সাধারনত লাইটার অপারেশনে ৩/৪ টা কোষ্টাল ট্যংকার এনগেজ করাহয় ।একটা লোড নিয়ে গিয়ে খালি করে আসতে আসতে বাকিগুলি লোড হত এবং সাইক্লিক অর্ডারে চলতে থাকতো । এই অপারেশন চলা কালীন প্রায়ই নাওয়া খাওয়া ঘুমের কোন হদিশ থাকেনা । বিদেশী জাহাজের খাবার মুখে রুচেনা বেশিরভাগ সময় চা কফি রুটি স্ন্যাক্স এর উপর দিয়েই পার করতে হয় ।
একবার একটা জাহাজে এরকম লাইটার অপারেশনে গিয়েছি জাহাজের ক্রুরা সব কোরিয়ান । কাজের ফাকে সেলুনে বসে টিভি দেখছি আর কফি পান করছি হঠাৎ ক্রু দের মধ্যে একটা উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম বিষয় টা কি বুঝতে পারছিলামনা আবার জিজ্ঞাসাও করতে পারছিনা অনাহুতো নাক গলানোটা উচিৎ নয় জেনে । ( আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য সমস্যা নেই কারন আমরা অপরিচিতের হাড়ীর খবরও জিজ্ঞাসা করতে পারি অনায়াসে ২ মিনিটের পরিচয়েই । বিদেশীদের বেলায় সেটা সম্ভব নয় । ) এর মধ্যে দেখলাম একজন একটা ক্যামেরা নিয়ে দৌড় দিলো বুঝলাম বিষয়টা মারাত্নক কোন ঘটনা নয়, কারন এইসব অয়েল ট্যাংকারে আসল ভয় হচ্ছে অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা । শেষ পর্যন্ত কৌতুহলের কাছে পরাজয় স্বীকার করে দেখতে বেরোলাম ঘটনা কি ? দেখলাম অনেক দূরে আকাশ থেকে একটা মেঘ পানিতে নেমে এসেছে এবং ওটাকে পিছনের দৃশ্যপট হিসেবে ব্যবহার করে ক্রুরা পটাপট ছবি তুলছে । আমি একটুক্ষন দেখে লিফটে করে ব্রীজে চলে এলাম বাইনোকুলার দিয়ে দেখার জন্য । চোখে বইনোকুলার লাগিয়ে এডজাষ্ট করার পর এক লাফে দৃশ্যটা নাকের ডগায় চলে এল । দেখলাম প্রচন্ড বেগে একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে পানি ঘুরছে ( ভোর্টেক্স ) এবং পানি আকাশে উঠে যাচ্ছে । পানির একটা স্তম্ভ তৈরী হয়েছে । ভয় লাগলো কারন আসলে এটা একটা সমুদ্রে ঘটা টর্নেডো । আমরা প্রায়ই খবরে দেখি যেখান দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায় সেখানের সব কিছু নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যায় । অনেক জায়গায় টিউবওয়েলও উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে । আমেরিকায় এটাকে টুইষ্টার বলে এর কেন্দ্রে প্রায় আড়াইশো মাইল বেগে বাতাস ঘুরতে থাকে এবং যেদিক দিয়ে যায় সেদিকের ঘরবাড়ী গাড়ীও উড়িয়ে নিয়ে যায় । ( ডিসকভারি বা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের কল্যানে এগুলো আমরা প্রায়ই দেখে থাকি )