নীতিগতভাবেই ইসলাম একটি গঠনমূলক জীবনব্যবস্থা; ধ্বংসাত্নক নয়। ইসলামের লক্ষ্যই হচ্ছে সংস্কার সাধন এবং পুনর্গঠন; নিছক নিয়ন্ত্রণ ও শাসন নয়। ইসলামের মূলনীতিগুলো মানবীয় মুক্তবুদ্ধির সাথে মোটেও সাংঘর্ষীক নয়; এমন কিছুই নেই যেটা হতে পারেনি অযৌক্তিক। মানুষের জীবন পরিচালনায় ইসলাম সুস্পষ্টভাবে কিছু দিকনির্দেশনা দেখিয়ে দিয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো মানুষের জন্য এমন একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেখানে মানুষ আল্লাহর নির্দেশ পালন করে ন্যায়নিষ্ঠ জীবন যাপন করতে পারবে। শয়তানের কাজ হলো মানুষকে বিপদগামী করা, নৈতিক চেতনাবোধই সঠিক পথে টিকে থাকতে সাহায্য করে। মানুষের জন্য যা কিছু নিষেধ করা হয়েছে তার সবই করা হয়েছে শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্য। সামাজিক অবক্ষয় গুলো একমাত্র ইসলাম সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে। যেমন- মিথ্যাচার, ব্যাভিচার, সুদ, এবং হারাম; এই উপকরণ গুলো সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ইসলামী আইনে নিষিদ্ধ কাজ বা হারাম করা হয়েছে এমন বস্তুর সংখ্যা খুবই অল্প; অপর দিকে বৈধ কাজ এবং হালাল করা হয়েছে এমন বস্তুর সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি বা কোন পরিসীমা উল্লেখ করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, যে সব নারীর সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ তাদের বর্ণনা প্রসঙ্গে পরম করুনাময় আল্লাহ্ বলেছেন,
"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু....." (আন-নিসা', ৪:২৩)
বিয়ে করা নিষিদ্ধের তালিকা দেওয়ার পর পরম করুনাময় আল্লাহ্ বলেছেন,
"এরা ছাড়া তোমাদের সম্পদ দিয়ে (মোহর আদায় করে) অন্য যেকোন নারীকে এই শর্তে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে, অবাধ যৌন লালসা তৃপ্ত করবে না।" (আন-নিসা', ৪:২৪)
আবার নিষিদ্ধ খাদ্যবস্তুরও একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআান বলছে,
"তোমাদের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও নামে জবাইকৃত পশু এবং নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়া পশু...।" (আল-মা'ইদাহ, ৫:৩)
অন্য দিকে হালাল খাদ্যের ব্যাপরে পরম করুনাময় আল্লাহ বলেন,
"আজ তোমাদের জন্য সকল কল্যাণকর বস্তুকে হালাল করে দেওয়া হয়েছে। আহলুল কিতাবিদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল।" (আল- মা'ইদাহ, ৫:৫)
নিষিদ্ধ বস্তুর সংখ্যা নগন্য হওয়া সত্যেও নিরুপায় ব্যক্তি যদি তখন তা গ্রহণ করে তবে তখন তার কোন গুনাহ হবে না। উদাহরণস্বরুপ, আল্লাহ বলেন,
"অবশ্য যে-লোক নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনকারী না-হয়, তবে তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুনাময়। (আল-বাকারহ, ২:১৭৩)
ইসলাম এতটাই বাস্তব ধর্মি জীবন বিধান যা কেউ অনুসরণ না করলে বুঝতে সক্ষম হবে না। মিথ্যাচার, ও ব্যভিচার মানব সমাজে কি ধরনের খারাপ অবস্থা তৈরি করে তা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়। একটি সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পবিত্র আত্নার প্রয়োজন। আর সেই পবিত্র আত্নার জন্ম দেয় একমাত্র জীবনবিধান ইসলাম। কারো প্ররোচনায় খারাপ কাজ করা উচিৎ হবে না, আর মিথ্যাচার করে কাউকে বোকা উচিৎ নয়, এটা জঘন্য অপরাধ। কাউকে বাজেভাবে আক্রমণ করে কথা বলা ইসলামের শিক্ষা নয়, একদিন সব কিছুর হিসাব দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