somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানস ভ্রমণ সুন্দরবনে

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনে মনে যে ভ্রমণ তাই মানস ভ্রমণ। আসলে মানস ভ্রমণটা হচ্ছে ভ্রমণের আগেই মনে মনে বেরিয়ে আসা। মনে হতে পারে ভ্রমণ পরিকল্পনাটাই মানস ভ্রমণ, আসলে কিন্তু তা নয়। আমার মতে মানস ভ্রমণকে মোটা দাগে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথম ভাগের মানস ভ্রমণে সেই সব ভ্রমণ পরিকল্পনার স্থান পাবে যেগুলি অচিরেই বাস্তবের মুখ দেখবে। অর্থাৎ আজকে যে ভ্রমণের কথা ভাবছেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে যাচ্ছে। যেমন আমি এই আগামী ১৯ তারিখে যাচ্ছি সুন্দরবন। আগামী মাসে যাবো কক্সবাজার। মাস দুয়েক পরে যাব কাশ্মীর।

দ্বিতীয় ভাগের মানস ভ্রমণে থাকবে একটু দেরিতে যে ভ্রমণ পরিকল্পনা সফল করা হবে। অর্থাৎ যাব বেরাতে অবশ্যই তবে এখনই না কিছুটা সময় লাগবে। যেমন আমার খুব যাওয়ার ইচ্ছে আন্দামান দ্বীপে। ইচ্ছে আছে আমাজন বনে বেরাতে যাওয়ার, খুব শখ পিরামিড আর চীনের প্রাচীর দেখার।

আর তৃতীয় ভাগে থাকবে সেই সব ভ্রমণের পরিকল্পনা যেগুলি কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। শুধু মনে মনেই সেই সব ভ্রমণ করা হবে, সশরীরে কখনোই সেখানে যাওয়া হবে না। যেমন এভারেস্টের চুড়ায় যাওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। দুই মেরুতে যাওয়ার ইচ্ছে। মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। চাঁদ আর মঙ্গলেও যেতে চাই। এগুলি পূরণ করতে পারবোনা স্বাস্থ্য আর আর্থিক অসামর্থ্যের কারণে।

এবারের সুন্দরবনের মানস ভ্রমণটা আমার প্রথম ভাগেই পরে। এই ২০১৫ এর ১৯শে মার্চ ১২ জনের একটা গ্রুপ যাচ্ছি সুন্দরবনে।
সেই আদি কালে একবার গিয়েছিলাম মঙ্গলা হয়ে সুন্দরবনে। সেবার শুধু করমজল আর তার আশেপাশের খাল দিয়ে কিছুটা সময় বেড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম। নামেই শুধু সুন্দরবনে গিয়েছিলাম, খায়েস মিটেনি। এরপরের বার এই গত বছর ২০১৪এর নভেম্বরে আবার গেলেম সুন্দরবনে, অসাধারণ একটা ট্যুর হয়েছিলো সেটা। ৪০ জনের বিশাল এক গ্রুপ, বড় একটা লঞ্চে করে দু রাত তিনদিন বেরিয়েছি সুন্দরবনের অনেকগুলি স্পট।

অনেকেই জানেন নিশ্চয় আমাদের সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জ আছে, এর মধ্যে তিনটি - "চাদপাই রেঞ্জ", "শরণখোলা রেঞ্জ" ও "খুলনা রেঞ্জ " যেতে হয় খুলনা বা বাগেরহাটের মংলা থেকে। চতুর্থ রেঞ্জের নাম "বুরিগোয়ালিনা রেঞ্জ " এটি পরেছে আমাদের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা সাতক্ষিরায়। এই পথে সুন্দরবন একটু বেশী গহীন। অন্য রেঞ্জের মতো এই পথে অতটা বিস্তীর্ণ মাঠ ঘাট পাওয়া যাবে না। এই অংশে বাঘের সংখ্যা তুলনামূলক বেশী তাই অতিরিক্ত সাবধানতাও অবলম্বন করতে হয় এই রেঞ্জে ভ্রমণে গেলে।

ফেসবুকের ভ্রমণে একটি গ্রুপ "ট্রাভেলার্স অফ ঢাকা"র ১২ জনের একটা গ্রুপের সাথে যাচ্ছি সুন্দরবনের এই গহীন রূপ দেখতে।

২০১৫ সালের মার্চের ১৯ তারিখ রাতে ৯টা ১৫ মিনিটে ঈগল পরিবহনের ঢাকা টু সাতক্ষিরার বাস ছাড়বে বাড্ডা কাউন্টার থেকে। আমি একাই উঠবো এখান থেকে, বাকি ১১জন উঠবে ৯টা ৪৫ মিনিটে উত্তরা কাউন্টার থাকে। সারা রাত গাড়ি চলবে, আশাকরি সব ঠিক থাকলে ২০ তারিখ ভোরে পৌঁছে যাব সাতক্ষিরায়।

