somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের আদিপর্ব(২)ঃ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা

০৭ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৪৭ সালের জুন মাসে কোলকাতার অধুনা-লুপ্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকার ৩০শে তারিখে এই লেখাটি ছাপা হয়েছিল।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা এখন স্থির করার সময় এসেছে। যে ভাষাকেই আমরা রাষ্ট্রভাষারুপে গ্রহন করি, তার আগে আমাদের বিশেষভাবে ভেবে দেখতে হবে, কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারুপে গ্রহন করলে সব থেকে বেশি সুবিধা হবে, কোন ভাষায় পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক কথা বলে, পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাষা কোনটি, কোন ভাষায় সব থেকে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, এবং কোন ভাষা ভাব প্রকাশের পক্ষে সব থেকে বেশি উপযোগী। যেদিক থেকেই বিবেচনা করা যাক না কেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবিই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে দ্ব্যর্থক যদিও কিছু নেই, তবু এখানে স্পষ্ট করেই বলা প্রয়োজন বোধ করছি যে, কেবল পুর্ব পাকিস্তানের জন্যই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানসহ সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার দাবি এবং যোগ্যতা সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষার।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা পাচটিঃ বেলুচী, পশতু, সিন্ধী, পাঞ্জাবী এবং বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দুভাষা নেই তা নয়, বাংলায়ও আছে। কিন্তু পুর্ব পাকিস্তানের তো নয়ই, পশ্চিম পাকিস্তানের কোন প্রদেশের মাতৃভাষা উর্দু নয়।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্বাচন করতে হলে এই পাচটি ভাষার মধ্য থেকেই করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম চারটি ভাষায় যারা কথা বলেন, তাদের কারোরই সংখ্যা বাংলাভাষীদের সমান নয়। পশতু ভাষীদের সংখ্যা ১ কোটির অনেক নিচে। বেলুচী এবং সিন্ধী ভাষীদের সংখ্যা তারচেয়েও কম। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক লোক কথা বলে পাঞ্জাবীতে। কিন্তু ভাষা হিসেবে এগুলোর কোনটিই প্রথম শ্রেণীর পর্যায়ে পড়ে না। এসব ভাষায় কোন উন্নত সাহিত্য গড়ে উঠেনি। অতএব এসব ভাষাকে রাষ্ট্রভাষিক প্রশ্ন থেকে বাদ দেওয়া যায়।
বাকি থাকে বাংলা। আমাদের যে 'বিকলাঙ্গ' পুর্ব পাকিস্তান, সে পাকিস্তানেও বাংলাভাষীর সংখ্যা পাচ কোটির মতো। সিলেটের গনভোটে আমাদের জয় হলে এবং সীমা-নির্ধারন কমিশনের রায়ের ফলে আপাত নির্দিষ্ট পুর্ব পাকিস্তানের সংলগ্ন-প্রধান অঞ্চলগুলো এর সঙ্গে সংযুক্ত হলে পুর্ব-পাকিস্তানের লোকসংখ্যা দাঁড়াবে পাচ কোটির কিছু বেশি। এই পাচ কোটির প্রায় সকলেই বাংলাভাষী। পশিম-পাকিস্তানের জনসংখ্যা কিছু কমবেশি তিন কোটি, এবং ভাষা হিসেবে এই তিন কোটি লোকও আবার প্রধান চার ভাবে বিভক্ত।
পাকিস্তানের সব থেকে বেশি লোক কথা বলে বাংলা ভাষায়। এই হিসেবে পাকিস্তানে প্রচলিত ভাষাসমুহের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা হবার দাবি সবচেয়ে বেশি বাংলার। শুধু পশ্চিম-পাকিস্তানে প্রচলিত ভাষাগুলোরই নয়, সমগ্র ভারতের যে-কোন ভাষার সাহিত্য থেকে বাংলা সাহিত্য শ্রেষ্ঠতর। বাংলা সাহিত্যের মতো ভারতের আর কোনো সাহিত্যই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে পারেনি; পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যগুলোর পর্যায়ে ভারতের একমাত্র বাংলা সাহিত্যই স্থান পেতে পারে। যে-কোনো সাহিত্যের বিকাশ কেবল প্রতিভা, সমাজ-ব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা ইত্যাদির উপর নিভর করেনা, খানিকটা ভাষার অন্তনিহিত শক্তির উপর নিভর করে। ভারতের বা পাকিস্তানের যে-কোনো সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করলে প্রমানিত হয় ভারতের তথা পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা হচ্ছে বাংলা।
অতএব পাকিস্তানের কেবল পুর্ব পাকিস্তানের নয়, পুর্ব এবং পশ্চিম উভয় পাকিস্তানকে নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার যোগ্যতা সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষার। লোকসংখ্যার দিক দিয়ে এবং সেই সঙ্গে গনতন্ত্রের দিক দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার দাবি সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষার। এমনকি, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার যোগ্য একমাত্র বাংলা ভাষাই।
বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার সপক্ষে উর্দুর দাবি অত্যান্ত কম। পশ্চিম পাকিস্তান বা পূর্ব পাকিস্তান, কোনো অংশেরই প্রধান ভাষা উর্দু নয়, এবং যদিও সমগ্র ভারতে উর্দুভাষীদের সংখ্যা অনেক তবু পশ্চিম বা পূর্ব কোনো পাকিস্তানেই তাদের সংখ্যা বাংলাভাষীদের চেয়ে বেশি নয়। এবং ভাষাগত উৎকর্ষ ও সাহিত্য সৃষ্টির দিক থেকে উর্দুর চেয়ে বাংলা ভাষাই শ্রেষ্ঠতর। অতএব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর দাবি বাংলার চেয়ে অনেক কম।
তবু যদি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহন করা হয়, তবে তা অত্যান্ত অবিবেচনার মতো কাজ হবে। কেননা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আট কোটি লোকের জন্য এমন একটা ভাষা নেওয়া হবে যা তাদের মাতৃভাষা নয়। এর ফলাফল অত্যন্ত অশুভ হবে। উর্দুকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে নিলে তার ফলাফল আমাদের বাংলাভাষীদের পক্ষে কী রকম দাঁড়াবে, তা বিবেচনা করে দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষনা করলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের পাচ কোটি লোক সরাসরি চাকরীর অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। যিনি প্রথম শ্রেণীর প্রথম হয়ে বাংলায় এম এ পাস করবেন তিনিও, যদি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষনা করে তিনি পৃথিবীর অন্যতম পন্ডিত বলেও গণ্য হন, বা সাহিত্য-সাধনার ফলে তিনি যদি নোবেল প্রাইজও পান, তবু আইনত তিনি সরকারি চাকরির উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন না, উর্দু যদি তিনি না জানেন। পক্ষান্তরে কেবলমাত্র উর্দু জানার জন্য একজন মেট্রিক পাস উর্দুভাষীও তার চেয়ে চাকরির অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। অবশ্য পদমর্যাদার দিক দিয়ে একথা বলছি না; একজন মেট্রিক পাস উর্দুভাষী অন্ততঃ পিওনও হতে পারবে, কিন্তু উর্দু-অজ্ঞ বাংলায় প্রথম শ্রেণীর প্রথম স্থান অধিকারী একজন এম এ চাকরির কোনই অধিকার পাবে না। যেমন ইংরেজি না জানলে বর্তমানে কারো চাকরির অধিকার নেই। এইটি হল স্বাভাবিক, এইটাই হল আইনতঃ ন্যায়ের কথা। ইংরেজি রাষ্ট্রভাষা হলে বর্তমানে আমাদের যেমন নিম্ন-প্রাইমারী থেকে এম এ পর্যন্ত ইংরেজি শিখতে হচ্ছে এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য আয়ত্ব করার জন্য সাধনা করতে হচ্ছে, এবং কতখানি আয়ত্ব করতে পারি, তার উপর চাকরির মান, বেতন, উন্নতি এবং সামাজিক মর্যাদা নির্বর করছে, উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে তখনো তেমনি নিম্ন-প্রাইমারী থেকে এম এ পর্যন্ত উর্দু ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে, আয়ত্ব করার জন্য সাধনা করতে হবে, এবং কতখানি আয়ত্ব করতে পারি, তার উপর চাকরির মান, বেতন, উন্নতি এবং সামাজিক মর্যাদা নিভর করবে। পক্ষান্তরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকরির যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলাভাষীই চাকরির অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন। রাষ্ট্রভাষা হওয়ার দরুন উর্দু সংবাদপত্রের মর্যাদাই হবে সবচেয়ে বেশি, যেমন বাংলা সংবাদপত্রের চেয়ে বর্তমানে ইংরেজি সংবাদপত্রের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। এবং এক্ষেত্রে প্রভাবের দিক দিয়ে উর্দুভাষীদের সঙ্গে আমরা কখনোই পারব না; যেমন ইংরেজি পরিচালিত পত্রিকার সঙ্গে আমাদের পারা সম্ভব হয়নি। উর্দুভাষী পরিচালিত সংবাদপত্রের মতো উৎকৃষ্ট এবং প্রভাবমুক্ত আমাদের পরিচালিত উর্দু সংবাদপত্র হবে না। আইন পরিষদে উর্দুভাষীদের মতো উর্দু আমরা বলতে পারব না, অতএব সেখানে আমাদের প্রভাব হবে অত্যন্ত কম। মোটের উপর পাকিস্তানে উর্দুভাষীর সংখ্যা নগণ্য হলেও তাদের হবে সবদিক দিয়েই সুবিধা, কিন্তু সবদিক দিয়েই অসুবিধা হবে আমাদের। ঠিক এইরকম ব্যাপার পশ্চিম পাকিস্তানের অন-উর্দুভাষীদের বেলায়ও হবে।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষারুপে গ্রহন করলে পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের অধিবাসীদের উপর কীরুপ আবিচার হবে তাই শুধু আমি দেখলাম। নইলে উর্দুর প্রতি আমার বা আমার বিশ্বাস অন্য কোন বাংলাভাষীর বিতৃষ্ণা নেই, বরং শ্রদ্ধাই আছে। ভারতে ব্রিটিশ আমলে যারা স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তারা উর্দুতে তাদের বক্তব্য বলে গেছেন; শিবলী নোমানী, সৈয়দ আহমদ, হালী, ইকবাল-এদের সাধনায় উর্দু ভাষায় একটা বিরাট সাহিত্য গড়ে উঠেছে। অতএব উর্দু সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধাই আমাদের স্বাভাবিক। কিন্তু তবু বর্ণীত কারনসমুহের জন্য উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহন করা যুক্তিযুক্ত নয়, এবং তা করলে পাকিস্তানের প্রায় সব নাগরিকের ওপরই অবিচার করা হবে, শুধু সেই কথাই আমার বক্তব্য।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষারুপে গ্রহন করলে আমাদের সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নতি শুধু ব্যহত হবে না, রুদ্ধ হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলতে পারেন, ইংরেজি রাষ্ট্রভাষা হওয়া সত্ত্বেও যদি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সম্ভব হয়ে থাকে তবে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলেও বা তেমনি হবে না কেন?
