২০০৬ এর “শিপন বালা”
বালাকে বিকৃত করে আমরা তখন তাকে “বালু” বলে ডাকতাম,
বড্ড হালকা পাতলা চেহারা, বাদামী চোখ-
হিংসে করবার মত বাবরি চুল।
ঝকঝকে আর অধিক পরিপাটি আমাদের বালা,
তার সুশ্রী চেহারা সহ্য না হবার দরুন তাকে “বালু” বলে ডাকতাম আমরা।
কৃত্রিম হাসিতে বালুর জুড়ি ছিল না,
আমরা দিনে সহস্রবার কাঁদানোর চেষ্টা করতাম,
সে তার শুকনো ঠোঁটে এক চিলতে হাসি এঁকে-
আমাদের স্বপ্নের গল্প শুনাতো, ওর স্বপ্ন।
আমরা কিছুই বুঝতাম না,
আমাদের ভেতর যাদের বুঝে নেবার আগ্রহ ছিল প্রবল-
একমাত্র সেই জিগ্যেস করত বালাকে-
এই আসলে তোর স্বপ্নটা কি বলত...?
উত্তর দেবার সময়, বালুর চেহারা ছিল দেখবার মত
উজ্জ্বল, ছল ছলে চোখ, সেই হাসিমাখা মুখ, আর-
অজানা কি এক সুখকে বুকে ধারন করে-
কলম নাচিয়ে নাচিয়ে বালু বলে যেত
“ দেবা দেখিস, আমি একদিন সত্যিই বালু হব রে!
আমার নিজস্ব একটা বালুচর থাকবে, শুধুই আমার।
রোদের প্রখর তাপে বালু চিক চিক করে জ্বলবে,
আমার অন্ধকারের দিনে, ও বালুর আলো
আমি আমার গায়ে মাখবো...!
বৃষ্টিতে ভেজা সতেজ বালুতে শুয়ে নিজেকে করব শীতল”
আগ্রহ নিয়ে জিগ্যেস করেছিল যে দেবা,
কিছু না বুঝে সে দেবাও এবার বালার নতুন নাম দিল-
“ বালু পাগলা ”
বালা থেকে বালু, বালু থেকে বালু পাগলা।
কী যেন এক কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম সেদিন,
১২ বছর, একটি যুগ পর বালার সাথে দেখা,
আমি চিনি নি, ওই আমাকে ডাকল,
যে বালার সুশ্রী চেহারায় হিংসে করে আমরা বালু ডাকতাম,
যে বালা তার ভবিষ্যৎ কে একদিন-
চিকচিকে উজ্জ্বল বালুর রুপে দেখত, বালুর আলো গায়ে
মেখে অন্ধকার বিদীর্ণ করবার স্বপ্ন আঁকত,
আজ এই দিনে এসে বালুকে দেখলাম,
কি কালোটাই না হয়েছে সে!
বি.এ পাশ গরীব বালা, আমার বন্ধু,
আমাদের বালু, প্রখর তাপে পোড়া বালুর আলো যে ভালবাসত,
সে আলোতেই আজ পুড়ছে, তিলে তিলে পুড়ে যাচ্ছে ওর স্বপ্নের বালুচর।
এক পশলা বৃষ্টিতে ভেজা যে বালুচরে শুয়ে-
নিজেকে শীতল করবার স্বপ্ন দেখত বালু,
সে বৃষ্টি আজও ঝরে নি, সে জানে,
আজকাল আমরাও জানি;
পয়সার বৃষ্টি না ঝরালে ও বৃষ্টি ঝরবে না।
দ্রষ্টব্যঃ ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত।