গিন্নির হাতে বানানো পান মুখে দিতে দিতে কর্তা বাবু বললো, “লোডশেডিং যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তাতে তো সিদ্ধ হয়ে মরতে হবে অতি শীগ্রই, অতিষ্ট হয়ে পড়েছি, আরতো পারি না। ” কর্তা বাবুর কথা শুনে গিন্নির মুখে একটা স্পস্ট দুঃশ্চিন্তা ছাপ দেখে সাথে সাথে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো হরিপদ। মনে মনে ভাবতে লাগলো এই লোডশেডিং টা কি, যা কর্তা বাবুর মত বড় মানুষকে সিদ্ধ করে দিতে পারে? কর্তা বাবুকেই জিজ্ঞাসা করবে এই “লোডশেডিং” টা কে, কি অথবা আসলো কোথা থেকে? কর্তা বাবুকে প্রশ্ন করতে যেই না মুখ হা করলো হরিপদ, তখনি মনে পরে গেল দিনের প্রারম্ভে কর্তা বাবুর সতর্কবাণী। আজ সকালে কর্তা বাবুকে যখন হরিপদ জিজ্ঞাসা করেছিলো, ” কর্তা, সুবল বললো আগামী শুক্রবার নাকি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে?” তখনই কর্তা তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, আজকে দিনে আর একটা প্রশ্ন করলে নূতন কিনে আনা ছাতাতে তার মেরুদন্ড ভাঙ্গা হবে। মেরুদন্ড বাঁচাতে গিয়ে আর কোনো প্রশ্নই করলো না হরিপদ। বের হয়ে এলো কর্তা বাবুর জমিদার বাড়ি থেকে।
গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে হরিপদ হেঁটে চলছে আর ভাবছে, ছোট কালে পিতা মারা যাওয়ার পর এই কর্তা বাবুর বাড়িতেই বড় হয়েছে, কর্তা বাবু তার পিঠে যতই ছাতা ভাঙ্গুক না কেন আহার দিয়েছে ঠিক তিন বেলাই। এখন এই কর্তা বাবু যদি লোডশেডিং এর কবলে পরে সিদ্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে কে আশ্রয় দিবে। দু’কূলে তার কেউই নেই এই কর্তা ছাড়া। ভাবনার অতলে হারিয়ে গেছে হরিপদ।
হরিপদের কাছে হঠাৎ রীতিমত দৌড়ে আসলো সুবল দাস। সুবল দাস হলো হরিপদের একমাত্র বন্ধু। পাশাপাশিই বাড়ি তাদের। দূর থেকে বার কয়েক ডেকে জবাব না পওয়াতে সে দৌড়ে এসেই ধরলো হরিপদকে।
সুবল : “আরে এই হরিপদ, তোরে সেই কতক্ষণ ধরে ডাকছি, কি এমন ভাবছিস যে এত বার পিছন থেকে ডাকার পরও তোর কানে ডাক পৌঁছেনি?”
হরিপদ : ডেকেছিস নাকি? কই শুনতে পাইনি’তো আমি। শুনতে পেলে কি আর থামতাম না বল?
সুবল: এভাবে চিৎকার করে ডাকলাম তারপরও শুনতে পেলি না? নিশ্চই কোনো গভীর ভাবনা ভাবছিলি। কোথা থেকে এলি তুই আর যাচ্ছিস কোথায়?
হরিপদ: এসেছি কর্তা বাড়ি থেকে আর যাচ্ছি একটু রাজমণির বাড়ির দিকে। রাজমণির মায়ের অসুখ তাই আমাকে বলেছিলো কিছু ঔষধ এনে দিতে। কেন ডেকেছিস তুই?
সুবল: আরে আজ রাতে যাত্রা হবে, তোকে নিয়ে রাতে যাত্রা দেখতে যাবো ভাবছি।
হরিপদ: দ্যাঁখ সুবল, কর্তা বাবু যদি শুনে যাত্রা দেখতে গেছি আমি তাহলে নিশ্চিত তার ছাতা আমার পিঠে ভাঙ্গবে। তুই যা আমার দেরী হলে আবার কর্তা চটে যাবে।
এই বলে হরিপদ হাঁটা শুরু করলো। পিছন থেকে সুবল দাস একটু জোর গলায় বললো, “আরে এই হরিপদ যদি যাস তাহলে চলে আসিস।”
হরিপদ একবার পিছনে তাকিয়ে দেখে সুবল হাঁটা শুরু করেছে উল্টোদিকে। দু’কদম সামনে এগিয়েই হঠাৎ হরিপদ থেমে গেলো। পিছনে ফিরে দৌড়ে আসলো সুবল দাসের কাছে। বললো,
হরিপদ: হ্যাঁ সুবল তুই কি সত্যিই আমাকে জোরে জোরে ডেকেছিলি তখন?
