somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যার, চিঠিটা মাথার পাশেই রাখলাম, ঘুম ভাঙ্গলে একটু পড়ে নিতেন যদি!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় হুমায়ুন স্যার,
সালাম ও শ্রদ্ধা নিয়েন। আমি জানিনা আপনি কেমন আছেন। তবে কোনভাবেই মনে হয়না আপনি ভালো আছেন; থাকার কথাও না স্যার। আপনি যেখানে ঘুমানো তার থেকে দূরে, অথবা কিছু দুরে, আপনার শহরেই গেল সপ্তাহে একজনকে হাটবারের কেজি দরে বিক্রি করা গরুর সিনার মাংসের মত কুপিয়ে মারা হয়েছে। বিশ্বাস হয় স্যার? আপনি ফুটেজ দেখতে চান? খোদার কসম স্যার! আমাদের টিভিতে জিরজির ছবি হওয়ায় ওর শার্টের রং বোঝা যায়নি। অফিস থেকে এসেই টিভি দেখাতো’ প্রথমে মনে হলো সবুজ শার্ট, তার উপর লাল রক্ত। ঐ যে অনেক বছর আগে বছর বছর বেঁচে থাকার আশায়, আপনাদের সুখে বাচিয়ে রাখার আশায় লক্ষ লক্ষ লোক বোকার মত মরে গিয়ে একটা কেমন রংয়ের কাপড় দিয়ে গিয়েছিল না, ওরকম। আমিতো ওটাকে স্বাধীনতাই জানতাম, হঠাৎ ক্যালেন্ডার দেখে মনে হলো ডিসেম্বর মাসে এ কাপড়তো ওমন করে গড়িয়ে পরে নষ্ট হওয়ার কথা না! তাই ভাবলাম, ওর শার্টটা বোধহয় সবুজ ছিলনা। জিরজির করা টিভির কারনে হয়তো রং পাল্টে এমন হয়েছে।

স্যার একটা সত্যি কথা জিজ্ঞেস করি? রাগ করবেন না বলেন? ঐ যে আপনার জোৎ¯œা জননীর গল্পর কালই ভালো ছিলনা? যারা খারাপ, তারা খারাপ, যারা ভালো তারা ভালো, কত সুন্দর। যারা বারুদ বানায় তারাই মানুষ মারে, যারা ভাষনে গুলি করার কথা বলে তারাই গুলি করে, কথায় দুনম্বরি নেই। স্যার, জোৎ¯œা জননীর কালে বিশ্বজিত মারা গেলে আমাদের কষ্ট ছিলনা, ওরও কস্ট ছিলনা স্যার। ও দোকান বন্ধের আগেই মাকে ফোন করতো, মা, নানুর পান বাটুনির ছিচুনি আমিই ভাঙ্গছি, নানুরে বলেন যেন সে বদদোয়া তুলে নেয়। বাবাকে বলতো, ‘‘আব্বা, আপনের পকেট থেকে অনেক সময় না বলে টাকা নিয়েছে, মাফ করে দিয়েন। ছোট বোনকে বলতো, খবরদার বাইরে বের হবিনা, মুক্তি আসলে মোচড়া ভর্তা খাওয়াবি, হালকা ধুনে পাতা দিবি, খাবার শেষে হাত মুছতে ট্রাংকের সাদা তোয়ালেটা দিবি, খেয়াল রাখবি কোন ধরনের অমর্যাদা না হয় যেন। যদি প্রিয় কেউ থাকতো বলতো, ‘ আসমানী, ফের যদি দেখা না হয় মান করে ভাত না খেয়া থাকিস না, অল্প জ্বরেই নাপা খাবিনা কোনদিন, মনে থাকবে? ’’। মানে স্যার, পথে মরে গেলেও কথা শেষ করে মরতে পারতো। কে জানতো স্যার আমাদের অভিভাবকরা এই বিজয়ের মাসেও বিশ্বজিতকে নিয়ে দুনম্বরি করবে, কথা শেষ করতে দিবেনা! ভাষনে অল্প দামে বাসের টিকেট কিনে বাড়ি পাঠাবার কথা বলে কাঠের ওমন শক্ত বাক্সে ভরে বাড়ি পাঠাবে! আপনি আমাদেরকে দেখাশোনার জন্য যাদের রেখে গেছেন তারা ভালো না স্যার, একটুও ভালোনা, দুনিয়ার শয়তান!


স্যার, পারলে বলেনতো আমি এসব কোথায় বসে লিখছি? আমি কোথায় আছি, কী সাফ করি এখন?

আপনারে জানানো হয়নি আমি বিদেশে আসছি স্যার। উনারা আমাকে খাওয়াবেনা বলে এখানে চলে আসছি। কস্ট লাগে কিসে জানেন স্যার? দেশতো বাপই, না স্যার? বাপ যখন হইছো ছেলেরে মোটা পারস চিকন পারস দুইটা ভাততো দিবি, কাপড় দিবি, থাকনের একটা জায়গা দিবি, এটাতো দায়িত্বরে বাপ তোর! আপনের দেশ কি করছে শোনেন স্যার, খাবার দিবেনা দিবেইনা, একটু ভালো ব্যবহার পর্যন্ত করে নাই। তোর দেশে তুই রাখবিনা ওকে, বিদেশে পাঠানোর কালে একটু হেল্পতো করতে পারোস। ওরা কি করছে বলবো স্যার? শুনলেতো মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনের! পশ্চিম ধারের যে দুই বিঘা জমিতে আব্বা ধান দিতেন ঐ টা নিছে, জিতু মনির জন্য একটা দুধ ওয়ালা গরু কিনছিলামনা, ঐটা নিছে, রাসেলের দু চাক্কার সাইকেলটা পর্যন্ত নিছে। বেইমানের বেইমান স্যার, বলছে, ১ ডলার বেতন দিবে, এখন দেয় ৬০ সেন্ট। দুনিয়ার মিথ্যুক স্যার, হারামির হারামি, আস্তা হারামি স্যার।

এতকিছুর পর আমাকে এখানে এনে কি করায় জানেন স্যার? বিদেশিরা প্রেসসাব পায়খানা করে, আমারে দিয়ে সাফ করায়। কিছু করার নাই দেখে চুপচাপ গান গাই আর সাফ করি। গাই ‘‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার .... এরপর আর গাইনা। ওইটা কত সুন্দর একটা শব্দ! ওটাকে বাংলার সাথে মিশিয়ে নস্ট করে লাভ কি? মিথ্যে মিথ্যে ওটাকে টানাহেচরার কি দরকার! চুপচাপ গু সাফ করি, চোখে পানি আসলে পরিস্কার চকচকা বেসিনে গিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলি। বিশ্বাস করেন, এখানে কোন বেইমানি নেই স্যার, ওরা খাওয়াবার কথা বলে ঠিক ঠাক খাওয়ায়, ঘুমের জন্য কম্বল দেয়, সাদা চাদর দেয়, বালিশ দেয়। আপনার কি বালিশ লাগবে স্যার?



মন খুব খারাপ স্যার। তারউপর সারাদিন কাজ করার পর চোখ ভাইঙ্গা ঘুম আসছে স্যার। ফজরের আগে আগে অফিসে যেতে হবে। তাই আর বেশি কিছু লিখবোনা। একটা কথা স্যার, বিশ্বজিত আমার বয়সীতো, তাই ওর মৃত্যুতে খুব কস্ট পাইছি। এজন্য রাগে কস্টে আপনার সাথে হয়তো দু একটা বেয়াদোবি কথাও বলছি, অভিভাবকদের নিয়ে ফায়েসা কথা বলছি। অন্যায় হলে মাফ করে দিয়েন। আমার প্রতি কোনরকম কস্ট রাখবেন না স্যার।

ইতি
অনির্বাণ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫২
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×