somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী এবং আমার দীর্ঘ নিকটির কারণ

১৭ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৬ এর আগষ্টের কোন একদিন হবে হয়ত, অন্যান্য যেকোন দিনের মতোই আমি প্রচন্ড মাথাব্যাথা নিয়ে ঘুম ছেড়ে উঠলাম। ফোনটা রিসিভ করলাম। কল দিয়েছে বন্ধু সাব্বির, চমৎকার ছেলে একজন; ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্যের অনেক মুভমেন্টেই জড়িত থাকে, লিটল ম্যাগে লেখা ছাপায় প্রায়ই। আমাদের যারা একটু আধটু লেখালেখি শুরু করেছি ওকে খানিক এড়িয়ে যাই, এতটা সিরিয়াসলি নেয়া কঠিন।

"হ্যালো?"
"কি রে, ঘুমাচ্ছিস?"
"ক্যানো?"
"যাবি না জানাযায়......"

আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকি। বললাম,
"না", কেটে দিলাম কলটা এরপর। ফাঁকা ফ্ল্যাটে বসে থাকি একা, মন প্রচন্ড খারাপ। সিগারেট ধরিয়ে আপনমনে ভাবলাম, সাব্বিরের দোষ নেই। না বলব এটা ভাবে নাই সে একেবারেই। আমার প্রিয় কবির জানাযা আজ, আমি যাবো না এটা ভাবা ওর জন্যে বেশ কঠিন।

আজকে চারবছর ঘুরে এলো তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৭ই আগষ্ট। মনে পড়ায় দ্রুত লিখে ফেলছি এই পোষ্ট...


ইনাকে চিনেছিলাম ছোটবেলায়, ঘুণে ধরা বুকশেলফের কোনায়, "রাজনৈতিক কবিতার সংকলন" কিংবা "দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে" দিয়ে। তখনও বাবা মায়ের তরুণ জীবনের খানিক চিহ্ন খুঁজে পেতাম সেসব আশির দশকের কবিতার বইগুলোতে। তাঁরা বাধা দেননি কখনো কবিতা পড়তে। প্রচন্ড প্রভাবিত হয়েছিলাম তখন, ৭১ খুব বেশি পরিচিত নয়, ৫২ এর চেতনা মগজে গেঁড়ে বসেনি ঠিকমত বয়েসের কারণে, স্বৈরাচার কি বুঝতামও না। তারপরও "উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ" কিংবা "মেষরে মেষ, তুই আছিস বেশ..." নাড়া দিয়েছিলো খানিক।

কৈশোরের শুরুতে পরিচিত হয়েছিলাম "বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা" কিংবা "স্বাধীনতা তুমি"-র সাথে। চমৎকার পরিচয় ছিল সেটা। "ইকারুসের আকাশ" কিংবা "বন্দী শিবির থেকে" ওলটপালট করে দিয়েছিল অনেক কিছুই। কবিতাগুলো কেনো জানি সহজ পেতাম, ধারালো পেতাম, অলংকরণের আধিক্যে জর্জরিত হই নি। একিলিসের গোড়ালী প্রথম চিনেছিলাম একটা কবিতাতে, মজার তাই না! কিংবা কবিদের দুঃখ দিতে নেই...

দুঃখ দিলে কবিরা হাওয়ায় হাওয়ায় নীলিমায় গেঁথে দেবে দুঃখের অক্ষর। কবি প্রজাতিটাকে কাছ থেকে দেখবার ইচ্ছে জেগেছিলো অনেক তখন। নাগরিক কবি, উনাকে দেখতাম নাগরিক কবি বলে সবাই। নগরে বাস করে আপন করে নিয়েছিলেন শহটাকে ভালোভাবেই, লেখায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠত সেসব।
ভালো লেগেছিলো "এক ফোঁটা কেমন অনল "

এযুগের একজন তরুণ হয়ে শামসুর রাহমান প্রিয় কবি বলাটা জানিনা কতটুকু স্মার্ট। জীবনানন্দ বললে মানাতো হয়ত,
এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
"কবিতা আমার জীবনের একটা প্রধান জিনিস। খারাপ লিখি ভালো লিখি আমি কবিতা পড়তে ভালোবাসি, অন্যদের কবিতা পড়ি, যে কালকে লিখছে তারও কবিতা পড়ি, পেলে আর কি। কবিতাকে ভালোবাসি।"

একারণে আমিও এখন ভালোবাসি কাব্য, ভালো না লাগলেও ভালোবাসি, এমনকী না বুঝলেও। এখনো আমাদের চশমা আঁটা উত্তরাধুনিকেরা পিছু ছাড়েন নি তাঁর। তাঁর লেখালেখির গুরত্ব নিয়ে কাঁটাছেড়া চলে অনেক। ৭১ এ যুদ্ধে যাননি কেনো এ প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। আমরা সাধারণ পাঠকেরা সেসব রাজকীয় হংসকূলের কেউ নই, উনার কবিতা পড়েছি, ভালো লেগেছে।
ব্যাস, এটুকুই। হয়তো নব্বইয়ের পরে কবি খানিক ধারগুলো হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাতে কি! স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লিখে গেছেন পুরোটা সময়। কতটা সময় ধরে তাঁর কবিতাগুলো প্রতিনিধিত্ব করেছে বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের!

সাহিত্যবোদ্ধারা ছিদ্রান্বেষ করতে থাকুন, ৭১-বিরোধী চেতনা ধারণকারীরা "নির্ধার্মিক" দোষে তাঁকে অশ্রদ্ধা জানাতে থাকো... কিন্তু আমরা সাধারণেরা তাঁকে ভালোবেসে যাবো, তাঁর কবিতা পড়ে যাবো। আমরা সহজ এবং সুন্দরে বিশ্বাস করে যাবো। মৃদুভাষী এই কবি প্রিয় থাকবেন সবসময়...


অনেকবার প্রশ্ন শুনেছি আমার সংক্ষিপ্ত ব্লগিংকালে, "এই নিকে লিখবার কারণ কি?" কিংবা শুনেছি "নিকটা খুব অদ্ভুত!" জবাবও দিয়েছি কয়েকবার, নিকটা প্রিয় কবির একটা কবিতার নাম।


সত্যি বলতে কি, পরিচয় নেই কিংবা খুব বেশি ইচ্ছে নেই দেখার, আধপোড়া চাঁদ, সোনালী শুরুয়ায় ভাসা একটুকরো মাছ, চাঁদকপালী গরু কিংবা বেতের মতোন টানটান যুবতীর শরীর। গলা ফাটিয়ে কারো চোখে আঙুল দিয়ে সত্য দেখানোর প্রত্যয়ও নেই আমার। হাজার হলেও আমি এই অকৃতজ্ঞ প্রজন্মের একজন। কৈশোরেই চেতনা পিচের রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে মারা গেছে, এখন রক্তমাংসের কংকালে সময়যাপন করে যাচ্ছি নির্বোধের মত। কতছর হবে কোন কবিতার বই খুলে দেখিনি? অশুভশক্তিরা বৃষভকন্ঠে চেঁচায়ে গেলেও কানে তুলো গুঁজে নির্বিবাদী থেকেছি?


তারপরও ১০মাস ২ হপ্তা আগে যখন সামহোয়্যারইন ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করছিলাম, "বাংলায় আপনার নাম"-ঘরটাতে লেখবার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই কীবোর্ডে টাইপ করেছিলাম,

"আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:০৭
৬২টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×