চ্যাটিং উইথ রুপন্থী (প্রথম পর্ব)
বিবাহিত আর অবিবাহিতের ব্যাপারটা তো কোনোক্রমে পার করা গেল । রোহান ধরেই নিলো – রুপন্থী অবিবাহিত (যেকোনো কিছুই ধরে নেওয়া যায়; এতে কোনো ক্ষতি নেই । একজন ল্যাংড়া-লুলা মানুষ ও ধরে নিতে পারেন – তার দু’খানা সবল কর্মঠ পা আছে এবং সেই পা দিয়ে তিনি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করছেন)। কিন্তু খট করে মনে প্রশ্ন জাগে অন্যখানে – এ সুদীর্ঘ জীবনে রুপন্থী কী কারো প্রেমে পড়েছে ? কত জন প্রেমিক তার জীবনে এসেছে ? প্রেমের ধরণ-ধারণ, আচার-আচরণ ও প্রকরণ কেমন ছিল ? তারা কী দূর থেকেই ভালোবেসেছে নাকি .....................
রোহান আর ভাবতে পারে না । তার মস্তিস্কের করোটিতে বেশ প্রদাহ অনুভূত হচ্ছে । সে এর আগে ও দেখেছে জটিল কোন চিন্তা শুরু করলেই তার ব্রেইন সেলগুলি লাঁফাতে শুরু করে । লম্ফনরত সেলগুলি একটা পর্যায়ে সরাসরি করোটিতে গিয়ে আঘাত করে । তখন ই প্রদাহটা হয় । আচ্ছা, প্রেম-ভালোবাসা কোহেকাফে নিষিদ্ধ নয় তো ?
পরের বার কথা হলে এই সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জেনে নিতে হবে – ভাবতে ভাবতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় রোহান । উদ্দেশ্য – এক টুকরো নিঁখাদ ঘুম । কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি । তন্দ্রায় একটুখানি চোখ বুজে এলেই তার মনে হয় পাশে শুয়ে আছে কোহেকাফ নারী ! পাশ ফিরে সে হাত বাড়ায় তার স্বপ্নরাণীকে ছোঁয়ার জন্য , পারে না । এভাবে একবার, দুইবার, তিনবার, .................. পঞ্চান্নবার । নাহ্ , ব্যার্থতা প্রতিবারেই ঘুরে ফিরে আসে কিন্তু যার আসার কথা সে আসে না ! রোহানের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটতে থাকে । হ্যামারিং ঘটে ব্রেইন সেলগুলির । স্বাভাবিকতা হারিয়ে অস্বাভাবিক এক জগৎকে সে হাতছানি দেয় ইশারায় ; যে জগৎ আরাধ্য , অলীক আর কল্পনার কল্পতরু দিয়ে আগাগোড়া মোড়া ।
……………………………………………………………….
মাস ছয়েক পরের কথা । আগের তুলনায় রোহান এখন অনেকটাই অস্বাভাবিক ! মা , বাবা কিংবা বন্ধু-বান্ধব কারো কথার ই ঠিকমতো জবাব দেয় না সে ।
যদি মা কখনো জিজ্ঞাসা করে – ‘তোর কি হয়েছে , বাবা ?’
সে বিড়বিড় করে জবাব দেয় – ‘Nothing.’
মা আবার বলেন – ‘কি ঘটেছে ? আমি তোর মা ! আমায় সবকিছু খুলে বল্ , বাপ আমার ! কোনো কিছু লুকোস নে !’
রোহান অন্যদিকে চেয়ে বলতে থাকে – ‘Nothing happened ! Everything is okey, Mom.’
এভরিথিং যে ওকে নেই – একথা রোহানের মা যেমন বুঝতে পারেন ঠিক তেমনি খুব গুরুতর কিছু একটা যে ঘটেছে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিৎ হন । কিন্তু এই ‘কিছু’ টা কি হতে পারে ? – এ পশ্নটাই ঘুরে ফিরে আচমকা তার মনে দোল দেয় ।
২
অনূপ চ্যাটার্জী পেশায় একজন মনোচিকিৎসক । এলাকাজুড়ে ভীষণ সুনাম তার । কথিত আছে – বদ্ধ পাগল এবং উন্মাদরা ও তার তত্ত্বাবধানে গেলে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যায় ।
বেশ কিছুদিন যাবৎ রোহানকে নিয়ে ডাঃ অনূপের চেম্বারে আসতে চাইছিলেন রোহানের মা , মালিহা রহমান । কিন্তু রোহানের সম্মতি ছিল না । অবশেষে মায়ের পীড়াপীড়িতে তাকে আসতেই হলো ।
ডাঃ অনূপ রোহান কে একবার টপ টু বটম দেখে নিলেন । তারপর তিনি রোহানের মা কে রুম থেকে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বললেন । মালিহা রহমান বেরিয়ে যাবার পর ডাঃ অনূপ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করলেন :
‘বালক , তোমার নাম ?’
‘রোহান ।’
‘সম্পূর্ণ নাম বলো’
‘এ মুহূর্তে মনে আসছে না । মনে এলে পরে বলবো ।’
‘আচ্ছা , ঠিক আছে । তোমার পেশা ?’
‘স্বপ্ন দেখা’
‘ হুম্ । আচ্ছা বলোতো – তোমার সমস্যা কি ?’
‘কোনো সমস্যা নেই । আপনার কী আমাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা আছে ?’
‘নাহ্ , একদম ই না । এবার বলোতো – আমার কাছে কেন এসেছো ?’
‘মায়ের পীড়া-পিড়িতে’
ডাঃ অনূপ আর কথা বাড়ালেন না । রোহানকে পাঠিয়ে তার মা কে ডেকে এনে বললেন – দেখুন , আপাতত নিশ্চিৎভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না । সব ই অনুমানের ব্যাপার । সম্ভবত চাঁপা স্নায়বিক উত্তেজনা থেকে ব্রেইন হ্যামারেজ ; নার্ভগুলির অস্বাভাবিক স্পন্দন এবং সেরেব্রাল হেমিস্পিয়ারে অপঘাত । এভাবেই মেন্টালি ডাউন হয়ে পড়েছে আপনার ছেলেটি । ভয় পাবেন না । আপনাকে আমি কিছু টেষ্ট লিখে দিচ্ছি , এগুলি যত দ্রুত সম্ভব করিয়ে আনুন ।
মালিহা রহমান প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেন । তার একমাত্র ছেলের এই দুরবস্থা তিনি কোনোভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