রানী জেনোভা। তারপর, মাতৃ-ভালবাসাবসেই হয়ত ইরা নিজের পথ তৈরি করল। অন্যান্য রাজকন্যা'র মত ইরা ছিল না। পিতা'র প্রতি অগাধ ঘৃনা তাকে পুরুষ শব্দটাও ঘৃনা করতে শিখাল। কিন্তু বুদ্ধিমতী রাজকন্যা এসব কাউকেই বলত না, এমনকি তার মাতাকেও না। সে একটা প্ল্যান করেছিল, বলতে পার প্রতিশোধ নিতে। হ্যা, তার শিশু-বোনদের মৃত্যুর প্রতিশোধ ছিল একটি কারন। তার নিজের সবার অজান্তে প্রায় এক দশকের মত লুকিয়ে থাকার প্রতিশোধও সে নিয়েছিল! "ইরা'স মেনসন" বইয়ে কিছু উল্লেখ আছে, ইরা'র জন্মের আগে রানী বেশ কিছুদিন তার সাহায্যকারী এক পরিবারের সাথে কাটান সময়, প্রায় ছয় মাসের মত। রাজা অমন্যন্সের এত রানী ছিল যে তাদের ভরনপোষন করা প্রায় অসম্ভব ছিল রাজতহবিলের পক্ষে।তাই বিত্তবানদের পরিবারে বহু রানী সসম্মানে সময় কাটাতেন। আরো বলা হয় রাজাকে তার সন্তানের জন্ম সংবাদ শোনানো হয়নি যখন ইরা জন্ম নেয় তার রানীমাতার কোলে। ইরা'র বয়স যখন আনুমানিক এগারো, একদিন সে প্রাসাদে খেলতে খেলতে রাজা'র সামনে পড়ে যায়। রাজা ফুটফুটে বাচ্চাটাকে দেখে থমকে যায়। তখন সত্য প্রকাশে বাধ্য হয় রানী জেনোভা। তবে এর ফলাফল বেশ ভালোই ছিল, রাজা তার পরে আর কোন কন্যা সন্তান হত্যা করেন নি। বলা হয় সর্বমোট সাতানব্বইজন রানী ছিলেন রাজা অমন্যন্স এর। কিন্তু মতবিরোধে একশ-পাচ জন বলা হয়েছে আরো। আমরা ধরে নিলাম একশো জন রানী!" ইনোসা খানিকটা হেসে কথা শেষ করল।
"বাহ, কি মজা। এমনটা হলে তো কোন কথাই নেই!" জেইন হাসে উঠল শব্দ করে। "তবে আমার মনে হচ্ছে এত রানী নিয়ে রাজা চিন্তিত ছিল? ধরো, কেউ ইনভেড করে রাজ্য ছিনিয়ে নিল। রাজা নিজে কি পালাবে, রানীদের কাউন্ট করতে করতেই রাজা'র পালাবার সময় শেষ হবে।" মিরা হাসিমুখে বলল। ওদের সবার মুখ তখন হাসিতে ঝলমল করছে। রাজা'র বিয়ের বিষয়টা বেশ হাসি এনেদিল সবার গম্ভীর মুখে!
"তারপর, রাজকন্যা ইরা থেকে মহারানী ইরা। সবাই সন্ত্রস্তে কথা বলে, সমীহ করে এই কুমারী রানী কে। অনেকটা ফেইরি টেল এর মতই শুরু হয়েছিল রানী ইরা'র শাসন। সমস্যার শুরু হল তার বিবাহ নিয়ে। বলা হয় রানী স্বইচ্ছায় বিয়ে করে তার শৈশব বন্ধু, ইরফান কে। এর পরে দ্বীপের যুবকদের মধ্যে হতাশা ভর করে, কেননা রানী তাদের কাউকে গ্রহন করে নি স্বামীরুপে। একিসাথে সবার চিন্তার বিষয় ছিল, এই নতুন রাজার আগমনে কি হতে পারে। কিন্তু বেশিদিন ভাবতে হলনা, কেননা রানী তার দ্বিতীয় বিয়ের আয়জন তার প্রথম বিয়ের তিনমাসের মধ্যেই করলেন। এবার যুবকসমাজ কিছুটা ক্ষিপ্ত হল। প্রথমত রানী হয়ে ইরা তাদেরকেই ভুলে গেল, পরে নিয়ম ভেঙ্গে প্রথম স্বামীর বর্তমানে দ্বিতিয় স্বামী গ্রহন। এ মানা যায়না, সবার একি ভাবনা আসলো। কিন্তু তখনও আরো দেখার অপেক্ষা ছিল। রানী খুব বুদ্ধিমতী ছিল। একটা কথা সে ভালো করে বুঝতে পেরেছিল, প্রতিশোধ নিতে হলে আগে ক্ষমতা এবং সৈন্য চাই। কিন্তু একটা পুরুষ কি অন্য একটা পুরুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে? না, তাই সে অন্য বুদ্ধি বের করল। তার সৈন্যদের মধ্যে সে আলাদা এক বিশাল বাহিনী গড়ল, যেখানে সবাই নারী! তারপর তাদেরকে নিয়ে সে নতুন নতুন নিয়ম বানাতে লাগল। রানী ইরা'র একটি সমাবেশ ছিল, শুধুই মেয়েদের কে জড়ো করে তারা প্রতি বুধবার আলোচনা করত। সেই আলোচনায় উপনিত হল যে, এখন থেকে এই দ্বীপের সকল নারী দেবীত্ব এবং তার অধিকার পাবে। কিন্তু উপায়টা অভিনব। বেশ কিছু রুলস তৈরি করেছিল রানী তার সহোচর-অনুচররা মিলে। এবং, তারা সকলেই নারী ছিলেন। "রুলস ডেনস ইরা'' বইটিতে ইরা'র এই সকল উদ্ভট কিন্তু বিচক্ষন রুলসের কথা বলে। ইরা'র প্রথম রুলস ছিল, প্রত্যেকটি নারীকে দেবী'র সম্মাননা রাজকিয় ও পারিবারিক ভাবে দিবে এই রাজ্যে সে।আর পুরুষগন হবেন দেবী-ভক্ত! যদিও নিন্দুকরা বলে, সেখানে দেবী ভক্ত নয়, দেবী-ভৃত্য লিখলেই ভালো করতেন মহারানী ইরা! কেননা সেটাই বেশি সভ্য বিষেশন ছিল পুরুদের জন্য রানী ইরার শাসনকালে!" আরেকটা নতুন চমক দেখতে পেল সবাই ইনোসার হাসিতে!
-----------------------------------------------(চলবে)
ভালো থাকুন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২২