জীবিকার সন্ধানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে রেঙ্গুনে যখন আসি তখন থেকেই আমার অনেক প্রিয় মানুষ রেঙ্গুনে বেড়াতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সময় আর সুযোগের অভাবে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। মনে মনে আমিও ধরে নিয়েছিলাম যে আর যাই হোক এই সুদূর বিদেশের মাটিতে অচেনা পরিবেশ আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে কাউকে আতিথিয়তা করতে হবে না! কিন্তু সেই ভাবনাকে ব্যর্থতায় পরিণত করে কচি আপা যখন বললেন আমরা আসছি তোমাদের রেঙ্গুন দেখতে তখন মনে প্রাণে আনন্দিত আর উদ্বেলিত না হয়ে থাকতে পারিনি। প্রাথমিক কিছু সমস্যা দেখা দিলেও অবশেষে সেই কাঙ্খিত মুহুর্ত উপস্থিত হল যখন আমার কোন পরিচিত মানুষ আমার কর্মস্থল রেঙ্গুনে এসে উপস্থিত হলেন।
চাকরীর সুবাদে ছুটি ছাটা তেমন একটা মেলে না বললেই চলে, তার উপর প্রবাসী জীবনে চাকরি থেকে ছুটির কথা বললেই অফিস থেকে রীতিমত বেতন কর্তনের হুমকি ধামকি প্রদর্শিত হয়ে থাকে, এই জন্য মনে মনে একটু সঙ্কিত ছিলাম যে রেঙ্গুনে আমার প্রথম আতিথিয়তার সুযোগ আদৌ রক্ষা করতে পারব কি না! কচি আপা আর মফিজ ভাই যখন রেঙ্গুনে পদধূলি দিলেন তখন অত্যন্ত সঙ্কুচিত চিত্তে আমার অক্ষমতা প্রকাশ করতেই উনারা নির্ভয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানাতেই মনে মনে অনেকটাই নির্ভার হলাম এই ভেবে যে উনারা স্বনির্ভর ভাবেই মিয়ানমার ঘুরতে বেড়িয়েছেন, শুধু রেঙ্গুন নয়!!
২৫ ডিসেম্বর সরকারী ছুটি থাকায় সেদিনটি আমি আমার অতিথিদের সাথে সময় কাটানোর জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলাম, কিন্তু কি ভাবে সেই সময়কে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি নিয়ে যখন কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলাম তখন বরাবরের মতই উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হলেন রাকিব ভাই। ইতোমধ্যে রেঙ্গুনে উনারও কিছু অতিথির উপস্থিতি আমার জন্য হয়ে উঠল সোনায় সোহাগা! পরিকল্পনা করা হলো ২৪ তারিখ অফিস ছুটির পর আমরা রওনা হবো, গন্তব্য ছউন্দা (Chaung Tha Beach) সৈকত। মিয়ানমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত না হলেও বৈচিত্রতার দিক থেকে এটি ভিন্নতর।
আমি, আমার সহকর্মী তসলিম, মিয়ানমার প্রবাসী জীবনের স্বল্প সময়ের সহযাত্রী মাঈনুল, রাকিব ভাই, ত্রিদিব ভাবি, ভাবির ছোট বোন পৃথুলা আর আমার অতিথিদ্বয় কচি আপা এবং মফিজ ভাই এই জনা আটেক একত্রিত হলাম ছাওউন্দা ভ্রমণের জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেলে রওনা দেবার কথা থাকলেও অনিচ্ছাকৃত দেরী হওয়ার জন্য রাকিব ভাই অবশেষে সন্ধ্যে নাগাদ এসে উপস্থিত হলেন আমাদের তুলে নেবার জন্য। পরদিন সরকারী ছুটি থাকার জন্য শেষ কার্যদিবসে রাস্তায় প্রচুর ভিড় থাকায় আমরা প্রায় শম্বুক গতিতে যাত্রা শুরু করলাম। প্রতিটি ট্রাফিক মোড়েই আমাদের অপেক্ষাকৃত বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। অবশেষে প্রায় ঘন্টা খানেক অসহনীয় জ্যাম অতিক্রম করে আমরা যখন রেঙ্গুন নদী পাড়ি দিলাম ততক্ষণে চারপাশে নিশুতি রাত কর্মময় ক্লান্ত বিকেলের স্থান ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিয়েছে।
যাত্রা পথে কচি আপা আর মফিজ ভাইয়ের উৎসাহী প্রশ্নগুলো ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ আর মজাদার। অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার নিজের কাছেই ছিল অজানা যার ফলে নিজেকে কিছুটা অপ্রস্তুত অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল তারপরেও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম তাঁদের কৌতুহল পূরণ করার, জানি না কতটুকু সফল হয়েছিলাম তবে অনেক ভাল লাগছিল যখন তাঁরা কোন প্রশ্ন করবার আগে “জয়” নামটি ধরে সম্বোধন করছিলেন! মিয়ানমারে আমি সবার কাছেই “কুদরত” নামেই পরিচিত। এই নামের ভিড়ে আমার চির চেনা যে আরেকটি নামও ছিল সেটি যেন আমি প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। সেই আশৈশবকাল থেকে যে নামটি ছিল আমার পরিচয়ের মূল উৎস কালের পরিক্রমায় সেটি যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে! দীর্ঘদিন পর কচি আপা আর মফিজ ভাই বারংবার সেই নাম ধরে ডাকাতে অদ্ভুত এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করছিল মনের মাঝে অনেকটা নিজের অজান্তে।
ছউন্দা যাবার পথটি খুব একটা প্রশস্ত নয় এমনকি খুব একটা মসৃণও নয়। যার ফলে গাড়ির গতিসীমা খুব বেশি বাড়ানো চালকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। একটু গতি বাড়ালেই পেছনে যারা বসেছিলেন তাঁদের জন্য খুব একটা স্বস্তি দায়ক হচ্ছিল না। রেঙ্গুনের আলোক ঝলমল জগৎ থেকে বেড়িয়ে পরতেই গ্রামের চির চেনা চিত্র ভেসে উঠল। যদিও আমি খুব বেশি একটা দেশ ঘুরে বেড়াইনি, সেই সৌভাগ্যও আমার খুব একটা হয়ে ওঠেনি তারপরেও আমার কাছে কেন যেন মনে হয় পৃথিবীর সব গ্রামের একটি অনণ্যসাধারণ বৈশিষ্ট আছে আর সেটি স্থান ভেদেও খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ, মাঠের মাঝে বিশৃঙ্খলিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি, আবার কোথাও বা সারি সারি গাছের ফাঁক গলে উঁকি দিয়ে যাওয়া ছোট ছোট খানা খন্দে ভরা জলাধার, কোথাও বা পতিত অনাবাদী জমি, এ যেন গ্রাম বাংলারই অবিকল প্রতিরূপ ভুল করে মিয়ানমারে জায়গা করে নিয়েছে! সময় গড়াতেই নিকশ কালো আকাশে যেন তারার মেলা বসে গেল। আকাশের এক কোণে চাঁদের সকরুণ উপস্থিতিও যেন সেই তারার মেলায় অনেকটাই মলিন! কোন তারা নেই সেখানে ? শপ্তর্ষি মণ্ডল থেকে শুরু করে কালপুরুষ কি ছিল না সেই তারার মেলায়! পথের বাঁক ঘুরতেই আকাশের বুকে সেই বিশাল তারার মেলা গাড়ির জানালার ফাঁক গলে যেন ভিতরে টুপ করে ঢুকে পরতে চাইছিল!
যাত্রা পথে মিনিট তিরিশেক বিরতি দিয়ে আবার যখন পথচলা শুরু করলাম ঘড়ির কাঁটা তখন ন’টা ছুঁই ছুঁই করছে। ছউন্দার পথটি অনেকটাই ন্যুইসং এর দিকে হওয়ায় এই পথ সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা ধারনা ছিল। এর আগে যখন ন্যুইসং গিয়েছিলাম তখন ছিল ভরা পূর্ণিমা। চারপাশে ছিল পূর্ণিমার রূপালী আলোর এক অদ্ভুত কোমলতা যা কি না সমস্ত প্রকৃতি জুরে অন্যরকম এক আবহ তৈরী করেছিল আর আজ জ্যোৎস্না থাকলেও সেটি অর্ধেক হওয়ায় তার আলোকচ্ছটা অনেকটাই যেন আলোআঁধারির অদ্ভুদ মিশেল। সেই আলো আঁধারির চাদর ভেদ করেই আমাদের গাড়ি আবার অবিরাম ছুটে চলল যেন অজানা এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে!
পাতেইনকে পাশ কাটিয়ে পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছতেই গাড়ির গতি আরো নিচে নেমে আসে। প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ বাকগুলো যদিও অন্ধকারে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কিন্তু চালকের গতি নিয়ন্ত্রন করায় বুঝতে কোন বেগ পেতে হচ্ছিল না যে একপাশে ইস্পাত কঠিন পাহাড় থাকলেও বিপরীত পাশেই ওৎপেতে আছে সুতীক্ষ্ণ খাঁদ! অন্ধকার এই পথে সাধারণত কোন চালক কেন আসতে চাইতো না সেটি এখন যেন একটু একটু করে উপলব্ধি করতে পারলাম!
অবশেষে কোন বিপত্তি ছাড়াই রাত ১২ টার দিকে আমরা আমদের গন্তব্যে এসে উপস্থিত হলাম। হোটেলের নিয়মতান্ত্রিক কাজ শেষ করেই ছুট লাগালাম রেস্তরাঁর খোঁজে। বার্মীজ দেশে যেখানে রাত্রি ৮ টা মোটামুটি নিশুতি রাতের দেশে পরিণত হয়ে থাকে সেখানে ১২ টা মনে হচ্ছিল যেন শ্মশানপুরী! গাড়ির চালক উদ্যোগী হয়ে অবশেষে কাছেপিঠেই একটি হোটেলের রেস্তরাঁয় নিয়ে এলেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল তারা রেস্তরাঁর ঝাপি বন্ধ করতে যাচ্ছে। এত রাতে অনাকাংখিত অতিথি দেখে তারা খুশি হলো না কি বিরক্ত হলো সেটি দেখবার মত ফুসরৎ আমাদের কারোরই ছিল না। অনেক যাচাই বাছাই করে অবশেষে আমাদের জন্য খাবারের ফরামায়েশ দেয়া হলে আমাদের সবার চোখে মুখে স্বস্তির ছায়া খেলা করে গেল এই ভেবে যে অন্তত রাত্রিটা ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটাতে হচ্ছেনা!
খাবার তৈরী হতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন সেই অবসরে আমরা সবাই চারপাশটি ঘুরে দেখার আশায় বেড়িয়ে পরলাম। রেস্তরাঁটি হোটেলের পেছন দিকে অবস্থিত হওয়া অদূরেই সাগরের ভিজে বাতাস চোখে মুখে লাগছিল। এর আগেও লক্ষ্য করেছিলাম কিন্তু আজ ধারণাটি বধ্যমূল হলো যে এদিকটা সকল হোটেলগুলো একদম সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত। হোটেলের সীমানা থেকে মাত্র কয়েকটি কদম ফেললেই চোখে মুখে সাগরের ভেজা বাতাসের স্পর্শ পাওয়া যায়। খুব বেশি দূরে না গিয়ে কাছেপিঠেই সৈকত বরাবর হাটাহাটি করে ফিরতেই গরম গরম খাবারের গন্ধ নাকে এসে লাগতেই বুঝতে পারলাম ক্ষিধের তীব্রতা! মোটামুটি মানের নৈশভোজ শেষে প্রিয় ক্যামেরাটি নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম সৈকত বরাবর। সঙ্গী হিসেবে পেলাম অঢেল ধৈর্যের অধিকারী মাঈনুলকে। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নিস্ফলা প্রচেষ্টা ক্ষান্ত দিয়ে রুমে ফিরতে গিয়ে ঘড়ির কাটা তিনটের ঘর যে কখন অতিক্রম হয়েগিয়েছে নিজেরাও বুঝতে পারি নি।
ইচ্ছে ছিল খুব সকালে উঠে সূর্যোদয়ের কিছু ছবি তুলে রাখব, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুম থেকে উঠলেও হতাশ হতে হলো দরজা ঘুলে বাড়ান্দায় দাঁড়াতেই। চারিদিকে প্রচণ্ড কুয়াশার চাদরের বলয় ভেদ করে সূর্যের চাঁদপনা মুখ দেখার আশা পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের নোনা জলে বিসর্জন দিয়ে আবার কম্বলের নিচে ঢুকে পরলাম। মাঈনুলকে আর জাগাতে হলো না ভেবে ভালই লাগছিল, বেচারা এমনিতেই রাত তিনটে পর্যন্ত জেগে ছিল আজ আবার ভোরে উঠতে হবে ভেবে কিঞ্চিত সঙ্কিত থাকলেও কেন যেন মানা করতে পারেনি! বেচারার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটানোয় বেশ তৃপ্তি অনুভব করলাম।
সকাল সাড়ে ন’টা ছিল প্রাতঃরাশ করার সময়সীমা। হোটেলের রিসিপশন থেকে সাবধানবার্তা ভেসে আসতেই সবাই বেরিয়ে পড়লাম। কচি আপা আর মফিজ ভাই আগেই কুয়াশার রহস্যভেদ করতে বেরিয়ে পরায় উনাদের সাথে হোটেলের রেস্তরাঁতেই দেখা হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর রাকিব ভাইদের দেখা মিলল। সবাই মিলে প্রাতঃরাশ শেষ করতেই মিনিট বিশেকের বিরতি দিয়ে বেরিয়ে পরার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য শ্বেতদ্বীপ (White Island) নামের প্রবাল দ্বীপ।
যেহেতু প্রবাল দ্বীপেই অনেকটা সময় কাটানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সে জন্য হোটেল থেকে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেই আমরা এগারোটা নাগাদ বেড়িয়ে পরি। গাড়িতে করে মিনিট দশেক পথ পারি দিয়ে যে জায়গাতে আমাদের নামিয়ে দিল স্থানীয় নামটি একটু খটমট হবার জন্য সেটি আয়ত্বে আনা সম্ভবপর হয়নি। স্থানীয় নৌকায় কিছুটা জলপথ পাড়ি দিয়ে প্রবাল দ্বীপে যেতে হবে। বার্মায় শরৎ আসে কি না ঠিক জানা নেই তবে আবহাওয়ার নিদর্শনটি বারাবার বাংলার শরৎকালকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। গাঢ় নীল সমুদ্রের বুকে চোখ ফেলতেই দেখা মিলল সাদা রঙের ছোট্ট দ্বীপটিকে, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলামে সেখান থেকে একদম দিগন্ত রেখা বরাবর সাদা রংটিকে প্রথম প্রথম সমুদ্রের ফেনা বলে ভ্রম জাগবে, তবে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে দ্বীপটির অস্তিত্ব। রাকিব ভাই আগেই বলে রেখেছিলেন যে দ্বীপটিতে অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে Snorkeling করতে পারা। সমুদ্রের গভীর তলদেশে যে জগৎটি রয়েছে সেটির প্রতি আমার দূর্বলতা অনেক পুরোনো। কিন্তু সময়, সুযোগ আর সামর্থ্যের সংমিশ্রন আমি কোন দিনই সেটি পূরণ করতে পারিনি আর ভবিষ্যতেও করতে পারবো কি না জানা নেই। কাজেই ছউন্দায় এসে Snorkeling করতে পারাটি আমার কাছে হাতের মুঠোয় আকাশ ধরতে পারার সমতূল্য মনে হতে লাগল! বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করে আমিও সম্মত হলাম। মাঈনুল আবার এক ডিগ্রি এগিয়ে গিয়ে মাছ ধরার সরঞ্জামও ভাড়া করে ফেলল সাগরের বুকে ছিপ ফেলে মাছ ধরবে বলে!
