“জগতে তুমি প্লাবনের মত ঢলিয়া পড়, সেবা, উদ্যম, জীবন ও বৃদ্ধিকে লইয়া প্রতি ব্যষ্টি ও সমষ্টিতে ……..”
জীবন-চৰ্য্যা সবার সেরা বাঁচা বাড়ার নিঝুম হল
ঈশ্বরই যার প্রধান পুরুষ পড়শী উছল হলো না
সেই চৰ্য্যাইতো ধৰ্মচৰ্য্যা কিরে বলতে চাস
বাঁচে বাড়ে সকল মানুষ । তুই ধৰ্মে করিস বন্দনা ?
শ্রীশ্রীঠাকুর
যুগাবতার শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, যেখানে বাঁচাবাড়া নেই সেখানে ধৰ্মের নামে পৈশাচ নৃত্য চলছে।
ভক্ত শ্রেষ্ঠ স্বামী বিবেকানন্দজী বললেন,
“যে ধৰ্ম বা যে ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন অথবা পিতৃহীন অনাথের মুখে এক টুকরা রুটি দিতে পারে না, আমি সে ধৰ্ম বা সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। যে ধৰ্ম গরীবের দুঃখ দূর করে না, তা কি আবার ধৰ্ম ? আমাদের কি আর ধৰ্ম ? …..সে ধৰ্ম, না পৈশাচ নৃত্য।”
আগে আধিভৌতিক কল্যান করুন । তারপর আধিদৈবিক ও আত্মিক কল্যানের পথে এগিয়ে চলুন। মৃতপ্রায় রোগীকে ICU তে নিয়ে সুস্হ করে না তুললে কাজের কথা বাদ দিন, সে তো কঠিন কিছু খেতেও পারবে না। সুস্হ হয়ে উঠার পর ভরণ-পোষণ, কৰ্ম ও সাধনা এবং দৈবিক কৰ্মকান্ড ইত্যাদি simultaneously এগিয়ে নিতে পারবে।
মনুষ্যত্বের মূল বুনিয়াদ রক্ষায় অনুকূল দৰ্শন:
শ্রীশ্রীঠাকুরের দৰ্শন রুঢ় বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত। শব্দের Etymological meaning ধরে তিনি তাঁর প্রতিটি শব্দের ব্যবহার করেছেন। হাওয়ায় ঝুলানো কোন মনগড়া ভাবনা রাশির উপর নিৰ্ভর করতে বারণ করেছেন বারবার। তাঁর প্রণীত অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি সহ শতাধিক গ্রন্হরাজি নিয়ে অনুকূল-সাহিত্য বিশ্ববাসীকে শান্তির হাতছানি দিয়ে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। কোটি কোটি মানুষ আজ তাঁর দৰ্শণের ছায়াতলে শান্তির আশ্রয়প্রাৰ্থী। অনুকূল-সাহিত্য আজ বিশ্ববাসীর দুৰ্দিনে অশ্রুতপূৰ্ব ঐশী সমাধান।
বিশ্বের সকল জাতি ও সম্প্রদায় নিজ নিজ ধৰ্ম মতে ও সংস্কৃতিতে অটুট বিশ্বাসী হয়ে কিভাবে নিজে ও অপরকে সাৰ্বিকভাবে বাঁচতে ও বাঁচাতে পারে এবং জীবনের সঙ্গে জড়িত সমস্ত বিষয়কে কিভাবে manipulate করে সামনে প্রগতির দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং মানব জীবনের চূড়ান্ত গন্ত্যবের পথে যাওয়া যায়, তথা উৎসমুখী কিভাবে হওয়া যায় ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় এবং ক্ষুদ্র ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি থেকে সৃষ্টির আদি ও অন্ত এবং অখণ্ড ব্রক্ষ্মের অনন্ত ব্যাপ্তীর ব্যাখ্যা নিয়ে অনুকূল দৰ্শন বিশ্ব সমাজের সামনে দেদিপ্যমান।
*
বিশ্বশান্তি কিভাবে সম্ভব ? *
প্রথম প্রশ্ন, মানুষ বাঁচতে চায় কিনা ? এর উত্তর যদি “হাঁ ” হয়, তাহলে বিশ্বশান্তি সম্ভব।
