তখন তো কেউ বিশ্বাস যান নাই। লন এলা গু খান
তাজরিনের আগুন পরিকল্পিত: প্রধানমন্ত্রী
Mon, Nov 26th, 2012 8:23 pm BdST
ঢাকা, নভেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছিল।
ওই অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানিতে সোমবার জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আরো কয়েকটি প্রসঙ্গে তুলে বলেন, সব ঘটনাই একসূত্রে গাঁথা।
আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১০ শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় তদন্ত চলার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য এল। তার আগে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-ও নাশকতার সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
রোববার রাতে আশুলিয়ার ডেবনেয়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগের দিন তাজরিনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, “মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা কবে শেষ হবে, তা আমি জানি না।”
“গতকালকে (দেবনায়ার) যে ঘটনাটা ঘটেছে। একজন মহিলা শ্রমিক ভেতরে গিয়ে আগুন দেয়। সে আগুন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন মহিলা শ্রমিক সেখানে গিয়ে চিৎকার দেয়। আগুন নেভায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে।
“আমি সিসি ক্যামেরার ওই ছবি দেখে এসেছি। একজন মহিলা ঘরে ঢুকল এবং আগুন দিয়ে বের হয়ে এল।
শনিবার সন্ধ্যায় তাজরিনে অগ্নিকাণ্ডের পরদিন দেবনায়ারে আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগে সুমি বেগম ও জাকির নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শেখ হাসিনা বলেন, “সুমি ২০ হাজার টাকা পেয়েছে এই আগুন দেয়ার জন্য। যে টাকা দিয়েছে তাকেও ধরা হয়েছে। কিন্তু, এর পেছনে কারা আছে, তাদের বের করতে হবে।”
“এটা কোনো অ্যাকসিডেন্ট নয়, পরিকল্পিত ঘটনা। যখন বায়াররা আসে, কনট্রাক্ট সই করা হয়, তখনি এই ঘটনা ঘটানো হল,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর পর দেখেছি, পাটের গুদামে আগুন দেয়া হত। পাটই ছিল তখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার একমাত্র সম্পদ। এখন দেখছি গার্মেন্টসে আগুন দেয়া হচ্ছে।”
রামুতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, পুলিশের ওপর সাম্প্রতিক হামলা, পোশাক কারখানায় আগুনের ঘটনাগুলোকে সূত্রবদ্ধ করে তিনি বলেন, “এক নম্বরে পুলিশ, এরপর গার্মেন্টস, এরপর এরপর কিসের ওপর করে তা দেখতে হবে।”
তাজরিন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে জামায়াত-শিবির জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।
সংসদে অনির্ধারিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “একটি মেয়ে শুধু আগুন দিয়ে দেবে- তা নয়। এর মধ্যে রাজনীতি আছে। এর মধ্যে দেশকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নেয়ার তৎপরতা আছে।”
আগুনের ঘটনাগুলোতে কোনো মহল ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা অনেকে চালিয়েছে। দুর্ঘটনার পর মানুষকে সাহায্য না করে অনেকে শুরু করে ভাংচুর করা। এই ঘটনা ঘটেছে রামুতে, বহদ্দারহাটেও ঘটেছে একই ঘটনা।
“আশুলিয়ায় আমি আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয় রাতেই।”
“আমি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং শুরু করি। দেড়টা থেকে আড়াইটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু, ভেতরে কী অবস্থা, তা জানা যায়নি।”
তাজরিনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর রোববার সকালে পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার হতে থাকে। সরকারি হিসেবে এই অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ১১০।
শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। চেহারায় চেনা যায় না। কী ভয়াবহ অবস্থা! ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
তিনি জানান, অসনাক্ত লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা রাখার পর মঙ্গলবার তা দাফন করা হবে। কিন্তু, কেউ চাইলে ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ নিতে পারবে।
শ্রমিকদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে গার্মেন্টস আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে। সামান্য টাকার জন্য কেন এটা করা হচ্ছে?”
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, রেশনের ব্যবস্থা এবং আবাসন নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।
যে কোনো দুর্ঘটনার পর শ্রমিক নেতাদের উস্কানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব, যেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, সেখানে যারা উদ্ধার করতে যায়, তাদের ওপর দয়া করে আক্রমণ করবেন না।”
প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, “জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে আমি আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।”
শওকত আলী আশুলিয়ায় আগুন এবং চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে প্রাণহানির ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সংসদে সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
এর আগে আলোচনায় জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনেক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে- অনাকাক্সিক্ষতভাবে। এই ঘটনার পেছনে কারা আছে? কারা প্রতিবার এধরনের ঘটনা ঘটায়? এটা খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আশুলিয়া ও চট্টগ্রামের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, “এটা নতুন নয়। এটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন, আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন ও শাহরিয়ার আলমও বক্তব্য রাখেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/এমআই/২১৩৩ ঘ.
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৯