সমুদ্র সৈকত ঘিরে কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর স্থানীয় নৌকার মাঝি হাক দিলেই আমরা পুরো দলবল নিয়ে উঠে পড়ি সেই নৌকায়। নৌকার গুলুইয়ে বসবার প্রতি আমার বেশ ছোট বেলা থেকেই দূর্বলতা। সেই আগ্রহে নৌকার সামনে বসতে গেলেই নৌকার মাঝি প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত দিল ভিতরে এসে বসতে! ভিন দেশে ভাষাগত সমস্যার জন্য তর্ক করাটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বিশ্বাস করে নৌকার ভিতরে বসলাম ঠিকই কিন্তু আমিই ছিলাম একদম শুরুর দিকে। কিছুদূর এগুনোর পর মনে হলো মাঝির কথায় ভাল ভাবে সায় দিয়ে একদম শেষ প্রান্তে না বসে কি দারুন ভুলটাই না করেছি! সাগরের ঢেউএর বিপরীতে নৌকার সম্মুখভাগ থাকার জন্য ঢেউএর ঝাপটা প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মতই ভিতের প্রবেশ করতে লাগল! হাতে ক্যামেরা আর পকেটে মোবাইলের চিন্তায় তখন আমি রীতিমত তটস্থ! ক্যামেরাটি কোনমতে ভিতরের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে কিছু একটার আড়াল নিতে নিতেই আমি মোটামুটি কাক ভেজা হয়ে গিয়েছি। উপায়ন্তর না দেখতে পেয়ে ক্যামেরাটা কচি আপার কাছে সমর্পণ করে সাগরের জলের ধাক্কা খেতে খেতেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম। মিনিট পনের পর নৌকার মাঝি আমাদের প্রবাল দ্বীপে নামিয়ে দিলে আমরা আর কালক্ষেপণ না করে দ্বীপে নেমে পড়লাম।
প্রথম দিকে ধারণা করেছিলাম পুরো দ্বীপটি অকৃত্রিম ভাবেই দেখতে পারবো কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি পড়ল দ্বীপের বুকে পা রাখবার আগেই। বিশালাকৃতির মৎসকণ্যাকে যখন দেখতে পেলাম দুহাত জড়ো করে স্বাগত জানাচ্ছে দ্বীপে আগত পর্যটকদের তৎক্ষণাত অকৃত্রিম দ্বীপের আশা সাগরের নোনা জলে বিসর্জন দিয়ে ভাবতে লাগলাম এর চেয়ে বেশি যেন আর দেখতে না হয়!
মিয়ানমারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য বড়ই লক্ষণীয় আর সেটি হচ্ছে যত দূর্গমই হোক না কেন পর্যটকদের পদধূলি যেখানেই অর্পিত হয়েছে সেখানেই ছোটবড় আকৃতির প্যাগোডা সেখানে নির্দ্বিধায় স্থান করে নিয়েছে। এই শ্বেতদ্বীপেও তার ব্যতিক্রম দেখলাম না, যদিও দেখব বলে আশাও করি নি কখনও!! প্যাগোডাকে পাশ কাটাতে যাব সেই মুহুর্তে রাকিব ভাই ছোটখাট একটা দুঃসংবাদ অত্যন্ত বিনীত ভাবে উপস্থাপন করলেন। আমাদের এই বন্ধুর পথে নিয়ে আসা মাইক্রবাসটি নাকি বারোটার মধ্যেই ছেড়ে দিতে হবে! যদি আমরা দীর্ঘসময় এই দ্বীপে অবস্থান করতে চাই তাহলে স্থানীয় বাসে চেপে প্রথমে পাতেইন পরে সেখান থেকে আরেকবার বাস পরিবর্তন করে তবেই রেঙ্গুন যেতে হবে! এ যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা! বলে কি !! মাত্রই দ্বীপে পা রাখলাম আর এখনই চলে যেতে হবে! এযে দেখছি সত্যিকারের মগের মুল্লুক! আসলে ভুল বোঝাবুঝির গলদটি সেই শুরুতেই ছিল! আমাদের গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল এমন শর্তে যে আমরা সন্ধ্যে নাগাদ রেঙ্গুন ফিরব আর সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গাড়িটি আবার ভাড়া দেয়া হয়েছিল অন্য পক্ষকে! সত্যি বলতে আমি তখন কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না কি করব! কি করা উচিৎ!! নিজের আগ্রহ তো আছে সাথে কচি আপারাও আছেন, জানা ছিল ভদ্রতার সৌজন্যে হয়তো উনারাও রাজি হয়ে যাবেন চলে যেতে কিন্তু যে সময়টি উপভোগ করার জন্য এখানে আসা সেটিই অনুপভোগ্যই থেকে যাবে।
আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বিত অবস্থা দেখে রাকিব ভাই তখন চেষ্টা চালালেন বিকল্প উপায়ে আরেকটু সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কি না, বলাই বাহুল্য কিছুটা উদ্যেগজনক সময় কাটানোর পর অবশেষে উনি সক্ষম হলেন গাড়ির চালকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের! ঠিক হল যেখানেই থাকি না কেন ১২টার পরিবর্তে বিকেল ৫টা নাগাদ রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে রওনা দিব! কোন কিছু একদম না পাবার চেয়ে কিছুটা পাওয়াও মন্দ নয় ভেবেই সকলেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম, যদিও এই জন্য বেশ কিছুটা আক্কেল সেলামী দিতে হলো!
শুরু হয়ে গেল আমাদের নিজস্ব সময় উপভোগ করার। নিজের কথা বলতে গেলে সুন্দর যা কিছু চোখে পরে সেটাকেই ক্যামেরাবন্দী করার সুযোগটাকেই আমি চরম উপভোগ্য মনে করি, বুঝতে পারলাম ত্রিদিব ভাবীও অনেকটা একই ভাবনার মানুষ!! আমরা দুজনেই ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম যার যা ভাল লাগার বিষয়গুলোকে ক্যামেরা বন্দী করতে। রাকিব ভাই নিঃসন্দেহে একটু বেশি পরিমানের ধৈর্যহীন মানুষ, উনার আগ্রহ আবার Snorkeling দিকে! নিজে না নেমে আমাদের সবাইকে তাগাদা দিতে লাগলেন আমরা যেন সময় নষ্ট না করে Snorkeling নেমে পড়ি! এই জন্য দু চারটে ঝাড়ি মারতেও দেরী করলেন না। ত্রিদিব ভাবী সেই ঝারি শুনে পরিমরি করে ছুট লাগালেন Snorkeling এর জন্য। কচি আপা সাতারে অভ্যস্ত না হওয়ায় ভাইয়া আর কচি আপা Snorkeling এর ধারের কাছেও ঘেষলেন না! আমি আরও কিছুটা সময় ক্যামেরা হাতে ব্যয় করে নেমে পরলাম Snorkeling এ। এবং নামা মাত্রই বুঝতে পারলাম রাকিব ভাইয়ের তাগাদা দেবার নেপথ্য কারণ!
দ্বীপের এই অংশটিকে তৈরীই করা হয়েছে Snorkeling এর উপযুক্ত করে! সেটি পানিতে নামা মাত্র টের পেলাম। যদিও আমরা যতটুকু জায়গা জুড়ে Snorkeling করেছি তাতে করে সমুদ্রের নিচের রহস্যময় জগৎ সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণাও পাওয়া যাবে না তারপরেও এই অভিজ্ঞতাও নেহাত কম নয় সেটি আমি দ্ব্যার্থহীন ভাবে বলতে পারি। সমুদ্রের নীল স্বচ্ছ জলে চোখ মেলতেই নিচের প্রবালগুলো নজরে এলো। অনভ্যস্ত চোখদুটোর একটু সময় লাগল অভ্যস্ত হতে তারপরেই দেখতে পেলাম নানা রঙ বেরঙের মাছের রহস্যময় জগৎ! নিজদের অভয়াশ্রমে আমরা যে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি সেটি যেন ভ্রুক্ষেপে জানিয়ে দিতে চাচ্ছিল বারবার! কিছু কিছু মাছ আবার ভীষন লাজুক প্রকৃতির ন্যুনতম উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই লেজ নাড়িয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছিল সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে থাকা পাথরের আড়ালে। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্য করে দেখলাম অনেক মাছের সারি জোট ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, কাছে যেতেই নির্দিষ্ট দুরুত্বে সরে গিয়ে আবার জোট ধরে দাঁড়িয়ে পরে! এ যেন এক ছেলেখেলায় মেতে ওঠা!
