সরকারের ব্যর্থতায় অর্থনীতি 'রসাতলে' যাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, পরিস্থিতি অনিবার্য সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে।
সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল না হলে 'গণতন্ত্র ও দেশ' রক্ষার স্বার্থে খালেদা জিয়া জনগণকে নিয়ে 'যুদ্ধে নামবেন' বলেও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে এক কর্মশালায় তিনি বলেন, "কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ কোনোটিই নেই। ব্যাংককারা চিন্তিত আছেন- তাদের ব্যাংকগুলো আর কতদিন টিকবে। সরকার ও প্রধানমন্ত্রী দেশকে এক অন্ধকার টানেলের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।"
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (অ্যাব) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে 'যোগাযোগ খাতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি' শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ পড়েন সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইসহাক।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, "বর্তমান সরকারের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার কারণে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দলীয়করণ করে তারা নষ্ট করে ফেলেছে।"
ভারতে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, "যৌথ সম্ভাব্যতা জরিপের আগে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ হবে না এতো দিন শোনা যাচ্ছিল। বর্তমান সরকার ও ভারত সরকার বলে আসছিলো- তারা বাংলাদেশের ক্ষতি হয়- এমন কিছু করবে না। এখন খবর এসেছে ওই বাঁধ নির্মাণে চুক্তি হয়ে গেছে।"
এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গত ২২ অক্টোবর কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করে মণিপুর রাজ্য সরকার। তবে শনিবার এ খবর বাংলাদেমের গণমাধ্যমে আসে।
ভারত টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর ২০০৮-২০০৯ সময়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন সিং প্রতিশ্র"তি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ টিপাইমুখে নেওয়া হবে না।
"তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়েও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন- তার দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারবেন না," বলেন মির্জা ফখরুল।
গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। মমতার অভিযোগ ছিল, চুক্তির খসড়া তাকে দেখানো হয়নি। দৃশ্যতঃ এই পরিপ্রেক্ষিতেই দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিটের সম্মতিপত্র বিনিময়ের বিষয়টিও স্থগিত করে বাংলাদেশ।
গত বুধবার কলকাতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে এক বৈঠকের পর মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের স্বার্থ নিশ্চিত করেই তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দেশ এভাবে এক 'অনিশ্চিত গন্তব্যের' দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আন্দোলন করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, "রোড মার্চে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সরকারের বোধদয় হওয়া উচিৎ। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র ও দেশ রক্ষার স্বার্থে খালেদা জিয়া জনগণকে নিয়ে যুদ্ধে নামবেন।"
সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার পর থেকে বিএনপি সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
অ্যাব সভাপতি মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের আ ন হ আখতার হোসেইন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া কর্মশালায় বক্তব্য দেন।
সূত্র: বিডি নিউজ