somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্য বিবাহ : এক রেহানার অজানা পথ!

১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বয়সে ফ্রকের মাথার চুল দু'বেনি করে বই হাতে নিয়ে দুলতে-দুলতে স্কুলে যাওয়ার কথা রেহানা বেগমের, সে বয়সেই তাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় ৪৫ বচর বয়স্ক মোক্তার হোসেনের সঙ্গে। তখন রেহানা বেগমের বয়স মাত্র ১১ বছর। স্বামী-সংসার বোঝার বয়স তার হয়নি। তাকে সংসার শুরু করতে হলো ছয় সন্তানের মা হিসেবে। মোক্তার হোসেনের মৃত স্ত্রীর ছয়টি সন্তান এখন রেহানা বেগমের সন্তান। একটি ছয় সন্তান আরেক দিকে বাল্যবিবাহের কারণে এক অসম সম্পর্ক। তাদের বয়সের ব্যবধান ৩৪ বছরের।

রেহানা বেগমের বাবা ছিল গরিব চাষী। শুধু ক্যাদান ছাড়া তার কিচু দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। এ কারনেই কিশোরী রেহানাকে বিয়ে দেওয়া হয়। রেহানা বেগম অনেক কষ্ট সহ্য করেছে সংসারে। বাপের বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার কতা একবারও ভাবেনি। জীবনের অনেক অজানাকে জানতে শুরু করে সে।

রেহানার কাছে মোক্তার হোসেনের চাওয়ার পরিমান ছিল ১০০ ভাগ। কিন্তু বালিকা রেহানার পক্ষে তা পুরোটা দেওয়া সম্ভব ছিল না। মোক্তার হোসেকে দেখলেই বুক কেঁপে উঠত। রেহানার বয়সী মেয়েরা প্রবীণ পুরুষদের জৈবিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য প্রস্তুত থাকে না।

রেহানার স্বামী সামান্য দিনমজুরী করে যা রোজগার করত তাতে ৮জন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া খুবই কষ্টের ছিল। নারী জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো তার গর্ভকালীন সময়। এ সময় তার বিশেস স্বাস্থসেবা পাওয়া একান্ত জরুরি। সে সময় তার দুবেলা ভাত জুটলেও আরেক বেলায় ভাতের মাড় খেয়ে দিন কাটটত। বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর পর তার কোলজুড়ে আসে এক সন্তার যার না মামুন।

সংসারের সমস্ত কাজ করে নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই তার। একটি ছেড়া কাপড় রোদে না শুকাতেই সেই কাপটি তাকে আবার পরতে হয়। যখন সে যৌবনে পা দিয়েছে তখন স্বামী তার জৈবিক ক্ষুধা মেটানোর অপারগতা প্রকাশ করতে থাকে দিন-দিন। সংসারের অভাব, সতীনের সন্তানের নির্যাতন, স্বামী অপারগতা সব মুখ বুঝে সহ্য করে এই ভেবে যে, পরকালে স্বামীর পদতলে তার ঠাই হবে।

রেহানা বেগমের উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। সুঠাম দেহ। নানাজনে নানা কথা বললেও তাতে সে কর্ণপাত করে না। মামুনের বয়স যখ ৮ বছর তখন পাচ মাস তার রক্তস্রাব চলতে তাকে সে কাউকে কিছু বলে না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ, সংসার খরচ, চিকিৎসার টাকা কোয় পাবে। কিছুদিন রক্তস্রাব বন্ধ থাকার পর সে ভাবে সুস্থ হয়ে গেছে। তারপর সে এক সময় বুঝতে পারল সে আন্তঃসত্ত্বা। এরপর সে জন্ম দেয় (জমজ) দুটো পুত্র সন্তা এক রাজি দুই সাকীব। শরু হয় রেহানা বেগমের ওপর পরিবারের সকলের মানসিক নির্যাতন। একদিকে সতীনের সন্তান আরেকদিকে শাশুড়ি ও জা-ননদরা। রেহানা বেগম কে নানা কথা বলতে থাকে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি ইত্যাদি।

