somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সি গেমসঃ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং একটি অভিজ্ঞতা

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রহ্মদেশে পদধূলি দেবার পর থেকেই আকাশে বাতাসে একটি শব্দ বারবার ভেসে বেড়াচ্ছিল। Southeast Asian Games (SEA Games) যেখানেই যাই না কেন সর্বত্রই এর সরব উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। রাস্তার চারপাশে শোভা বর্ধনকারী বিশালাকার বিলবোর্ডগুলো যেন ত্বারস্বরে জানিয়ে দিচ্ছিল এর মহিমা। কিন্তু আমার জ্ঞানের ক্ষুদ্রতার দরূণ এর কিছুই মনের মাঝে আঁচড় কাটতে পারছিলনা কোন ভাবেই। SEA Games নিয়ে আমার ভাবনা অনেকের কাছেই হাসির খোড়াক হবে বিধায় এখানে উল্লেখ করছি না। তবে দিন যতই নিকটবর্তী হতে লাগলা আমার চারপাশে এর জ্বর যেন আনুপাতিক হারেই বৃদ্ধি পেতে থাকল। এমনকি আমাদের বাঙ্গালী সমাজেও এর রেশ পরতে শুরু করল। খেলাধুলার প্রতি আমাদের মিয়ানমার প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের শ্রদ্ধেয় পলাশ ভাইয়ের দূর্বলতা এতদিনে কম বেশি আমার জানা হয়ে যাওয়ার দরূণ SEA Games নিয়ে যেকোন আলাপ আলোচনাতে সঙ্গত কারণে আমি একটু দূরে দূরে থাকতাম। কিন্তু পলাশ ভাইও পলাশ ভাই, কিভাবে যে আমাকেও উনাদের সঙ্গী করে নিয়ে ফেললেন সেটি ভাবতে আজও আমি বিহব্বল হয়ে পড়ি

অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম শেষে প্রায় বেশ কয়েকবার অসম্মতি প্রদান করেও অবশেষে আমিও সহযাত্রী হলাম ১১ তারিখের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষদর্শী হতে। অজানা কোন এক কারণে এর বেশ ক’দিন আগে থেকেই এর অনেকগুলো খেলাই শুরু হয়ে গিয়েছিল, তার পরেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১-১২-১৩ ইং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিকেলে শুরু হওয়ার দরূন আমরা রেঙ্গুন থেকে কঁচিকাঁচা মিলে মোট ১২ জনের ছোটখাট একটি দল দুটো গাড়ি নিয়ে সকাল ৯ টা নাগাদ যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের গন্তব্যস্থল মিয়ানমারের নব্য রাজধানী ন্যাপিডো (Nya Pyi Taw)। মাস তিনেক আগেই এই শহরটি আমার দেখা হয়েছিল। শহরটি আসলে যেন ছবির মত সুন্দর। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে একটি শহরকে কি করে অত্যাধুনিক আর আকর্ষণীয় করা যায় তার অন্যতম উদাহরণ যেন এই শহর। তবে অন্যান্য ভ্রমণ পিপাসুর মতই আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় আর উপভোগ্য বিষয়টি হচ্ছে রেঙ্গুন থেকে ন্যাপিডো যাবার মূল সড়ক পথ যা সর্বসাধারণের কাছে মাণ্ডালে হাইওয়ে নামেই বেশি পরিচিত। আট লেনের (প্রস্তাবিত যা বর্তমানে চার লেনে সম্পাদিত) বিশাল এই হাইওয়ে কোন অংশেই ইউরোপ আমেরিকার হাইওয়ের চেয়ে কম হবে না এটি আমি হলপ করে বলতে পারি। রাস্তার মধ্যবর্তী একটি লেন সড়ক দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার প্রাণন্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যদি এই সড়কদ্বীপে সবুজের ছোঁয়া বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এই হাইওয়ে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষনীয় আর দৃষ্টি নন্দন হাইওয়েতে রূপান্তরিত হবে।