কোথাও বা বড় বড় পাথরের বুকে শামুক ঝিনুকের খোলসগুলো বছরেরে পর বছরে ধরে জমে থেকে থেকে তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠেছে। ঢেউএর একটু আঘাতে নড়ে উঠলে বা পা পিছলে গেলেই চামড়া চিড়ে দিয়ে যাচ্ছে প্রবালের সুতীক্ষ্ণ ফলাগুলো!! মাঝে মধ্যে Snorkeling এর জন্য ব্যবহৃত নলটি স্থানচ্যুত হলে সেটিকে ঠিক করতে হচ্ছিল তখন আবার জলের নিচে পা ফেলতেও সমস্যা, নল গলে জলের ধারা মুখে কলকল করে প্রবেশে সচেষ্ট।
প্রায় ঘন্টাখানেক অতল জলের নিচে না হলেও স্বল্পজলের বাহারী দুনিয়া আমাকে যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল। অনেক আগে থেকেই এই জগৎ সম্পর্কে একটা দূর্বলতা কাজ করায় যা কিছুই দেখছিলাম মুগ্ধতা যেন ততই বাড়ছিল। যদিও যতটুকু দেখতে সক্ষম হয়েছি সেটি বিশাল সমুদ্রের একফোঁটা জলের সমতুল্য হবে কি না সন্দেহ! পুরো দ্বীপটিই সমুদ্রের নীল জলে বেষ্টিত হওয়ায় দ্বীপের অপর পাশটিকেও বেশ আকর্ষনীয় লাগছিল। জল থেকে ভেজা শরীরে পা ফেলতে সমস্যা হচ্ছিল কেননা ঘন্টা খানেক জলের নীচে থাকার ফলে পায়ের পাতা বেশ নরম আর পিচ্ছিল হয়েছিল আর সেই পা যখন সুতীক্ষ্ণ প্রবালের উপর ফেলছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি পায়ের তালু ছিদ্র করে তীক্ষ্ণফলাগুলো মাংসের ভিতর গেথে পরে!
বাতাসের তীব্রতার জন্যই হোক আর অন্য যে কারণেই হোক না কেন দ্বীপটির বিপরীত দিকটায় ঢেউএর উপস্থিতি অনেকটাই বেশি থাকায় সমুদ্রের রূপটি অসাধারণ লাগছিল। নীল আকাশের নীচে নীল জলে সমুদ্রের এই রূপটি সহসা চোখে পরে না। আমিও আর কাল ক্ষেপণ না করে ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম সেই নান্দনিক দৃশ্যগুলোকে ক্যামেরায় বন্দী করতে! তবে সেটিও বেশিক্ষণ সম্ভব হলো না ঘড়ির কাঁটার সাথে পেরে না ওঠায়! বেলা দুটো নাগাদ আমরা যখন ফিরে এলাম তখন পেছনে পরে রইল অতল জলের গভীরে চিরবহমান রঙ্গীন এক জগৎ যার বিন্দুতুল্য নিদর্শন দেখবার সৌভাগ্য হলো!
হোটেল গোল্ডেন বিচেই আবার ফিরে আসতে হলো কেননা শরীর জুড়ে নোনাজলের অস্তিত্ব নিয়ে আর যাই হোক দীর্ঘ সময় ডাঙ্গায় থাকা যায় না! হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে হোটলের বহিঃপ্রাঙ্গণের উম্মুক্ত স্থানে গোসল করার অনুমতি পাওয়া গেল। আমরা দলবলে চলে গেলাম সেখানে। কালক্ষেপণ না করে গোসল সেরে ফেলতেই অনুভব করলাম পেটে সুচোর দৌড়ানি! হোটেল থেকে দ্রুত বেড়িয়ে এসে স্থানীয় বাজারের মাঝে অবস্থিত এক রেস্তরাঁয় বসে গেলাম মধ্যহ্নভোজের জন্য। খাবার প্রস্তুতে একটু সময় মিলবে জানতে পেরেই আমরা ক’জন বেড়িয়ে পরলাম উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারটি একটু ঘুরে ফিরে দেখার! এদিক ওদিক ঘুরে যতটুকু বুঝতে পারলাম পুরো বাজার জুড়েই শুটকি মাছের উপস্থিতি অনেকাংশেই বিদ্যমান এর ফাঁকে কিছু শামুক আর ঝিনুকের তৈরী তৈজসপত্র আর স্যুভেনীর রয়েছে বিক্রির তালিকায় তবে স্বাভাবিক ভাবেই মূল্যগুলো একটু বেশি চড়া মনে হলো। কোন কিছু কেনা যেহেতু উদ্দেশ্য ছিল না, সেহেতু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে মিনিট ত্রিশেক পর ফিরে আসতেই নাকে ঢুকলো রসুই ঘর থেকে রান্না করা সামুদ্রিক মাছের মনমাতানো সুগন্ধ! সুগন্ধেই যেন অর্ধভোজন সম্পন্ন! ক্ষুধাও লেগেছিল জাম্পেস সেজন্যই কি না বুঝতে পারলাম না তবে প্রতিটি রান্নাই ছিল চমৎকার সুস্বাদু। পেটপুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে যখন রেস্তোরাঁ ত্যাগ করি ঘড়ির কাটা তখন ঠিক পাঁচটার ঘড়ে প্রবেশ করতে উম্মত্ত!!
ছওউন্দায় প্রবেশকাল রাত্রিকালীন হওয়ার ফলে ঠিকমত বুঝতে পারি নি কিন্তু এখন যখন দিনের আলোয় সেই পাহাড়ি রাস্তা ধরে ফিরে আসছিলাম তখন বুঝতে পারলাম কি অসাধারণ সুন্দর ছিল সেই প্রবেশ পথ! পুরো রাস্তার একপাশটা পাহাড়ে আচ্ছন্ন আরেক পাশ জুরে গভীর খাঁদ আর খাঁদ মিশে গিয়েছে নাম না জানা এক ঝিলের সাথে। ঝিলের বুকে ধারণ করা টলমলে জল পুরোপরিবেশটাকেই যেন মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। সূর্যও ধীরে ধীরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পরায় তার লাল আলো সেই জলের উপর পরে পুরো আবহটাকেই করে তুলেছে স্বপ্নীল! এই জল কোথা থেকে এলো কীই বা এর উৎসস্থল জানা নেই কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন সেটুকু না থাকলে পুরো পরিবেশটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত! আরো একবার বিমোহিত হয়ে যেতে হলো প্রকৃতির অপূর্ব এই রূপ অবলোকন করতে পেরে!!
সময় যতই এগুতে লাগলো সূর্য ততই যেন গড়িয়ে পরতে লাগল পাহাড়ের কোলে। শীতকালে এই সময়টায় দিগন্ত জুড়ে অসম্ভব গাঢ় লাল আভা ছড়িয়ে পরে পুরো প্রকৃতিকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, কেন জানি না এই সময়টায় মনটা ভীষন উদাস হয়ে পরে হয়তো বা অনন্ত কালের গভীরে আরেকটি আনন্দময় দিনকে হারিয়ে ফেলার বেদনায়, অথবা ঝলমলে আলোকৌজ্জ্বল জগৎটাকে পেছনে ফেলে রেখে অন্ধকার জগতে প্রবেশের সন্ধিকাল বলেই এমনটা হয়!! জানি না কেন যেন সেটা এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারলাম না! গাড়ির জানালা দিয়ে চোখ মেলে বাইরের জগৎটাকে যতটা সম্ভব দেখতে পারা যায় ততটুকই গোধূলির এই অপূর্ব রূপ দেখতে দেখতে কখন যে তন্দ্রার মত এসেছিল বুঝতে পারি নি, গাড়ির তীব্র ঝাকিতে যখন চোখ মেললাম তখন পৃথিবীর এই প্রান্তে চন্দ্রশাসন শুরু হয়ে গিয়েছে! যদিও পূর্ণিমার দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় নিকশ গাঢ় আকাশ জুড়ে আবারও তারা মেলা দেখা মিলতে শুরু করেছে কিন্তু কতক্ষন যে তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকবে সেব্যাপারে আমি সন্দিহান!
সেই একই পথ সেই একই সময় তারপরও যেন মনে হয় কত যুগের অবসান হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে! ফিরে আসবার সময় ভাবছিলাম আমাদের জীবনটাও এমনই স্বল্পস্থায়ী নয় কি? সারা দিনের হাসি আনন্দকে পেছনে ফেলে প্রতিনিয়তই কি আমরা ছুটে চলছি না শেষের ঠিকানায়? যদিও জানা নেই এই শেষের ঠিকানা কোথায়, এই পথেরই বা শেষ কথায়, ছুটে চলতে হয় বলেই আমরা ছুটে চলেছি পেছনে হয়তো পরে থাকে জলের নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় এক রঙ্গীন জগৎ আর সামনে নিকশ কালো অন্ধকার...যদিও তারারা জেগে থাকে সঠিক পথের আলোকবর্তী হয়ে প্রয়োজন শুধু তাদের ঠিক মত খুঁজে নেয়া..!!!
