।। ধারাবাহিকতায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত দিব্য জীবনী।।
(৮ম পর্ব
‘‘জয় অনুকূল অপরূপ অতুল পুরুষোত্তমো জয় হে!
মাতা মনোমোহিনী-নন্দন জগজন-বন্দন ভবভয়-তারণ কারণ হে!’’
* * *
ওদিকে দিদিমা কৃষ্ণসুন্দরী দেবী, অন্যান্য গুরুজনদের সাথে কথা বলে আদরের দৌহিত্রের জন্য পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ধোপাদহ গ্রামের রামগোপাল ভট্টাচার্যের প্রথমা কন্যা সরসীবালা দেবীকে নাতবৌ করে ঘরে আনার পাকাপাকি করে ফেলেছেন। কর্তামা-র নাতবৌ দেখার আতিশয্যের কারণে পাবনা ইনষ্টিটিউশন্’-এ তৃতীয় শ্রেণীতে (বর্তমানের অষ্টম মান) পাঠরত অবস্থায় উদ্বাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৩১৩ বঙ্গাব্দের ২৮শে শ্রাবণ।
বিয়ের কিছুদিন পর বাবা, তাঁর কর্মস্থল ঢাকা জেলার আমিরাবাদে নিয়ে যান, সেখানে রাইপুরা হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু বেশীদিন সেখানে পড়াশোনা করতে পারেন নি।
আমিরাবাদে থাকার জন্য নির্দিষ্ট বাড়ীতে ঢোকামাত্রই ঠাকুর এক বীভৎস অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব টের পান ঘরের ভিতর । আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে তিনি বাড়িতে ঢুকেই অশরীরী আত্মার কথা না বলে বাড়িটিকে পরিত্যাগ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর রাশভারী নায়েব-বাবা এবং মা-দিদিমা কেউ তাঁর কথায় গুরুত্ব দেন নি। সেইদিন রাতেই পিতা শিবচন্দ্রের জ্বর শুরু হয়। ডাক্তার-বদ্যি করেও জ্বর কমছে না। সবাই মিলে সেবা-শুশ্রূষা করছে, জ্বর কমার নাম নেই। অবশেষে ঠাকুর কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বলেন, ‘বাবা, এ বাড়ী না ছাড়লে তোমার মারাত্মক অসুক হবে।’ ছেলের কান্নার কাছে হার মেনে ওই বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে যেতেই পিতা শিবচন্দ্র সুস্থ হন।
বিদ্যার প্রতি তীব্র অনুরাগী হওয়া সত্বেও অনুকূলচন্দ্রের ছাত্রজীবন নানাপ্রকার বিশৃঙ্খলা ও বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে কেটেছে। নিয়মিত পড়াশোনা তিনি করতে পারেন নি। তার ওপর কোন কোন শিক্ষকের চরিত্রদোষ, দরদশূন্য কঠোর শাসন এবং অবসাদকর তীব্র কটুক্তি তাঁর কোমল মনের ওপর যে আঘাত হেনেছিল, তারফলে প্রথাগত শিক্ষার প্রতি তিনি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। স্কুলে যেতেও তাঁর ইচ্ছা করত না।
তথাপি তিনি স্কুলে যেতেন। হয়তো পিতামাতার ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে। নইলে সর্বজ্ঞ যিনি, তাঁর তো পদ্ধতিগত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণের কোন প্রয়োজন ছিল না। এবং পরবর্তীকালে সে শিক্ষাকে তিনি গুরুত্বও দেন নি। দিলে, একেবারে নতুন ধারায় তপোবন বিদ্যালয় গড়ে তুলতেন না এবং শান্ডিল্য বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্থাপনের পরিকল্পনা করতেন না।
ছাত্র জীবনে অনুকূলচন্দ্র স্কুল-ছুটির দিনগুলিতে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কৃষ্টিমূলক আমোদ-প্রমোদ করতেন। গান রচনা করে, সুর দিয়ে, হারমোনিয়াম বাজিয়ে নিজে গাইতেন এবং বন্ধুবান্ধবদেরও শেখাতেন। যাত্রা-থিয়েটারের পালা রচনা করে নিজে প্রধান প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করতেন এবং সাথীদেরও অভিনয় শিখিয়ে অভিনয় করাতেন।
তিনি সদগুরু পরিচয়ে খ্যাত হবার পর থেকে জগতের কল্যাণ সাধনের জন্য ২২ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৮০ বছর পর্য্যন্ত অসংখ্য শ্রুতিবাণী, স্মৃতিবাণী, ভাববাণী প্রদান করেছেন। এছাড়া ছাত্রজীবনেও তিনি বহু কবিতা, সঙ্গীত ও নাটক রচনা করেছিলেন। তাঁর বাল্য রচনার সব পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। বহু চেষ্টার ফলে তাঁর স্বহস্ত লিখিত যে পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তা’তে ২২টি কবিতা, ঊনত্রিশটি সঙ্গীত, ‘দেবযানী’ শিরোনামে একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক ও অপর একটি নাটকের অংশবিশেষ লিপিবদ্ধ রয়েছে। পাবনা ইনষ্টিটিউশনে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় অমিত্রছন্দে রচিত উক্ত ‘দেবযানী’ নাটক তিনি বয়স্যদের নিয়ে অভিনয় করেছিলেন।
ছাত্রজীবনে তিনি খাগের কলমে কালি ভরে, নিব লাগিয়ে দিব্যি একটা ফাউন্টেন পেন তৈরি করে ফেলেছিলেন। বাবলা কাঁটা দিয়ে কলের গানের রেকর্ড বাজাবার পিন তৈরি করেছিলেন। বাবার সাথে স্টীমারে চেপে আমিরাবাদ যাওয়ার সময় স্টীমারের গঠন কৌশল দেখে একটা খেলনা স্টীমার বানিয়ে সবাইকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। (ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