রেঙ্গুন থেকে ন্যাপিডোর দুরত্ব প্রায় ৩৩০ মাইল। মাঝপথে ৩৯ মাইল আর ১১৫ মাইলে জলযোগ এবং জলবিয়োগের ব্যবস্থা থাকায় এই দুটো স্থান ব্যতিত অন্যান্য জায়গায় কালে ভদ্রে লোকালয়ের চিহ্ন চোখে পড়ে। এর আগে যাওয়া এবং আসা উভয়ই রাতে হবার জন্য এই হাইওয়ের প্রকৃত সৌন্দর্য কখনই উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। এবার এই সুযোগ আসাতে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। রাস্তার দুপাশ ধরে কখনও বা বিস্তৃত মাঠ, যার কোন কোনটি ফসলে ভরা আবার কোন কোনটিতে প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই। আবার কিছু দুরে যেতেই চোখে পড়ে মাঝারি মানের সবুজ পাহাড়। যাত্রা পথে প্রকৃতির এতো বৈচিত্রতা দর্শনার্থীর জন্য কখনই ক্লান্তিকর বা অবস্বাদ্গ্রস্থ করে তুলবে বলে মনে হয় না। হাইওয়ের প্রতিটি বাঁকেই যেন প্রকৃতি তার রহস্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে সবার মনোরঞ্জনের জন্য।

বেলা ১১ টা নাগাদ আমাদের গাড়ি যখন ১১৫ মাইলে থামল তখন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম ১১৫ যেন নববধূর সাজে সজ্জিত। এর আগে দুবার এসেছি, তখন এখানে প্রাণের চিহ্ন বলতে ছিল গোটা দশেক খাবারের রেঁস্তরা আর দূর দুরান্ত থেকে যাত্রা বিরতি দেয়া ক্লান্ত কখন বা ঢুলু ঢুলু চোখের যাত্রীবৃন্দ। এর ফাঁক গলিয়ে অন্য কোন প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্করই ছিল। কিন্তু আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন ভুল করে কোন বিয়ে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছি তাও বিনা নিমন্ত্রণে অযাচিত ভাবে। চারিদিকে নানা রঙের ছেলে বুড়ো কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণী কে নেই ? এ যেন এক অসাধারণ মিলন মেলা! কোথাও বা বিশালাকৃতির মঞ্চ তৈরী করে গানের তালে তালে অক্লান্তভাবে নৃত্য পরিবেশন করে যাচ্ছে একদল অল্প বয়সী বাচ্চা, তার পাশেই আরেকটি মঞ্চে চলছে আধুনিক নৃত্য। দর্শকসারীতে যারা আছেন তারাও যেন বিভ্রান্ত কোনটি রেখে কোনটি উপভোগ করবেন। কোথাও বা ছোট খাটো ভ্রাম্যমাণ স্টল খুলে কোমল পানীয় বিক্রেতা বিনামূল্যে তাদের পানীয় বিতরণ করছেন উপস্থিত জনতার মধ্যে। কোথাও বা খেলনা মুখোশ বিক্রি হচ্ছে। এখানে এসে অনুধাবন করলাম SEA Games আসলেই এদের কতটা অনুপ্রাণিত করেছে।

এবারের SEA Games টি হচ্ছে ২৭তম আসর আর মিয়ানমারে ৪৪ বৎসর পর*। এর আগে এখানে আরো দুবার ১৯৬১ এবং ১৯৬৯ সালে এই অনুষ্ঠানটি এখানে হয়েছিল, দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক ভাবে নিষেধাজ্ঞা কাটানো এই মিয়ানমারের জন্য এটি সত্যিকার অর্থেই বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আর সেটি মোকাবেলা করতেই মিয়ানমার সরকারের প্রানোবন্ত এই প্রচেষ্টা হৃদয় ছুঁয়ে গেল নিমিষেই!

কিছুক্ষন পরেই সবার মধ্যে কেমন যেন উত্তেজনা পরিলক্ষিত হল। দুএকটা সাইরেনের শব্দ কানে আসতে উৎসুক জনতা দুপাশে সারি বেধে দাঁড়িয়ে পরল, লক্ষ্য করে দেখলাম সবার হাতেই ক্ষুদ্রাকৃতির মিয়ানমারের জাতীয় পতাকা শোভা পাচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার মাঝ দিয়ে গর্বিত ভাবে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগিয়ে এল SEA Games এর মশাল। বেশ বড়সড় একটি গাড়ি বহর নিয়ে এই মশাল যাত্রা শুরু করেছিল রেঙ্গুন থেকে, গন্তব্য ন্যাপিডো। মশালবাহী গাড়ি বহর যতই এগিয়ে আসছিল, হর্ষোধ্বনি যেন ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিল। আমরা রাস্তার পাশেই একটি রেস্তরায় বসে নাস্তা খাবার ফাঁকে ফাঁকে এই আনন্দঘন মুহুর্তটি উপভোগ করছিলাম!