কিভাবে সম্ভব – আমরা জানি ও বুঝি, মানুষ একা বাঁচতে পারে না। তাই নিজে বাঁচতে হলে অন্যকেও বাঁচাতে হবে, এই সূত্র ভুলে গেলে চলবে না। জীবনের সূত্র বিজ্ঞানের সূত্রের চাইতে কোন অংশে খাট বা লঘু নয়। রসায়নের সূত্র না জেনে এসিড নিয়ে খেলা খেললে যেমন বিপদ অবশ্যম্ভাবী, তেমনি জীবন সূত্রও জানতে হয়, মানতে হয়, অন্যথায় মহাবিপদ।
জীবন বিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সবচাইতে বেশী বলেছেন জীবনের কথা। কারণ জীবনকে সবাই ভালোবাসে। তাই জীবন ও জীবনের স্বাভাবিক পরিণতিকে নিয়েই তাঁর দৰ্শনের ভিত্তি রচিত। যুগের দাবীও তাই।
সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গীর প্রকৃত অৰ্থ
* Etymological meaning or
root meaning of
‘Satsang’ or “সৎসঙ্গ”
শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায় –
Word origin or History of – সৎ, a. ‘সৎ’ বা (sat) সৎ- এসেছে ‘অস্ ‘ ধাতু থেকে।
অস্ – বাঁচা, থাকা, বৰ্দ্ধন।
অৰ্থাৎ যে যে আচরণ করলে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়া তথা জীবন-বৃদ্ধি অক্ষুন্ন থাকে তাহাই ‘সৎ’।
” সৎ এ সংযুক্তির সহিত তৎ-গতি সম্পন্ন যারা তারাই ‘ সৎসঙ্গী ‘। আর তাদের মিলন ক্ষেত্রই হল ‘ সৎসঙ্গ ‘ “।
“আমি সৎসঙ্গী মানে I am the companion of every one’s life and growth” (আমি প্রতি প্রত্যেকের জীবন বৃদ্ধির সঙ্গী)।
এই হল সৎসঙ্গ সম্পৰ্কে ঠাকুরের ব্যাখ্যা।
শব্দের অৰ্থ যদি মানুষ না বুঝে সে কাজ করবে কিভাবে, তখন মানুষ গৃহে ফিরে যাওয়ার সময় ভুলে হাসপাতালে চলে যাবে অথবা পাগলের মত ঘুরতে থাকবে। যা বৰ্তমানে ঘুরছেও অনেকে। জীবনের গতি ঠিক থাকবে না।
ঠাকুরের বাণী কাজ করছে কি , না করলে তা কেন কাজ করছে না ?
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র এবং বিশ্ব উন্নয়ন উপযোগী যে সব যুগান্তকারী সমাধান দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে প্রকল্প মাফিক শুরু করতে হবে, বিষয়গুলো প্রচুর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের জানতে হবে, তারপর গবেষণা করতে হবে। এরপর মাঠে ফসল ফলানোর মত জন জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে, এই দৰ্শনানুগ চলন থেকে জাত ফসল ঘরে না আসা পৰ্যন্ত তার (প্রকল্পের) অবশ্যই পরিচৰ্যা করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য নিষ্ঠা ও সুদক্ষতার সাথে maintenance প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে। এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার উদ্ গাতা যিনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অনুরাগ থাকা চাই, অন্যথায় তা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে না কি ?
