খুব ক্লান্ত হইয়া সেইদিন বাসায় ফিরিলেন ইনসেইন। মেজাজটা খিচড়ে আছে তাহার। ক্লাসে স্যারের প্রশ্নের জবাবে মিনিট তিনেক মাথা চুলকাইয়া যে উত্তর করিয়াছিলেন, তাহা সহপাঠি/নীদের অট্টহাস্যে ও স্যারের রক্তচক্ষুর তোরে ভাসিয়া গিয়াছিল। নিজের মহামূল্যবান আবিষ্কারখানা সকলের নিকট পাগলের প্রলাপ বলিয়া বিবেচিত হওয়ায় মেজাজখানা তাহার সপ্তমাকাশে চড়িয়া রহিল।
বাসায় আসিয়াই শাওয়ারের নিচে নিজেকে সমর্পণ করিলেন ইনসেইন। কিন্তু শাওয়ারের পানি গায়ে লাগিতেই তিনি শিহরিয়া উঠিলেন। একটি রহস্যময় শীতল স্রোত বহিয়া গেল তাহার বুক ও পিঠের ওপর দিয়া। কয়েকমাস পূর্বেও তো তিনি স্নান করিয়াছিলেন। তখনতো এমন অনুভব হ্ইয়াছিল বলিয়া মনে পড়িতেছে না।
মনে খটকাটা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রহিল। জামাকাপড় পরিধান পূর্বক তিনি তাহার গণকমহাশয়ের ক্ষমতায়ন করলেন। তাহারপর গণকমহাশয়ের শুরু বোতামে ক্লিক করিয়া মজিলা অগ্নিশৃগালের আইকনে ক্লিক করিলেন।তাহার অগ্নিশৃগালের গ্রন্থচিন্হের সাহায্য লইয়া অতি সহজেই ব্লগে প্রবেশ করিলেন। মনে মনে ভাবিলেন, প্রলাপ বকার জন্য ইহার চেয়ে উপযুক্ত কোন স্থান এই ধরাধামে নাই।
ব্লগে প্রবেশ করিবা মাত্র বামপার্শ্বে তাহার চক্ষুদ্বয় ভ্রমণ করিল। সেখানে সাদাকালো একখানা প্রতিকৃতি দেখিয়া তাহার ভয়ে হাত পা................
তাহার বুক ও পিঠের ওপর দিয়া আরেক দফা শীতল স্রোত বহিয়া গেল। প্রতিকৃতি ও তাহার স্বত্যাধিকারীকে যথাসম্ভব এড়াইয়া তিনি অন্যদের ব্লগে প্রবেশ করিলেন। কিন্তু ভাগ্য নিতান্তই খারাপ ছিল ইনসেইন এর। সকল স্থানেই একই রব, সকলেই তাহার মত শীতল স্রোতদ্বারা আক্রান্ত। সকলের আরোগ্য কামনা করিয়া কয়েকখানা মন্তব্য করিয়া ব্লগ ত্যাগ করিলেন ইনসেইন।
য্থাসময়ে ঘুমাইতে গেলেন ইনসেইন। কিন্তু ভয়ে তাহার দুই চক্ষের পাতা..........
অনেক কষ্টে যেই মাত্র ঘুমাইলেন তক্ষুনি স্বপ্নে আলিফ লায়লার সবুজ দৈত্যখানার দেখা পাইলেন।
দৈত্য জিজ্ঞাসা করিল, "দৈনিক কতক্ষণ ঘুমানো হয়?"
তিনি উত্তর করিলেন, "আজ্ঞে আষ্ট ঘণ্টার কম নহে"
দৈত্য আবার জিজ্ঞাসিল, "দৈনিক কতবার খাওয়া হয়?"
তিনি উত্তরিলেন, "তিন খানা মিল, সকালে আর বিকালে দুইটা ব্রেকফাস্ট, আর সারাদিনে পাঁচ/ছয় কাপ চা"
দৈত্য আবার জিজ্ঞাসিল, "ভয়ডর কেমন?"
কম্পমান কন্ঠে উত্তর আসিল, " বৃক্ষভুদাই ছাড়া আর কাহাকেও ভয় করি না"
দৈত্য বলিল, " আহার, নিদ্রা, ভয়; যত বাড়াও ততই হয়। কাল হইতে সাত ঘন্টার বেশি ঘুমাইবে না, দুইটার বেশি মিল খাইবে না আর বৃক্ষভুদাইকে ভয় করিবে না"।
ভয়ে তাহার মস্তক আপনা হইতেই কম্পিত হইল। ইহাকে সম্মতি মনে করিয়া দৈত্যভুদাইখানা চলিয়া গেল।
সকালে ঘুম হইতে উঠিয়াই ইনসেইন মহাশয় আবার ব্লগে প্রবেশ করিলেন। তাহার মাথায় বাজিয়া চলিছে দৈত্যভুদাইয়ের কন্ঠ, "আহার, নিদ্রা, ভয়; যত বাড়াও ততই হয়।"
ভয় তারাইবার সুবর্ণসুযোগ তাহার চক্ষুগোচর হইল। দুরুদুরুবক্ষে তিনি বৃক্ষভুদাই এর হড়ড় গল্পে প্রবেশ করিলেন। সাহস করিয়া দুইখানা মন্তব্যও করিলেন। কিন্তু তিনি জানিতেন না কী দুঃসংবাদ তাহার জন্য অপেক্ষমান। তাহার জন্য আরো কিছু হড়ড় সরবরাহের হুমকি প্রদানপূর্বক (সাত নম্বর মন্তব্য দ্রষ্টব্য) বৃক্ষভুদাই তাহাকে ব্লক করিলেন।
সেই হইতে ইনসেইন মহাশয়ের আহার, নিদ্রা, স্নান বন্ধ রহিয়াছে। কিন্তু ভয় বাড়িয়া গিয়াছে বহুগুণ।