এর জবাব এই যে, আমরা সবসময় জানতাম- ইংরেজি বিদেশী ভাষা, সাম্রাজ্যবাদের ভাষা আমাদের ভাষা নয়। অতএব, তার প্রভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রগতি রুদ্ধ হতে পারেনি। বরং দ্রুততরই হয়েছে। কেননা ইংরেজির মধ্য দিয়ে আমরা বহির্বিশ্ব সম্বন্ধে বিশদ দৃষ্টিভঙ্গী লাভ করেছি, আমাদের কুপমন্ডুকতা ঘুচে গেছে এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যের প্রভাবে বাংলা সাহিত্য উন্নতই হয়েছে। কিন্তু সাহিত্য হিসাবে উর্দু সাহিত্য ইংরেজির থেকে তো নয়ই, বাংলা সাহিত্য থেকেও শ্রেষ্ঠতর নয়। অথচ উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে তার প্রভাব বাংলা সাহিত্যের উপর পড়বে; যে সাহিত্য শ্রেষ্ঠতর নয় তার প্রভাব পড়বে শ্রেষ্ঠতর সাহিত্যের উপর, এবং তার ফলে বাংলা সাহিত্য লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপর ইংরেজি বিদেশী ভাষা বলে জানতাম বলে এর প্রভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলতে আমরা দেইনি, কিন্তু যেহেতু উর্দু বিদেশী ভাষা নয়, এই ভাষা ও সাহিত্যকে আমরা শ্রদ্ধা করি, এমনকি বোধহয় কেউ কেউ বাংলার থেকেও বেশি শ্রদ্ধা করি, সেহেতুই বিপদ আরো বেশি। এতে এমন সম্ভাবনাও আছে যে, আমরা সম্পূর্ণভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বর্জন করে সম্পূর্ণভাবে উর্দু ভাষা ও সাহিত্যকে গ্রহন করব; বাংলা সাহিত্যের আসর থেকে আমরা চিরবিদায় নেব। যেহেতু আমরা উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং শ্রদ্ধান্বিত, সেহেতু সেই কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার বশে বাংলা ভাষা অ সাহিত্যকেই হয়ত আমরা একদিন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিলুপ্ত করে দিতে পারি, যার অর্থ হবে আমাদের পরলোক গমন। এই সম্ভাব্য পরিণতি সম্বন্ধে আমাদের সকলকে- বিশেষতঃ সাহিত্যিকদের সচেতন হতে হবে, এবং বাংলা ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। উর্দুকে রাস্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহন না করার আরো একটা বড় কারন আছে। আমরা স্বাধীনতা পেতে যাচ্ছি। স্বাধীনতা যদি সবদিক দিয়েই না পাওয়া যায় তবে সে স্বাধীনতাকে পুর্ণ স্বাধীনতা বলা যায় না। অতএব, অন্যান্য স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাষাগত স্বাধীনতাও পাওয়া দরকার। যে ভাষাগত স্বাধীনতা পেলে আমরা আমাদের মনোভাব সঠিকরুপে প্রকাশ করতে পারব, সে স্বাধীনতা যদি আমরা না পাই, তবে আমাদের মুখ আংশিকভাবে বন্ধ করে রেখেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে নাকি?
অবশ্য উর্দু যে আমরা শিখব না, তা নয়; বরং এখনকার থেকে আরো শিখব এর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মুল্যের জন্য, উর্দুভাষীদের জানবার জন্য। কিন্তু তাদের জানা কি শুধু আমাদেরই কর্তব্য, আমাদের জানা তাদের কর্তব্য নয়? কিন্তু আমাদের জানতে হলে আমাদের ভাষা শেখা এবং আমাদের সাহিত্য পাঠও তাদের অবশ্য কর্তব্য।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা এখনও কেউ বলতে পারেন না, কিন্তু কোন ভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে পারে তা বলবার অধিকার সকলেরই আছে, এবং কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহন করলে ফলাফল কীরুপ হবে, তাও বলবার অধিকার সকলেরই আছে। আশাকরি এ সম্বন্ধে কার কী মতামত তা জানতে পারব।
আরো একটি কথা সত্য যে, পূর্ব-পাকিস্তানের পাচ কোটি লোকের অন্তরকে যদি জানতে হয়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকগনকে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সাহিত্যকে বধ্যতামুলকভাবে জানতে হবেই। এক অংশের নাগরিক যদি অন্য অংশের নাগরিকদের না বুঝেন, তবে এক রাস্ট্রের অন্তভুক্ত থাকার অর্থ কিছুই থাকে না। অতএব, পূর্ব-পাকিস্তানকে অন্তরঙ্গভাবে জানতে হলে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকেরই অবশ্য কর্তব্য এবং বাধ্যতামুলক কর্তব্য রুপে গণ্য না হয়ে পারে না। তাই যদি হয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যই যদি তাদের অধ্যয়ন করতে হয়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানেরও রাষ্ট্রভাষারুপে বাংলাকে গ্রহন করতে আপত্তি কী? পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা হবে, এতে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। পশ্চিম পাকিস্তানেরও রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলে শুধু তিন কোটি লোককে নুতন ভাষা শিখতে হয়, কিন্তু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করলে প্রায় আট কোটি লোককেই নতুন একটি ভাষা শিখতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ ভাষা আন্দোলনের আদিপর্ব, আবদুল হক, মুক্তধারা প্রকাশনী।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×