একজন সদ্য প্রসব করা মায়ের ক্ষুধার কথা আরেক মা বুঝতে পারে। আর তাই পাশের বাড়ীর বাবুর মা আছিয়া খাতুন তাকে খাবার পাঠাতেন। রেহানা বেগমের জা, তার একটি সন্তানকে কাগজে কলমে লিখে দিয়ো দেওয়ার কথা বললে রেহানা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমি দুবেলা খেয়ে বাচলে আমার সন্তানও বাচবে। আমি আমার সন্তান কাউকে দেব না।

রেহানা বেগমের কষ্টের কথা বেবে প্রতিবেশী, দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা ফল খাওয়ানোর কথা বলে হাতে টাকা দিয়ে যেতনে। এ থেকে রেহানা বেগম সন্তানদের পড়াশোনা চালাতেন। কারে কাছে চাইতেন না লজ্জায়। স্কুলের স্যাররা বেগম মওকুফ করতেন। কেউ কেউ কাপড়-চোপড় কিনে দিতেন। সারাদিন জায়ের বাসায় থাকলে হয়তো দুমুঠো খাওয়ার বাত দিলে তিনি তা সন্তানদের খাওয়াতেন। আবার কখনো খেতেনও না। এবাবে চলত তার সংসার।

মামুন যখন এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করল তখন ওর পড়াশোনা করার আগ্রহ বেশ বাড়ল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বললেন, ভাল কি করে মাকে খাওয়াও। মামুনের মা হাল ছেড়ে দেননি। কিন্তু পাশের বাড়ীর বাবুর মা মামুনকে ঢাকায় একটি কলেজে বিনা পয়সায় ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন এবং খাওয়ার টাকা দেন। এ থেকে মামুনের জীবনের মোড় ঘুরতে থাকে। মামুনের মা রেহানা বেগম মনের শক্তিতে রাজিবকে মাদ্রাসায় ও সাকিব কে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীতে ওরা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়।

রেহানা বেগমের স্বামী বয়সের ভারে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। একদিকে সংসারের খরচ আরেক দিকে বাচ্ছাদের শিক্ষকের বেতন (প্রাইভেট) অন্যদিকে খাতা-কলম পাগলের মতো কোন পথ না দেখে রেহানা বেগম বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডাক্তারের রোগী যোগাড় করে দেওয়ার কাজটি বেছে নেয়। পড়াশোনা না জানার কারনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও একটি কার তার ভাগ্যে জুটেনি। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে গার্মেন্টস কিংবা ইট ভাঙ্গার কাজ করতে পারেননি। রেহানা বেগমের নম্রতা ও ভদ্রতার কারনে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকরা তাকে সম্মান করত এবং সাহায্য করত। রোগী দেওয়ার কাজটির কারনে পরিবার থেকে তাকে প্রচুর চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু তাদের রক্তচক্ষুকে উপক্ষো করে রেহানা বেগম কাজ করে দুমুঠো খাবার যোগাড় ও বাচ্চাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রেহানা বেগমের কাছে তার জীবন সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলতে থাকে আমার পড়াশোনা না থাকার কারনে আমার জীবন অন্ধকার আর অন্ধকার। না পেলাম বাত-কাপড় না পেলাম সংসারে সুখ, না পেলাম স্বামীর পরিপূর্ণ আদর সোহাগ, আমি শুধু দিয়েই যাচ্ছি পাইনি কিছুই। বাল্য বিবাহের জীবন থেকে কষ্ট, বৃদ্ধ স্বামী। এখন সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার সংক্রাম আর মরনের চিন্তা। জানি না এ পথ আমার আর কতদূর!

একটি কথা সত্য যে, বাংলাদেশে নারীশিক্ষার হার কম থাকায় প্রতিবছর বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। তবে বর্তমানে সচেতনতায় বাল্যবিবাহ কিছুটা কমে আসছে। আর যেন কোন রেহানাকে এভাবে অসহনীয় কষ্টের জীবনের কথা চাপা কান্নায় পরিণত না হয় সে জন্য সকলের চেষ্টা ও প্রত্যাশা।

(পিআইব) একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×