জীবিকার সন্ধানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে রেঙ্গুনে যখন আসি তখন থেকেই আমার অনেক প্রিয় মানুষ রেঙ্গুনে বেড়াতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সময় আর সুযোগের অভাবে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। মনে মনে আমিও ধরে নিয়েছিলাম যে আর যাই হোক এই সুদূর বিদেশের মাটিতে অচেনা পরিবেশ আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে কাউকে আতিথিয়তা করতে হবে না! কিন্তু সেই ভাবনাকে ব্যর্থতায় পরিণত করে কচি আপা যখন বললেন আমরা আসছি তোমাদের রেঙ্গুন দেখতে তখন মনে প্রাণে আনন্দিত আর উদ্বেলিত না হয়ে থাকতে পারিনি। প্রাথমিক কিছু সমস্যা দেখা দিলেও অবশেষে সেই কাঙ্খিত মুহুর্ত উপস্থিত হল যখন আমার কোন পরিচিত মানুষ আমার কর্মস্থল রেঙ্গুনে এসে উপস্থিত হলেন।
চাকরীর সুবাদে ছুটি ছাটা তেমন একটা মেলে না বললেই চলে, তার উপর প্রবাসী জীবনে চাকরি থেকে ছুটির কথা বললেই অফিস থেকে রীতিমত বেতন কর্তনের হুমকি ধামকি প্রদর্শিত হয়ে থাকে, এই জন্য মনে মনে একটু সঙ্কিত ছিলাম যে রেঙ্গুনে আমার প্রথম আতিথিয়তার সুযোগ আদৌ রক্ষা করতে পারব কি না! কচি আপা আর মফিজ ভাই যখন রেঙ্গুনে পদধূলি দিলেন তখন অত্যন্ত সঙ্কুচিত চিত্তে আমার অক্ষমতা প্রকাশ করতেই উনারা নির্ভয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানাতেই মনে মনে অনেকটাই নির্ভার হলাম এই ভেবে যে উনারা স্বনির্ভর ভাবেই মিয়ানমার ঘুরতে বেড়িয়েছেন, শুধু রেঙ্গুন নয়!!
২৫ ডিসেম্বর সরকারী ছুটি থাকায় সেদিনটি আমি আমার অতিথিদের সাথে সময় কাটানোর জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলাম, কিন্তু কি ভাবে সেই সময়কে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি নিয়ে যখন কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলাম তখন বরাবরের মতই উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হলেন রাকিব ভাই। ইতোমধ্যে রেঙ্গুনে উনারও কিছু অতিথির উপস্থিতি আমার জন্য হয়ে উঠল সোনায় সোহাগা! পরিকল্পনা করা হলো ২৪ তারিখ অফিস ছুটির পর আমরা রওনা হবো, গন্তব্য ছউন্দা (Chaung Tha Beach) সৈকত। মিয়ানমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত না হলেও বৈচিত্রতার দিক থেকে এটি ভিন্নতর।
আমি, আমার সহকর্মী তসলিম, মিয়ানমার প্রবাসী জীবনের স্বল্প সময়ের সহযাত্রী মাঈনুল, রাকিব ভাই, ত্রিদিব ভাবি, ভাবির ছোট বোন পৃথুলা আর আমার অতিথিদ্বয় কচি আপা এবং মফিজ ভাই এই জনা আটেক একত্রিত হলাম ছাওউন্দা ভ্রমণের জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেলে রওনা দেবার কথা থাকলেও অনিচ্ছাকৃত দেরী হওয়ার জন্য রাকিব ভাই অবশেষে সন্ধ্যে নাগাদ এসে উপস্থিত হলেন আমাদের তুলে নেবার জন্য। পরদিন সরকারী ছুটি থাকার জন্য শেষ কার্যদিবসে রাস্তায় প্রচুর ভিড় থাকায় আমরা প্রায় শম্বুক গতিতে যাত্রা শুরু করলাম। প্রতিটি ট্রাফিক মোড়েই আমাদের অপেক্ষাকৃত বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। অবশেষে প্রায় ঘন্টা খানেক অসহনীয় জ্যাম অতিক্রম করে আমরা যখন রেঙ্গুন নদী পাড়ি দিলাম ততক্ষণে চারপাশে নিশুতি রাত কর্মময় ক্লান্ত বিকেলের স্থান ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিয়েছে।
যাত্রা পথে কচি আপা আর মফিজ ভাইয়ের উৎসাহী প্রশ্নগুলো ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ আর মজাদার। অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার নিজের কাছেই ছিল অজানা যার ফলে নিজেকে কিছুটা অপ্রস্তুত অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল তারপরেও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম তাঁদের কৌতুহল পূরণ করার, জানি না কতটুকু সফল হয়েছিলাম তবে অনেক ভাল লাগছিল যখন তাঁরা কোন প্রশ্ন করবার আগে “জয়” নামটি ধরে সম্বোধন করছিলেন! মিয়ানমারে আমি সবার কাছেই “কুদরত” নামেই পরিচিত। এই নামের ভিড়ে আমার চির চেনা যে আরেকটি নামও ছিল সেটি যেন আমি প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। সেই আশৈশবকাল থেকে যে নামটি ছিল আমার পরিচয়ের মূল উৎস কালের পরিক্রমায় সেটি যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে! দীর্ঘদিন পর কচি আপা আর মফিজ ভাই বারংবার সেই নাম ধরে ডাকাতে অদ্ভুত এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করছিল মনের মাঝে অনেকটা নিজের অজান্তে।
ছউন্দা যাবার পথটি খুব একটা প্রশস্ত নয় এমনকি খুব একটা মসৃণও নয়। যার ফলে গাড়ির গতিসীমা খুব বেশি বাড়ানো চালকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। একটু গতি বাড়ালেই পেছনে যারা বসেছিলেন তাঁদের জন্য খুব একটা স্বস্তি দায়ক হচ্ছিল না। রেঙ্গুনের আলোক ঝলমল জগৎ থেকে বেড়িয়ে পরতেই গ্রামের চির চেনা চিত্র ভেসে উঠল। যদিও আমি খুব বেশি একটা দেশ ঘুরে বেড়াইনি, সেই সৌভাগ্যও আমার খুব একটা হয়ে ওঠেনি তারপরেও আমার কাছে কেন যেন মনে হয় পৃথিবীর সব গ্রামের একটি অনণ্যসাধারণ বৈশিষ্ট আছে আর সেটি স্থান ভেদেও খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ, মাঠের মাঝে বিশৃঙ্খলিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি, আবার কোথাও বা সারি সারি গাছের ফাঁক গলে উঁকি দিয়ে যাওয়া ছোট ছোট খানা খন্দে ভরা জলাধার, কোথাও বা পতিত অনাবাদী জমি, এ যেন গ্রাম বাংলারই অবিকল প্রতিরূপ ভুল করে মিয়ানমারে জায়গা করে নিয়েছে! সময় গড়াতেই নিকশ কালো আকাশে যেন তারার মেলা বসে গেল। আকাশের এক কোণে চাঁদের সকরুণ উপস্থিতিও যেন সেই তারার মেলায় অনেকটাই মলিন! কোন তারা নেই সেখানে ? শপ্তর্ষি মণ্ডল থেকে শুরু করে কালপুরুষ কি ছিল না সেই তারার মেলায়! পথের বাঁক ঘুরতেই আকাশের বুকে সেই বিশাল তারার মেলা গাড়ির জানালার ফাঁক গলে যেন ভিতরে টুপ করে ঢুকে পরতে চাইছিল!
যাত্রা পথে মিনিট তিরিশেক বিরতি দিয়ে আবার যখন পথচলা শুরু করলাম ঘড়ির কাঁটা তখন ন’টা ছুঁই ছুঁই করছে। ছউন্দার পথটি অনেকটাই ন্যুইসং এর দিকে হওয়ায় এই পথ সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা ধারনা ছিল। এর আগে যখন ন্যুইসং গিয়েছিলাম তখন ছিল ভরা পূর্ণিমা। চারপাশে ছিল পূর্ণিমার রূপালী আলোর এক অদ্ভুত কোমলতা যা কি না সমস্ত প্রকৃতি জুরে অন্যরকম এক আবহ তৈরী করেছিল আর আজ জ্যোৎস্না থাকলেও সেটি অর্ধেক হওয়ায় তার আলোকচ্ছটা অনেকটাই যেন আলোআঁধারির অদ্ভুদ মিশেল। সেই আলো আঁধারির চাদর ভেদ করেই আমাদের গাড়ি আবার অবিরাম ছুটে চলল যেন অজানা এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে!
