ছেলেটি একটি আংটি কিনেছিলো চার আনা দিয়ে, সস্তা তামার তৈরী; স্বচ্ছ সবজে প্লাস্টিক এর ভেতরটাতে লেখাছিল N অক্ষর। বছর খানেক অপেক্ষা করতে হয়েছিল তার, কবে মামা বাড়ী যাব। অগনিত বার ভাবতে হয়েছিল কিভাবে আংটিটা দেয়া যেতেপারে, যদি কেউ দেখে ফেলে, যদি সে কিছু মনে করে, যদি সে না নেয়, যদি কাউকে বলে দেয়... তবুও প্রত্যয়ী সে যাই হোন না কেন
কোন এক ছুটিতে একদিন সে ঠিকই পৌছে যায় গ্রামে, নানি, মামা-মামি আর ভাইবোনদের হৈ-হুল্লোড় আর অভ্যর্থনা কোন কিছুই গায়ে মাখলোনা কোন কিছুই যেন ছুতে পারেনি তারে। শহুরে কাপড় কোন মতে ছুড়ে ফেলে রেখে দৌড়, ছোট্ট হাতের মুঠোয় যেন তামার তৈরী এক হীরের আংটি মাত্র আধা মাইল দুরের মেম্বর বাড়ী, যেন কম করে হলেও পাঁচ মাইল। জৈষ্ঠের গরমে চৌচির হয়ে ফাটা মাঠ, কাটা ধানের মুড়ো, এক হাল দেয়া জমির বড় বড় মাটির চাকা কোন কিছুই যেন তার বাধা হয়ে দাড়াতে পারছেনা।
কিন্তু আষাঢ়ের শেষে জন্ম ছেলের, চোরা কাটা তাকে ছাড়বে কেন? তীব্র যন্ত্রনায় কাতর ভূপতিত ছেলে প্রথমেই দেখে মুঠ খুলেগেছে, ছড়ানো পাঁচ আঙ্গুলের মাঝখানে নেই তার হীরের টুকরো.... বিদ্ধ কাটা আর যন্ত্রনার কোন অনুভুতিই যেন তার নেই, হামাগুড়ি দিয়ে সে খুজেই চলছে। সে খুজতেই থাকলো রৌদ্রে চৌচির হওয়া জমির বড় বড় ফাটলে আর পাগলের মত উল্টে পালটে দেখতে লাগলো জমির খড় কুটো... সবাই বলে কি হারালে? পয়সা? কত? ছেলেটি শুধু হু-হা করেই গেল, ছল ছল চোখ তখনো খুজে চলছে শুকনো জমির প্রতিটা ফাটলে ফাটলে... আর নীরবে সয়ে গেল জীবনে প্রথম হারানোর বেদনা....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:১২