ঘন্টাখানের যাত্রা বিরতি শেষে আমরা আবারও যাত্রা শুরু করলাম। আগেই অবগত ছিলাম SEA Games উপলক্ষ্যে ন্যাপিডো অত্যাধুনিক সাজে সজ্জ্বিত হয়েছে। কিন্তু ন্যাপিডোর পাশাপাশি এর রেশ যে পথের দুপাশের জনপদেও ছড়ে থাকবে এই বিষয়ে বিন্দু মাত্র ধারনা ছিল না। যখন সেটি অবলকোন করলাম, প্রবল বিস্ময়ে আমি তখন বিস্মিত। যাত্রাপথের এক জায়গায় এসে দেখলাম স্থানীয় গ্রামবাসী ছোট ছোট ব্যানার ফেস্টুন জাতীয় পতাকা হাতে প্রখর রৌদ্দুরের মাঝেও দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের সংবর্ধনা দিচ্ছে। কোন কোন স্থানে দেখলাম জনগন ঝেড়ে দৌড়ুচ্ছে, পাছে সংবর্ধনা জানাতে দেরি না হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে ১১৫ থেকে কিছু দূর এগুতেই আমরা মশালবাহী গাড়ি বহরকে পাশ কাটিয়ে চলে আসি এবং তারাও বিনা বাধায় আমাদের পাশ কাটানোর সুযোগ করে দেয়। ঘটনটা মনের মাঝে একটি স্বপ্নের উকি দিয়ে যায় আর ফেলে রেখে যায় একটি অনাকাঙ্খিত প্রশ্নও! আমাদের বাংলাদেশে এই ধরণের গাড়িবহরকে কখনও কি অনুমতি দেয়া হতো তাদের পাশ কাটিয়ে অতিক্রম করার ? উত্তরটি বোধ করি সকলেরই কম বেশি জানা!
আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল যে আমরা যারা পরবর্তী দিন অফিস করবো তারা রাতেই রেঙ্গুনে ফিরব এবং বাকীরা ন্যাপিডোতে রাত কাটিয়ে পরদিন ফিরবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ন্যাপিডো পৌঁছে আগে থেকে নির্ধারিত হোটেলে উপস্থিত হই। প্রয়োজনীয় বিশ্রাম শেষে আমরা যখন বেরিয়ে পরি ঘড়ির কাঁটা তখন চারটে অতিক্রম করেছে। আগেই উল্লেখ করেছি যে ন্যাপিডো শহরটিকে গড়ে তোলা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক শহরের আদলে, অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা এই শহরটি অনেকটি মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ! শহরের অভ্যন্তরে আট লেনের বিশালাকার মূল সড়কটিই মূলত ন্যাপিডোর প্রতিচ্ছবি বহন করে। রাস্তায় বের হতেই চোখে পড়ল নজরকারা বিভিন্ন রকমের ব্যানার ফেস্টুন আর বিশালাকৃতির তোরণ। সর্বত্রই SEA Games উপভোগ করার জন্য আসা দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে সাদর সম্ভাষন বানী। পথের প্রতিটি মোড়েই নিরাপত্তা কর্মীদের সরব উপস্থিতিও নজরে পরার মত। চারিদিকে উৎসবের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর পূর্বে যেবার ন্যাপিডোতে এসেছিলাম তখন খুব বেশি লোকারণ্য চোখে না পরলেও এবার যেদিকে তাকায় সেদিকেই যেন মানুষজনের সরব উপস্থিতি। এর মাঝে অনেকেই আবার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় মগ্ন। আমরা শহরের একটু বাইরের দিকে অবস্থান করায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছুতে কিছুটা সময় লেগে যায়।