সুবল: হ্যাঁ, কেন, তোর বিশ্বাস হয়না? আমি কি মিথ্যে বলেছি নাকি তোর সাথে? ছি, ছি শেষ পর্যন্ত তুই আমারে মিথ্যুক বানালি? কর্তা বাবুর বাড়িতে থাকস বলে কি এখন আমাদের মত গরীবদের কথা তোর বিশ্বাস হয় না’রে হরিপদ?
হরিপদ: আরে না না, কি আজে বাজে কথা শুরু করলি, তোরে আমি মিথ্যুক ভাববো কেন?
সুবল: ঠিকই বলেছিস আমার কথা এখন তোর আজে বাজেই মনে হবে।
হরিপদ: আরে না, কথা শুন প্রথমে। আমি ভাবলাম তুই এতো জোরে ডাকলি কিন্তু আমি শুনতে পেলাম না কেন? আমারও কি তাহলে লোডশেডিং বেড়ে গেলো নাকি?
সুবল: লোডশেডিং!! এই হরিপদ তুই এসব কি কস? এই নামতো জীবনে শুনিনাই।
হরিপদ: কর্তা বাবুর কাছে আজকে শুনেছি, এই লোডশেডিং দিন দিন নাকি বাড়ছে আমাদের দেশে, এটা মানুষকে সিদ্ধ করে ফেলে। কর্তা বাবুও এটা নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তার মাঝে আছে। ভগবান জানে এখন আমাদের কি হবে। আচ্ছা সুবল, তুই কি কিছু জানিস এই ব্যাপারে?
এই কথা শুনে সুবল একটু আতঙ্কিত হয়ে পরল। গলায় তার কাপুনি ধরেছে। কাঁপতে কাঁপতে বললো,
সুবল: কি কস! এতো দেখি খুব ভয়ংকর কথা রে। আমি জানবো কোথা থেকে? তুই কেন জিজ্ঞাসা করলি না তোর কর্তাকে?
হরিপদ : আরে করতাম আমি কিন্তু সকালে কর্তা বাবু বলেছিলো আজকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে নূতন ছাতাটা দিয়ে আমার মেরুদন্ড ভাঙ্গবে।
সুবল: আরে না, আগামী ছয় মাস আর কোনো ছাতার বারি খাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তুই নিশ্চিন্তে থাক হরিপদ। কর্তা বাবু হয়তো এমনি বলেছে, নূতন ছাতা দিয়ে তোকে মারতে এসে তার ছাতা সে নষ্ট করবে না। ধনীদের কাছে গরীবের মেরুদন্ডের চেয়ে তার নূতন ছাতার মূল্য অনেক বেশি।
হরিপদ: তা ঠিকই বলেছিস তুই সুবল। এর চেয়ে ভাল হবে চল মহাজনের কাছে যাই। উনি বলতে পারবেন আসল ঘটনা কি। কত মানুষের সাথেইতো তার চলাফেরা রয়েছে। আর সেখানে গেলে একটা উপায়ও বেরিয়ে আসবে।
সুবল: হ্যাঁ, যাওয়া যায় খারাপ না কিন্তু মহাজন কি আমাদের কথা শুনবেন? উনিতো খুব বড় মানুষ।
সুবল দাসের কথা শুনে হরিপদের চোখগুলো বড় হয়ে গেলো।
হরিপদ: কি বলিস তুই? উনি আবার বড় মানুষ হলো কবে? তাহলেতো আর তাকে পাওয়া যাবে না।
সুবল: কেন?
