মে-বি উন্নিশ বছর আগের কথা। ৭০০ টাকার কুরবানীর গরুর ভাগ নিয়া বহুত ঝাপাঝাপি করে ঘুমাইলাম রাইত আট্্টার দিকে। বেবাক লোক একসাথে দেশের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় বিছানায় জায়গা পাই নাই সে কথা স্পষ্ট মনে আছে। তাই খাডালে (মাটিতে) জায়গা পাইলাম। প্রায় এক কেজির কাছাকাছি গরু খেয়ে মাত্র ১৯/২০ কেজি ওজন নিয়া ঘুমাইলাম রাইত ৯র দিকে। ঘুম ভাঙ্গলে আমার টোটাল ওজন দাড়ায় এরাউন্ড থাআরটি। সাথে প্রচন্ড জ্বর ও লাইন ডাইরেক হওয়ায় দ্বিতীয় দিন ওজন দাড়ায় নিয়ার ফিফটিন। ঐ থেকে আমার গরু সেবন বন্ধ। এলার্জির ঝাআমেলা ঐ থেকেই বোধহয় শুউরু। একপর্যায়ে এরকম হলো, যেই বাটিতে গরুর গোস রাখা হতো সেটার ঘ্রানেও বমি আসতো। কাঁচা গরুর গোস হাতে ধরলেও এলার্জিতে গা ফুউলে যেত।
তখন আব্বার সাথে পাথরঘাটা থাকি। একবার জ্বিন হাজির করে আমাকে গরু কমপিটিবাল আইমিন গরু খাওয়ার যোগ্য করার চেস্টাও করা হইছিলো শুনছিলাম। ওই ওঝা আমাদের ভাআড়া করা বাড়ির টিনে জ্বিন নামিয়ে ট্রিটমেন্ট দিছিলেন, বাট কাম হয়নি। এরপর ধীরে ধীরে আমি বড় হইলাম আমার আশেপাশের গরুগুলাও স্বস্থ্যবান অথবা স্বাস্থ্যবতী হলো। বিভিন্ন ওকেশাআনে গরু জবাই হতো লেকিন আমি নিরন্ন! দিনে দিনে আমার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে খবড় পড়িল এ ছেলে গরু বিরোধী। খানিক আশচারযো যে, একমাত্র এলার্জিটা গরুতেই, অন্য কোথাও কোন ঝামেলা ছিলনা। ইলিশ, বেগুন দেধারছে মারলেও কিচ্্ছুনা। এভিল নামের একটা ট্যাবলেট খেতাম প্রায়ই। তো একবার কঅলেজ থেকে আমার প্রিয় বান্ধবীরা হসপিটালে যাচ্ছে দেখে বললাম, ‘‘আমি যাই তোগো লগো?’’ খাটো জনে বললো, আমরা রোকশানার বাসা হয়ে যাবো। তুইতো ওদিক যাবিনা।’’ বললাম সমস্যা নাই। আমি বাইরে দাড়ামুনে। গরুর মতো সুন্দর চোখ ওয়ালী রেশমী বললো, তুইতো পরশুও মেডিকেলে গেলি। এলার্জির ট্যাবলেট কয়দিন পরপর লাগে? আমি ঝামটা দিয়া কইলাম, তোগো প্রত্যেক মাসে মাসে আয়রন ট্যাবলেট লাগলে সমস্যা নাই, আমি এলার্জির ট্যাবলেট খাইলেই দোষ! ঐ ট্যাবলেটে তোরা কি পাইছো আমি দেইখা ছারমু। মাহফুজরে কইলাম, দোস্ত ল, মেডিকেলে গিয়া আমরাও আয়রণ ট্যাবলেট লমু।’’ আমার সুন্দরী বান্ধবীরা কেউ কেউ খুব হাসল, খুব প্রিয় জন আমার কাছে আইসা চুল ধরে জোরসে টান দিল। সে কথা ভুলিনি আছে মনে!
গরুর এলার্জিতে আমি বেশ আপ্যায়িত(!)ও হইতাম। আমার এক বান্ধবী ঈদ কুরবানীতে আমার জন্য দেশী মুরগী অথবা হাস ভুনা ভুনা করে রাখত। এখনো রাখে, তার জামাই খায়! নো প্রবেলম, পৃথীবির সব খাবার সব সময় সবার জন্য নয় মি আন্ডারস্ট্যান্ড।
যাইহোক, তারপরতো বিদেশ আসলাম। নরম্যাল বিদেশ হলে এক জিনিস বাট এটাতো ইউ....। তো ইউতে এসে প্রথম মাসে কোন ঝামেলা ছিলনা। দিন যায় দিন আসে, বালি ওড়ে বাতাসে বাতাসে! হঠাৎ এক বন্ধু ফোন দিয়া কয়, ভাই, এ নাআম্বারটা ল, ভাল না লাগলে ফোন টোন দিস। তোর যে চুলকানির সমস্যা আসে সে বিষয়ে ওনার সাথে আলাপ করিস! ভালো মেয়ে!
এরপর শুভ দিন দেখে তারে ফোন দেই, চুলকানির কথা বলি, সেও বলে। তার ইলিশ মাছে সমস্যা। এছাড়া কাপড়েও সমস্যা, কাপড় পড়তে পারেনা, মাইনি খাটি সুতির কাপড় ছাড়া পড়তে পারেনা। সেই আমাকে একদিন বলে, যান, ডাক্তার দেখিয়ে আসেন, যদিও এলার্জি একদম যায়না, তারপরও!
তারপর তার কথামতো আমিতো সকালে গিয়া আল-গারবিয়া হসপিটালে ঢুকলাম, তারপঅর আমার মেডিকেল ইনস্যুরেন্স কার্ডটা দিইলাম, আপায় বলল, ল্ইান মারেন। আমি রোগির লাইন লাইখা টয়লেটের লাইন মারলাম। হঠাৎ লয়লেটে বসে শুনি আপায় আমার নাম লইয়া চিৎকার পারতেছে। কোনমতে বেল্ট আটকায়ে বের হয়ে কই, ‘আমি আসছি আপা!’’ উনি বললেন, আগে কি কখনো দেখাইছেন? না দেখাইলে কার্ড গুলা দেন, রেজিস্ট্রেশন বাবদ পায়ত্রিশটা ডেরহাম দেন, আর মিনিট তিরিশে ওয়েট করেন। ১ ঘন্টা পর আর এক আপায় আবার ডাকলো, এবারও বললাম, ‘‘আমি আসছি আপা!’’ উনি জাআনতে চাইলো কি সমস্যা? বললাম, সমস্যা ইস্্কিনে!
হাল্্কা ইয়োলো রঙএর জামা পড়া এক দেশি ভাই আসলেএন, তিনি আমার নামের একখান ফাইলসহ আর ৫/৭ টা ফাইল নিয়া বলতেআছেন, উপরে চলেন, আমাআকে ফলো করেন! আমিও তাকে ফলো করে করে দোতলায় বসলাম। যখন দোতলায় বসি তঅখনো আমার মাথায় আসেনা ইসকিনের বাংলা অর্থ চর্ম! আমি টিভি দেখি দেখি হঠাৎ আর এক ভাই আমার ডাক পারলেন, তিনি বললেন, ভাউচার বিহিন তিরিশটি ডেরহাম দেন। দিলাম পরে আবার বসতে বলল এরপর চাইর ফিটওয়ালা এক এরাবিয়ান ডাকলেন, প্রেসার মাপলেন, উচ্চতা মাপলেন, তাপমাত্রা মাপলেএন! তারপর বল্লেন আবার গিয়া বসেন! যখন আমি দ্বিতীয় বার বসি তখনো মাথায় আসেনা ইসকিন মানেই চর্ম! এরপর ফাইনাল ডাক দিয়ে এক ফিলিপিনা বললেন, ভেত্রে রোগি আছে, হালকা ওয়েট করেন! আমি এদিক ওদিক তাকাইতে গিয়া ডাক্তারের নেমপ্লেটের নিচের লেখা দেখার লগে লগে হালকা আন্ধাইর্যা/ভিরমি খাইলাম! আমার মনে পড়ি যায় ইসকিনের অর্থ ‘‘চর্ম’’ আর চর্মের সাথে মেডিকেল সাইন্সে আর একটা শব্দ ওতোপোওরোতো ভাবে জরজড়িইতো। সাধারণত এই সমস্ত বেহায়া ডাক্তারের কাছে আসার আগে যে কিছু প্রি-ওয়ার্ক থাকে উহা স্টিল রিমেইনিং! তারপরও সাহস আমার এলার্জিতো খালি হাতে আর পিঠে! এরপর দরজা ফাক করে এক ক্যারেলা কালা আপা বেরহওয়ায় খানিক বিববোরোতো ঠেকলাম। উনাদের কি এখানে আসার কথা? মাথায় কোয়েশসেন রেখে গিয়ে সালাম দিয়ে বললাম, আমি কি বসপো স্যার? সে বসতে বলে বল্লো, কি সমস্যা? বললাম, ইস্কিইনে! উনি দেখতে চাইলে শার্টের হাতা টেনে বলি, এইযে লাল লাল! ওষধ দিলে যায় আবার ফিরে ফিরে আসে! বলল, আর কোথাও? বললাম, হে, শরীরের কথা বললাম। বলল, শার্ট উতরাও। উতরাইলাম, বলল আর কোথাও? জলদি জলদি বললাম, নো নো। ড্যাটস অল! বলল, প্যান্ট উতরাও! আমার চোউক তাউল্লায় উঠলো। বললাম, নো স্যার নো স্যার! ওনলি এখানে! উনি দরজাটা লক করে বলল, প্যান্ট উতরাও!
ওখান থেকে ৫ মিনিট পরের কথা।
আগেই জানতাম এ ইউ... তে জ্বর হইলেও যে ট্রিটমেন্ট, গৃহস্থের গরু চুরি হইলেও একই ট্রিটমেন্ট! শুধুই ইঙ্গুশন! ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পর এক ফিলি ম্যাম ডাক পারলেন, তার হাতে ইঙ্গুশন। আমি তার কাছে গিয়া হাত বটাবটি শুরু করছি দেইখা উনিও বললেন একই কথা! প্যান্ট উতরাও! তার কথার তিইবরো প্রতিবাদ করলাম মনে মনে! এসব কি? যে জাগা যাই প্যান্ট উতরাও! প্যান্ট উতরাও! তাইলে প্যান্ট পরার মাইনি কি! আফটার মি ইসপিকেন, ‘‘হোয়াই মি প্যান্ট ওপেনিং? মাই হ্যান্ড ইঙ্গুশন পাসিবল!’’ সে আমার কথার ধারধারি না করে নিজ উদ্যোগে পাছা বরাবর আব্রুগুলো হালকা উতরিয়ে একখান গরুর লাহান ইঙ্গুশন টিপি দিলেন!
এভাবেই শেষ হলো আমার প্রথম ভিজিট টু ইউ... আল গারবিয়া হসপিটাল!