somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র হওয়ায় এবং হলে থাকায় ছাত্র রাজনীতি কে দেখেছি একদম কাছ থেকে। এ লেখাটি কোনো মূল্যায়ন বা কারো পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে নয়, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা বিনিময় মাত্র। অনেকের কাছে এ লেখা চর্বিত চর্বণ মনে হতে পারে। আমার লেখার প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র রাজনীতি। অর্থাৎ তা অন্য কোনো জায়গার সাথে মিলতেও পারে আবার নাও পারে। প্রথমেই আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, বর্তমান সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির কারন কি? আমি বলবো, সিট সংকট। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রই তৃতীয় বর্ষের আগে বৈধভাবে সিট পান না। কিন্তু ঢাকার বাইরের বেশিরভাগ ছাত্রই প্রথম বর্ষ থেকে হলে থাকেন। এটা কি সম্ভব? হ্যা, খুব ভালোভাবে সম্ভব। প্রথমেই আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে হলের ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতার সাথে। ব্যস হয়ে গেল। তিনি আপনাকে একটি সিটে "তুলে" দেবেন। হল কর্তৃপক্ষের বাবার ও সাধ্য নেই আপনাকে ওই সিট থেকে হটায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনাকে তো বিনিময়ে কিছু দিতে হবে তাই না? সেগুলো কি? সেগুলো হচ্ছে- হলের সিনিয়র কোনো নেতাকে দেখলেই সালাম এবং হ্যান্ডশেক, রাজনৈতিক "প্রোগ্রাম" এ যাওয়া (মধুর কেন্টিন এ যাওয়া এবং মিছিলে অংশগ্রহন), নিয়মিত সন্ধাবেলায় নেতাদের আড্ডায় হাজিরা দেওয়া। এভাবেই কোনো এক সময় হয়ত আপনি "নন পলিটিক্যাল" সিট পেয়ে যেতে পারেন, অথবা থাকতে হবে এদের সাথেই। আপনার কার্যক্রম বা আপনি কতটুকু "এক্টিভ" তার উপর ভিত্তি করে আপনার প্রমোশন হতে পারে। ধাপগুলো হচ্ছে- ফ্লোরিং থেকে বেড এ, নিচতলার গণরুম থেকে ভালো কোনো রুমে, ডাবলিং থেকে সিঙ্গেল সিট! এমনকি ভালো এক্টিভ থাকলে শিক্ষাজীবনের শেষ দিকে গোটা একটা রুম ও পেয়ে যেতে পারেন! এখন মনে হতে পারে, এক্টিভ না থাকলেই তো হয়! হ্যা হয়, আপনি যদি বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র হন আপনি এক্টিভ হওয়ার সময় কমই পাবেন, তবে এর মানে এই না যে বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্ররা পিছিয়ে আছে। গর্বের বিষয় হচ্ছে, তারাও অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করছে! আমার প্রথম দিকে জিজ্ঞাসা ছিলো যারা "এক্টিভ" পলিটিক্স করে, তারা কোন যুক্তিতে করে। আমি যখন প্রথম দিকে উঠেছি, তখন ইতিহাসে পড়া এক বড়ভাই বুঝালেন, সপ্তাহে ক্লাস হয় মাত্র তিন কি চারটা। এত সময় একটা কিছু তো করতে হবে নাকি? তাই পলিটিক্স করি। আসলেই, ছাত্রজীবনে সময় খুব মূল্যবান বিষয়। অবহেলায় তা নষ্ট করা উচিত নয়। এখানে যেমন কিছু অভিজ্ঞতা আছে খারাপ, আবার ভালোও আছে! যেমন ধরুন, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নেতারা ডোজ দিয়ে প্রথমে সোজা করেন এবং পরে লাইনে আনেন। এই ডোজের পরিচিত নাম হচ্ছে "ফাপড়"। কারনে অকারনে "ফাপড়" দিয়ে ছাত্রদের সোজা রাখা নেতাদের একটি অতি প্রিয় কাজ। আর ভালো দিকটা হচ্ছে, অনেকে ফাপড় দেওয়ার লোভেও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সব কিছুরই একটা উদ্দেশ্য থাকে। আমার খুব আগ্রহ ছিলো কিসের জন্য এই রাজনীতি। খোজ খবর নিয়ে দেখলাম রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেক হলে একটি করে কমিটি গঠন করে, যার জন্য এই রাজনীতি। এই কমিটিতে নামের লোভে একটি হলে গজিয়ে উঠে অনেক গ্রুপ। এমন একটি হল আছে যেখানে গ্রুপ আছে ছয়টি। সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পোস্ট হচ্ছে সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক। ছয়টি গ্রুপ হওয়ার এই হলে এখনো মারামারির ভয়ে কমিটি দেয়া হয়নি। আমার মনে এই প্রশ্নও এসেছিলো কমিটিতে নাম থেকে লাভ কি? উত্তর পেয়েছিলাম, হলের সব কাজে পার্সেন্টেজ পাওয়া! আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক করেছি, এই পার্সেন্টেজ পাওয়ার রাজনীতি কিভাবে বন্ধ করা যায়? খুব সহজ একটি উপায় আছে, তা হলো, সিট সংকট দূর করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিশ্চয়ই জানেন যে প্রত্যেক বছর কত ছাত্র ভর্তি হচ্ছে, চাইলেই তারা আগে হিসেব নিকেশ করে হল নির্মাণ করে এই সিট সংকট দূর করতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষকদের কিছু অংশও এই রাজনীতির অংশ। তাই কখনোই এই সিট সংকট দূর হবে বলে আমার মনে হয় না, আর এই রাজনীতিও বন্ধ হবে না। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এই রাজনৈতিক দলগুলো কি কোনো ভালো কাজ করে না? আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আমরা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন রাজনীতিকের মুক্তির জন্য আমরা কলা ভবনে মানববন্ধন করেছি। কিন্তু আমাদের হলে কোনো ডাস্টবিন নেই, সবাই রুমের সামনের বারান্দা দিয়ে অথবা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে, এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কোনো মাথাব্যাথা দেখিনি!!! অন্তত আমার দৃষ্টিতে এই হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৩০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×