শিশুটির নাম ইয়াসিন শাকুর।এতিম ও একাকী অবস্থায় যার মৃত্যু হয়েছে।তার মৃত্যুর ঘটনাটি সাগরে ভেসে উঠা শিশু আয়লান কুর্দির চাইতেও অনেক বেশী হৃদয়বিদারক।
ইয়াসিনের বাড়ি সিরিয়ায়।তথাকথিত শান্তিপ্রিয় দেশগুলীর বিমান হামলায় তার মা-বাবা মারা যায়।কিন্তু এই হতভাগা বেচে যায় রাস্তার কুকুরের খাবার হওয়ার জন্য।বাবা-মাকে হারিয়ে ইয়াসিন রাস্তায় রাস্তায় উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াত।কেন তার প্রতি এই নির্মমতা,তার অপরাধ কি, শিশু মন এইসব প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়াত।যেই কচি পায়ের জন্য দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে যাওয়াও কষ্টকর সেই পায়ে আজ রক্ত জমাট বাঁধা।ইয়াসিন এখন খালিপায়ে পিচঢালা পথকে মাড়িয়ে চলে।
একদিন সে তার বাবার এক জোড়া জুতা ধ্বংসস্তূপ থেকে কুড়িয়ে পায়।সে ঐ জুতা পায়ে দেয় পিচঢালা রুক্ষ পথে চলার জন্য।তার কোন খাবার নেই,পানি নেই,থাকার জায়গা নেই।বেচে থাকার জন্য ইয়াসিন শাকুর একটি ব্যাগ নিয়ে ডাস্টবিনের ময়লা কুড়িয়ে বাচার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু চারদিকে খাদ্য-পানির জন্য হাহাকার!কারন সিরিয়ায় এখন তার মত হাজারো ইয়াসিন শাকুরের বসবাস!ডাস্টবিনও খালি নেই!একটি শিশু বাচার জন্য এর চাইতে বেশী আর কি চেষ্টা করতে পারে!ডাস্টবিন থেকে বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে সেগুলি বিক্রি করলে দিনশেষে ইয়াসিন হয়ত একটি রুটি পেতে পারত কিন্তু তার আগেই তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ইয়াসিন শাকুর।
এমন একটা সময় ছিল যখন ইয়াসিন শাকুর স্কুলে যেত।তার মা তাকে প্রতিদিন মুখরোচক খাবার বানিয়ে দিত,তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত কিন্তু আজ কেউ নেই!তাকে খাবার দেওয়ার মত কেউ নেই,তাকে ভালবাসার মত কেউ নেই!এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে সে একা।সে বুঝেই উঠতে পারেনি তার সাথে কেন এমন হল।
মৃত ইয়াসিন শাকুর ফুটপাথকে আলিঙ্গন করে ময়লার ব্যাগ হাতে জড়িয়ে রেখে শুয়ে আছে।এই ফুটপাথ আর ময়লার ব্যাগ তার কাছে মানুষরূপী হয়েনাদের চাইতেও প্রিয়।শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় তার পাশে কেউ ছিলনা তার কচি হাতটা ধরার।শেষ বিদায়ের সময় তার কপালে চুম্বন দেওয়ার মতও কেউ ছিলনা,তাকে সমাহিত করারও কেউ ছিলনা! মৃত্যুর পর তার লাশ রাস্তার কুকুরের খাদ্য হয়!
হায়!ক্ষুধার্ত কুকুরটিও হয়ত জানত না এই ছেলেটি তার চাইতেও কতটা দুর্বল আর ক্ষুধার্ত ছিল!
-- ইয়াসিন শাকুরকে নিয়ে লিখা বিভিন্ন আর্টিকেল অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