২০ তারিখ ভোরে সাতক্ষিরা থেকে লোকাল বাসে চলে যাব শ্যামনগর। সেখানে সকালের নাস্তা করে লঞ্চ ভাড়া করবো দুই দিনের জন্য। খাল আর শাখা নদী ধরে লঞ্চ এগিয়ে যাবে গহীন বনের দিকে। আশাকরি সকাল ১১টা নাগাত পৌঁছে যাব আমাদের প্রথম গন্তব্য "কলাগাছি "। কিছুটা সময় কলাগাছিতে বনের ভিতরে বেরিয়ে আবার বেরিয়ে পরবো লঞ্চ নিয়ে। লঞ্চে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে বিকাল নাগাত আরও অনেকটা পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাব "দোবেগী "। এখানেও বনে ঘুরে বেড়াবো কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে। এখান থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যেতেই সুন্দর বনে রাত নেমে আসবে। কোন একটা সুবিধাজনক স্থানে লঞ্চ নোঙ্গর করে রাতের খাবার সেরে লঞ্চেই হবে রাত্রিযাপন। প্রথম দিনের বনবিহারী এতটুকুই।

দ্বিতীয় দিন ২১শে মার্চ সকাল সকাল আবার যাত্রা শুরু হবে। সকালের নাস্তা করে নিয়ে অপেক্ষায় থাকবো আমরা "পুটনীর দ্বীপে "র জন্য। অতি সম্প্রতি এই দ্বীপটি আমাদের টুরিস্টদের নজরে এসেছে। হাতে গোনা অল্প কিছু টুরিস্টই এই দ্বীপটিতে পদচিহ্ন রাখতে পেরেছে। সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটি বন্য দ্বীপ। এইখানে হবে সমুদ্র স্নান। বন সমুদ্র আর প্রকৃতি সব মিলিয়ে অপূর্ব কিছু একটা হবে নিশ্চয়। সমুদ্র স্নান সেরে আশপাশটা ঘুরে দেখে রওনা হবো হিরণ পয়েন্ট বা "নীল কমল " এর পথে। যাত্রা পথেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে হবে। "হিরণ পয়েন্ট " পৌঁছে আবারও সুন্দরবনে রাত নেমে আসবে কালো চাদর গায় জড়িয়ে। লঞ্চের নোঙ্গর ফেলে সেখানেই রাতের খাবার সেরে রাত্রি যাপন।

২২শে মার্চ ভ্রমণের তৃতীয় দিনের শুরুতেই নেমে যাব লঞ্চ থেকে "হিরণ পয়েন্টে " হিরণ পয়েন্টের পরে সারা দিনে আরও দেখে নিবো পুষ্পকাঠি। সময়ে কুলালে মান্দারবাড়ীয়া " ঘুরে দেখে ফেরার পথ ধরবো। সন্ধ্যার পরপর ফিরে আসবো শ্যামনগর। শ্যামনগর থেকে সাতক্ষিরা হয়ে রাতের বাসেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাব। সব ঠিক থাকলে পরদিন ২৩ তারিখ ভোরে ঢাকায় পৌঁছে শেষ হবে আমার সাতক্ষিরা হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ।

এই ভ্রমণে যেই যেই স্পট গুলি দেখার ইচ্ছে -
১/ পুটনীর দ্বীপ
২/ হিরণ পয়েন্ট (নীলকমল)
৩/ পুষ্পকাঠি
৪/ দোবেগী
৫/ কলাগাছী
৬/ মান্দারবাড়ীয়া (সম্ভব হলে)

সুন্দরবেন এই ভ্রমণে আমাদের জন প্রতি চাঁদা ধরা হয়েছে ৭,৭০০ টাকা করে। এই চাঁদা দিয়ে যা যা পাচ্ছি তা হচ্ছে -
> নন এসি বাসে ঢাকা - সাতক্ষিরা - ঢাকা।
> বাসে সাতক্ষিরা - শ্যামনগর - সাতক্ষিরা।
> অন্যান্য সমস্ত যাতায়াত।
> লঞ্চে ২ রাতের কেবিন ব্যবস্থা, (শেয়ারিং)।
> লঞ্চে করে সুন্দর বনের ভিতরে ও সাগরে ভ্রমণ।
> হাইওয়েতে আসা যাওয়ার সময় নাস্তা (পরটা, সবজি)।
> সকালের নাস্তা, তিন দিন (পরটা, ডিম, সবজি / খিচুরি, ডিম)।
> দুপুর ও রাতের খাবার, তিন দিন (ভাত, মাছ বা মাংস, ভর্তা, ভাজি ও ডাল)।
> গাইড সার্বিস।
> একটি লোগো সমৃদ্ধ টি শার্ট।
> দরিদ্র তহবিলে একশত টাকা করে দান।

চললাম তাহলে.....
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×