হরিপদ: কেন কি? তুই জানিস না, মানুষ বড় হলে তাদেরকে আর পাওয়া যায় না? কেন নারায়ণ চক্রবর্তীর কথা কি ভুলে গেলি? সেই যে ইলেকশনে জিতার পর শহরে গেছে আর কি ফিরে আসছিলো? বড় মানুষ তারাই যাদেরকে দেখা যায় কর্তা বাবুর টেলিভিশনে।
সুবল: তা তুই ঠিকই বলেছিস। এক কাজ কর রাতে কর্তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চল দুজনে মিলে যাত্রা দেখার আগে মহাজনের কাছে যাবো।
হরিপদ : আরে তুই আছিস শুধু তোর যাত্রা নিয়ে, এই দিকে আমিতো ধীরে ধীরে সিদ্ধ হতে শুরু করেছি। আচ্ছা এখন আমি আগে রাজমণির মা’য়ের ঔষধ কিনে দিয়ে আসি। রাতে কর্তা বাবুর বাড়ি থেকে এসে চিন্তা করবো কি করা যায়।
এই বলে সুবল দাসকে বিদায় জানিয়ে হরিপদ রাজমণির বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। সন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে সাথে তার ভাবনার ঘনত্ব বাড়ছে। হঠাৎ ভাবতে লাগলো রাজমণির মায়ের অসুখের কথা। দুপুরে রাজমণি শুধু বলেছিলো তার মায়ের অসুখ কিন্তু কি অসুখ সেটা বলেনি। তার মা’য়ের আবার লোডশেডিং হয়নিতো? এই ভাবনা তার মনে আসার সাথে সাথে প্রায় বিদ্যুৎ গতিতেই ছুটে চললো রাজমণির বাড়ির দিকে।
হাঁপাতে হাঁপাতে সোজা রাজমণিদের ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো হরিপদ। উত্তেজিত কন্ঠেই ডাকলো, “কিরে রাজমণি কই তুই? রাজমণি তখন তার মা’য়ের সন্ধ্যা পূঁজোর জন্য প্রদীপ জ্বালাচ্ছিলো। হরিপদের কন্ঠ শুনে বললো,” হরপদ দা তুমি এসেছো? দাঁড়াও এইতো আসছি।” প্রদীপ জ্বালানো শেষ হলে রাজমণি ভেতরের কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এসে বললো হরিপদকে, ” এই বুঝি তোমার আসার সময় হলো? অন্ধকার হয়ে গেছে বাহিরে, ডাক্তার বাবু যদি এখন ঔষধ না বেঁচে?” হরিপদ কোনো জবাব দিলো না শুধু এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। কুঁড়ে ঘর, রাজমণি আর তার মা থাকে। রাজমণির পিতা অনেক আগেই স্বর্গে গেছেন, অভাবের সংসার দু তিন বিঘা জমি আছে, সেগুলো বর্গা দিয়েই রাজমণিদের সংসার চলে। হরিপদকে এভাবে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে রাজমণি বললো, ” ও হরিপদ দা এভাবে কি দ্যাঁখো? এমন ভাবে দেখছো যেন মনে হচ্ছে আমাকে বিয়ে করতে এসেছো! ঘর পছন্দ হলে করবে, আর না হলে করবে না। এই গরীবের ঘরে এমন করে কি দ্যাঁখছো? ” রাজমণির কথা শুনে হরিপদের চোখে মুখে বিরক্তির একটি রেখা দেখা দিলো, খানিকটা রেগেই গেলো বটে। রেগে গিয়ে ধমকের সুরেই বললো রাজমণিকে, ” এতো গরীব গরীব করিস না’তো, লোডশেডিং আসলে গরীব ধনী সবার শরীরের মাংসই গলে পড়বে।” কথা শুনে রাজমণি বললো,” কি বলছো হরিপদ দা? এটা কি আবার?”
হরিপদ বললো,” এতো প্রশ্ন করিস কেন? তোরে বললেও কি তুই বুঝবি?” হরিপদের এবারের কথা শুনে রাজমণিও রীতিমত রেগে গেলো বললো, “থাক থাক আমার এতো বুঝে লাভ নেই তোমার মত। মিঞা বাড়ির বিড়ালও যেমন মিঞা হয় তেমনি তুমিও এখন জমিদার বাড়ির চামচা হইয়া জমিদার হইছো।” রাজমণির রাগান্বিত মুখ দেখে হরিপদের আর কিছু বলার সাহস হলো না, গলার সুর একটু নরম করেই বললো, “আচ্ছা বাদ দে এসব, তোর মা কোথায়? আচ্ছা কি হয়েছে তার?” রাজমণি বললো,” মা একটু আগে বিশ্রাম করে উঠে সন্ধ্যে পূঁজো দিচ্ছে। কিছু’না তেমন, ভোর থেকেই শরীরটা গরম, তাই ভেবেছিলাম কিছু ঔষধ খাইয়ে দিলেই সেরে উঠবে ।” রাজমণির কথা শুনে হরিপদ আকাশ থেকে পড়লো, ” বলিস কি’রে রাজমণি শরীর গরম? তুই এতক্ষণ বক বক না করে আমাকে আগে বললি না কেন? হায় ভগবান এখন আমি কি করি?” হরিপদের এই ব্যাকুলতা দেখে রাজমণি ঘাবড়ে গিয়ে বললো,” কেন কেন হরিপদ দা? মা’য়ের কি বড় কোনো অসুখ হয়েছে?” হরিপদ তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে শুধু বললো,” তুই দেরী করিস না আর তাড়াতাড়ি তর মা’য়ের গায়ে জল ঢাল আমি ডাক্তার বাবুর বাড়িতে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসি। খবরদার জল ঢালা কিন্তু বন্ধ করবি না একদম তাহলে কিন্তু আর রক্ষা নেই।” এই বলেই হরিপদ ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো আর মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো,” হে ভগবান গরীবের শরীরতো দরিদ্রতার তাপে এমনিতেই সিদ্ধ হয় তার উপর তুমি আবার দিলে লোডশেডিং?”
