কৃষ্ণচূড়া ! ঈশ্বরের এই নশ্বর পৃথিবীতে যে দু'টি সৃষ্টি আমাকে পুলকিত করে তার মধ্যে একটি এই কৃষ্ণচূড়া। সবুজ পাতার মাঝে লাল টুকটুকে এই ফুলটির কি এতো মোহ আমি বুঝিনা ! বার বার কেন আমাকে সে মোহিত করে ! মনে হয় এর সাথে যেন আমার শত জনমের চেনা জানা, আমাকে একটু পুলকিত করার জন্যেই তার এই মাটি ভেদ করে জেগে উঠা ! বাতাসে হেলে দুলে যে আমার ব্যার্থ জীবনটাকে দু'আনার শান্তি দিচ্ছে, কবি হলে আমি তাকে নিয়েই পৃথিবীর সেরা কবিতাটা লিখতাম। বেঁচে থাকার সপ্ন দেখি এই লাল সবুজের মৃদু দোলে। ভালবাসার নিঁখুত দৃষ্টি কেবলই তার তরে। নাহ্ ! ভালবাসা বলে তোকে আর প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। এটা ভালবাসা না, এটা কেবলই টান, স্বর্গীয় টান। যার কোন ইতি নেই। নেই কোন ক্লান্তি। কেবলই প্রশান্তি। তুই তো জানিস আমি ভালবাসা-টালবাসায় বিশ্বাসি না, সবই চাহিদা। আর কিছুটা দ্বায়দায়িত্ব। পাশ কাটিয়ে বললে শ্রদ্ধা, বিনম্র শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই না। ভালবাসা আমার শায়মার সাথে না হলে নায়মার সাথে হবেই কিন্তু তুই না হলে জাম গাছের সাথে কখনোই যে আমার হবেনা ! তোর মত আর কেউ নেয়। সব সম্পর্কেরই একটা স্বার্থ থাকে, হয় সম্পর্ককারীর নয়তো স্রষ্টার! আর আমি আমার আর তোর সম্পর্কের মাঝে অন্য কাউকে লাভবান হতে দিবো না। সম্পর্ক তৈরি করে ঈশ্বর এতে আবার শর্তারোপ করবে কিংবা একদিন মন খুশিতে সেটা ভেঙে দিবে, আমি তা হতে দিবো না। সম্পর্কের আড়ালে স্বর্গীয় যৌনতার অবাধ ঝিলিক কিংবা কারো লানতের শাস্তি অন্য কাউকে নিতেও দিবো না। সবই একজনের গুটির চাল ! সবই লোক দেখানো। সম্পর্কের ভিন্ন ভিন্ন নামে শোষন আর নির্যাতন। মানুষ বড় অসহায় রে কৃষ্ণচূড়া !! বড়ই অসহায় !! তুই বড় বেঁচে গেছিস বৃক্ষ হয়ে জন্মে। তোকে কারো কাছে মাথা নত করতে হয়না, কারো দানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না। সুখের জন্য প্রার্থনা করতে হয়না, ভয়ংকর আজাবের কথা ভেবে অস্থির সময়ও কাটাতে হয়না।
পা' বিহীন মানবকে ফুটবল খেলার জন্য মাঠে নিয়ে যাওয়া আর হাত পা বেঁধে দুনিয়াই পাঠিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে বলা এক নয় কি? হাস্যকর! তার পরেও মানুষ হাসে না, কাঁদে। কোন কিছু হারিয়ে, না পেয়ে, পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় কাঁদি। সম্পর্ক করি। কোন বাবার ছেলে হতে চাই পরে নিজে বাবা হবার জন্য, কাউকে মা বলে ডাকি পরে অন্যকে মা বানানোর জন্য। হা: হা:। এতে আমার কি লাভ? শারীরিক ? মানুষিক? তার পরেও যদি শরীর আর মন এক সাথে চলতো !
প্রতিবন্ধী 'আসাদের" মন শত চেয়েও শেষে কবরে গেল চির কুমার থেকে। একবার ভেবে দেখতো কৃষ্ণচূড়া যে,লোকটি এত সুন্দর একটা পৃথিবীতে জীবনে কোনদিন প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতে পারলো না , স্বাদ নিতে পারলো না, জীবনের স্বার্থকতা বুঝলো না, পাশে জড়িয়ে কাউকে পেলো না। এমন কি প্রকৃতি তার মুখে খাবার তুলে দিতেও অপার, অথচ তাকেই নাকি আবার জবাবদিহি করতে হবে সে কেন প্রকৃতিতে স্রষ্টার কথা মত চলেনি। স্রষ্টা তাকে সৃষ্টিই করেছেন তার গুন গানের জন্য। অথচ অন্যরা কত মৌজ মাস্তি করেও দিন রাত রাত তার গুনগান করছেন আর এতেই স্রষ্টা বেজাই খুশি। আরে এই অভাগা ! তুই বুক ভরা বেদনা নিয়ে, মানুষের মাস্তি দেখে, প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা দেখে কিছুটা উন্মাদ হয়ে চিৎকার করেছিলি তাই আজ তুই তোর মহা অন্যায়ের শাস্তির দিনে দাঁড়িয়ে।
তুই কি এজন্যই প্রকৃতির বিরোধিতা করেছিলি যে জন্মের পর তোর মা তোকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় সমাজের ভয়ে? তুই কি এজন্যই প্রকৃতির বিরোধিতা করেছিলি যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাগজ কুড়িয়ে যে টাকা পেয়েছিলি তার আশি ভাগ নিয়ে যেত তোর পালক চাচা? তুই কি এ জন্যেই রাগ করেছিলি যে রাস্তার ছেলে বলে শত কষ্ট করে স্কুলে গেলেও কেউ তোকে বন্ধু ভেবে জন্মদিনের নিমন্ত্রণ করেনি ? নাকি প্রাইভেট না পড়তে পারার কারনে তোর প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল মেধাবিহীন এই জন্যে ? নাকি ৩ বছর তোর হাতে হাত রেখে পথ চলেও যে, পরিবার না মানার কারণে আজ তোকে ছেড়ে অন্যের গাড়িতে চড়ে সে জন্যে?
সত্যি করে বলতো? নাকি বেঁচে থাকার তাগিদে ৪৫০০ টাকা মাসের চাকরির দায়িত্বে সরক দূর্ঘনটায় পঙ্গু হয়ে আজ বসে বসে কবরে যাওয়ার দিন গুনছিস ভেবে? রাগ করছিস তার দেয়া ফাঁদে তুই ফেসে গেছিস ভেবে? ব্যাথাটা কি তোর আরো বাড়ে যখন দেখিস মানুষ রুপি কিছু অমানুষেরা প্রকৃতিতে দিব্যি আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছে তাদের সম্পর্ক দাতাদের দেয়া সম্পদের জোরে?
ভাবিসনা যার কেউ নাই তার ঈশ্বর আছে ! নাকি আবার তুই সেই স্বর্গেও যেতে চাস্ না যেখানে জীবন সংগ্রামে যারা ঈশ্বরের আশির্বাদ পেয়ে স্বর্গীয় জীবন লাভ করেছে ? ব্রাভো !!
এভাবে চুপ করে আর কত শুনবি কৃষ্ণচূড়া ? এবার বল তুই ছাড়া আর কেউ কি আছে ভালবাসা কিংবা সম্পর্কের উর্ধ্বে?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১:১২