প্রথমআলো-গ্রামীণফোনের এই ঘটনাটা কি একেবারে বিচ্ছিন্ন কিছু? মোটেও না। বাংলাদেশটার উপরে ভালো করে দৃষ্টি ফেলুন, দেখবেন এই ঘটনা প্রতি মুহুর্তে ঘটছে। কেবল মিডিয়া কোম্পানীগুলোই কি এসব করছে? না, মিডিয়ার কর্মকান্ড আমাদের চোখে পড়ে বেশি, তাই এ নিয়ে আলোচনাও বেশি হয় - অন্যরা আমদের সাদা চোখকে ফাঁকি দিয়ে যায়! লক্ষ্য করুন, '৯০ দশকে এনজিও ভিত্তিক একধরণের কৃত্রিম চাকরিবাজার তৈরি করা হয়। তখন যারা এর ক্ষতিকর ফলাফলের কথা বলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হত "এরা বামপন্হী, এরা উন্নয়ন চায় না" এসব কথা বলে! এখনও দেখবেন, বাম-ভাম-ডান এধরণের কথার প্রচারের চেষ্টা চলছে। তারা নষ্ট করেছে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা।
তারপর, শুণ্য দশকে এসে জোয়ারের মত এল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো, তৈরি হল আরেক ধরণের চাকরি-বাজার। রাজনৈতিক অস্হিরতা এবং তার ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা; এই সুযোগে মোটা বেতনের চাকরী, বড়লোকি চক্করে চলাফেরার সুযোগ - এই কৌশলে তারা দখল করে নিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া প্রায় প্রতিটা মাথা। এদের হাতেই নির্মিত হলো আরেক প্রজন্ম - ডিজ্যুস! নিত্য নতুন গ্যাজেট, ডিজে পার্টি, ড্রাগস আর আনলিমিটেড সেক্স - চমৎকার আফিম গুঁজে দেয়া হলো এদের হাতে! বাংলাদেশে তৈরি হলো ভিন্ন কোন এক গ্রহের মিনি সংস্করণ। কেউ আমরা চিনতে পারছি না এরা কারা! এরা কি করছে! এফ এম রেডিও চ্যানেলগুলো যেন চালু হলো কেবলমাত্র ডিজ্যুস জেনারেশনের জন্যই! এদের আরজে'দের একটাই কাজ - বাংলা শব্দকে ভেঙচানো। ইংরেজির আদলে বাংলার সকল 'ব' শুণ্য 'র', হয়ে গেল 'ড' শুন্য 'ড়'! আমাড় প্ড়িয় লিসনাড়্স, হা'উজ গঔইং? এরা আমাদের রাজনৈতিক অসচেতন জনগোষ্ঠীকে আফিম খাওয়াচ্ছে!
এখন আর বলা যায় না, "যাচ্ছে যাচ্ছে সব যাচ্ছে", এখন বলতে হয় সব এদের দখলে চলে গেছে! দেশপ্রেম নিয়ে কাদের কর্মকান্ড সবচেয়ে বেশি? পুঁজির মালিকদের। কাদের ভাষা-প্রেম দরিয়ার মতো উছলে পড়ছে? পুঁজির মালিকদের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাদের উচ্ছাস সবচেয়ে বেশি? পুঁজির মালিকদের। সংস্কৃতি নিয়ে কারা সবচেয়ে বেশি আপ্লুত? পুঁজির মালিকরা। আমরা নিজেদের অজান্তে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি আমাদের ভাষা-মুক্তিসংগ্রাম-ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-মূল্যবোধ। একবারও ভেবে দেখার সুযোগ পাইনি, তাদের কী দায় পড়েছে এসবে তাদের পুঁজি লগ্নি করবার? ভেবে দেখলে দেখতে পেতাম, তাদের একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা! মুনাফার লোভে এরা এখন তিরিশ মিনিটে দুনিয়া কাপানোর ঢং করছে, তেমনি মুনাফার প্রয়োজনেই তারা গণধর্ষন করবে এই আমাদের ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে। প্রমান চান? ডিজ্যুস জেনারেশন আপনার চোখের সামনেই আছে। এখনো সময় আছে, জেগে উঠুন, প্রতিরোধ করুন এই দানবকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:১৯