ডাক্তার বাবুর বাড়ি বেশি দূরে না তাই তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেলো হরিপদ। উঠানে দাঁড়িয়ে বললো:
হরিপদ: ডাক্তার বাবু বাড়িতে আছেন? একটু বাহিরে আসবেন খুব বেশি দরকার ছিলো?
হরিপদের ডাক শুনে ঘরের ভেতর থেকে একটি বয়স্ক মহিলা বেড়িয়ে আসলো। বললো, “আপনি কে? ডাক্তার বাবু-তো শহরে গেছে ঔষধ কিনতে। কাল সাঁঝ নাগাদ ফিরবে।” মহিলার কথা শুনে মুহূর্তেই হরিপদ চটে গেলো, এতো কষ্ট করে এসে এখন যদি বলে ডাক্তার বাড়িতে নেই তাও আবার এই দরকারী সময় তখন আসলে চটে যাওয়ারই কথা। হঠাৎ চটে গিয়ে বললো, ” ডাক্তার বাবু যখন বাড়িতেই নাই তখন আমি কে সেটা জেনে আপনি কি করবেন?” বলেই চলে আসলো। অন্ধকারের মাঝেই আবার রওয়ানা দিলো রাজমণির বাড়ির দিকে, ভাবছে এখন কি হবে? ভয়ে সারা শরীরে তার কাঁটা দিয়ে উঠলো।
হরিপদের ডাক শুনে রাজমণি বের হয়ে আসলো ঘর থেকে।
রাজমণি : কি হরিপদ দা ঔষধ পাওনি তাই না?
হরিপদ : হ্যাঁ, ডাক্তার বাবু নাকি শহরে গেছে ঔষধ কিনে আনার জন্য। কিন্তু তোর মা’য়ের কি অবস্থা এখন?
রাজমণি : ভালো আছে এখন। আমার মনে হয় জ্বর উঠেছিলো।
হরিপদ : আরে না, যা বুঝিস না তা নিয়ে কথা বলিস না। আগে শরীর গরম হলে বুঝতাম জ্বর হয়েছে, কিন্তু এখন এটাকে জ্বর ভাবলে হবে না এটা লোডশেডিং, যা ধীরে ধীরে বাড়ছে, এটা মানুষকে নাকি সিদ্ধ করে ফেলে। কাল ডাক্তার বাবু আসলেই ঔষধ নিয়ে আসবো। এই লোডশেডিং যে কার পাপে আমাদের দেশে আসলো’রে রাজমণি তা আমি জানি না, আমার কিছুই ভালো লাগে না আর।
হরিপদের কথা শুনে রাজমণি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো। এক গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো রাজমণি। হঠাৎ করে বললো,
রাজমণি : হরিপদ দা , এখন আমাদের কি হবে? আমিও শুনেছি এই নাম। ঐদিন যখন শ্যামল বাবুর দোকানে গিয়েছিলাম চাল আনতে তখনই শুনেছি।
হরিপদ কিছুটা অবাক হয়ে পড়লো।
হরিপদ : তার মানে তুইও শুনেছিস!! হয় ভগবান!! কি শুনেছিস বল।
রাজমণি : বেশি কিছু শুনিনিতো, দোকান ভরা গুরুজনরা ছিলো আমি যুবতী মেয়ে বেশিক্ষণ কি সেখানে থাকা যায়?
হরিপদ : আরে এতো আমতা আমতা না করে বল কি শুনেছিস। যা শুনছস তাই বল।
রাজমণি : আরে রেডিওতে বললো আমাদের সরকার নাকি এটা বন্ধ করার জন্য অনেক অনেক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।
হরিপদ : মারাত্মক ব্যাপারতো। আমাদের দেশের সরকার প্রধান যখন এই লোডশেডিং এর পিছনে দৌড়াচ্ছে তাহলে নিশ্চই মারাত্মক কিছুই হবে এটি। সরকার তো আর ছোটখাটো বিষয় নিয়ে রেডিওতে ঘোষণা দিবে না তাই না?
রাজমণি : কি জানি হরিপদ দা! তুমিতো বললা এটা নাকি মানুষকে সিদ্ধ করে ফেলে তাহলে নিশ্চই সরকার প্রধান নিজে সিদ্ধ হওয়ার ভয়েই নজর দিছে ভালো করে।
হরিপদ : দেখি এতো ভাবিস না। কাল ডাক্তার বাবু আসলে তোর মা’য়ের জন্য ঔষধ নিয়ে আসবো। এখন যা ঘুমা।
রাজমণি : ঠিক আছে হরিপদ দা, তুমিতো এখন মনে হয় কর্তার বাড়িতে যাবে তাই না?