পাতেইনকে পাশ কাটিয়ে পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছতেই গাড়ির গতি আরো নিচে নেমে আসে। প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ বাকগুলো যদিও অন্ধকারে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কিন্তু চালকের গতি নিয়ন্ত্রন করায় বুঝতে কোন বেগ পেতে হচ্ছিল না যে একপাশে ইস্পাত কঠিন পাহাড় থাকলেও বিপরীত পাশেই ওৎপেতে আছে সুতীক্ষ্ণ খাঁদ! অন্ধকার এই পথে সাধারণত কোন চালক কেন আসতে চাইতো না সেটি এখন যেন একটু একটু করে উপলব্ধি করতে পারলাম!
অবশেষে কোন বিপত্তি ছাড়াই রাত ১২ টার দিকে আমরা আমদের গন্তব্যে এসে উপস্থিত হলাম। হোটেলের নিয়মতান্ত্রিক কাজ শেষ করেই ছুট লাগালাম রেস্তরাঁর খোঁজে। বার্মীজ দেশে যেখানে রাত্রি ৮ টা মোটামুটি নিশুতি রাতের দেশে পরিণত হয়ে থাকে সেখানে ১২ টা মনে হচ্ছিল যেন শ্মশানপুরী! গাড়ির চালক উদ্যোগী হয়ে অবশেষে কাছেপিঠেই একটি হোটেলের রেস্তরাঁয় নিয়ে এলেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল তারা রেস্তরাঁর ঝাপি বন্ধ করতে যাচ্ছে। এত রাতে অনাকাংখিত অতিথি দেখে তারা খুশি হলো না কি বিরক্ত হলো সেটি দেখবার মত ফুসরৎ আমাদের কারোরই ছিল না। অনেক যাচাই বাছাই করে অবশেষে আমাদের জন্য খাবারের ফরামায়েশ দেয়া হলে আমাদের সবার চোখে মুখে স্বস্তির ছায়া খেলা করে গেল এই ভেবে যে অন্তত রাত্রিটা ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটাতে হচ্ছেনা!
খাবার তৈরী হতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন সেই অবসরে আমরা সবাই চারপাশটি ঘুরে দেখার আশায় বেড়িয়ে পরলাম। রেস্তরাঁটি হোটেলের পেছন দিকে অবস্থিত হওয়া অদূরেই সাগরের ভিজে বাতাস চোখে মুখে লাগছিল। এর আগেও লক্ষ্য করেছিলাম কিন্তু আজ ধারণাটি বধ্যমূল হলো যে এদিকটা সকল হোটেলগুলো একদম সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত। হোটেলের সীমানা থেকে মাত্র কয়েকটি কদম ফেললেই চোখে মুখে সাগরের ভেজা বাতাসের স্পর্শ পাওয়া যায়। খুব বেশি দূরে না গিয়ে কাছেপিঠেই সৈকত বরাবর হাটাহাটি করে ফিরতেই গরম গরম খাবারের গন্ধ নাকে এসে লাগতেই বুঝতে পারলাম ক্ষিধের তীব্রতা! মোটামুটি মানের নৈশভোজ শেষে প্রিয় ক্যামেরাটি নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম সৈকত বরাবর। সঙ্গী হিসেবে পেলাম অঢেল ধৈর্যের অধিকারী মাঈনুলকে। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নিস্ফলা প্রচেষ্টা ক্ষান্ত দিয়ে রুমে ফিরতে গিয়ে ঘড়ির কাটা তিনটের ঘর যে কখন অতিক্রম হয়েগিয়েছে নিজেরাও বুঝতে পারি নি।
ইচ্ছে ছিল খুব সকালে উঠে সূর্যোদয়ের কিছু ছবি তুলে রাখব, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুম থেকে উঠলেও হতাশ হতে হলো দরজা ঘুলে বাড়ান্দায় দাঁড়াতেই। চারিদিকে প্রচণ্ড কুয়াশার চাদরের বলয় ভেদ করে সূর্যের চাঁদপনা মুখ দেখার আশা পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের নোনা জলে বিসর্জন দিয়ে আবার কম্বলের নিচে ঢুকে পরলাম। মাঈনুলকে আর জাগাতে হলো না ভেবে ভালই লাগছিল, বেচারা এমনিতেই রাত তিনটে পর্যন্ত জেগে ছিল আজ আবার ভোরে উঠতে হবে ভেবে কিঞ্চিত সঙ্কিত থাকলেও কেন যেন মানা করতে পারেনি! বেচারার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটানোয় বেশ তৃপ্তি অনুভব করলাম।
সকাল সাড়ে ন’টা ছিল প্রাতঃরাশ করার সময়সীমা। হোটেলের রিসিপশন থেকে সাবধানবার্তা ভেসে আসতেই সবাই বেরিয়ে পড়লাম। কচি আপা আর মফিজ ভাই আগেই কুয়াশার রহস্যভেদ করতে বেরিয়ে পরায় উনাদের সাথে হোটেলের রেস্তরাঁতেই দেখা হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর রাকিব ভাইদের দেখা মিলল। সবাই মিলে প্রাতঃরাশ শেষ করতেই মিনিট বিশেকের বিরতি দিয়ে বেরিয়ে পরার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য শ্বেতদ্বীপ (White Island) নামের প্রবাল দ্বীপ।
যেহেতু প্রবাল দ্বীপেই অনেকটা সময় কাটানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সে জন্য হোটেল থেকে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেই আমরা এগারোটা নাগাদ বেড়িয়ে পরি। গাড়িতে করে মিনিট দশেক পথ পারি দিয়ে যে জায়গাতে আমাদের নামিয়ে দিল স্থানীয় নামটি একটু খটমট হবার জন্য সেটি আয়ত্বে আনা সম্ভবপর হয়নি। স্থানীয় নৌকায় কিছুটা জলপথ পাড়ি দিয়ে প্রবাল দ্বীপে যেতে হবে। বার্মায় শরৎ আসে কি না ঠিক জানা নেই তবে আবহাওয়ার নিদর্শনটি বারাবার বাংলার শরৎকালকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। গাঢ় নীল সমুদ্রের বুকে চোখ ফেলতেই দেখা মিলল সাদা রঙের ছোট্ট দ্বীপটিকে, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলামে সেখান থেকে একদম দিগন্ত রেখা বরাবর সাদা রংটিকে প্রথম প্রথম সমুদ্রের ফেনা বলে ভ্রম জাগবে, তবে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে দ্বীপটির অস্তিত্ব। রাকিব ভাই আগেই বলে রেখেছিলেন যে দ্বীপটিতে অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে Snorkeling করতে পারা। সমুদ্রের গভীর তলদেশে যে জগৎটি রয়েছে সেটির প্রতি আমার দূর্বলতা অনেক পুরোনো। কিন্তু সময়, সুযোগ আর সামর্থ্যের সংমিশ্রন আমি কোন দিনই সেটি পূরণ করতে পারিনি আর ভবিষ্যতেও করতে পারবো কি না জানা নেই। কাজেই ছউন্দায় এসে Snorkeling করতে পারাটি আমার কাছে হাতের মুঠোয় আকাশ ধরতে পারার সমতূল্য মনে হতে লাগল! বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করে আমিও সম্মত হলাম। মাঈনুল আবার এক ডিগ্রি এগিয়ে গিয়ে মাছ ধরার সরঞ্জামও ভাড়া করে ফেলল সাগরের বুকে ছিপ ফেলে মাছ ধরবে বলে!
সমুদ্র সৈকত ঘিরে কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর স্থানীয় নৌকার মাঝি হাক দিলেই আমরা পুরো দলবল নিয়ে উঠে পড়ি সেই নৌকায়। নৌকার গুলুইয়ে বসবার প্রতি আমার বেশ ছোট বেলা থেকেই দূর্বলতা। সেই আগ্রহে নৌকার সামনে বসতে গেলেই নৌকার মাঝি প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত দিল ভিতরে এসে বসতে! ভিন দেশে ভাষাগত সমস্যার জন্য তর্ক করাটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বিশ্বাস করে নৌকার ভিতরে বসলাম ঠিকই কিন্তু আমিই ছিলাম একদম শুরুর দিকে। কিছুদূর এগুনোর পর মনে হলো মাঝির কথায় ভাল ভাবে সায় দিয়ে একদম শেষ প্রান্তে না বসে কি দারুন ভুলটাই না করেছি! সাগরের ঢেউএর বিপরীতে নৌকার সম্মুখভাগ থাকার জন্য ঢেউএর ঝাপটা প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মতই ভিতের প্রবেশ করতে লাগল! হাতে ক্যামেরা আর পকেটে মোবাইলের চিন্তায় তখন আমি রীতিমত তটস্থ! ক্যামেরাটি কোনমতে ভিতরের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে কিছু একটার আড়াল নিতে নিতেই আমি মোটামুটি কাক ভেজা হয়ে গিয়েছি। উপায়ন্তর না দেখতে পেয়ে ক্যামেরাটা কচি আপার কাছে সমর্পণ করে সাগরের জলের ধাক্কা খেতে খেতেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম। মিনিট পনের পর নৌকার মাঝি আমাদের প্রবাল দ্বীপে নামিয়ে দিলে আমরা আর কালক্ষেপণ না করে দ্বীপে নেমে পড়লাম।
প্রথম দিকে ধারণা করেছিলাম পুরো দ্বীপটি অকৃত্রিম ভাবেই দেখতে পারবো কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি পড়ল দ্বীপের বুকে পা রাখবার আগেই। বিশালাকৃতির মৎসকণ্যাকে যখন দেখতে পেলাম দুহাত জড়ো করে স্বাগত জানাচ্ছে দ্বীপে আগত পর্যটকদের তৎক্ষণাত অকৃত্রিম দ্বীপের আশা সাগরের নোনা জলে বিসর্জন দিয়ে ভাবতে লাগলাম এর চেয়ে বেশি যেন আর দেখতে না হয়!
মিয়ানমারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য বড়ই লক্ষণীয় আর সেটি হচ্ছে যত দূর্গমই হোক না কেন পর্যটকদের পদধূলি যেখানেই অর্পিত হয়েছে সেখানেই ছোটবড় আকৃতির প্যাগোডা সেখানে নির্দ্বিধায় স্থান করে নিয়েছে। এই শ্বেতদ্বীপেও তার ব্যতিক্রম দেখলাম না, যদিও দেখব বলে আশাও করি নি কখনও!! প্যাগোডাকে পাশ কাটাতে যাব সেই মুহুর্তে রাকিব ভাই ছোটখাট একটা দুঃসংবাদ অত্যন্ত বিনীত ভাবে উপস্থাপন করলেন। আমাদের এই বন্ধুর পথে নিয়ে আসা মাইক্রবাসটি নাকি বারোটার মধ্যেই ছেড়ে দিতে হবে! যদি আমরা দীর্ঘসময় এই দ্বীপে অবস্থান করতে চাই তাহলে স্থানীয় বাসে চেপে প্রথমে পাতেইন পরে সেখান থেকে আরেকবার বাস পরিবর্তন করে তবেই রেঙ্গুন যেতে হবে! এ যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা! বলে কি !! মাত্রই দ্বীপে পা রাখলাম আর এখনই চলে যেতে হবে! এযে দেখছি সত্যিকারের মগের মুল্লুক! আসলে ভুল বোঝাবুঝির গলদটি সেই শুরুতেই ছিল! আমাদের গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল এমন শর্তে যে আমরা সন্ধ্যে নাগাদ রেঙ্গুন ফিরব আর সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গাড়িটি আবার ভাড়া দেয়া হয়েছিল অন্য পক্ষকে! সত্যি বলতে আমি তখন কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না কি করব! কি করা উচিৎ!! নিজের আগ্রহ তো আছে সাথে কচি আপারাও আছেন, জানা ছিল ভদ্রতার সৌজন্যে হয়তো উনারাও রাজি হয়ে যাবেন চলে যেতে কিন্তু যে সময়টি উপভোগ করার জন্য এখানে আসা সেটিই অনুপভোগ্যই থেকে যাবে।
আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বিত অবস্থা দেখে রাকিব ভাই তখন চেষ্টা চালালেন বিকল্প উপায়ে আরেকটু সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কি না, বলাই বাহুল্য কিছুটা উদ্যেগজনক সময় কাটানোর পর অবশেষে উনি সক্ষম হলেন গাড়ির চালকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের! ঠিক হল যেখানেই থাকি না কেন ১২টার পরিবর্তে বিকেল ৫টা নাগাদ রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে রওনা দিব! কোন কিছু একদম না পাবার চেয়ে কিছুটা পাওয়াও মন্দ নয় ভেবেই সকলেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম, যদিও এই জন্য বেশ কিছুটা আক্কেল সেলামী দিতে হলো!
শুরু হয়ে গেল আমাদের নিজস্ব সময় উপভোগ করার। নিজের কথা বলতে গেলে সুন্দর যা কিছু চোখে পরে সেটাকেই ক্যামেরাবন্দী করার সুযোগটাকেই আমি চরম উপভোগ্য মনে করি, বুঝতে পারলাম ত্রিদিব ভাবীও অনেকটা একই ভাবনার মানুষ!! আমরা দুজনেই ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলাম যার যা ভাল লাগার বিষয়গুলোকে ক্যামেরা বন্দী করতে। রাকিব ভাই নিঃসন্দেহে একটু বেশি পরিমানের ধৈর্যহীন মানুষ, উনার আগ্রহ আবার Snorkeling দিকে! নিজে না নেমে আমাদের সবাইকে তাগাদা দিতে লাগলেন আমরা যেন সময় নষ্ট না করে Snorkeling নেমে পড়ি! এই জন্য দু চারটে ঝাড়ি মারতেও দেরী করলেন না। ত্রিদিব ভাবী সেই ঝারি শুনে পরিমরি করে ছুট লাগালেন Snorkeling এর জন্য। কচি আপা সাতারে অভ্যস্ত না হওয়ায় ভাইয়া আর কচি আপা Snorkeling এর ধারের কাছেও ঘেষলেন না! আমি আরও কিছুটা সময় ক্যামেরা হাতে ব্যয় করে নেমে পরলাম Snorkeling এ। এবং নামা মাত্রই বুঝতে পারলাম রাকিব ভাইয়ের তাগাদা দেবার নেপথ্য কারণ!
দ্বীপের এই অংশটিকে তৈরীই করা হয়েছে Snorkeling এর উপযুক্ত করে! সেটি পানিতে নামা মাত্র টের পেলাম। যদিও আমরা যতটুকু জায়গা জুড়ে Snorkeling করেছি তাতে করে সমুদ্রের নিচের রহস্যময় জগৎ সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণাও পাওয়া যাবে না তারপরেও এই অভিজ্ঞতাও নেহাত কম নয় সেটি আমি দ্ব্যার্থহীন ভাবে বলতে পারি। সমুদ্রের নীল স্বচ্ছ জলে চোখ মেলতেই নিচের প্রবালগুলো নজরে এলো। অনভ্যস্ত চোখদুটোর একটু সময় লাগল অভ্যস্ত হতে তারপরেই দেখতে পেলাম নানা রঙ বেরঙের মাছের রহস্যময় জগৎ! নিজদের অভয়াশ্রমে আমরা যে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি সেটি যেন ভ্রুক্ষেপে জানিয়ে দিতে চাচ্ছিল বারবার! কিছু কিছু মাছ আবার ভীষন লাজুক প্রকৃতির ন্যুনতম উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই লেজ নাড়িয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছিল সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে থাকা পাথরের আড়ালে। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্য করে দেখলাম অনেক মাছের সারি জোট ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, কাছে যেতেই নির্দিষ্ট দুরুত্বে সরে গিয়ে আবার জোট ধরে দাঁড়িয়ে পরে! এ যেন এক ছেলেখেলায় মেতে ওঠা!
কোথাও বা বড় বড় পাথরের বুকে শামুক ঝিনুকের খোলসগুলো বছরেরে পর বছরে ধরে জমে থেকে থেকে তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠেছে। ঢেউএর একটু আঘাতে নড়ে উঠলে বা পা পিছলে গেলেই চামড়া চিড়ে দিয়ে যাচ্ছে প্রবালের সুতীক্ষ্ণ ফলাগুলো!! মাঝে মধ্যে Snorkeling এর জন্য ব্যবহৃত নলটি স্থানচ্যুত হলে সেটিকে ঠিক করতে হচ্ছিল তখন আবার জলের নিচে পা ফেলতেও সমস্যা, নল গলে জলের ধারা মুখে কলকল করে প্রবেশে সচেষ্ট।
প্রায় ঘন্টাখানেক অতল জলের নিচে না হলেও স্বল্পজলের বাহারী দুনিয়া আমাকে যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল। অনেক আগে থেকেই এই জগৎ সম্পর্কে একটা দূর্বলতা কাজ করায় যা কিছুই দেখছিলাম মুগ্ধতা যেন ততই বাড়ছিল। যদিও যতটুকু দেখতে সক্ষম হয়েছি সেটি বিশাল সমুদ্রের একফোঁটা জলের সমতুল্য হবে কি না সন্দেহ! পুরো দ্বীপটিই সমুদ্রের নীল জলে বেষ্টিত হওয়ায় দ্বীপের অপর পাশটিকেও বেশ আকর্ষনীয় লাগছিল। জল থেকে ভেজা শরীরে পা ফেলতে সমস্যা হচ্ছিল কেননা ঘন্টা খানেক জলের নীচে থাকার ফলে পায়ের পাতা বেশ নরম আর পিচ্ছিল হয়েছিল আর সেই পা যখন সুতীক্ষ্ণ প্রবালের উপর ফেলছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি পায়ের তালু ছিদ্র করে তীক্ষ্ণফলাগুলো মাংসের ভিতর গেথে পরে!