Note: (উক্ত নিয়মে সফলতা লাভ হবে বলে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি।)
আরও একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতে চাই, অবতার পুরুষ যখন পৃথিবীতে আসেন তখন তিনি সবাইকে আহ্বান জানান তাঁর কায়দা (system) গ্রহণ করতে, কারণ তাতে কল্যাণ নিহিত আছে। তাই এখানে সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারেন। আর এই অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অবিকৃত বাণীগুলো বের করে সেগুলোর উপর গবেষণা করে ফলিত রুপ দিতে হবে। যারা বিকৃতকারী এবং অৰ্ধেক পালনকারী তাঁরা স্বাৰ্থ-বুদ্ধি বশতঃ চালাকিপূৰ্ণ কথা বলেন এবং নবাগত বা বাস্তববাদীদের কণ্ঠ চেপেও ধরেন সুযোগ বুঝে। আমি দেখেছি, এই কারণে পরম পুরুষের দেয়া অমৃত নিষ্যন্দী বাণী থেকে বষ্ণিত জনগোষ্ঠী সুফল পায় না। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়ের উপর দাৰ্শনিকত্বব্যঞ্জক কথার ফুলঝুড়ি ছড়ায়, কিন্তু পাতি বাংলা ভাষায় বলা ঠাকুরের বাণীগুলো নাকি দূৰ্বোধ্য। শ্রীশ্রীঠাকুরের সমসাময়িককালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি কে ? কিন্তু প্রদীপের কোলে আঁধার হেতু তাঁর পারিপাৰ্শ্বিক তাঁকে বুঝে নাই।
** উক্ত কাজগুলো করা এবং তাঁর উদ্দেশ্যে প্রাৰ্থনার জন্য যে সব মন্দির নিৰ্মান হচ্ছে সেখানে গবেষণা সেল খুলেও করা যায় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বিভাগ করেও করা যায় অথবা ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে স্ব-গৃহে গবেষণা করেও করতে পারেন, অথবা সমমতাবলম্বী লোক দলবদ্ধ হয়েও উক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে পারেন।
**** কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নিৰ্মিত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছাচারী, দৰ্শন সম্পৰ্কে অজ্ঞানী, আধিপত্যবাদী, পদবীবাজী, দলবাজী, অহংকারী ও বিকৃতকারী লোকদের দখলে। ফলে পরম পুরুষের দেয়া জীবন-বৃদ্ধি রক্ষা পাওয়ার সুফল থেকে বঞ্চিত বুভুক্ষু, মৃতপ্রায়, আৰ্ত ও পীড়িত জনগোষ্ঠী; যাঁরা কোন পক্ষ বুঝে না। এরা শুধু দু’ মুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচতে চাই।
জীবনের যাবতীয় বিষয় বেঁচে থাকার সঙ্গে জড়িত। যথাৰ্থভাবে বেঁচে থাকা আজ কঠিন ব্যাপার। আঠার মাসে বছর সেই দিন আর ফিরে আসবে না। তাই স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার প্রশ্নে
শ্রীশ্রীঠাকুরের দৰ্শনে সমস্ত বিষয় অন্তৰ্ভূক্ত হয়েছে। এই দৰ্শনকে পুঁথিবদ্ধ করতে সৃষ্টি হয়েছে অনুকূল-সাহিত্য। অনুকূল সাহিত্য পাঠ করলে বুঝা যায়, তাঁর বাণী থেকে কত দূরে আছি সবাই।
জীবন ও জগতের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও দূৰ্বোধ্যতম বিষয় তাঁর দূরদৃষ্টির দূরবীনে প্রতিভাত হয়েছে।
