somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলে নীলে নীলাম্বরী

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীল রঙে মন আনন্দে মেতে উঠে না ,এমন মানুষ কি আছে?
যদি বিশাল একটা জায়গা জুড়ে যদি থাকে হালকা নীল, তার পরে গাঢ় মানে ভীষণ গাঢ় নীল,আর শেষে আকাশী নীল---- মনুষ্য চোখে যদি একবারে একসাথে এই তিন নীল যদি একবারে এক সাথে এসে ধরা দেয়, তা হলে তার আবেশ মনের মধ্যে যেয়ে পড়বেই। মনের সব বিষাদ মুহূর্তেই বিলীন হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
আমি বলছি, সেন্ট্রাল এমেরিকার দেশ মেক্সিকোর ক্যানকুন সমুদ্র সৈকতের কথা। প্রথমে সাদা বালি, তার পরে হালকা নীল পানি, বলা যায় কিছুটা সবুজাভ নীল। সেখানে পানি এতই স্বচ্ছ যে, চোখের দৃষ্টি অনেকটুকু পানির ভিতর চলে যায়। পানিতে নামলে পানির নীচে থাকা শরীরের অংশটুকু স্পষ্ট দেখা যায়। তার পরে কিছু দূরে দৃষ্টি দিলে, দেখা যায় ক্যারিবিয়ান সাগরের সীমাহীন গাঢ় নীল পানি। আর শেষে এই গাঢ় নীল যেয়ে মিশেছে, দিগন্তের আকাশের সাথে। সেখানে আবার আরেক নীল, আকাশী নীল।
কবি হলে হয়ত “নীলে নীলে নীলাম্বরী” জাতীয় একটা কবিতা ভিতর থেকে এমনিই চলে আসত। কিন্তু না; সেটা এই অধমের থেকে সম্ভব না। তার পরেও ভাল- লাগা, অভিভূত হওয়া আর তা প্রকাশের চেষ্টা করা তো সব মানুষেরই জন্মগত অধিকার । আমি সেই অধিকার থেকেই সবাইকে বলছি, স্থানীয় মেক্সিকানদের কথায়, স্বর্গীয় দ্বীপে স্বাগতম Welcome to Paradise Island।
পানি আর আকাশের নীলের সাথে আরও আছে অগণিত পাম, নারিকেলের আর নানা গাছের সমারোহ। তবে সেইটা অবশ্যই স্থল অংশে। সেগুলো ভীষণ গাঢ় সবুজ আর সবুজ। এক দিকে সবুজ আর সবুজ আর অন্য দিকে নীল আর নীল। চোখ আর মন, অনাবিল শান্তির ঢেউয়ে ভাসতে থাকে। প্রকৃতি যে সব চেয়ে বিশাল শিল্পী, তার একেবারে চাক্ষুষ প্রমান। এটা রং আর তুলির কারুকাজ না, বাস্তব আর সত্যি।
সাগরের বিশালত্ব আর শক্তি মানুষকে সংকীর্ণতা থেকে সরিয়ে এনেছে, ভালবাসার শপথ নিতে শিখিয়েছে। অনেক মানুষ বিয়ের পর সাগরের ধারে যেয়ে শপথ নেয় সারা জীবন ভালবেসে যাবার। সুন্দর ভাষায় যাকে বলে, হানিমুন মানে মধুচন্দ্রিমা। আবার শরৎচন্দ্র সমুদ্রে সাইক্লোন দেখে যতটা আতঙ্কিত হয়েছিলেন; তার থেকে তাকে অনেক বেশী মুগ্ধ করেছিল সমুদ্রের ভয়ঙ্কর শক্তির সৌন্দর্য।
আজ থেকে ৩৫০০০ বছর আছে মেক্সিকোতে আদি মানুষরা বসত গেড়েছিল। নৃতত্ত্বে এদের নাম “মায়া”। তাদের সভ্যতা আর পঞ্জিকার কথা অনেকেই জানেন। তাদের সভ্যতার জয় যাত্রা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর পরে স্পেনীয়রা এখানে এসে উপনিবেশ গড়ে তুলে। দেশটার নাম পরিবর্তন করে নাম দেয়, “নিউ স্পেন”। যুদ্ধ করে মেক্সিকোর জনগণ এদের বিতাড়িত করে। সেই ১৮৫৭সালে গৃহীত সংবিধানে প্রতিটা জনগণের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
