আওয়ামীলীগ না, বিএনপিও নয় কিংবা জামাত -শিবিরও নয়। এই এতগুলো মৃত্যুর জন্য দায়ী আসলে আমরা আরও সহজভাবে আমাদের সৃষ্ট প্রজন্ম চত্ত্বর। কি ধাক্কার মত খাচ্ছেন নাকি? ছাগুতে এমনিতেই দেশটা ভরে গেছে এর মধ্যে আবার একোন পাগল? আমারও মাঝে মাঝে নিজেকে তাই মনে হয়! যাই হোক একটা বানী দিয়ে দিলাম এখন নিশ্চই এর ব্যাখ্যা আশা করছেন, তাদেরকে পুরো লেখাটা শেষ করার জন্য অনুরোধ করছি। অন্ধত্ব খুব পীড়াদায়ক। কেন শুধু শুধু আমরা এই পীড়া নিচ্ছি। বন্ধুরা চোখটা খুলুন। নিজের এই ভালো চোখ দুটো বুজে থেকে কেন নিজেকে অন্ধ মনে করছেন? আপনি আমি মোটেই অন্ধ নই। আপনার মাথায় কেউ বন্দুক ধরে নেই, যে আপনাকে চোখ বন্ধ করে রাখতে বলেছে। তাও শিউর হয়ে বলি কি করে অদৃশ্য এক বন্দুক অবশ্য ধরা আছে আমাদের মাথার কাছে। রাজনীতি! এটাই সেই বন্দুক তা কত যুগ ধরে আমাদের মাথার কাছে বন্দুক ধরে বসে আছে তা আমরা নিজেরাও জানিনা। আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার কত কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করে বেঁচে থাকার অর্থ উপার্জন করে? আমার ধারনা এই সংখ্যা এখন কয়েককোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর কত কোটি পরোক্ষভাবে এর থেকে সুবিধা আদায় করে সে কথা না হয় বাদই দিলাম। এরফলে আমাদেরকে একটা দলের হতেই হয়, হয় আমরা আওয়ামীলীগ না হয় আমরা বিএনপি না হয় জামাত-শিবির, না হয় জাতীয় পার্টি। এর বাইরে আমরা যেতে পারিনা। যুদ্ধাপরাধীর বিচার এদেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এটা হতেই হবে। এটা কোন রাজনৈতিক হাতিয়ার নয় যে একদল এটা ব্যাবহার করার চেষ্টা করবে আর আরেকদল এতে বাধা দেবে। তো আমরা কি দেখলাম আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলো, এখন কোন কোন দল বলল যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসন করছেন। আরেকদল এটা যাতে না হতে পারে সেই ব্যাবস্থা করতে শুরু করলো। এখন কথা হচ্ছে এর মধ্যে আমাদের আমজনতার আবস্থান কোথায়? যেহেতু আমাদের মাথায় অদৃশ্য বন্দুক সেহেতু আমরা কয়েকজন গেলাম আওয়ামীলীগের সাথে, কয়েকজন গেলাম বিএনপির সাথে, কেউ রাস্তায় নেমে গেলাম বিসৃংখলা সৃষ্টি করতে! এর কোন এক পর্যায়ে জন্ম নিল শাহবাগ প্রজন্ম চত্ত্বর। চিৎকার করে উঠলাম আপন মনে। আমরা আমজনতা অদৃশ্য বন্দুক আবিষ্কার করে ফেলেছি। আমাদের চোখ খুলে গেছে। আমরা আমাদের চেতনাকে বিক্রি করে কেউকে রাজনীতি করতে দিবোনা! আমাদের আর ঠেকায় কে? তখনও আমাদের বোঝা হয়ে উঠেনি পিকচার আভি বাকি হ্যায় ম্যারে দোস্ত! যারা আমাদের এই প্রজন্মকে একত্রিত করতে সক্ষম হল তাদেরকে ছোট করে দেখার কোন কারন ছিলনা। তাই এই প্রজন্মের প্রতিটি ছেলে ছুটে চলল শাহবাগের উদ্দেশ্যে এক দাবি নিয়ে। এখান থেকেই আমাদের ভুলের শুরু হল! আমাদের দাবি যেখানে হওয়া উচিৎ ছিল সরকারকে আপিল করাতে বাধ্য করানো সেখানে আমরা চিৎকার করে বলতে শুরু করলাম ফাঁসি চাই বলে। মামলায় আসামীর ফাঁসি হবেনা না জামিন পাবে সেটা ঠিক করবেন জজ সাহেব আমি বা আমরা নই। তারপরেও আমি ভাবলাম একই কথা। ফাঁসি চাই মানেই হল সরকারকে আপিল করাতে বাধ্য করানো। আমি রয়ে গেলাম শাহবাগে(অবশ্যই ভার্চুয়ালি, আমি যেখানে আছি সেখান থেকে শাহবাগ উপস্থিত হওয়াটা আসলে আমার পক্ষে সম্ভব নয়)। ভাবলাম কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় ঘোষণা হয়েছে বিধায় কাদের মোল্লা ব্যাতীত অন্য কারও ছবি হয়তো শাহবাগে নেই। কিন্তু সময় যেতে শুরু করলো আমাদের ভুলের