বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭-৪৪ অনুচ্ছেদে মোট ১৮টি মৌলিক অধিকারের উল্যেখ রয়েছে।
মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে আদালত কর্তৃক বলবদ করা যায়।
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ
(১) কেবল, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকুলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিচুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ
(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই
(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপর্যুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকুলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্র-দায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মীবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ
রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন নাগরিক কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোন খেতাব, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করিবেন না।
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ
আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ
আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।
অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ
(১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শেরও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ-সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।
(২) গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে (গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্ত-কাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (১) ও (২) দফার কোন কিছুই সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না,
(ক) যিনি বর্তমান সময়ের জন্য বিদেশী শত্র“; অথবা
(খ) যাহাকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন গ্রেপ্তার করা হইয়াছে বা আটক করা হইয়াছে।
(৪) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইন কোন ব্যক্তিকে ছয় মাসের অধিক কাল আটক রাখিবার ক্ষমতা প্রদান করিবে না যদি সুপ্রীম কোর্টের বিচারক রহিয়াছেন বা ছিলেন কিংবা সুপ্রীম কোর্টের বিচারকপদে নিয়োগলাভের যোগ্যতা রাখেন, এইরূপ দুইজন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত একজন প্রবীণ কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত কোন উপদেষ্টা-পর্ষদ উক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হইবার পূর্বে তাঁহাকে উপস্থিত হইয়া বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগদানের পর রিপোর্ট প্রদান না করিয়া থাকেন যে, পর্ষদের মতে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখিবার পর্যাপ্ত কারণ রহিয়াছে।
(৫) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান সংবলিত কোন আইনের অধীন প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে আটক করা হইলে আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে যথাসম্ভব শ্রীঘ্র আদেশদানের কারণ জ্ঞাপন করিবেন এবং উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য-প্রকাশের জন্য তাঁহাকে যত সত্বর সম্ভব সুযোগদান করিবেন ঃ
তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় তথ্যাদি-প্রকাশ জনস্বার্থ-বিরোধী বলিয়া মনে হইলে অনুরূপ কর্তৃপক্ষ তাহা প্রকাশে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
(৬) উপদেষ্টা-পর্ষদ কর্তৃক এই অনুচ্ছেদের (৪) দফার অধীন তদন্তের জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নির্ধারণ করিতে পারিবেন।
অনুচ্ছেদ-৩৪ঃ
(১) সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হইলে তাহা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই সেই সকল বাধ্যতামূলক শ্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যেখানে
(ক) ফৌজদারী অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তি আইনতঃ দন্ডভোগ করিতেছেন; অথবা
(খ) জনগণের উদ্দেশ্যসাধানকল্পে আইনের দ্বারা তাহা আবশ্যক হইতেছে।
অনুচ্ছেদ-৩৫ঃ
(১) অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটন-কালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দন্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।
(২) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাইবে না।
(৩) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন।
(৪) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না।
(৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।
(৬) প্রচলিত আইনে নির্দিষ্ট কোন দণ্ড বা বিচারপদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগকে এই অনুচ্ছেদের (৩) বা (৫) দফার কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৭