বড় আয়তনের, বড় জনসংখ্যার দেশ মেক্সিকোতে অনেক সমস্যা থাকলেও তারা এগুচ্ছে। তারা তাদের গণতন্ত্র আর অর্থনৈতিক উন্নতি কথা গর্ব করে মাথা উঁচু করে উচ্চারণ করে। কারণ তাদের কঠোর পরিশ্রম থেকে এই উন্নতি আসছে। তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত এদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কোন কমতি নেই। সাথে সাথে আছে দুর্নীতির কালো ছোবল। সব চেয়ে বড় সমস্যা করছে, প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ড্রাগের প্রচণ্ড চাহিদা। মেক্সিকো থেকেই ব্যাপক পরিমাণ ড্রাগ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ড্রাগ ব্যবসার মালিকানা নিয়ে চোরাচালানী গ্যাংগুলোর মধ্যে হানাহানি লেগে আছে। সাথে সাথে সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে রীতিমত ভারী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ চলছে। সেখানে অকাতরে কত না মানুষ মরছে!
আবার ফিরে আসি ক্যানকুনের কথায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে পর্যটকরা। ইদানীং আশে পাশের দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা আর অন্যান্য দেশগুলো পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে। সেখানকার মানুষদের কাছে এই স্বর্গের দ্বীপ, একটা আকর্ষণীয় জায়গা। সাথে সাথে আমুদে যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপ, চীন, জাপানের মানুষরা তো আছেই।
বেশীর ভাগ মানুষ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে এসে অনেকটা প্রকৃতির মত হয়ে যেতে চায়। স্বল্পতম পোষাকে সাগরের পানিতে নেমে ঝাপাঝাপি করে, সূর্যের আলোয় সখ করে রং কিছুটা পুড়িয়ে নেয়। এইটা এখানে চোখ সওয়া একটা ব্যাপার। তার পরেও ছেলেরা দেখে---নারী সৌন্দর্যে বিমোহিত কে না হয়?
কিন্তু এই অধম আরেক দৃশ্যে বিমোহিত হতে পারল না। এক ললনা তার শরীরের উপরের দিকের পুরোটা খুলে; হয়ত রোদ পোহাচ্ছিল। তার বুক আর স্তন একেবারেই উন্মুক্ত। যেই গল্প বলা হয়ে গেছে, সেখানে অচেনা বেশী কিছু থাকে না। মানুষ মাত্রই কল্পনা করতে ভালবাসে, কল্পনায় এগিয়ে যেতে যায়। কল্পনা, চিন্তা ছাড়া মানুষের মনের মধ্যে স্থবিরতা আসার সম্ভাবনা হয়তো বেশী।
মেক্সিকোর সংস্কৃতির একটা বড় অংশ হল পানাহার। হরেক রকমের উৎসবে চলে রঙিন পানির ব্যাবহার। এই সব পানীয় হয় টকটকে সব আকর্ষণীয় রঙের। টাকিলা আর মার্গারিটা মদ দিয়ে ওরা মানুষদের আপ্যায়িত করে। মেক্সিকান টাকিলা, মার্গারিটা , আর বিয়ার পৃথিবী বিখ্যাত। তার সাথে যোগ হয়েছে, মেক্সিকানদের মিষ্টি হাসি আর বিদেশী পর্যটকদের খুশী করার সব ধরণের প্রচেষ্টা। স্বর্গ দ্বীপে প্রকৃতির উপহারের সাথে যোগ হয়েছে ব্যাপক বিনিয়োগ। ওদের নিজেদের মধ্যে যতই হানাহানি থাকুক না কেন, বিদেশী আর পর্যটকদের সাধারণত এরা এদের আতিথেয়তা আগলে রাখে।