বাতাসের তীব্রতার জন্যই হোক আর অন্য যে কারণেই হোক না কেন দ্বীপটির বিপরীত দিকটায় ঢেউএর উপস্থিতি অনেকটাই বেশি থাকায় সমুদ্রের রূপটি অসাধারণ লাগছিল। নীল আকাশের নীচে নীল জলে সমুদ্রের এই রূপটি সহসা চোখে পরে না। আমিও আর কাল ক্ষেপণ না করে ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম সেই নান্দনিক দৃশ্যগুলোকে ক্যামেরায় বন্দী করতে! তবে সেটিও বেশিক্ষণ সম্ভব হলো না ঘড়ির কাঁটার সাথে পেরে না ওঠায়! বেলা দুটো নাগাদ আমরা যখন ফিরে এলাম তখন পেছনে পরে রইল অতল জলের গভীরে চিরবহমান রঙ্গীন এক জগৎ যার বিন্দুতুল্য নিদর্শন দেখবার সৌভাগ্য হলো!
হোটেল গোল্ডেন বিচেই আবার ফিরে আসতে হলো কেননা শরীর জুড়ে নোনাজলের অস্তিত্ব নিয়ে আর যাই হোক দীর্ঘ সময় ডাঙ্গায় থাকা যায় না! হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে হোটলের বহিঃপ্রাঙ্গণের উম্মুক্ত স্থানে গোসল করার অনুমতি পাওয়া গেল। আমরা দলবলে চলে গেলাম সেখানে। কালক্ষেপণ না করে গোসল সেরে ফেলতেই অনুভব করলাম পেটে সুচোর দৌড়ানি! হোটেল থেকে দ্রুত বেড়িয়ে এসে স্থানীয় বাজারের মাঝে অবস্থিত এক রেস্তরাঁয় বসে গেলাম মধ্যহ্নভোজের জন্য। খাবার প্রস্তুতে একটু সময় মিলবে জানতে পেরেই আমরা ক’জন বেড়িয়ে পরলাম উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারটি একটু ঘুরে ফিরে দেখার! এদিক ওদিক ঘুরে যতটুকু বুঝতে পারলাম পুরো বাজার জুড়েই শুটকি মাছের উপস্থিতি অনেকাংশেই বিদ্যমান এর ফাঁকে কিছু শামুক আর ঝিনুকের তৈরী তৈজসপত্র আর স্যুভেনীর রয়েছে বিক্রির তালিকায় তবে স্বাভাবিক ভাবেই মূল্যগুলো একটু বেশি চড়া মনে হলো। কোন কিছু কেনা যেহেতু উদ্দেশ্য ছিল না, সেহেতু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে মিনিট ত্রিশেক পর ফিরে আসতেই নাকে ঢুকলো রসুই ঘর থেকে রান্না করা সামুদ্রিক মাছের মনমাতানো সুগন্ধ! সুগন্ধেই যেন অর্ধভোজন সম্পন্ন! ক্ষুধাও লেগেছিল জাম্পেস সেজন্যই কি না বুঝতে পারলাম না তবে প্রতিটি রান্নাই ছিল চমৎকার সুস্বাদু। পেটপুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে যখন রেস্তোরাঁ ত্যাগ করি ঘড়ির কাটা তখন ঠিক পাঁচটার ঘড়ে প্রবেশ করতে উম্মত্ত!!
ছওউন্দায় প্রবেশকাল রাত্রিকালীন হওয়ার ফলে ঠিকমত বুঝতে পারি নি কিন্তু এখন যখন দিনের আলোয় সেই পাহাড়ি রাস্তা ধরে ফিরে আসছিলাম তখন বুঝতে পারলাম কি অসাধারণ সুন্দর ছিল সেই প্রবেশ পথ! পুরো রাস্তার একপাশটা পাহাড়ে আচ্ছন্ন আরেক পাশ জুরে গভীর খাঁদ আর খাঁদ মিশে গিয়েছে নাম না জানা এক ঝিলের সাথে। ঝিলের বুকে ধারণ করা টলমলে জল পুরোপরিবেশটাকেই যেন মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। সূর্যও ধীরে ধীরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পরায় তার লাল আলো সেই জলের উপর পরে পুরো আবহটাকেই করে তুলেছে স্বপ্নীল! এই জল কোথা থেকে এলো কীই বা এর উৎসস্থল জানা নেই কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন সেটুকু না থাকলে পুরো পরিবেশটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত! আরো একবার বিমোহিত হয়ে যেতে হলো প্রকৃতির অপূর্ব এই রূপ অবলোকন করতে পেরে!!
সময় যতই এগুতে লাগলো সূর্য ততই যেন গড়িয়ে পরতে লাগল পাহাড়ের কোলে। শীতকালে এই সময়টায় দিগন্ত জুড়ে অসম্ভব গাঢ় লাল আভা ছড়িয়ে পরে পুরো প্রকৃতিকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, কেন জানি না এই সময়টায় মনটা ভীষন উদাস হয়ে পরে হয়তো বা অনন্ত কালের গভীরে আরেকটি আনন্দময় দিনকে হারিয়ে ফেলার বেদনায়, অথবা ঝলমলে আলোকৌজ্জ্বল জগৎটাকে পেছনে ফেলে রেখে অন্ধকার জগতে প্রবেশের সন্ধিকাল বলেই এমনটা হয়!! জানি না কেন যেন সেটা এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারলাম না! গাড়ির জানালা দিয়ে চোখ মেলে বাইরের জগৎটাকে যতটা সম্ভব দেখতে পারা যায় ততটুকই গোধূলির এই অপূর্ব রূপ দেখতে দেখতে কখন যে তন্দ্রার মত এসেছিল বুঝতে পারি নি, গাড়ির তীব্র ঝাকিতে যখন চোখ মেললাম তখন পৃথিবীর এই প্রান্তে চন্দ্রশাসন শুরু হয়ে গিয়েছে! যদিও পূর্ণিমার দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় নিকশ গাঢ় আকাশ জুড়ে আবারও তারা মেলা দেখা মিলতে শুরু করেছে কিন্তু কতক্ষন যে তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকবে সেব্যাপারে আমি সন্দিহান!
সেই একই পথ সেই একই সময় তারপরও যেন মনে হয় কত যুগের অবসান হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে! ফিরে আসবার সময় ভাবছিলাম আমাদের জীবনটাও এমনই স্বল্পস্থায়ী নয় কি? সারা দিনের হাসি আনন্দকে পেছনে ফেলে প্রতিনিয়তই কি আমরা ছুটে চলছি না শেষের ঠিকানায়? যদিও জানা নেই এই শেষের ঠিকানা কোথায়, এই পথেরই বা শেষ কথায়, ছুটে চলতে হয় বলেই আমরা ছুটে চলেছি পেছনে হয়তো পরে থাকে জলের নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় এক রঙ্গীন জগৎ আর সামনে নিকশ কালো অন্ধকার...যদিও তারারা জেগে থাকে সঠিক পথের আলোকবর্তী হয়ে প্রয়োজন শুধু তাদের ঠিক মত খুঁজে নেয়া..!!
সময়ের অভাবে ছবি আপলোড করা হয়ে ওঠেনি। অন্য একটি ব্লগে জায়গাগুলোর ছবি আপলোড করা হয়েছে। সবার সুবিধার্থে লিংকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো...
ক্যামেরার চোখে দেখা ছউন্দা সমুদ্র সৈকতঃ মিয়ানমার ভ্রমণ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২২