উদ্যানের সবুজ আঁচলে টলটলে ভালোবাসারা লুটোপুটি খেলে। কী দুপুরের ফর্সা রোদে সেগুন আর পাম গাছের কোলে- ছাঁয়ায়; কী ক্লান্ত গোধূলি শেষে নিয়নের অস্পষ্ট মৃদু আলো আঁধারে। ভালোবাসায় ক্লান্তি নেই। প্রায়ই আমার নিঃসঙ্গ ক্লান্তিরা মিশে যায় ঐ সব উদ্যানের সবুজ ঘাসে আর ধূসর দিগন্তে। মাঝে মাঝে বহু দিনের চেনা স্বরেরমত ঝাপসা কন্ঠ কিংবা হাসি বেজে ওঠে। তাতে যে কোনো প্রেমিক অথবা প্রেমিকার সুখ মিশে থাকে।ফিসফিস শব্দরা আমার চারপাশে নাচতে থাকে। কিন্তু এসব প্রেম বা ভালোবাসা,তা যাই হোক না কেনো সে প্রসঙ্গের বদলে একজন ফুল কুমারীর বিখ্যাত হয়ে ওঠার ব্যাপারটিই আমার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে।
তমাল আমার একজন ভালো বন্ধু এবং সে প্রেমিকও বটে। সোহরাওয়ার্দী, কলাবাগান কিংবা জিয়া উদ্যানের প্রতিটা ঘাসের সাথেই তার সখ্যতা। যদিও প্রকৃতি প্রেমী বলে তার কোনো শত্রুও তার নারীপ্রেম সত্ত্বাকে হালকা করবে না! অনেক প্রেমিকেরমত তমালের প্রেমিকার সংখ্যাও ডিজিটাল যন্ত্র ছাড়া হঠাৎ ম্যানুয়ালি বলা ঝুকিপূর্ণ। তো একদিন সেই বন্ধুর সাথে কোনো এক উদ্যানে অনাকাংখিত মূহুর্তে বোহেমিয়ান আমি মুখোমুখি হয়ে পড়লাম। দূর থেকে কপালের চামড়া কুঁচকে প্রশ্ন আর উত্তরের বিনিময় হয়ে গেলো। চোখে পড়লো একজন ফুলওয়ালীর ঘ্যানর ঘ্যানর, মামা দুইডি গোলাপ লন, বেশি ট্যাহা দিয়া লাগবো না।
কিছু সময় খরচ করে ব্যর্থ ফুলওয়ালী অন্য যুগলের সামনে জীবীকার মন্ত্র পাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার ফুল কেনার ভীষণ ইচ্ছে হলেও ফুলওয়ালী আমাকে পাত্তা দিলো না। খানিক পরে ডাকলাম। আমি ফুল কিনবো এমন কথা শুনে কপালে ঢেউ তুললো সে। যদিও কপালের সে ভাঁজ বেশিক্ষণ টেকেনি। নাম না জানা ফুলকুমারীর অনেক তাড়া। পেট আর তিন বছরের ছেলে শুক্কুরের ভাবনা তাকে তাড়িত করে। কথায় কথায় জানা হয়- এমনও দিন আছে সকালে কোনো এক প্রেমিক মামা বা আপা কোনো একজনের হাত ধরে আসে। আবার বিকেলেই অন্যের বুকে দেখা যায় সেইমামা কিংবা আপাকে। ফুল কুমারীকে এরা সবাই চেনে। যেমনটা ফুলকুমারীও। কিন্তু সেই চেনাটা কখনো প্রকাশ পায় না। ফুল কুমারীর খুব ইচ্ছে করে কোনো একদিন বলেই ফেলতে- 'মামা কিংবা আপা যার লগে সক্কালে আইছিলেন হেইই বেশি সুন্দর আছিল।'
ইচ্ছেরা ফুলকুমারীর বুকের ভেতর পাক খেতে খেতে জীবন আর জীবিকার ভাবনায় হারিয়ে যায়। কে বা কারা ,কার হাত ধরে আসছে এসব ফুলকুমারীর কাছে একেবারেই নগন্য। সে প্রত্যাশা বোনে উদ্যানে নতুন জুটি আসুক আর তার ফুল বিক্রি হোক। কেননা পুরনোরা ফুল কিনতে চায় না। শুক্কুরের কান্নার আওয়াজ আর ক্ষুধা তাকে মহত করে দেয়! ফুলকুমারীর মনে পড়ে শুক্কুরের বাপের কথা। সেও যে কোনো এক অজানা দুপুরে হাত বদলে ফেলেছিল!