somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

** শুভ ভাদ্র মাসের শ্রদ্ধার্ঘ্য **** শুভ ভাদ্র মাসের শ্রদ্ধার্ঘ্য **

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


।। ধারাবাহিকতায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত দিব্য জীবনী।।
(৯ম পর্ব)
‘‘জয় অনুকূল অপরূপ অতুল পুরুষোত্তমো জয় হে!
মাতা মনোমোহিনী-নন্দন জগজন-বন্দন ভবভয়-তারণ কারণ হে!’’
* * *
অভিভাবকদের অভিপ্রায় অনুযায়ী আমিরাবাদের স্কুল ছেড়ে দিয়ে প্রথাগত শিক্ষাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে ১৩১৫ বঙ্গাব্দে তাঁকে চলে আসতে হয় ২৪ পরগণার নৈহাটি শহরে, মাসতুতো ভগ্নীপতি শশীভূষণ চক্রবর্তী মহোদয়ের বাড়ীতে। ভর্তি হন মহেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় বসতে পারেন নি। বাবার পাঠানো পরীক্ষার ফি-এর টাকা নিজের নামে জমা না দিয়ে দরিদ্র এক সহপাঠিকে দিয়ে দেন। উক্ত সহপাঠী কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল।
অভিভাবকদের পরামর্শক্রমে আত্মীয় শশীভূষণ চক্রবর্তী মহোদয়ের সাহচর্যে অর্থকরী বিদ্যা উপার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যান । বাবু শরৎচন্দ্র মল্লিক স্থাপিত বৌবাজারের ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হবার জন্য। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হবার ফলে কর্তৃপক্ষ প্রথমতঃ কিছুতেই ভর্তি করতে রাজী হন না। অবশেষে শিক্ষার্থীর অধ্যবসায়, যুক্তির কাছে হার মেনে অধ্যক্ষ মহোদয় কঠোর-কঠিন পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করে নেন ১৩১৭-১৩১৮ বঙ্গাব্দ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ব্যাচে।
কঠোর-কঠিন পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি তো হয়েছেন, সম্মুখীন হলেন আর এক কঠিনতম পরীক্ষার। যার নাম দারিদ্রতা। তাই তাঁর থাকার ঠিক ছিল না, খাওয়ার ঠিক ছিল না। কলকাতার ফুটপাথে, শিয়ালদহ স্টেশনে ‘হিতবাদী’ সংবাদপত্র পেতে এবং গায়ে দিয়েও দিনযাপন করতে হয়েছিল। দিনের পর দিন শুধু কলের জল পান করেও ক্ষুধা নিবারণ করতেন।
পিতার কাছ থেকে কলকাতার এক আত্মীয় কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। অনেক অনুরোধ-উপরোধ করার পর তিনি মাসে মাসে ১০টি করে টাকা দিতে স্বীকৃত হন। অবশেষে গ্রে স্ট্রীটের এক কয়লার গুদামে আশ্রয় পান। ওখান থেকে পাদুকাবিহীন পদব্রজে বৌবাজার ক্লাস করে এবং বৌবাজার থেকে মানিকতলার মুরারীপুকুরে ‘ডিসেকসন’-এর প্রাকটিক্যাল সেরে ক্লান্ত দেহে কয়লার গুদামের আশ্রয়ে ফিরতেন। সেই টাকার মধ্যে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা খরচ, থাকা-খাওয়ার সব খরচ চালানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যদিও কিছুদিন পরে সেই টাকাও বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময়ে গ্রে-স্ট্রীট ও চিৎপুর সংযোগস্থলে ‘লাহিড়ী কোম্পানী’ নামে একটি হোমিওপ্যাথী ঔষধের দোকান ছিল। দোকানের কর্ণধার হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাথে ঠাকুরের সখ্যতা হয়েছিল। সখ্যতার নিদর্শণ-স্বরূপ তিনি ঠাকুরকে এক বাক্স হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রণীত একটি পারিবারিক চিকিৎসা গ্রন্থ উপহার দিয়েছিলেন। তার সাহায্যে তিনি কয়লার গুদামের কুলিদের এবং আশেপাশের কারখানার কুলিদের চিকিৎসা শুরু করেন। কুলিরা আরোগ্য হবার ফলে কুলিদের মুখে মুখে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সন্নিহিত অঞ্চলের ভদ্র সজ্জনেরাও ঠাকুরের রোগী-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। রোগীদের যদৃচ্ছা দানে মাসে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হতে থাকে। তা থেকে তিনি নিজের জন্য যথাসম্ভব কম খরচ করে কুলিদের এবং আশেপাশের দরিদ্রদের দারিদ্র মোচন করতেন, নানাভাবে সেবা করতেন। ওইসব গরীব মানুষেরা তাঁকে ভগবান তুল্য মনে করতেন, ভরসা করতেন, ওদের অকূলের কূল ছিলেন অনুকূল। ছুটিতে যখন হিমায়েতপুর যেতেন কুলিরা সজল নয়নে স্টেশনে এসে বিদায় দিতেন। ছুটি কাটিয়ে ফিরে এলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আনন্দ-উল্লাসে বরণ করে আনতেন। ওদের আনুগত্য প্রকাশ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর উত্তরকালে বলেছিলেন, ‘‘এরা আমার এত অনুগত হয়ে পড়েছিল যে, আমি যদি তাদের দিয়ে ধর্মঘট করাতে চাইতাম, তবে একদিনে ওখানকার সব কারখানা বন্ধ করে দিতে পারতাম।’’ (ক্রমশঃ)

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:২২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×