শাহবাগ আন্দোলনের ১ মাস পূর্তি।
এখনই কি শাহবাগ আন্দোলনের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়া ভাবতে হবে? ভাবা যায়। ১ মাস কম সময় না। আবার উপসংহারে পৌছানোর জন্য খুবই কম সময়। ধরা যাক, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা। তখন মনে হয়েছিল অনেক রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে গণতন্ত্র আসলো। স্বৈরাচার বন্দী হলো। কিন্তু আজ বিশ বছর পরে দেখতেছি সেই একই স্বৈরাচার নিয়ে দুই পক্ষের টানাটানি, মাঝে দিল্লিতেও তার তলব পরে। দুর্নীতির বিচার থেকে একে একে ছাড়া পেয়ে গেল এরশাদ। তাহলে হিসেব মেলাতে গেলে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় বিনিফিশিয়ারী বিএনপি এবং খালেদা জিয়া। যদিও আন্দোলন সব দল মিলেই করেছিল। তাইলে কি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পরাজিত করতে পারসে এরশাদকে? সাময়িকভাবে পরাজিত হলেও এরশাদ ফিরে এসেছেন দুই নেত্রীর হাত ধরেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে গণআন্দোলনে বিশ্বাস করাটা বোকামি
প্রবল উচ্ছাস আর সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন একটা কন্ট্রোলড ফর্মে চলে আসছে। ১ম সপ্তাহ পরেই এটা অন্তত বুঝা গেছে, এই আন্দোলন কোনো ভাবেই সরকারের বিপক্ষে দাড়ানোর মেরুদন্ড রাখে না। সরকার সামান্য বেকায়দায় পরে এমন দাবিও তোলে না। মঞ্চে ইমরান এইচ সরকার ও তার দল, ১ মাস অনেক কষ্ট করেছেন। কিন্তু কোন দাবি নিয়ে সরকারকে চাপ দিতে পারেন নি। সাইদীর রায়ের দাবি, প্রসিকিউশনে লোকবল বাড়ানো, জামাত নিষিদ্ধকরনের দাবি শক্তভাবে জানান নাই, যদিও দাবিগুলোতে জনতার প্রবল সমর্র্থন ছিল এবং এখনো আছে। এক্ষত্রে জনতা আর সরকারের মাঝে শাহবাগের মঞ্চ নেতারা একটা বাফার বা ড্যামপারের ভূমিকায় নেমেছেন।
যে ফেইসবুক ও অনলাইন একটিভিস্ট ফোরামের জাগ্রত দেশপ্রেমিক তরুণ সমাজ শাহবাগ আন্দোলনের প্রাণ, তাদের লেখা ও গবেষণাতেও বিচার প্রক্রিয়া ও রায়ের খুটিনাটি পর্যালোচনার আগ্রহ দেখি না। বরং একদফা 'ফাসি চাই' দাবিটি সর্বজনগ্রাহ্য ছিল। কারণ গণহত্যার রায় কেবল ফাসীই হতে পারে। খুব দ্রুত শাহবাগের মঞ্চনায়করা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, বিচারের কাজটা সরকার ভালোই করছে, ওটা নিয়ে ভাবার দরকার নাই। বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে একটা জোরদার সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে সবাইকে একই অবস্থান আর চেতনা থেকে দেশ গঠনের জন্য প্রস্তুত করি। আক্রমনের লক্ষ্য ছিল জামাতি প্রোপাগান্ডা মিডিয়া-ব্যাংক ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাগ-ছাগমনা-ছাগবান্ধব সবাই। কিন্তু আন্দোলনটি শুরুই হয়েছিল পরপর দুটি রায়ের দন্ডাদেশের অসামঞ্জস্যতা থেকে তীব্র ক্ষোভ আর সরকার-জামাতের গোপন আতাতের আশংকা থেকে। তৃতীয় রায়টিতেও কিছুটা অসামঞ্জস্যতা রয়েছে যা সাঈদীর ফাসীর আনন্দের ডামাডোলে চাপা পরে গেছে। একে একে আসি ---
প্রথম রায় নিয়ে কোন উত্কন্ঠা ছিল না। কারণ পলাতক বাচ্চু রাজাকারের পক্ষে কোন সাক্ষী খুঁজে পান নাই সরকারের নিয়োগ করা আইনজীবী। তাই দেরিতে শুরু হলেও বেশ দ্রুত রায় এসে যায় ফাসির। এরপরে দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লার ৫টি অভিযোগে ফাউন্ড-গিলটি লিখেও দন্ডাদেশের বেলায় ফাসীর বদলে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। এতে জনগনের মনে থাকা সরকার-জামাত গোপন আতাতের সন্দেহের আরো ঘনীভূত হয়। সেই আক্রোশ থেকেই শাহবাগ আন্দোলন। ৩য় রায় সাঈদীর বিপক্ষে। ২য় ও ৩য় রায়ের পার্থক্য:
-কাদের মোল্লার অভিযোগ ৫,৬ মিলিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। আর অভিযোগ ১,২,৩ এ ১৫ বছরের কারাদন্ড (রায় ১৩২তম পাতা)
-সাঈদীর ২০ অভিযোগের ২টায় সন্দেহাতীত প্রমানের ভিত্তিতে ফাসী। আর বাকি ৬টায় প্রমাণিত হইলেও কোন কারাদন্ড দেয়া হয় নাই।
এরমানে কাজ কমে গেল সাইদীর আইনজীবিদের। কেবল ২টা অভিযোগের বিপক্ষে আপিল করে বেকসুর খালাসের আবেদন জানানো হবে। সরকার ওই ৬টি প্রমাণিত অভিযোগের দন্ডাদেশের জন্য কোন আপিল করার কথা শোনা যায় নাই।
প্রসিকিউশনের দুর্বলতা নিয়ে দীর্র্ঘদিন আলোচনা চললেও এ ব্যাপারে শাহবাগ আন্দোলন দাবি জানিয়েও সরকারকে চাপ দিচ্ছে না। সাইদীর ১৩৪ জন সাক্ষীর মাত্র ২৮জন হাজির করতে পেরেছে ২০টি অভিযোগ প্রমান করতে। ফলাফল স্বরূপ ১২টি অভিযোগ প্রমান করতে পারে নি। এই ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা জারি থাকলে আগামীতে নিজামী, মুজাহিদ, গোলাম আজমের রায় পক্ষে নাও যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সরকারের প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে আন্দোলন হয় না। শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতে সেই বিশ্বাস জনমনে ছিল না। জামাত নিষিদ্ধকরনের দাবিতে সরকারের পিচ্ছল অবস্থান দেখে নতুন করে আস্থা তৈয়ার হবার সম্ভাবনাও দেখি না।
লেখাটি লিখেছেন বাঙ্গাল ভাই
শেয়ারিং এর প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন উপরের লিঙ্কে।