somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারিক ইবন যিয়াদের জিব্রাল্টার

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূ-মধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ‘জিব্রাল্টার’ যুক্তরাজ্যের অধীনস্থ একটি এলাকা। এর দক্ষিনে রয়েছে স্পেন এবং এটি আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরের প্রবেশপথে অবস্থিত। এটি ব্রিটিশদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নৌঘাঁটি।


ছবিঃস্পেন বীর তারেক ইবন যিয়াদ ও মুরদের প্রাসাদের ছবি খচিত জিব্রাল্টারের পাঁচ পাউন্ড এর নোট

জিব্রাল্টার নামটি আরবি নাম "জাবাল আল তারিক" । ৭১১ সালের ৩০ শে এপ্রিল আজকের এইদিনে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের অনুমতি পাবার পর মুসলিম বাহিনী স্পেন ও ইউরোপ বিজয়ের লক্ষ্যে ইউরোপের উপকূলে পা রাখে।এ অভিযানে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এক অনারব, বার্বার তরুণ সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ। উমাইয়াহ খলিফাদের বার্বার গোত্রীয় সেনানেতা তারিক ইবন যিয়াদ স্পেন বিজয়ের উদ্দেশ্যে উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হয়ে তার সৈন্যদের নিয়ে স্পেনে পৌছে প্রথমে একটি পাহাড়ের ধারে অবতরন করেন। যা পরবর্তীতে "জাবাল তারিক" বা "তারিকের পাহাড়" নামে পরিচিত হয়। এই "জাবাল তারিক" থেকেই "জিব্রাল্টার" শব্দটি এসেছে।



মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদের স্পেন জয়ের ঘটনাটি বেশ রোমাঞ্চকর।মাত্র ৭০০০ (মতান্তরে ৭০০) সৈন্য নিয়ে সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মাটি জিব্রালটারে পা রাখেন।রডারিকের বিশাল বাহিনীর তুলনায় এই ক্ষুদ্র বাহিনী দেখে স্পেনের রাজা রডারিক কৌতুকবোধ করলেন।তার ধারনায় ছিলনা এই ক্ষুদ্র বাহিনী স্পেনে বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে। তারিক ইবন যিয়াদের স্পেন বিজয়ের ঘটনাটি আবুল আসাদ তার 'আমরা সেই সে জাতি' গ্রন্থে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।সেখান থেকে তুলে ধরছি...

'অকুতোভয় তারিক ইবন যিয়াদ জিব্রালটারে নেমে জাহাজে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিলেন সব জাহাজ।তারপর সৈন্যদের দিকে চেয়ে বললেন,” চেয়ে দেখ বন্ধুগণ,গভীর সমুদ্র আমাদের পেছনে গর্জন করছে।আর সামনে অন্যায় অবিচারের প্রতীক বিশাল রডাডিক বাহিনী।আর যদি আমরা সামনে অগ্রসর হই,তাহলে ন্যায় ও বিশ্ব-কল্যাণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা শহীদ হবো,কিংবা বিজয় মাল্য লাভ করে আমরা গাজী হবো।এই জীবনমরণ সংগ্রামে কে আমার অনুগামী হবে?”মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি সৈনিকই বজ্র নির্ঘোষে ‘ তাকবীর ‘ দিয়ে সেনাপতি তারিকের সাথে ঐক্যমত ঘোষণা করল।এই অসম যুদ্ধই এক ইতিহাসের সৃষ্টি করল।জানবাজ মুসলিম বাহিনীর প্রচন্ড পাল্টা আক্রমণে রডারিক বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো।



মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির শৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে লিখে পাঠালেন, ” সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্য বীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।?” এই ভাবেই সত্যের জয় হল-ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডিন হল স্পেনে।তারপর গৌরবময় মুসলিম শাসন চললো সেখানে দীর্ঘ ৭শ বছর ধরে। কর্ডোভা, গ্রানাডা,মালাগাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ ঘটল,তা সারা ইউরোপকে আলোকিত করে তুললো।অন্ধকার ইউরোপের বুকে সূর্যশিখার মতোই জ্বলছিল কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান শিখা।সেখানে জ্ঞান আহরণের জন্য ইউরোপের সব দেশ থেকেই ছুটে এসেছিল জ্ঞান পিপাসুরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম মনীষীদের কাছ থেকে সেদিনের অন্ধকার ইউরোপ জ্ঞানের এ বি সি ডি শিক্ষা করল।কর্ডোভার এই ছাত্রারাই ছিল ইউরোপীয় জাগরণের স্হপতি।সুতরাং আজকের যে ইউরোপ, তার ঘুম ভাংগিয়েছে মুসলমানরাই।আর তাদের এ ঘুম ভাংগার প্রথম গান গেয়েছিলেন তারিক ইবন যিয়াদ।তিনি গোথিক শাসনের নির্মম নিষ্পেষণ থেকে শুধু স্পেনকেই মুক্ত করেননি,বলা চলে স্মরণাতীত কালের অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকেও তিনি জাগিয়েছেন ইউরোপকে।“

ইতিহাসে এই সময়ের শাসনামলকে মুরদের শাসন বলে অবিহিত করা হয়।এই সময়কালটা ছিল ইউরোপের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ।ইউরোপ যখন ছিল অশিক্ষা -কুশিক্ষা,অসভ্যতা আর কুসংস্কারের ভয়ানক অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন তারিক ইবন যিয়াদের নেতৃত্বে মুসলমানদের স্পেন জয়ের পর জ্ঞান-বিজ্ঞান,ব্যবসায়-বাণিজ্য,কৃষি-শিল্প,ধন-সম্পদে, চারুকারু ও স্থাপত্যে তথা সভ্যতার আধুনিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে মুসলমানরা স্পেনকে রূপ দিয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশে। বিশেষ করে কর্ডোভা ছিল ইউরোপের সবচাইতে সুপরিকল্পিত ও সমৃদ্ধ নগরী।লন্ডন প্যারিসের রাস্তায় যখন সরকারি বাতি ছিলনা তখন কর্ডোভার রাস্তা মাইলের পর মাইল আলোকিত থাকত।পরিস্কার-পরিচ্ছিন্ন সড়ক-সেতু,৬০০ হাসপাতাল, ৮০ টি বেসরকারি কলেজ,বিশ্বখ্যাত কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় সেইসাথে ৮৪০০০ বিপণী,৯০০ গোসলখানা ও দুই লক্ষাধিক অট্টালিকা সমৃদ্ধ কর্ডোভা পরিনত হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরীতে।

তারিক ইবন যিয়াদ স্পেন বিজয়ের উদ্দেশ্যে উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হয়ে তার সৈন্যদের নিয়ে স্পেনে এসেছিলেন। আর তাই এখনও জিব্রাল্টারবাসীর মনে তারিক ইবন যিয়াদ চিরঅম্লান।মুরদের শাসনামলের স্বর্ণালি ইতিহাসকেও তারা ভুলেনি।

ছবিঃজিব্রাল্টারের ডাকটিকিটে তারেক ইবন যিয়াদের অভিযান
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×