হরিপদ : হ্যাঁ, কর্তার বাড়ি থেকে খেয়ে সুবলের সাথে দেখা করতে যাবো। ঠিক আছে তাহলে আমি এখন যাই তুই গিয়ে শুয়ে পড়।
রাজমণি কিছুক্ষণ হরিপদ-এর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘরে চলে গেলো। হরিপদ ও হাঁটা শুরু করলো কর্তা বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
“হ্যাঁ রে হরিপদ, ভাবতেছি তোরে এবার বিয়ে করবো।” কর্তার পা মালিশ করা অবস্থায় হঠাৎ কর্তার কথাটা শুনে চমকে উঠে হরিপদ। শুধু কর্তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। হরিপদের নিষ্পলক তাকানো দেখে কর্তা বললো:
কর্তা : কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
হরিপদ : না কর্তা কিছু না, তবে কর্তা আমি বিয়ে করবো না।
এই কথা শুনে কর্তা একটু ভুরু কুচকে তাকালো হরিপদের দিকে।
কর্তা : কেন, বিয়ে করবি না কেন? বয়সতো হয়েছে তাছাড়া তোর প্রতি আমারও একটা দায়িত্ব আছে না বল?
হরিপদ : তা’তো কর্তা অবশ্যই রয়েছে, আমার দু’কূলে তো শুধু আপনিই আছেন।
কর্তা : তো বিয়ে করবি না কেন? চির কুমার হয়ে থাকবি নাকি?
হরিপদ : না কর্তা ভয় করে আমার।
কর্তা : কিসের ভয় রে আবার বিয়ে করতে? এই বিয়ে হলো সৃষ্টিকর্তার একটি অমূল্য দান।
কর্তার কথা শুনে হরিপদের চোখে রীতিমত বিস্ময় খেলা করছে , সাথে সাথেই কর্তাকে বলে উঠলো,”আচ্ছা কর্তা বিয়ে সৃষ্টিকর্তার অমূল্য দান নাকি? কিন্তু সেদিন যে আপনি বললেন কত্রীর মৃত্যু হলে নাকি আপনার আপদ দূর হবে! আপনি সারা গ্রামের মানুষ দাওয়াত করবেন!”
হরিপদের ঐ কথা শুনে কর্তা কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”হরিপদ ওগুলো কিছু না, ঐ কথাগুলোও ভালবাসার একটা অংশ। বিয়ে করলে তুইও বুঝবি সব। আর হ্যাঁ তুই কি তোর কত্রীকে এইসব বলেছিলি নাকি?” হরিপদ বললো,” না কর্তা আমি বলতে গিয়ে শুধু শুধু মার খাবো নাকি? কত্রীর যেই রাগ! মেজাজ উগড়ে গেলে সে আপনাকেই ছাড়ে না আবার আমাকে?”
কথাটা মুখ থেকে বের করেই হরিপদ জ্বিভ কামড়ে ধরলো হায়! এ কথা কিভাবে বের হয়ে গেলো মুখ দিয়ে! “আর কোনদিন এই বাড়ির আশেপাশে যাতে তোকে না দেখি হারামখোর” কর্তার এই কথাশুনে হরিপদের সাহস হয় না তার চোখের দিকে তাকানো। কথাটা না বললেই আর কোনো ঝামেলা হতো না, ভাবতে ভাবতে কোনরকম চোখবন্ধ করে সদর দরজায় পৌঁছে হরিপদ দেয় দৌঁড় অন্ধকারেই। এমন ভাবে দৌড়াচ্ছে যেন পিছনে কর্তা বাবু তাকে ছাতা নিয়ে তাড়া করেছে। দৌড়াচ্ছে আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,”কর্তা লোডশেডিং আসতেছে আপনাকেও এইভাবেই দৌঁড়াতে হবে হ্যাঁ।”