জনসমাগমের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বার তৈরী করায় আমাদের একটু বেশি সময় লেগে যায়। এর উপর আবার মূল স্টেডিয়ামের বেশ খানিকটা আগেই গাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। প্রাথমিক নিরাপত্তা বলয় পাড়ি দিয়ে আমরা উঠে পড়ি শাটল বাসে। মিনিট দশেক পর বাসটি আমাদের নামিয়ে দেয় স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে। বাস থেকে নামতে চোখে পড়ল নব সাজে সজ্জিত Wunna Theikdi Sports Complex স্টেডিয়ামটি। ভাল ভাবে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পড়ল আরো দুটো বিশালাকারের স্টেডিয়াম। বিশাল জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ইনডোর স্টেডিয়াম সহ বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম যা কি না একে অপরের কাছ থেকে স্বল্প দুরেই অবস্থিত। আরো দুদফা নিরাপত্তা বেষ্টনী পারি দিয়ে অবশেষে আমরা উপস্থিত হলাম অনুষ্ঠানস্থলে। ভেতর ঢুকতে বুঝতে পারলাম আমাদের কিছুটা দেরি হয়েছে, অনুষ্ঠান বেশ আগেই শুরু হয়ে পড়েছে।

ভিতেরে ঢুকতে চোখে পড়ল অত্যন্ত পরিপাটি করে সাজানো গুছানো মাঝারি আকৃতির একটি স্টেডিয়াম, দেখেই মনে হচ্ছিল খুব বেশি দিন হয়নি এর সৃষ্টিতে। পরে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম SEA Games উপলক্ষ্যেই এই স্টেডিয়াম তৈরী করা হয়েছে। আশে পাশে লোকে লোকারণ্য। নানা রঙের নানা দেশের নানা সংস্কৃতির এক মিলন মেলা যেন এই ন্যাপিডো শহরের Wunna Theikdi Sports Complex- এ । সবার জন্য আসন বিন্যাস পূর্ব থেকে নির্ধারিত করা ছিল আর অনেক পরে টিকিট সংগ্রহ করার দরুন আমি, তসলিম এবং ইউনুস ভাই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে যাই।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য নব নির্মিত মঞ্চটি এক কথায় দারূন বৈচিত্রময়। নিজস্ব সংস্কৃতিকে নানা রঙে কি করে যে বর্ণিল করা যায় সেটি বোধ করি প্রত্যক্ষদর্শী না হলে এটি বোধগম্য হবে না। পুরো স্টেডিয়ামকে দু’ভাগে বিভক্ত করে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে, বড় আকারের মনিটর স্থাপন করা হয়েছে দর্শকদের বিনোদনকে পূর্ণতা এনে দেবার জন্য। প্রথমদিকে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতের প্রদর্শন চলল। ঘন্টা খানেক পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি থান সেইন (Thein Sein) উপস্থিত হলে মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১১ টি দেশের মোট ৪৭৩০ জন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া মার্চপোষ্টের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠিকতা শুরু হলে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। সঙ্গত কারণেই আয়োজক দেশ হিসেবে মিয়ানমারের অংশগ্রহনকারী খেলোয়াড়দের সংখ্যার আধিক্যতা চোখে পড়ে।
এর আগে কখন কোন আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধূলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার সৌভাগ্য না থাকায় ভিতরে ভিতরে আমি বেশ শিহরিত হয়েছিলাম। প্রায় ১২০০০ কিশোর কিশোরী এবং Myanmar Royal Auspicious Orchestra মিলে সম্মিলিত ভাবে এই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ পরিচালনা করে থাকে। এর আগে প্রায় ৬ টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেমসের মশাল হাত বদল হয়ে আসে মিয়ানমার আর্চারি দলের প্রধান Wai Lin Tun এর কাছে, যিনি তীর ছুঁড়ে গেমসের মশাল প্রজ্জ্বলন করেন। এর পরেই শুরু হয় আকর্ষনীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।*
একটি দেশের পুরো ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে কতটা সুন্দর আর আকর্ষনীয় ভাবে যে উপস্থাপন করা যায় তার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি। লেজার শো, ভিডিও গ্রাফিক্স এর সংমিশ্রনকে কাজে লাগিয়ে অনন্যসুন্দর এই পর্বটি সাজানো হয়েছিল মিয়ানমারের ইতিহাস, সংস্কৃতি মূল্যবোধ তুলে ধরার জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস অত্যন্ত নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত সেই অনুষ্ঠান আদ্যপান্ত উপভোগ করেছিল উপস্থিত সকল দর্শক। অনুষ্ঠানের মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন স্বাদের গান যেন সেটিতে আরো ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। অন্যান্য সব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতই এখানেও ছিল আতশবাজি। নানা রঙের ঝলমলে সেই আতশবাজিও এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষন।

