অনেক পিছলা তালগাছবাদী দাবী করেন সম্প্রদায় থাকলে সাম্প্রদায়িকতা তো থাকবেই। সেইসব জ্ঞানপাপীদের উদ্দেশ্যে প্রথমে কিছু কথা বলে নিতে চাই। এক বরিশাইল্যা আরেক বরিশাইল্যার প্রতি এক্সট্রা টান অনুভব করবে, এটাই স্বাভাবিক। সে তার জন্য অতিরিক্ত কিছু করতেও সচেষ্ট হবে এটাও স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই এক্সট্রা টানের জন্য যদি তারা নোয়াখাইল্যাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং কোন নোয়াখাইল্যাকে তার ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে সেটা অতিঅবশ্যই অন্যায়। প্রথমটা যদি হয় সম্প্রদায়প্রীতি তবে দ্বিতীয়টি সাপ্রদায়িক বিদ্বেষ বা সাম্প্রদায়িকতা।
এক মুসলিম আরেক মুসলিমের প্রতি দরদবোধ করলে সেটা সাম্প্রদায়িকতা নয়, কিন্তু অন্য আরেকজন হিন্দু বলে তার প্রতি নেগেটিভ মনোভাব রাখাই সাম্প্রদায়িকতা। এই সাম্প্রদায়িকতা হতে পারে ধর্মভিত্তিক, নৃতাত্ত্বিক, জাতীয়তাভিত্তিক, অঞ্চলভিত্তিক, রাজনৈতিক মতাদর্শভিত্তিক ইত্যাদি।
সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন/দাঙ্গা-হাঙ্গামা। আর এই পরিস্থিতিতে সমাজের দুস্কৃতিকারী ব্যাক্তিরা অত্যাচার চালায় অপেক্ষাকৃত নিরীহ ব্যাক্তিদের ওপর। সাধারণ অবস্থায় সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই দুস্কৃতকারীদের প্রতিরোধ করে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের সময় আক্রমণকারী প্রথমে ভিক্টিম সম্প্রদায়কে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে যে, সে তার নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের স্বার্থেই এই আক্রমন করছে। একারণে তার নিজ সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকেরা হাঙ্গামায় অংশ না নিলেও প্রতিরোধেও এগিয়ে আসে না। বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচার আক্রমণের ক্ষেত্রে এই প্যাটার্ণটি লক্ষ্য করা যায়। পাকিস্তান বা আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশ যেখানে প্রায় সকল লোকই সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ধারণ করে সেখানে হালকা অযুহাতেই কাজ সারা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মত সেক্যুলার মানসিকতাপ্রধান দেশে এজন্য প্রয়োজন হয় আরো কঠোর অভিযোগের।
সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন ও দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অনেক অনেক লোক জড়িত থাকে বলে একে সাধারণ অপরাধের সাথে এক কাতারে ফেলা যায় না। এখানে আক্রমণকারী যেমন বেশী, আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক। সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা পদ্ধতিতে এই ধরণের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা দুস্কর। এই পরিস্থিতিতে সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দুস্কৃতিকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের কোন সহানুভুতি থাকলে তা দূর করা এবং এদেরকে সম্প্রদায়ের রক্ষক নয় বরং দুস্কৃতকারী হিসেবে চিহ্নিত করা।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুস্কৃতকারীরা নয়, ঘটনার মূল সুবিধাভোগী হচ্ছে অন্য কেউ, যে আড়ালে থেকে দুস্কৃতকারীদের উস্কানী দিয়ে থাকে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এধরণের ঘটনা কমতে পারে।
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রয়োজন কঠোর আইন। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে নেতৃত্বদানকারীদের মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে এবং এতে অংশগ্রহণকারী ও ইন্ধনদানকারীদের মৃত্যুদন্ড ও অন্যান্য কঠোর সাজা প্রদান করে আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।