বাঙ্গালী মানুষ প্রতিটা কাজে নিজের প্রেক্ষাপট মিলিয়ে দেখে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আরম্ভ করে সারা দেশে বিদেশী আর পর্যটকদের কত না হয়রানীর কথা শুনি! আমরা কি মেক্সিকানদের মত বিদেশীদের হরতাল, হয়রান আর দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে পারি না? আমাদের কথায় আছে, “অতিথি নারায়ণ”। প্রতিটা বিদেশী তার দেশের টাকা আমাদের দেশে খরচ করে, বিনিয়োগ করে। তাতে লাভবান হয় আমাদের জনগণ, আমাদের অর্থনীতি।
ক্যানকুনে রাতকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সাগরের বিরামহীন ঢেউয়ের সাথে আকাশে ছিল বিশাল একটা পূর্ণ চাঁদ। সাথে ছিল আকাশ ভর্তি তারা আর তারা । পাশে ছিল আমার প্রিয়তমা প্রেয়সী। এর থেকে বেশী মনে হয় আমার কোন চাহিদা ছিল না। স্বর্গের সুখ এই পৃথিবীতে!! ভীষণ স্নিগ্ধতার আবেশে, সাগররের সীমাহীন জলরাশির মত অবর্ণনীয় মুগ্ধতায় অন্তরটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। মনে আসল একের পর এক রবীন্দ্র সঙ্গীতের গানের লিপি। অধমের গলায় গানের সুর ছিল না। না হলে হয়ত গানই ধরতাম:
"চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে,উছলে পড়ে আলো,
ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধ সুধা ঢালো।।"
সারা পৃথিবী জুড়ে কত বর্ণের, কত ধরণের না মানুষ। কত ভাষায় না তারা কথা বলে। কত রকমেরই না তাদের চাহিদা। কিন্তু, সব চেয়ে বড় বড় বিষয়গুলোতে সবাই এক, অভিন্নভাবে কথা বলে। ভিন দেশের মানুষের হাসি, কান্না বুঝতে কারো নতুন ভাষা শিখতে হয় না। ভালবাসার ভাষা সে রকমই একটা ব্যাপার। ক্যানকুনের সমুদ্র সৈকতে তাই নতুন করে আবিষ্কার করলাম। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভালবাসার মানুষকে, প্রেমিক-প্রেমিকারা আরও গভীর অন্তরঙ্গতায় কাছে টেনে নিচ্ছে। এখানে সাদা, কালো, বাঙ্গালীর--- প্রকাশের ভাষায় কোন পার্থক্য নাই। সব চেয়ে বড় অভিব্যাক্তির ভাষা যদি সবার একই ভাবি, তা হলে সারা বিষবে মানুষে মানুষে এত হানাহানি কেন?
মেক্সিকানরা রাতে খাবার সময় যীশু খৃস্টকে “Grace” মানে সম্মানিত করে। তার থেকে গ্রাসিয়াস (Gracious) শব্দটা এসেছে, যার বাংলা অর্থ ধন্যবাদ। এরা খুব বিনীত হয়ে গ্রাসিয়াস শব্দটা উচ্চারণ করে। আপনাকে তারা ক্যানকুন আসার জন্যে যীশু খৃষ্টের মত সম্মানিত করছে। আজকের এই লেখাটা পড়ার জন্যে আপনাদের সবাইকে আমি জানাই Gracious। আপনাদের সবার সম্মান অনেক অনেক গুনে বেড়ে যাক। সাথে সাথে আপনার বন্ধু, বান্ধব আর পরিবারের সবাইকে Gracious এর বাণী পৌঁছে দেবার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

কাজী হাসান
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪
ক্যানকুন, মেক্সিকো
http://www.lekhalekhi.net


৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×