ঘুম থেকে উঠেই ধুতির ছেঁড়াটা খুঁজতে শুরু করলো হরিপদ। রাতের অন্ধকারে দৌঁড়াতে গিয়ে বাঁশের ছাঁটার সাথে লেগে ধুতির খানিকটা অংশ ছিঁড়ে গেছে। নূতন ধুতি কেনার অপারগতায় এই ছেঁড়া ধুতিটিকেই এখন তার কোমড়ের কাছে গিঁট হবে। ধুতির গিঁট বাঁধতে গিয়েই বাধলো যত বিপত্তি। এমন ভাবে ধুতিটি ছিঁড়েছে কোনো ভাবেই তাকে আড়াল করে কোমড়ে জড়ানো যাচ্ছে না। ঐদিকে আবার আজকে কর্তা বাবুর সাথে গঞ্জে যাবার কথা। কর্তা বাবুর নাম মনে আসতেই হরিপদের সারা শরীরে ঘাম দেখা দিলো, যদিও জানে কর্তা বাবু এতক্ষণে সব ভুলে গেছে কারণ এতো নূতন কিছু না। কর্তা বাবুর মেজাজ নরম হলেও এই দিকে হরিপদের মেজাজ ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে এই ছেঁড়া ধুতি নিয়ে। কোনভাবে কর্তা বাবুর সাথে গঞ্জে পৌঁছাতে পারলে, কর্তা বাবুকে বলে নূতন একটা ধুতি নিতে পারতো। ঠিক এমন সময় সুবল দাস ঘরে ঢুকলো। দরজার খিঁড়কি লাগানো ছিলো না বলে সুবল দাস সরাসরি ঘরের ভিতেরই ঢুকে যেতে পেরেছে। হরিপদকে দেখেই সুবলের আর হাসি যেন থামতেই চায় না। সুবল দাসকে দেখেতো লজ্জায় হরিপদের মাথা যায় যায় অবস্থা। ধুতিটি কোনো রকম শরীরে পেঁচিয়ে বললো, “কিরে সুবল তোর কি আক্কেল জ্ঞান কিছুই নেই, এভাবে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়লি? সুবল কোনরকম হাসিটি চেপে বললো,”কি’রে কি করছিলি হ্যাঁ? হরিপদ বললো,” আরে কালকে রাতে কর্তা বাবুর ওখান থেকে আসার পথে বাঁশের ছাঁটার সাথে লেগে ধুতিটি ছিঁড়ে গেছে, আর তাই তোর সাথে দেখা না করেই চলে এসেছি।” সুবল ধুতিটি দেখতে চাইলে হরিপদ বললো,” আরে তুই কিভাবে ধুতিটি দেখবি এখন? গা ঢেকে রেখেছি ধুতি দিয়ে দেখছিস না? তোকে দেখতে হবে না, যদি পারিস একটু সুঁই সুঁতোর ব্যবস্থা কর, আমার আবার কর্তার সাথে গঞ্জে যেতে হবে। হরিপদের কথা শুনে সুবল বললো, সে কি তুই বললি গতকাল মহাজনের সাথে দেখা করবি কিন্তু এলি না আজকেও কি যাবি না?” হরিপদ বললো,”হ্যাঁ যাবো গঞ্জের থেকে ফিরেই যাবো। এখন তুই আমার জন্য একটু সুঁই সুঁতোর ব্যবস্থা কর যা।’ “ঠিক আছে” বলেই সুবল দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। সুবল বেড়িয়ে যাবার পর হরিপদ ধুতিটি খুলে শরীরে একটি গামছা জোরালো যাতে সুবল ফিরে এলেই ছেঁড়া স্থানটি সেলাই করে নিতে পারে।
কিছুক্ষণ পর সুবল ফিরে আসলো সুঁই সুঁতো নিয়ে। হরিপদ কোনো রকম সেলাই করে নিলো ধুতিটি আর মনে মনে ভাবতে লাগলো আজকেই বলবে কর্তা বাবুকে একটা ধুতি কিনে দিতে। হিরপদ আর সুবল দাস একই সাথে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো। বেলা অনেক হয়েছে, সুবল দাস ও হরিপদ দুজনেই হাঁটছে। হরিপদ যাবে কর্তার বাড়িতে আর সুবল যাবে কর্তা বাড়ি থেকে একটু দূরে শ্যামল নাথের বাড়িতে যেখানে সে তিনদিনের মাটি কাঁটার কাজ পেয়েছে। আজকে কাজের শেষ দিন। “ঐ দ্যাঁখ রাজ মনি আসছে তোর খোঁজে”, নিচু জমির আইল দিয়ে হেঁটে আসা রাস্তার দিকে রাজমণিকে দেখিয়ে সুবল দাস বললো হরিপদকে। সুবলের কথা শুনে হরিপদ যে একটু লজ্জা পেলো, লজ্জার সুরেই বললো “যাহ! তুই এসব কি বলছিস?” রাজমণি তাদের কাছে পৌঁছালে তাকে একটু চিন্তিত মনে হল।
হরিপদ: কিরে রাজমণি, যাচ্ছিস কোথায়? তোর মুখ এমন শুকনা কেন? তোর মা’য়ের শরীর ভালো আছেতো?
রাজমণি : হ্যাঁ হরিপদ দা ভালো আছে।
বলতে বলতে রাজমণির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
হরিপদ : কিরে রাজমণি কাঁদছিস কেন? তোর মায়ের শরীর কি খারাপ নাকি? কাঁদছিস কেন বল?