পরিমান আরও বাড়তে থাকলো। আমি দেখলাম সাঈদীর ছবি আসছে, সাকার ছবি আসছে, অন্য আরও অনেকের ছবি আসছে, এদের নামের বিরুদ্ধে একের পর এক শ্লোগান তৈরী হচ্ছে। আমি ভাবতে লাগলাম আর সব রাজাকার গেল কোথায়? আমি ভাবলাম তারাও আসবে। তারা আসলেন না। আসলেন তাদের বন্ধুরা। তাদের দেখে আমাদের মন বিগলিত হয়ে গেল। এরপরেই আমরা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুলটা করলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে আমাদের অবস্থান ভুলে গিয়ে তাদের হয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা শুরু করলাম। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি থেকে আমরা একরকম সরে আসলাম। আমাদের নতুন দাবি হয়ে গেল জামাত-শিবির নিষিদ্ধকরণ। এখানেও আমি শাহবাগে রয়ে গেলাম কিন্তু এখানেও স্ট্রাটিজিতে ভুল করে ফেললাম। যে পদ্ধতিতে এগিয়ে গেলে সেটা সম্ভব হত সেই পথে না হেঁটে আপনারা সরকারদলীয় মদদ পেয়ে যাওয়ায় আমরা গায়ের জোরে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলাম। ফল কি হল তা আমরা গত কয়েকদিনে দেখেছি। যদিও শাহবাগ থেকে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি বলে চিৎকার করে চলেছি আমরা হিংস্র না হয়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আর বসে থাকতে পারলাম না আমি শাগবাগ থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে বসে বসে শাহবাগ দেখছি আর অপেক্ষা করছি কখন শাহবাগ যাবো। আমাদের আরও বাস্তববাদী হবার দরকার ছিল। জামাত-শিবির এর মত একটা দলকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করা শুধু আওয়ামীলীগের পক্ষে কখনওই সম্ভব নয়। এখন আমার ভবিষ্যতবাণী অনেক কঠিন শোনালেও এটাই বাস্তব। এটা আপনারা নির্বিঘ্নে তখনই করতে পারতেন যখন অপর বিরোধীদলকে সরকারের সাথে একই টেবিলে বসাতে পারতেন। এজন্যই শাহবাগ প্রজন্ম চত্ত্বরে যোগ দেবার কয়েকদিনের মাথায় বলেছিলাম "আমরা বাংলার সময় বাংলা পরীক্ষা দেই, ইংরেজী পরীক্ষার সময় ইংরেজী পরীক্ষা দেই।" - Sorry to say but this is so fucken cheap philosophy. আরে ভাই এটা পরীক্ষা বটে কিন্তু এটা একটা ক্রাইসিস থেকে বের হবার পরীক্ষা। আমাদেরকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে অন্য সব বিষয়েও ভালো করতে হবে। অন্যথায় রেজাল্ট শীট-এ ফলাফল টাইপ হবে ফেল।" আমরা এখনও ফেল করেছি বলবোনা। দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা এখনো বাকি আছে ভাই। আর যেহেতু প্রথমপত্র আর দ্বিতীয়পত্র উভয় বিষয় মিলিয়ে পাশ করলেও আমাদের ফলাফল আসবে পাশ সেহেতু এখনো সময় আছে পাশ করার। এখন ফেল করলে এই তরতাজা প্রাণগুলোর দায়ভার আমাদের শাহবাগীদেরই নিতে হবে। আমি অন্ধ হতে চাই না। যে দাবি নিয়ে শাহবাগ গিয়েছিলাম সেই প্রাণের দাবি থেকেই বলছি সকলধরনের দলীয়করণ থেকে দূরে থেকে সকল রাজাকারদের বিচারের দাবি নিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। ফাঁসি হবে না তাদের প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মারা হবে না বেকুসুর খালাস পাবেন সে দ্বায়ভার জাজদের উপর ছেড়ে দিন। আর এই উদ্দেশ্য পূরণে আমাদের যেহেতু সর্বোচ্চ সাপোর্ট দরকার সেহেতু মঞ্চ থেকে সরকার ও বিরোধী দলকে কিভাবে একই মঞ্চে দাঁড় করানো যায় সেই দাবি নিয়ে কাজ করেন। তাহলে হয়তো আমার মত যারা যারা নিরাপদ দূরত্বে বসে শাহবাগ দেখছেন তারা বাড়ি যাবার পথে শাহবাগ হয়েই যাবেন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩০