সিডর দিয়েছে ডর
বিপন্ন অন্তর
সিডর দিয়েছে স্বজন-হারানো গুমরিত প্রান্তর
দিয়েছে করুণ মৃত্যুর হাহাকার
দিয়ে গেছে খুলে ভয়াল সিডর
বেদনার যত অশ্র“সিক্ত দ্বার
আর দিয়ে গেছে বুকফাটা চিৎকার
ধস্ত বিরান বিবর্ণ সংসার।
বৃ উজাড়
দুমড়ে-মুচড়ে গেছে বনভূমি। ভার
বইবার নেই সেই প্রকৃতিও
অবিরাম কান্নার
হরিণ চিত্রা নেই
বাঘ বিচিত্রা নেই
থেমে গেছে কবে
বনমোরগের ডাক
অজানা কতযে প্রাণী
গিলেগিলে খেলো ক্রূর বিষখালি বাঁক
তৃণলতা নেই
ধানতে নেই
পুষ্পের প্রিয় অভিপ্রেত নেই
ফসলের গান-সমবেত নেই
দিক সে চিহ্নহীন
পাখি মরে গেছেÑ
দীপ্ত মুয়াজ্জিন
নীচে নেমে এলো
বন্যাপীড়িত নিষ্ঠুরতম দিন।
দু-হাজার সাত তছনছ-করা
এলো উদ্মাদা ডর
ভয়ের চেয়েও ভয়ানক ভয়
সিডর ভয়ংকর।
জড়াজড়ি করে পড়ে আছে গাছ
জড়াজড়ি করে পড়ে আছে লাশ
অথবা পশুর মড়ার সংগে
নিত্য আদম ভেসে যায় অজানায়
গাছের ডালেও ঝোলে তার লাশ
বিষন্ন বিভীষিকায়
অশ্র“ থামে না, বাতাস এখানে থামে
এক কবরেই অনেকের লাশ নামে
কাফন মেলে না, তবুও দাফন হয়
অসহ বেদনা তবুও মানুষ
বেদনার বোঝা বয়
সান্ত্বনাহীন বিবশ-বিষ-ব্যথায়।
দুপুর-বিকাল-সন্ধা-রাত্রী-ভোর
এলোমেলো করে দিয়ে গেছে ঘোর
দারুণ দুর্বিনীত
নিরেশ-নার-সিডর।
কোথায় আমার শরণ খোলার নন্দিত জনপদ
আনন্দিত সে-বাগেরহাটের সমুদ্রগামী পথ
বরগুণা-ভোলা-পটুয়াখালীর
গুঞ্জরিত ও নিকুঞ্জ উপকূলÑ
সু-সজ্জিত সে-সুন্দরবন
সাগর-মেখলা, নদী-বিধৌত
আমার জন্মভূমি;
কোথায় নম্র নয়নাভিরাম নীড়-মৃত্তিকা-মূল?
কঠোর সিডর নিয়ে গেছে সব স্বপ্নের মৌসুমী।
এ-কোন গজব কর্মফলের ভেদ
নিয়ে আসে সম্মুখে
তবুও মানুষ বোঝে নাকি তার
খররহস্য চরম দুখে ও শোকে?
খোঁজে নাকি তার পরম পন্থা
নিকষ উদ্ধারের?
অধ্যাÍ অথবা মানব
সম্বন্ধীয় অন্তত প্রতিকারের?
জবাব মেলে না
কবে যে-জবাব মিলবে জানি না
শক্তি ও মতার?
কোন্ কর্মের দায় যে এখন তার?
উত্তর মেলা ভার;
তার পরিচয় রক নাকি ভক জনতার?
নাগরিক নাকি রয়ে গেছে প্রজা?
রাজা রয়ে গেছে নদ্ধ নির্বিকার?
তলাহীন ঝুড়ি রয়ে যায় দেশ?
হয় না আকাশে আশা-ভরসার
বিকীর্ণ কোনো বিপ্লবী উন্মেষ!
কঠোর সিডর তবু আসে বারবার
বিভৎস-ক্রূর-উন্মার্গ-কলঙ্ক-কংকাল-সার!
ক’জন এসেছে সাউথখালির বাঁকে
কাকচিড়া, তালতলী
যেখানে নি:স্ব বাদ্রবানুরা থাকে!
ক’জন এসেছে জানাজাবিহীন
মাঝেরচরের কাছে?
সরমহলের হারানো রিয়ার
হারানো প্রিয়ার
পাগলিনী মা’র পাশে?
ক’জন এসেছে বাইন চুটকি, চলাভাঙ্গায়?
পদ্মা, রুইতা, কালমেঘা, টেংরায়?
গলাচিপা থেকে চরবদনায়?
শরণখোলার দলিত-মথিত নির্মূল বগি গাঁয়।
মহামারি দেখা দিয়েছে দোরগোড়ায়
দুর্ভিরে রোণাজারি শোনা যায়!
তবুও মূলত কজন এসেছে বিশুদ্ধ পানি বয়ে?
মতাদর্শের মতলব ছেড়ে অন্নবস্ত্র লয়ে;
সকল কষ্ট সয়ে
এই দুর্যোগে
এই দুর্ভোগে
অন্ধের লাঠি হয়ে?
মানুষের মতো মানুষের কথা কয়ে?
ক’জন এসেছে ত্যাগী-সাথী-আখতার
ত্রাণ দিয়ে দিয়ে
কেটেছে দিবস
কেটেছে রাত্রী যার
অথচ করেছে নিজে সে উপোস
উপোস করেছে তার গোটাপরিবার।
নি:স্ব জনতা জানে সবকিছু জানে
জানবে জালিমও আসন্ন ঐ জনতার উত্থানে।
তখন এ-মাটি হবে আরো উর্বর
তখন এ-ঘাঁটি হবে আরো উর্বর
আল্লা’র নামে কথা কবে অন্তর
আল্লা’র নামে দেশ হবে তৎপর
কদম পড়বে পথে-পথে পর-পর
জাগবে উঠোন জাগবে বাড়ি ও ঘর
ধরবে ফসল মাঠ-ঘাট প্রান্তর
ভরবে শহর-হাট-বাট-বন্দর
যতই আসুক ঝঞ্ঝা-সুনামি সর্বগ্রাসী বন্যা ভয়ংকর
যতই হানুক কঠিন আঘাত
ত্র“দ্ধ-ুব্ধ-কঠোর দুর্সিডর।
তবুও এ-মাটি হবে আরো উত্তম
তবুও এ-ঘাঁটি দেবে আরো উপশম
ভাটি বাংলার আকাশে উঠবে
পূর্নিমা চাঁদ, শুকা দ্বাদশী চাঁদ
জোছনা সরাবে সকল আঁধারÑ
আঁধারের সব বাঁধ।