somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনাজপুরের রামসাগর ঘুরে এলাম

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই ক্ষমা চাইছি ছবি আপলোড করতে না পারার জন্য। ছবি হয়তো না বলা আরো অনেক কথা বলে দিতে পারতো।


দিনাজপুরের রামসাগর ভ্রমন করে এলাম। এটা বিরাট বড় একটা দীঘি। লম্বায় ১০৭৯ মিটার, চওড়ায় ১৯২.৬ মিটার, গভীরতায় ৯.৫ মিটার। উত্তরবঙ্গ খরা কবলিত এলাকা, প্রতিবৎসর সুপেয় পানির অভাবে এক সময় প্রচুর মানুষ মৃত্যুবরন করতো। রাজা রাম নাথ ক্ষমতায় আরোহন করার পর প্রথমেই মানুষের জীবন বাচাবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দিকে মন দিলেন। আনুমানিক ১৭২২ থেকে ১৭৬৩ খ্রীঃ মধ্যে রামসাগর খনন করা হয়, প্রায় ১৫ লক্ষ লোকের পর্যায় ক্রমিক শ্রম এবং ঐ সময়কার ৩০০০০.০০ টাকা (সম্পদ) (কেউ আবার কইয়েন না যেন ঐ সময় BDT পাইলেন কই তাই সম্পদ লেইখ্যা দিলাম) ব্যয় হয়। রামসাগর নিয়ে অনেক পৌরানিক গল্প প্রচলিত ছিলো, কালের আবহে তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কারন, গল্পগুলো লোকমুখে বংশপরম্পরায় প্রচলিত ছিল। কোথাও লিখিত আকারে আছে কিনা জানা নেই। বৃটিশরাজত্ব,পাকিস্তান পর্ব আরও অনেক কারনে এগুলো হারিয়ে গিয়ে থাকতে পারে । কোন ন্যাশনাল আর্কাইভে আছে কিনা জানা নেই। একটি গল্প এরকমঃ- রাজা রাম নাথ দীঘি খোড়ার পাশাপাশি উত্তর প্রান্তে একটি রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন (যেটা রামসাগরে ঢুকে কিছুদুর এগোলে হাতের ডানে পড়ে) । দীঘি খোড়ার পর তিনি খুব ঘটা করে পূজোর আয়োজন করলেন, প্রায় মাসব্যপী প্রচুর পূজা অর্চনা, প্রচুর দব্য সামগ্রী উৎসর্গ করলেন, প্রচুর পাঠা বলি দিলেন কিন্তু দীঘিতে আর পানি উঠেনা, যদিও, সাড়ে নয় মিটার গভীর মানে, প্রায় ২৮ ফুট গভীর । অথচ ঐ সময় আরও কম গভীরতায় কুয়া/ইন্দারায় পানি উঠছে। পুরো রাজ্যের মানুষের কাছে রাজার অবস্থান খেলো হয়ে যাওয়ার অবস্থা, নিশ্চয়ই রাজা অথবা তার পূর্বপুরুষ এমন কোন গোপন পাপ করেছেন যা জনগন না জানলেও দেবী জানেন এবং এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছেন। রাজা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে আমৃত্যুর প্রতিজ্ঞা নিয়ে মন্দিরে হত্যা দিয়ে পড়ে রইলেন । দিন যায় সপ্তাহ যায় রাজা দানাপানি পরিত্যাগ করেছেন। দিনের পরদিন তিনি কৃশকায় থেকে আরও কৃশকায় হয়ে পড়ছেন, এক সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে মন্দিরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন, আর অল্পক্ষন পরেই দিব্য দৃষ্টি লাভ করে দেখতে পেলেন চারিদিক আলো করে সূর্য্যের ঔজ্জ্বল্য নিয়ে দেবী তাকে দর্শন দিতে এসেছেন, তিনি তখন দেবীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের জন্য বর চাইলেন। দেবী রাজাকে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। একসময় রাজা ধাতস্তঃ হয়ে চেতনা ফিরে পেলেন । চোখ মেলে দেখলেন অসংখ্য উদ্বিগ্ন চোখ ওনার দিকে তাকিয়ে আছে, রাজা কারো দিকে মনযোগ দিলেন না, শুধুমাত্র ছোট রাজকুমারীকে নিয়ে আসতে বললেন এবং মন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন, দীঘির মাঝখানে একটি মন্দির বানাতে এবং পুজার আয়োজন করতে। রাজকন্যাকে আনার পর রাজা তাকে বুকে চেপে ধরে অনেক আদর করলেন আর গোপনে চোখের পানি ফেললেন। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর, রাজা ঘোষনা দিলেন, আগামী শুক্লা পক্ষের তৃতীয় তিথীতে তিনি রাজকুমারীকে নিয়ে মন্দিরে দেবতার উদ্দেশ্যে পূজো দেবেন। যথারীতি রাজা নিজেই পুরোহিতের ভূমিকা পালন করে পূজো দিচ্ছেন, যেই না দেবী নির্দেশিত লগ্ন হাজির হল, ওমনিই মন্দিরের তলায়, ভয়ঙ্কর বিস্ফোরনের শব্দ হয়ে, সব চুরমার হয়ে গেল এবং প্রবল গর্জনে পানির প্রবাহ এসে অল্পক্ষনে দিঘী পরিপুর্ন করে ফেলল। পরদিন সকালে রাজা রাম নাথকে অজ্ঞান অবস্থায় রামসাগরের তীরে পাওয়া গেলেও রাজকন্যাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর অনেকদিন রাজ্যবাসী ঐ লগ্ন হাজির হলে দেখতে পেতো পূর্নজোৎস্নায় একটি শুভ্রপরী দীঘির উপর দিয়ে কখনো গান গাইতে গাইতে কখনো বিলাপ করতে করতে ভেসে বেড়াচ্ছে। অবশ্য এখনো দেখা যায় কিনা জানিনা, আপনারা কেউ গেলে দেখতে পাবেন এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। দিনাজপুরে অনেকগুলি সাগর আছে যেমন আনন্দসাগর,মাতাসাগর,যুলুমসাগর। যুলুমসাগর নামের বৈশিষ্ঠ হচ্ছে খনন কালে যেকোন কেউ ঐ এলাকা অতিক্রম করলে জবরদস্তি করে তাকে খনন কাজে লাগিয়ে দেওয়া হত। তবে আপনাদের ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই কারন ওটা এখন টুরিষ্ট স্পট পরিচালনায় রয়েছে বিজিবি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×