সারাদিন ঘোরাঘুরি করেই কাটিয়ে দিয়েছি। সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, স্যার এ এফ রহমান হল, শাহজালাল হল, কাটা পাহাড়ের রাস্তায় হাটাহাটি করেই দিন পার হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় আবার আরেক বন্ধুর বার্থডে পার্টি। খুব কাছের এক বন্ধুর জন্মদিন। এতটাই কাছের যে প্রতিপক্ষের সাথে মারামারিতে সেই বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে কোপ খেয়ে মরে যেতেও সংকোচ লাগবে না এতটুকু। বন্ধুর জন্মদিনে কেক কেটে, কেক মেখে মোটামুটি ভালই সময় পার করেছি। তবে দিন শেষে আমি একা, বিষন্ন। এতই বিষন্ন যে সারাদিনের আনন্দগুলো দিনের পর রাতে এসেই স্মৃতি থেকে মুছে যেতে চাই একপ্রকার। এরকম কিন্তু আগে হয়নি। সারাদিন মজা করে রাতের একাকিত্বেও দিনের স্মৃতিগুলো জাবর কেটেছি অনেক। কিন্তু বিষন্নতা আজকে আমার সব কিছু দুমড়ে-মোছড়ে শেষ করে দিয়েছে। অনেকটা ঘুর্ণিঝড় সিডর যেভাবে করেছিল সেভাবে।
এমন হবার যুক্তিসংগত কারনও আছে। ভার্সিটিতে আমার রেজাল্ট দিয়েছে আজ। সসম্মানে ফেল করেছি। পাবলিক ভার্সিটি হচ্ছে পৃথিবীর ভেতর আরেক পৃথিবী। এখানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর প্রত্যেকেরই নিজস্ব এক পৃথিবী রয়েছে তাদের মনের ভেতর। এই পৃথিবীগুলোতে আবার হাসি-কান্না মাখানো অনেক গল্প আছে। আমার গল্পগুলো আজ বিষন্নতার বিষে বিষাক্ত। যেসব বন্ধুদের সাথে এত মজা করেছি, এত হাসি কান্না শেয়ার করেছি যাদের সাথে তারা আমার সিনিয়র হয়ে গেল। আর আমি আবারও গত বছরের মত আমেনা ম্যাডামের একঘেয়ে লেকচার শুনব। মনের ভেতর বিষন্নতা তখনই ভর করে যখন দেখি বন্ধুদের সাথে নিজের অজান্তে, নিজের অনিচ্ছায় একটা দেয়াল চলে আসছে। এই দেয়ালটা সত্যিই মানসিকভাবে প্রচন্ড শক্ত ছেলেটাকে আরও বিষন্ন করে তুলে। অসুস্থ না হয়েও তখন ভাত-পানিতে অরুচি চলে আসে।
পেছনের গল্পটা কিন্তু পুরোটাই অন্যরকম। সে গল্পে আমার চরিত্র ছিল এমন এক ছেলের যে সব বন্ধুকে পরীক্ষার আগে শীট, নোট, সাজেশন যোগাড় করে দিয়েছে। বাহ, আমার তৈরি করা নোট, শীট পড়ে তারা সবাই আজকের গল্পের নায়ক হয়ে গেল। আর আমি আছি পার্শ্বচরিত্রে। এর চেয়ে খলনায়ক হিসেবে থাকলেও মনে শান্তি পেত। পরীক্ষা চলাকালীন সময়টাতে বন্ধুরা সবাই ফোন করত সাজেশনের জন্যে। আমি তাদের আবদার মেটাতাম। আর রেজাল্টের দিনে যখন কেউ ফোন করে বলে “দোস্ত, আমি থার্ড হয়েছি” তখন মনে একটু হলেও ঈর্ষা চলে আসে। পরক্ষনেই ভাবি বন্ধুদের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হতে নেই। পজিটিভলি নিতে হবে সব। এভাবে চিন্তা করে মনকে সান্তনা দিই যে আমার ভাগ্য খুব ভাল। অনেকগুলো ক্লোজ, খুব ভাল পরিচিত বড় ভাই-বোন পেলাম।
আজকের ভুরিভুরি সফলদের মাঝে আমি ব্যর্থ ছেলের ফেল করার কারন কেউ জানতে চাই না। জানার আগ্রহও দেখায় না কেউ। আমি বলতে চাইও না। ব্যপারটা এমন না যে তারা জানতে চাইনি বলে আমি বলতে চাইনি। আসল ব্যাপার হল ব্যর্থদের ব্যর্থতার কারনে, অকারনে সফলদের কিছু আসে যায় না। গল্পে বা সিনেমাতে নায়কের অনুভূতিই প্রাধান্য পায়, পার্শ্বনায়কের না। আর আমার কুৎসিত ব্যর্থতার কারন বলে তাদের আনন্দের মুহুর্তাটা নষ্ট করতে চাইনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