somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেরোখাতা : ৩ : হল কথন, সিট যেখানে হতাশার গল্প

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খেরোখাতা : ১ : পড়ুম না আমি কুয়েটে!!!
খেরোখাতা : ২ : সেকেন্ড টাইম!!!

ঢাবিতে যখন আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছিল, তখন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সবকিছু নিয়মনীতি অনুসারে চলছে। মনে ক্ষীণ আশা ছিল মেরিটে যেহেতু প্রথম দিকে, তাই সিট পেয়েও যেতে পারি। দুঃখের বিষয় জগন্নাথ হলে সম্পর্কে ধারণা ছিল না, থাকলে এতো কষ্ট করে আশা করতে হতো না। যেদিন হলে গেলাম ভর্তির কাজ করতে, অফিসে বসে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম সিটের ব্যাপারে, তার নিরস উত্তর ছিল সিটের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই দুই বছরে আমি এখনো বের করতে পারি নাই, সিটের ব্যাপারে কার সাথে কথা বলতে হয়! ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে জানতে সিটের ব্যাপার আমার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করল। সিট হলো দুই প্রকার, পলিটিক্যাল এবং নন-পলিটিক্যাল (বিস্তারিত এই লেখায়)। পলিটিক্যাল সিট পাওয়া কোনো ব্যাপার না, যে কোন সময় যে কেউ উঠতে পারে। তবে নন-পলিটিক্যাল সিট পাওয়া সবচেয়ে কঠিন, অন্তত আমার মতে। এই হলে সিটের জন্য কোনো নোটিস হয় না। তো সিট পাওয়ার উপায় কি??? উপায় হচ্ছে, হলে পরিচিত কোনো বড় ভাই থাকতে হবে। যিনি হলে ছেড়ে দেয়ার সময় সিটের এলটমেন্ট আর একজনের কাছে দিয়ে যাবেন। ছাড়পত্র নেয়ার সময় তিনি আবাসিক শিক্ষকের কাছে জুনিয় ছাত্রটিকে নিজের ভাই (!!!) হিসেবে পরিচয় করে দিবেন। তো আবাসিক শিক্ষক বড় ভাই এর সেই সিটটির এলটমেন্ট জুনিয়র ছাত্রটির নামে দিয়ে দেবেন। সব জায়গায় নিয়ম মেনে অভ্যস্ত, এই নিয়ম আমার কাছে খুবই খাপছাড়া মনে হল। হলে যাকেই সামনে পাই, তাকেই এই ধরনের আজগুবি নিয়মের খারাপ দিকগুলো বোঝাই। সবাই শোনে আর মুচকি মুচকি হাসে। কেননা সবাই তো এই সিস্টেমেই হলে সিট পায়। আমি যদি কোনোদিন সিট পাই, তবে অন্য কারো কথায় হয়ত এভাবেই হাসব :#> । যাই হোক আমার কথায় তো আর নিয়ম (বা ধারা) পাল্টাবে না, বড় ভাই যোগাড় করতেই হবে। যেখানে যে নিয়ম, আমিও খোঁজা শুরু করলাম বড় ভাই। যাকেই সামনে পাই বা হলে যার সাথেই পরিচয় হয় দুই তিন লাইন আলাপ করার পরই ঘুরায়ে পেচায়ে সিটের কথা তুলি। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কেননা সবারই পরিচিত কোনো না কোনো আত্মীয় আছে। আমি আর সিরিয়াল পাই না। প্রথমে ইচ্ছা ছিল নন-পলিটিক্যাল সিট না পেলে হলেই উঠবো না। কিন্তু ফার্মগেটের মেসে লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় পলিটিক্যালিই উঠে গেলাম। ফার্স্ট ইয়ারে প্রোগ্রামিং অটোক্যাড কোর্স আছে। কম্পিউটার অতীব দরকার, কিন্তু আমি পলিটিক্যাল রমে কম্পিউটার আনার সাহস পাই না। কবে মারামারি লেগে আমার এতো সাধের কম্পিউটারটা ভাংচুর হয়!!! সারাদিন বুয়েটের বন্ধুদের রুমে পড়ে থাকি। একজনের কাছে শুনলাম আবাসিক শিক্ষকের কাছে আবেদন করলে নাকি সিট পাওয়া যায়। একটা আবেদন নিয়ে হাজির হলাম আবাসিক শিক্ষকের কাছে। স্যারও বললেন বড় ভাই নিয়ে যেতে। হায়!!! বড় ভাই কোথায় পাই? অনেক বড় ভাই আশা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো এক কারণে আমি কখনোই সিট পাই না!!! কাহিনী কি??? আস্তে আস্তে হলে বয়স হলো। অনেক কিছু বুঝতে শিখলাম। হলে এলাকাপ্রীতির একটা ব্যাপার আছে। সবাই তার সিট এলাকার লোককে দিয়ে যেতে চায়। এলাকার নাম দিয়ে বিতর্ক বাড়াতে চাই না। যে যতো কথাই বলুক না কেন, সিট পাবে তার এলাকার লোক। তবে ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। তবে যারা ব্যতিক্রম, তাদের হাতে দেয়ার মতো সিট নেই। দুঃখের বিষয় আমার এলাকার বড় ভাইদের মাঝে এলাকাপ্রীতি নেই বললেই চলে। তাই আমি এখনো একখানা নন-পলিটিক্যাল সিট "ম্যানেজ" করতে পারি নাই। অন্যান্য হলে এই সমস্যা নেই তা নয়, তবে সেখানে সেকেন্ড ইয়ারেই সিট পাওয়া যায়। এখানকার অবস্থা একেবারেই অন্যরকম। ফার্স্ট ইয়ারে প্রোগ্রামিং এর মতো কোর্স কম্পিউটার ছাড়া পার করে দিয়েছি, এখন আর কম্পিউটার আনার কথা চিন্তাই করি না। দুই বছরের এই ঢাবি জীবনে অনেক মজা করেছি যেমন ধরা যাক কার্জন হলের মাঠে গোল্লাছুট খেলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু। কেবল গলার কাটা হয়ে বিধে আছে এই হল সমস্যা। আপনাদের কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী, যেন আমি একজন সহৃদয় বড় ভাই যোগাড় করতে পারি। কেননা থার্ড ইয়ারে আর একটা প্রোগ্রামিং কোর্স আছে। সেটা আমি নিজের কম্পিউটারে প্র্যাকটিস করে পরীক্ষা দেয়ার স্বপ্ন রাখি /:)


সর্বশেষ আপডেটঃ
অবশেষে বিভাগের এক বড় ভাইয়ের আনুকূল্যে সিটে পেয়েছি। সিট পেতে পেতে অবশ্য ২য় বর্ষ পরীক্ষা প্রায় শেষ। সিট পেলাম ০৫/০৩/১০ ইং তারিখে।

সর্বশেষ (+১) আপডেটঃ
রাজনৈতিক কারণে বুয়েটে আশ্রিত। /:)

খেরোখাতা : ৪ : ঢাকা আসার গল্প
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:২৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×