রাজমণি : তুমি শুনে কি করতে পারবে যে তোমাকে বলবো? যে শুনে কিছু করতে পারবে তার কাছেই বলবো। সামনে থেকে সরে দাড়াও, তুমিতো একটা কাপুরুষ।
এই বলেই রাজমণি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। হরিপদ শুধু তাকিয়ে দেখলো।
সুবল : হরিপদ রাজমণি হয়তো তোকে বিয়ে করতে চায়। তোর মুখ থেকে শুনতে চায় বিয়ের কথা, তুই বলিসনি দেখেই হয়তো তোকে কাপুরুষ বলে গেছে।
হরিপদ : সুবল তোর মাথায় কি কোনো দিন বুদ্ধি হবে না’রে? সকাল বেলা দরজায় টোঁকা না দিয়ে ঘরে ঢুকে গেলি আর এখন দেখেছিস একটা মেয়ে কান্না করছে আর তুই বলছিস বিয়ের কথা। আরে গর্ধব কেউ যদি কাউকে বিয়ে করতে চায় তাহলে কি কেঁদে কেঁদে বলে নাকি? তোর মাথায় আসলেই কিছু নেই।
সুবল : তাহলে কাঁদছে কেন?
হরিপদ : আমি কি জানি? গঞ্জ থেকে ফিরে ওর বাড়ীতে গিয়ে না হয় জিজ্ঞাসা করবো, এখন তুই তোর কাজে যা আমি আমার কাজে যাই।
এই বলে দু’জনে হাঁটতে লাগলো সামনের রাস্তা ধরে।
“কি রে হরিপদ, ধুতি পছন্দ হয়েছে তোর?” কর্তা জিজ্ঞাসা করলো হরিপদকে। হরিপদ খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো,”কর্তা আমার আপনি ছাড়া আর কে আছে বলেন? আর আপনার কিনে দেওয়া ধুতি পছন্দ না হয়ে পারে?”
কর্তা : না’রে হরিপদ তোর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে। তোর বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলো, আমাদের বাড়িটাকে নিজের বাড়ির মত সবসময় পাহারা দিয়ে রেখেছে। তোর বাবা আমাদেরকে অনেক খেদমত করেছে রে, আমরা তার কাছে অনেক ঋণী।
হরিপদ : কর্তা বাবু আমারও এই একই ইচ্ছা যে যতদিন বেঁচে থাকি আপনাদের খেদমত করতে পারি। কিন্তু কর্তা বাবু আমি যে অনেক ভয়ে আছি।
কর্তা : কেন রে হরিপদ? তোকে মারি বলে? ঠিক আছে যা তোকে আর কোনো দিন মারবো না।
হরিপদ : না কর্তা বাবু মারার জন্য না। আপনি গতকাল গঞ্জ থেকে ফিরে এসে যে কর্ত্রীকে বললেন যে লোডশেডিং বাড়ছে ধীরে ধীরে, সিদ্ধ হয়ে মারা যাবে! সেটা নিয়ে আমি অনেক ভয়ে আছি। আচ্ছা কর্তা বাবু লোডশেডিং টা কি? সে কি খুব ভয়ংকর?
হরিপদের কথা শুনে কর্তা খুব জোরে হাসতে লাগলো। কর্তাকে এভাবে হাসতে দেখে হরিপদ একটু চমকিয়ে উঠলো। হরিপদের দিকে তাকিয়ে শেষে কর্তা বললো,” আরে এই রামছাগল লোডশেডিং হচ্ছে ইংরেজী শব্দ। মাঝে মাঝে যে আমাদের ঘরে বিদ্যুত চলে যায় তাকেই লোডশেডিং বলে বুঝলি?”
এই বলেই কর্তা বাবু আবার হাসতে শুরু করে করে। কর্তা বাবুর হাসি দেখে আর নিজের বোকামির জন্য হরিপদও মুচকি মুচকি হাসছে। শেষ পর্যন্ত তাহলে লোডশেডিং এর ভীতি দূর হলো মন থেকে। লোডশেডিং ভীতি কেঁটে যাওয়ার পর হরিপদের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো কর্তাকে বলতে যে সে রাজমণিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু হরিপদ কিছুই বললো না, অনেক খুশি মনেই কর্তার সাথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। হঠাৎ রাস্তার মাঝে হঠাৎ থমকে দাড়ালো,
কর্তা : হ্যাঁ রে হরিপদ, তুই কি কিছু জানিস রাজমণির ব্যাপারে?
হরিপদ : না কর্তা বাবু। আপনার বাড়ি যাওয়ার সময় তাকে দেখলাম কান্না করছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা বলেনি।
কর্তা : রাজমণি নাকি তোর কর্ত্রীর কাছে এসেছিলো আজ, তোর কর্ত্রী আমাকে বললো, মহাজনের সাথে নাকি কয়েকজন অচেনা লোক নাকি রাজমণি কে কুপ্রস্তাব দিয়েছে।
হরিপদ কর্তার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলো।
হরিপদ : কি বলছেন কর্তা বাবু? ওরা কারা? এই গ্রামে অচেনা লোক কোথা থেকে আসবে?