ধৰ্ম্ম (ধৰ্ম) সম্পৰ্কে তাঁর অকাট্য যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা
ধৰ্ম মানে শুধু মঠ, মন্দির, গীৰ্জা বা পেগোডা নয়।
ধৰ্ম মানে শুধু উপাসনা, prayer বা আরতি নয়।
ধৰ্ম মানে শুধু মন্ত্র উচ্চারণ, ফুল-তুলসী, বিল্বপত্র নয়।
ধৰ্ম মানে শুধু নিৰ্দিষ্ট পুস্তকাবলী ও তা পাঠ করা শুধু নয়।
Note: উল্লেখিত জিনিস গুলো যে প্রয়োজন হীন তা মোটেই নয়, বরং উল্লেখিত জিনিস বা বিষয়ের মৰ্ম অনুধাবন করা এবং তার অৰ্থ যে বাঁচা বাড়া, তা যেন আমরা বুঝতে পারি। যেমন আমরা পূজা করি, সেখানে প্রচুর টাকা খরচ করে আলোক সজ্জা করি এবং বিরাট অংকের টাকার বিনিময়ে বেমানান গানের জলসা করি । প্রতিমা নিৰ্মানে ও বাহ্যিক চাকচিক্যে ব্যয়বাহুল্য বজায় রাখি, আরও অপ্রাসংগিক অনেক কিছু করা হয় । এসবের কোনটিই পূজার সাৰ্থকতার সঙ্গে জড়িত নয়। কারণ পূজা মানে- জীবন বৃদ্ধি। পূজা শব্দের অৰ্থ জীবন বৰ্দ্ধনা।
পূজা শব্দটি এসেছে ‘পূজ’ ধাতু থেকে যার অৰ্থ – বৰ্দ্ধনা। মানুষ লেখা পড়া শিখে শব্দের অৰ্থ ব্যৰ্থ করে দিতে নয়।
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় কেউ কি বিদ্যালয়ে না গিয়ে সিনেমা হলে যায় ? ঠিক সেরকম আর কি।
দেখতেই তো পাচ্ছেন, মানুষ বাঁচার জন্য ডিম্বানু বিক্রি করছে, কেউ অঙ্গ বিক্রি করছে, আর কেউ নীচে নেমে যাচ্ছে।শ্রীশ্রীঠাকুরের বাঁচা বাড়ার সূত্রের সঙ্গে রাজনীতি, অৰ্থনীতি, কৃষিনীতি, শিল্পনীতি, Hygiene, Eugenics, Education, Meditation , নাম-ধ্যান, পরিবেশ ও প্রকৃতি সহ যাবতীয় বিষয় জড়িত। তাই তাঁর দৰ্শন যুগের চাহিদার পরিপূরক বলে এত সমাদৃত।
শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায় –
যে আচরণ, বাক্য, কৰ্ম
বাঁচা বাড়ার উৎস হয় –
তাকেই জানিস ধৰ্ম বলে
নইলে ধৰ্ম কিছুই নয়।।
অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে
বাঁচা-বাড়ার মৰ্ম্ম যা
ধৰ্ম বলে জানিস তাকে।।
ঠিকই জেনো ধৰ্ম তা।।
বাঁচতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। লেখাপড়া শিখতে হলে শিক্ষক লাগবে। শিক্ষক লাগলে তাঁদের বেতন ভাতা লাগবে। শিক্ষার পদ্ধতি, বিষয়, curriculum, সময়
ইত্যাদি ঠিক থাকার পরেও নূন্যতম বেঁচে থাকার প্রশ্ন প্রথম এসে দাঁড়িয়েছে। অনশনরত শিক্ষকরা বলছেন অভূক্ত শিক্ষক দিয়ে মান সম্পন্ন পাঠ দান অসম্ভব। যে কোন কিছুর জন্য প্রথম বাঁচতে হবে, এমনকি ব্রক্ষ্ম সাধনার জন্যেও। নিরপরাধ ও ভালো লোক বাঁচার জন্যে আরও মহৎ একটি কারণ রয়েছে।
সঠিক বাঁচা বাড়া
সঠিক বাঁচা বাড়া সহজ কথা নয়, বিশ্বে কিছু দেশ (জনগোষ্ঠী) ঠাকুরের বাণীর আগে আগে চলছে কতিপয় ক্ষেত্রে। আর কিছু দেশ(জনগোষ্ঠী) কতিপয় ক্ষেত্রে তাঁর বাণীর বহু পিছনে রয়ে গেছে এখনও। এই বাঁচা বাড়ার সমাধান করতেই অনেকেই জীবন সংগ্রামে পরাজিত, কেউ হাঁপিয়ে যাচ্ছে বা কেউ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এর এত গুরূত্ব।
