somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে বিচার করবে! একদিকে ঘূর্ণিঝড় অন্যদিকে গ্রামীণফোনের বিতলামী

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যালা দিন এই ব্লগে লগইন করা হয় না। কিন্তু মুকুল ভাইয়ের `গ্রামীণ ফোনের এসব ফাজলামির মানে কি??? আমরা আছি ঘূর্ণিঝড়ের বিপদের মুখোমুখি আর তারা পাঠায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ উপভোগের আমন্ত্রণ' পোস্টখানা দেখে আর দম রাখতে পারলাম না।
গ্রামীণ ফোনের কার্যকলাপ ইতোমধ্যে অনেক কাহিনীর জন্ম দিয়েছে। একবার দেখলাম গ্রামের গরিব মানুষের ক্ষমতায়ন করেছ-এ কথা বলে জিএসএম থেকে পুরঙ্কার ভাগিয়েছে। লোকে বলে গ্রামীণ ফোনের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বেশি খেচখেছ করবে না - এ শর্তে ড. ইউনুস নোবেল পেয়েছেন। সে যাই হোক ইতোমধ্যে জিপি তার গ্রাহকদের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক রক্ষা করেছ, কত টাকা কামাই করছে, কত টাকা সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে, কতটাকা নরওয়েতে নিয়ে যাচ্ছে- এসব নিয়ে আমাদের কথা বলা দরকার। আমরা মানে পত্রিকাওয়ালা, চ্যানেলওয়ালা, দাতা গোষ্টি, এনজিও নয়। আমরা মানে আমজনতা-যারা জিপির সেবা গ্রহণ করি এবং মুনাফা'য় যোগান দেই। আমরা উর্পযুক্ত বিষয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার।

লেখাটি লিখতে লিখতে আমার নিজের ফোনেই একই এসএমএস পেলাম। কপাল আমার!

মুকুল যে প্রশ্নটি তুলেছেন তা খুবই প্রাসিঙ্গক। আমরা এখন কী আশা করছি, বিশেষত উপকূলের মানুষ? এ মাত্র সাতক্ষীরা থেকে মোহনের মেইল পেলাম। মোহন প্রার্থনা করতে বলেছে তার এলাকার মানুষরা যেন `হারিকেন'র ধকল সইতে পারে। কাল সকালে যেন মানুষ প্রকৃতি দেখতে পায়; কারো লাশ দেখতে না হয়। এটা একজন মাত্র মোহনের মেইল। তার সাথে ১০ জন/ ২০ জন কিংবা ৩০/৫০ অথবা ১০০ জন সম্পৃক্ত। এদের সাথে মোহনের কোন শর্ত নেই কিংবা মুনাফা আয় রোজগারের বিষয়। তবুও তার এতটা উৎকন্ঠা।
কিন্তু গ্রামীণ ফোনের সাথে ১০ কিংবা ১০০ জন নয়; সারা দেশ সম্পৃক্ত। তাদের বিজ্ঞাপন মতে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি (?)। আমরা এ কোটি মানুষ তাদের মুনাফার যোগানদাতা। আমাদের পকেটের টাকা তাদের ব্যাংকে জমা হয়। এই যদি আমাদের সম্পর্ক হয় তাহলে গ্রামীণ ফোন আমাদের এ দুর্যোগে আমাদের জন্য আসলেই কী করছে?

মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কিভাবে জনগণের উপকার করা যায় তার প্রমাণ সারা দুনিয়াতে আছে। আর কত খারাপ করা যায় তার প্রমাণও আছে- তবে তার বেশিরভাই বাংলাদেশে। ইয়ারা, অস্ত্র, খুন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন- এসবের পেছনে সহায়ক শক্তি এ সেল ফোন। মাশাল্লাহ জিপির `ডিজুস' প‌্যাকেজের তো আর কথাই নাই। প্রায় একটি জেনারেশন তারা শেষই করেছেন। এটা অবাক হবার বিষয় হবে না, যদি আমরা শুনতে পাই বিনা পয়সায়/ কম দামে কথা বলার জন্য ছেলেরা রাতে ইয়ারা খেয়ে জেগে থাকত।

আসলেই এ কথায় সূত্র সন্ধান করা উচিত আমাদের। এবং প্রমাণ সাপেক্ষে মামলাও করা দরকার।

ফিলিপাইনে জনগণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন তৈরিতে মোবাইলের ফোনের কেরামতি ছিল সব'চে বেশি। ঔখানে এসএমএসের মূল্য নামমাত্র। কোম্পানিগুলো এসএমএসের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ স্পিকারের অফিস ঘেরাও করে তা পর্যন্ত করতে দেয়নি। আর আমাদের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলান আমাদের পারলে শাসন করে। লাল-সবুজ মাত্রা তাদের একটি লোগো ছিল-ইউনুস মিয়ার পছন্দের। টেলিনরের বাচ্ছারা তা পর্যন্ত বদল করেছে কিন্তু ইউনুস মিয়ারে একবার জিজ্ঞাসিনি।
ইন্ডিয়াতে বর্তমানে `রিয়েল টাইম সুনামি এল্যাট'র ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ প্রতি সেকেন্ডে সুনামি সংক্রান্ত তথ্যাদি পাবে। এবং এ রকমভাবে একটি সেবা দেয়া আমাদের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর জন্য কোন বিষয়ই ছিল না।