কর্তা : জানি না রে হরিপদ। রাজমণি বললো তোর কর্ত্রীকে, তারা দেখতে না’কি শহুরে মনে হয়েছিলো।
হরিপদ : তাহলে কর্তা আপনি মহাজনের সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেন।
কর্তা : হ্যাঁ তাই ভাবছি, মহাজনের সাথে পশ্চিম খন্ডের জমিটা নিয়ে আমার একটু ঝামেলা চলছে। মহাজন চাচ্ছে এই জমিটাকে অবৈধ দখল করে নিতে। তারপরও আমি মহাজনের সাথে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো। আর শুন তুই রাজমণি বাড়িতে গিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলবি যাতে কোনো চিন্তা না করে।
হরিপদ : জী কর্তা যাবো, গিয়ে বলে আসবো।
কর্তা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো :
কর্তা : আচ্ছা হরিপদ, আমি ভাবছি রাজমণির মায়ের কাছে তোর জন্য রাজমণিকে চাইবো, তুই আবার বলিস না বিয়ে করবি না তাহিলে এই নূতন ছাতা দিয়ে তোর মেরুদন্ড ভাঙ্গবো আমি।
হরিপদ : না কর্তা, আপনি শ্রদ্ধাভাজন, আপনার কথার উপর কথা বলার সাহস আমার এখনো হয়নি।
কর্তা : ঠিক আছে তাহলে কালই আমি রাজমণির মায়ের সাথে কথা বলবো।
হরিপদকে সাথে নিয়ে কর্তা ছুটে চলছে জমিদার বাড়ির দিকে।
সুবল দাস ও রাজমণিকে লোডশেডিং-এর আসল গল্প শুনিয়ে চলে এসেছে কর্তার জমিদার বাড়িতে। রাতের আঁধার নেমেছে পৃথিবীতে। হরিপদের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন, রাজমণির সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর। কর্তা শুয়ে শুয়ে টেলিভিশন দেখছিলেন তার পায়ের পাশে বসেই হরিপদ কর্তার পা টিপে দিচ্ছিলো। হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেলো, জমিদার বাড়ি পুরো অন্ধকারে আচ্ছন্ন। কর্তা একটু জোরে ডেকে বললেন, ” কই গো গিন্নি তাড়াতাড়ি বাতি নিয়ে এসো, হরিপদ না হয় এখন সিদ্ধ হয়ে যাবে।” তা বলেই হা হা হা করে হাসতে লাগলেন কর্তা। হরিপদের উদ্দেশ্যে বললো,” এই হরিপদ এই হচ্ছে লোডশেডিং, এবার বুঝতে পেরেছিস?”
হরিপদ আবারও লজ্জিত হয়ে বললো,”জী কর্তা বাবু এবার বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা কর্তা বাবু আমি কত্রী থেকে বাতি নিয়ে আসি।” এই বলেই হরিপদ কর্তার কক্ষ থেকে বেড়িয়ে পড়লো কর্ত্রীর কাছ থেকে বাতি নেওয়ার জন্য। কর্ত্রী থেকে বাতিটি নিয়ে শুধু এক কদম পা বাড়িয়েছে হঠাৎ ভেসে আসে কর্তার চিৎকার,”হ—রি—প—-দ!” কর্তার চিৎকার শুনে হরিপদ ও কর্ত্রী এক সাথে দৌড় দিলো। বাতির নিভু আলোতেই স্পষ্ট হয়ে উঠে তার সামনের বিভৎস দৃশ্যটি। সাথে সাথেই জ্ঞান হারায় হরিপদ।
রাজমণি আর হরিপদ খুব সুন্দর সংসার করছে। তাদের সুন্দর একটি সন্তান রয়েছে। কর্তা মারা যাওয়ার পর কর্ত্রীর ইচ্ছাতে তারা এখন রাজবাড়ীতেই থাকে। সুখেই কাটছে তাদের দিনগুলো এখন কিন্তু লোডশেডিং হরিপদ একদম সহ্য করতে পারে না। লোডশেডিং হলেই হরিপদের মানসিক সমস্যাটা বেড়ে যায়। ডাক্তার বাবুর পরামর্শ অনুযায়ী রাতে হরিপদে ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ, এমনকি রাতে ঘরে বাতিও জ্বালিয়ে রাখতে হবে কারণ হরিপদের শোবার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লোডশেডিং এর অন্ধকার দেখলেই হরিপদের সামনে ভেসে উঠে সেদিন রাতের সেই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন শির।
***সমাপ্ত***