বুঝলাম বাঁচা বাড়ায় ধৰ্ম, তারপর কি? হ্যাঁ, তারপর আরও কিছু আছে। তারপর আমরা জানি, কৰ্মের শেষে মানুষ গৃহে ফিরে যায়। কিন্তু জীবনের শেষে মানুষ কোথায় যাবে? এই প্রশ্নেরও সমাধান দিয়েছেন পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। আর মানুষ ও জীবের এই আসা যাওয়ার পেছনে রহস্য কি তারও উত্তর তিনি দিয়েছেন। ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে এত সব বিষয় ধাপে ধাপে জানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে । সম্ভব হয়ত হবে না। পূৰ্ণ জ্ঞান নাকি লাভ করা যায়। সিদ্ধি লাভ হলে নাকি জ্ঞানের পূৰ্ণতা প্রাপ্তি ঘটে। আর সিদ্ধির একটি সময় সীমাও নাকি আছে। হয়ত কয়েক জনম লাগতে পারে ! সে যাই হোক, তবে শুরুর কথাই বলি।
সঠিক বাঁচা বাড়ার শুরুটা কিভাবে করতে হবে ? তার পূৰ্বে একটি শক্তিশালী হিন্দি বচন স্মরণ করা যায় – ” হাম শুধরেঙ্গে যুগ শুধরেগা, হাম বদলেঙ্গে যুগ বদলেগা।” আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
ক্ষুধার জ্বালা ও সমাজের উপহাস
একটি জেলায় দেখেছি সেখানে তেঁতুল বীজের সাইজ একটা হিন্দু ফাউণ্ডেশন আছে । সেখান থেকে দরিদ্র ও মেধাবী হিন্দু ছাত্র/ছাত্রীদের বছরে ৬০০ (ছয় শত)টাকা বা $ 8 (eight) dollar বৃত্তি দেয়া হতো।
এখন হয়তো দুই একশত টাকা বেড়েছে। কিন্তু উক্ত জেলায় এবং পাৰ্শ্ববৰ্ত্তী জেলায় হত দরিদ্রের সংখ্যা লক্ষ- লক্ষ। আশ্রম বা মন্দিরে মেয়ের বিবাহে সাহায্য দেয় চার/ পাঁচশত টাকা অথবা ধরে নিলাম হাজার টাকা। এগুলো দরিদ্র লোকের সঙ্গে তামাশা করা নয় কি? অথচ ধৰ্মীয় শোভাযাত্রা করে হাতি দিয়ে। নিজের মেয়ে বিবাহ দেয় ২০/৩০ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে। এক, দুই হাজার মানুষের মধ্যে নেতা হওয়ার কি তীব্র উন্মাদনা, অথচ সঠিক ধৰ্মাচরণের ক্ষেত্রে পাথরের মত শক্ত। একজন, দুইজন হয়তো স্কুল -কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বড় বড় দান,ধৰ্ম করেন, তাঁদের অবদান শীরোধাৰ্য, কোন সন্দেহ নাই। তাঁদের প্রচেষ্ঠায় কয়েকটি গ্রাম হয়ত উপকৃত হয়। কিন্তু বাকীদের কি উপায় হবে? এই উপায়ের কথা বেদ, পুরাণ, গীতা সহ সকল ধৰ্ম গ্রন্হে বলা আছে যেমন পবিত্র বেদে পঞ্চ মহাযজ্ঞের কথা বৰ্ণিত হয়েছে। ঋষি যজ্ঞ, দেব যজ্ঞ, নৃ-যজ্ঞ, পিতৃ যজ্ঞ ও ভূত যজ্ঞ মানুষের নিত্য পালনীয় বিধান, কিন্তু সমাজের একটি বিশাল অংশ এর ধারে কাছেও নেই। উন্নত দেশে FreeFood Center গুলো প্রায় প্রতিদিন খোলা থাকে। কিন্ত কোন কোন সমাজে Free Food Center কাকে বলে জানেও না। আমিও জানতাম না একদিন। Food Center প্রতিদিন কেন খোলা থাকে, কারণ সচ্ছল লোকেরা যেমন দৈনিক অনেকবার বার খাবার খায়, তেমনি গরীব লোকদেরওতো পেট আছে,ক্ষুধা আছে। ক্ষুধার তাড়নায় আত্মহত্যা, ধৰ্মান্তরিত হওয়া, দূৰ্বিসহ জীবন যাপন ইত্যাদি কে না জানে ?
