একটি আন্তর্জাতিক মেলায় কাঁকড়া প্রদর্শনী চলছে। বিভিন্ন দেশের কাঁকড়া হাজির করা হয়েছে প্রদর্শনীর জন্য। বিশাল বিশাল কাচের জারে মুখবন্দী করে রাখা হয়েছে কাঁকড়াগুলো, যাতে করে তারা জার থেকে বেড়িয়ে পরতে না পারে। প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে একস্থানে দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় পরিলক্ষিত হলো। সেখানে দেখা যায় যে সব কাঁচের জার মুখ বন্ধ রাখা হলেও একটি বিশেষ জারের মুখ উম্মুক্ত! কারণ জিজ্ঞেস করলে আয়োজকের উত্তর এটা বাংলাদেশের কাঁকড়া এই জন্য এই জারের মুখ উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। তারা আরো জানায় যে, সব দেশের কাঁকড়াদের জার মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে কারণ এই কাঁকড়ারা এক অপরকে সহযোগিতা করে যেন কেউ না কেউ বন্দী দশা থেকে মুক্ত হতে পারে, এবং পরবর্তীতে তাদের সকলকেই বন্দীদশা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে, কিন্তু বাংলাদেশের কাঁকড়া নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সব সময় লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকে! তদুপরি যদি দেখা যায় যে কোন কাঁকড়া নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত তাহলে সব কাঁকড়া এক হয়ে সেই কাঁকড়ার পেছনে লেগে যায় যেন সে মুক্ত হতে না পারে! এই জন্য প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষের কষ্ট করে জারের মুখ বন্ধ করে রাখতে হয় না!
কেন জানি না, বর্তমানের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গল্পটাকে একদম যথার্ত মনে হচ্ছে। ফেসবুক থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত স্পষ্ট দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে, মিথ্যে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।
সেদিন ফেসবুকেই দেখলাম একই ছবি নিয়ে বর্তমান বিবাদমান দু’পক্ষই (তরুণ/নাস্তিক প্রজন্ম আর ছাগু/মোল্লা প্রজন্ম) নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়ে নিজ নিজ উদ্ভাবনী শক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বিষয়টা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে তাদের রশি টানাটানির মাঝে বেচারা “ছবি”টার নিজ সত্ত্বাই বিলীন হয়ে উপক্রম! এদের উদ্ভাবনী শক্তির গভীরতা দেখে আমার বিস্ময়ের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায়। অবাক হয়ে ভাবি আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই বহুমুখী প্রতিভাগুলো প্রকৃত কোন উৎপাদনমূলক কাজে ব্যয় করতাম তাহলে পৃথিবীর বুকে আমাদের দেশের অবস্থান আজ কোথায় থাকতো!
নিজেকে আজ কাঁকড়া থেকে উৎকৃষ্টতর কোন জীব বলে মনে হচ্ছে না!!