কিন্তু না। তারা তা করেনি। কখনো করেনি। করে না।

আমাদের দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া নেবার ক্ষেত্রে এখন নাগাদ কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানুষনির্ভর মুখে মুখে তথ্য প্রেরণ ব্যবস্থা। টিভি রেডিও থাকলেও তা বিপদের সময় ঠিকমত তথ্য দেয় না এবং তা রিয়েল টাইম তথ্য নয়। আবার পিকুলিয়ার ব্যাপার দেখলাম আজ বিটিভি'তে, তারা টর্নেডো উপলক্ষে হাম-নাতের আসর জমিয়েছে। মানুষ কী করবে কী প্রস্তুতি নিবে তা কোন কথা নাই- উল্টা মানুষের মনের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে। ভাবখানা এমন- আল্লাহ'র মাল আল্লাহ'য় নিবে; সমস্যা কী?

দীর্ঘদিন থেকে আমরা বলে আসছি এ সমস্যা নিরসনে কমিউনিটি রেডিও চালু করতে। কিন্তু সরকার এ কথা কানেও তোলে না। তাদের আবার ভয়; পাছে কমিউনিটি রেডিও ব্যবহার করে কেউ যদি তাদের স্বাধীনতা দাবি করে বসে! তাই তারা কমিউনিটি রেডিও লাইসেন্স দিচ্ছেন না।

এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কম্পানিগুলান এগিয়ে আসতে পারতো। তারা জানে বিপদশঙ্কুল ১৫টি উপকূলীয় জেলা তাদের কতটি টাওয়ার আছে এবং এ টাওয়ারগুলোর আওতায় কতগুলো কানেকশান আছে। প্রতিটি কোম্পানি যদি উক্ত কানেকশানগুলোতে এসএমএস দিয়ে এ বিপদের তথ্য দিতো তাহলে মানুষ সহজে এ বিষয়ে তথ্য পেত এবং প্রস্তুতি নিতে ও জানাতে সহজ হতো। একই সাথে মানুষ প্রস্তুতি নিতে কোথায় কী সমস্যায় রয়েছে তা জানানোর জন্য তারা `শর্টকোড' যেমন, ৩৪৫ দিয়ে একটি হটলাইন শুরু করতে পারতো কিন্তু তারা কেউ তা করেনি।
গ্রামীণ ফোন তাদের সিএসআর `কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সসিবিলিটি' থেকে নানা কাজের পিরিস্তি দেয়। গ্রামে গ্রামে উদ্যোক্তা তৈরি এ তথ্যসেবা নামে তারা সাইবার ক্যাফে `সিআইসি' তৈরি করছে। `সিআইসি' হোক-আমরাও তা চাই কিন্তু তা গরিব মানুষের কতখানি উপকারে লাগে তা দেখতে হবে।

আমরা চাপ তৈরি করা দরকার
১. জাতীয় দুর্যোগের সময় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যেন বিনামূল্যে তথ্যসেবা নিশ্চিত করে; এটি ভয়েস কিংবা এসএমএস যাই হোক না কেন!
২. একই সাথে দুর্যোগকালীন সময়ে `শর্টকোড' কিংবা লংকোড হটলাইন চালু করা!
৩. বিপদ সংক্রান্তু এসএসএস সমূহ বাংলা ভাষায় দেওয়া; যেন মানুষ সহজে বুঝতে পারে। প্রয়োজনে তা ইমেজ আকারে দেওয়া!
৪. দুর্যোগপ্রবল এলাকায় `ইনফো সেন্টার তৈরি করা বা তৈরিতে সহায়তা করা;
৫. মোবাইলের কলরেট কমানো
৬. মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর সিএসআর নিশ্চিত করা এজন্য প্রয়োজনে পাবলিক হেয়ারিং করা এবং সোশ্যাল অডিট পরিচালনা করা;
৭. গ্রামীণ ফোনের মুনাফা সাথে সম্পৃক্ত এসএমএস দেয়া বন্ধ করা; যদি এ জাতীয় এসএমএস দিতে হয় তাহলে এ জন্য গ্রাহকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। (ভোদা ফোন তার গ্রাহকদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন পাঠায়, এ জন্য গ্রাহকের সাথে কম্পানি চুক্তি থাকে এবং কম্পানি তার জন্য গ্রাহককে টাকা দিতে হয়।

এ মাত্র বিডি নিউজে দেখলাম,
`অন্য কোনো মোবাইল অপারেটরকে কিনে নিতে পারে গ্রামীণ ফোন'; যদি সত্যি এ ধরণের কোন বিষয় শেষ নাগাদ ঘটে তাহলে তা বাজারের পরিবেশকে যেমন নোংরা করবে একই সাথে তাদের মনোপলি ব্যবসার সুযোগ আমাদের বেশি বেশি ঠকাবে। তাই ফোন কম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য এদের আরো জোরশোর চাপ দিতে হবে। কম্পানিগুলোতে মানুষের প্রতিনিধিত্ব তৈরি হলে এদের স্বেচ্ছাচারিতা কমবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×