অভাব সমাজের একটি স্বাভাবিক সংকট। সমাজবদ্ধ জনসমষ্টি সমাজের কোথায় ঘাটতি, কেন ঘাটতি, কি করণীয়, কখন করণীয়, কেন করণীয়, কিভাবে করণীয়, না করলে কি ঘটতে পারে ইত্যাদি বিষয় সম্পৰ্কে সম্যকভাবে সবসময় অবগত নাও থাকতে পারে বা থাকতেও পারে। পরমপুরুষ ঘুমন্ত মানব সমাজকে জাগানোর কাজও মহাগুরুত্বের সাথে করতে আসেন এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কৰ্মী বাহিনী তৈরী করে যান।
.চলবে
ব্রক্ষ্মের উপাসনা মানেও জীবন-বৃদ্ধির উপাসনা
ব্রক্ষ্ম শব্দের অৰ্থ বৃদ্ধি বা বৰ্ধন। ব্রক্ষ্ম শব্দটি এসেছে ‘ বৃণহ্ ‘ ধাতু থেকে। বৃণহ্ ধাতুর অৰ্থ বৃদ্ধি পাওয়া।
নারায়ণের উপাসনা মানেও জীবন-বৃদ্ধির উপাসনা
নারায়ণ কথাটির অৰ্থ –
বৃদ্ধির পথ । ‘ নার ‘ + ‘ অয়ণ ‘ = নারায়ণ।
‘ নার ‘ মানে বৃদ্ধি ‘ অয়ণ ‘ মানে পথ। বৃদ্ধির পথে চলা মানেই নারায়ণের পথে চলা। বা নারায়ণের সেবক হওয়া।
মহেশ্বরের উপাসনা মানেও
জীবন-বৃদ্ধির উপাসনা
মহেশ্বর যদিও ধ্বংস বা প্রলয়ের প্রতীক, কিন্ত সৃষ্টি বিনা তো ধ্বংস নাই। তাই আশ্চৰ্যজনকভাবে মহেশ্বর শব্দের অৰ্থও বৃদ্ধি পাওয়া বুঝায়। মহেশ্বর শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দেখা যায় – মহা + ঈশ্বর= মহেশ্বর।
মহা শব্দের অৰ্থ শ্রেষ্ঠ। ঈশ্বর(Spirit) শব্দের অৰ্থ সৃষ্টির অধিপতি।
ঈশ্ ধাতুর অৰ্থ তাই। ঈশ্ ধাতুর সাথে বরচ্ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ঈশ্বর শব্দটি নিস্পন্ন হয়েছে। অতএব শব্দগতভাবে মহেশ্বর মানে সৃষ্টির মহা অধিপতি। তিনি স্রষ্টা এবং পালন কৰ্তা। আর সৃষ্টি মানে বৃদ্ধি। সৃষ্টি হলেই তো বেড়ে যায় সংখ্যা। আর সৃষ্ট জিনিষ গাছ- পালা, পশু-পক্ষী, মানুষ, গরু, ঘোড়া ইত্যাদি সবই তো সৃষ্টির পর বেড়ে উঠে। তাই মহেশ্বরের উপাসনা মানে জীবন বৃদ্ধি বা বাঁচা-বাড়ার উপাসনা। সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি আগে, তারপর হয় ধ্বংস বা ক্ষয়। সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্তই যদি না হল তাহলে ধ্বংস হবেটা কি
?
বাঁচা-বাড়া কেন শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম তার আরও কারণ আছে। বাঁচা বাড়ার জন্য পবিত্র বেদে যজ্ঞের কথা গুরুত্বের সাথে কেন উল্লেখ আছে, কেন বাঁচা বাড়ার জন্যে যুগাবতার শ্রীকৃঞ্চ গীতায় অনেকগুলো যজ্ঞের কথা বললেন, কেন ত্রিকাল দৰ্শী আৰ্য্য ঋষিরা এত গুরুত্বের সাথে বাঁচা বাড়ার বিধান দিলেন, কেন যুগাবতার ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বাঁচা বাড়ার জন্যে দেব ভিক্ষা, অৰ্থ ভিক্ষা, মানুষ ভিক্ষা চাইলেন, এর আরও গুরুত্ব বিশ্লেষণ করব শীঘ্রই। যজ্ঞ মানে বিভিন্ন ধরনের দান যজ্ঞের কথা বলতে চাইছি। প্রতিটি দানযজ্ঞ ঘৃতাহুতি দিয়ে করতে হয় না এবং সম্ভবও নয়।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে ধৰ্মস্হানগুলো দয়া, দাক্ষিণ্য, মানবতা, মহানুভবতা ইত্যাদি মানবিক সহানুভূতির কেন্দ্রস্হল করে রেখেছে। অখন্ড ভারত একদিন এসবের শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। যদি তা না হতো তাহলে ‘ভারত বিশ্ব ঋতায়িনী’ কথাটির মত এত বড় মহান অভিধায় ভারত অভিসিক্ত হতো না।
বাঁচা -বাড়া কেন শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম – চলবে
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর বিকৃতি ও সমাজের উপেক্ষা
পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর পঞ্চ মহাযজ্ঞের একত্রিভূতরুপ যে ইষ্টভৃতি যজ্ঞ প্রবৰ্তন করলেন তাতে এই সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৪