সেই রাতেই ফিরতে হবে বিধায় মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানার কিছু আগেই সঙ্গত কারনে আমরা অনুষ্ঠনাস্থল ত্যাগ করি। স্টেডিয়ামের বাইরে বের হতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে আরো একদফা আতশবাজি আমাদের সবার কাছেই চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। স্টেডিয়াম থেকে বেড় হয়ে আমরা হোটেলে ফিরে আসি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বেড়িয়ে পরি রাস্তায় উদ্দেশ্য পেটপূজো! খানিকটা অজ্ঞতার কারণে সেই বেলা ১১টার পর থেকে আমরা সবাই আক্ষরিক অর্থেই দানাপানি ছাড়া। সবার ধারণা ছিল, স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে খাবার অবশ্যই পাওয়া যাবে, কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোন খাবার প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় সবাইকে মোটামুটি ক্ষুধার্তই থাকতে হয়েছিল। বার্মীজদের এমনিতেই অলস জাতি হিসেবে বেশ নামডাক আছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে না আসতে এরা গর্তে ঢুকে পড়ে। আর এই ন্যাপিডো শহরে তো কথাই নেই। রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ কোন রেস্তরা খোলা পাওয়া যাবে কি না এই বিষয় নিয়ে আমরা সবাই মোটামুটি দোদুল্যমান ছিলাম। অবশেষে পলাশ ভাইয়ের সক্রিয় ভূমিকায় বেশ নামকরা এক রেস্তরার খোঁজ মিললে সবাই গোগ্রাসে রাতের খাবার খেয়ে নেই।

সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আমার মনের মাঝে একটি সন্দেহ উঁকি দিচ্ছিল, আজাদ ভাই এই রাতে রেঙ্গুনে ফিরতে সম্মতি প্রদান করবেন, না কি রাত্রে ন্যাপিডোতেই থেকে যাবেন। সংকুচিত চিত্তে প্রশ্নটা উত্থাপন করতেই উনি অভয় দিলেন রাতেই রওনা করবেন কিন্তু তার পূর্বে কিছুটা সময় প্রয়োজন বিশ্রামের জন্য। আমি আর না ঘাটিয়ে সম্মতি প্রদান করলাম, এছাড়া যে অন্য কোন উপায়ও ছিল না!

রাত্রি ২টা নাগাদ সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম শেষে আমরা ফেরার পথ ধরলাম রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে। সমস্ত শহর তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মাঝে মধ্যে ছন্নছাড়া ভাবে দু একটা গাড়ি চোখে পরলেও পুরো শহরজুড়ে প্রাণের স্পন্দন খুজে পাওয়া ভার। এই নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে বেড়িয়ে পড়লাম তসলিম, আজাদ ভাই আর আমি এই তিনজন। ন্যাপিডো শহরে যাওবা আলোর উপস্থিতি ছিল, হাইওয়েতে উঠতেই সেই আলোও নিভে গেলে সমগ্র অন্ধকার যেন আমাদের গ্রাস করে নেয়। ওরা দুজন সামনের সারিতে বসায় আমি পেছন সিটে শুয়ে পরতেই চোখে পড়ল নিশথ কালো আকাশের বুকে আপন আলোয় ঔজ্জ্বলতা ছড়ানো শুক্ল পক্ষের চাঁদ।

ক্লান্তিতে দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলেও মাঝে মধ্যেই গাড়ির ঝাকিতে যখনই চোখ খুলে যাচ্ছিল, তখনই চোখের সামনে হাজারো আলোর রোশনাই খেলা করে উঠছিল, বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল এই আলোকৌজ্জ্বল রোশনির উৎসটি হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা রূপোলী জ্যোৎস্নার না কি ঘন্টা কয়েক আগে অতীতের বুকে হারিয়ে যাওয়া আতশবাজির মূর্ছনা!! মনে হচ্ছে সেটি বুঝে উঠতে হয়তো বা আরো বেশ ক’টা দিন কেটে যাবে!!!




তথ্যসুত্রঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×