somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানা ভুলা ভুত (পর্ব ২)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

চলতে চলতে একসময় বিলের উত্তর পার্শ্বে চলে এলাম। এখানে এসে রাস্তাটি শেষ হয়ে গেল। রাস্তার আর কোন চিহ্ন নেই। আমি দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম। রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। কোন দিকে যাবো বুঝতে পারছি না ? উত্তর দিকে তাকাতেই দেখি আমার ঠিক এক শ’ গজ সামনে একটি লোকের মত দেখা যায়। সে উত্তর দিকে যাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো আমার মতই কোন যাত্রী স্টীমার থেকে নেমে বাড়ি যাচ্ছে। আমি তাকে অনুসরণ করে উত্তর দিকে ক্ষেতের ভিতর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। অনেক ক্ষণ হাঁটার পরও কোন রাস্তার সন্ধান পেলাম না। মনের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিল। স্টীমার ঘাট থেকে এতো রাস্তা তো কোনদিন হাঁটি নাই? এরকম মাঠের ভিতরও তো কোন দিন হাঁটতে হয় নাই? আমি কি রাস্তা ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে এসেছি? ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে দাঁড়িয়ে গেলাম। উত্তর দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে সামনে যে লোকটি হাঁটতে ছিল তাকেও দেখা যায় না। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘরও নাই। হঠাৎ করে লোকটি উধাও হয়ে গেল কোথায়? মনের মধ্যে ভীতিভাব চলে এলো। চোর ডাকাত হবে নাকি! ফাঁকা জায়গায় একা পেয়ে আবার না আমার ব্যাগ, টাকা-পয়সা ছিনতাই করে নেয়। ব্যাগ টাকা পয়সা নিলেও সমস্যা নাই যদি খুন করে ফেলে তখন তো এই পাথারে চিল্লালেও কেউ এগিয়ে আসবে না। ইত্যাদি চিন্তায় ভিতু হয়ে গেলাম।

চাঁদ তখনও আকাশে আছে। কিন্তু রাস্তার কোন কিনারা পাচ্ছি না। চাষ করা ক্ষেতের মাঝে বসে পড়লাম। নিচু হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। কিন্তু চাঁদনী রাতে যতদুর দৃষ্টি যায় তার ভিতরে কোন লোকই দেখতে পেলাম না। আবছা আবছা কিছু বাড়ি দেখা যায় সেগুলো অনেক দূরে। সারা রাত হেঁটে হেঁটে অনেক ক্লান্ত হওয়ায় ঘাড় থেকে ব্যাগ নামিয়ে মাটিতে রেখে দিলাম। ক্ষেতের আইলের উপর বসে সিদ্ধান্ত নিলাম বেলা না উঠা পর্যন্ত আর হাঁটবো না।

এভাবে প্রায় এক ঘন্টা বসে থাকার পর উত্তর দিক থেকে মানুষের কথার আওয়াজ পেলাম। নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখি একজন লোক দু’টি গরু নিয়ে আসছে। লোকটি গরু নিয়ে কাছাকাছি আসতেই বসা অবস্থায় জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এটা কোন জায়গা?
লোকটি আমার কথা শুনে মনে হলো কিছুটা ভয় পেয়েছে। গরুসহ থমকে দাঁড়িয়ে গেল। ধরা গলায় বলল, আ-আ- আপনি কে?
আমি বললাম, আমি ভাই, এটা কোন জায়গা ?
লোকটা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, এ - - টা নী - ল কু - ঠি - র বি - - ল, বলেই বলল, আপনি এ--খানে কেন?
আমি বললাম, পথ ভুল করে এসেছি। বলেই ব্যাগ ঘারে নিয়ে যেই দাঁড়িয়েছি অমনি লোকটি ঘাড় থেকে লাঙল জোয়াল ঠাস করে মাটিতে ফেলে দিয়ে, দুই বার আ্যাঁ আ্যাঁ করেই আঁউ আঁউ করতে করতে গরু রেখেই পূর্ব দিকে দৌড় দিল। ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আমিও কোন কিছু বুঝে উটতে না পেরে ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে দৌড় দিলাম। কিছু দূর যেতে না যেতেই আইলের সাথে হোচট খেয়ে উল্টে পড়ে গেলাম। আমার ঘাড় থেকে ব্যাগ দশ হাত দূরে ছিটকে পড়ে গেল। চাষ করা ক্ষেতের ভিতর উপর হয়ে পরে যাওয়ায় সারা শরীর ধুলোবালিতে মাখিয়ে গেলাম। ধুলোবালি মাখানো অবস্থায় পড়া থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে দেখি ব্যাগের ফিতা ছিঁড়ে গেছে। ব্যাগ ঘাড়ে নেয়া সম্ভব নয়। অগত্যা তড়িঘড়ি করে ব্যাগ মাথায় নিয়েই দৌড়াতে লাগলাম। প্রায় আধা মাইল দৌড়ানোর পর সামনে একটি উঁচু রাস্তার মত মনে হলো। রাস্তায় উঠে দেখি পাকা রাস্তা। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা ভরতখালি গাইবান্ধার রাস্তা। পাকা রাস্তার কিনারে বসে হাঁপাতে লাগলাম।

হাঁপাতে হাঁপাতে মনে মনে ভাবলাম, যাক বাবা বাঁচা গেল। এ লোক যদি সত্যি সত্যি আমায় দেখে ভয় পেয়ে থাকে, তাহলে বাড়ি গিয়ে অবশ্যই লোকজন ডেকে নিয়ে আসবে। আর এসে যদি আমার দেখা পায়, তাহলে প্রথমেই আমাকে আচ্ছা মতো অপমান করবে, নয় তো মারধোর দিয়ে ভয় পাওয়ার প্রতিশোধ নিয়ে নিবে। মনে মনে ভাবলাম দৌড়ে এসে অন্তত এই ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলাম।

রাস্তার পাশে বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর পূবাকাশে ফর্সা হলো। আমি ব্যাগ মাথায় নিয়ে উত্তর দিকে রওনা দিব এমন সময় দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে দেখি দূরে একটা রিক্সার মত দেখা যায়। ব্যাগ মাথা থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই রিক্সা কাছে চলে এলো। রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, সে গাইবান্ধা যাবে।
আমি বললাম, আমাকে একটু নেয়া যাবে?
-- কোথায় যাবেন?
-- মথুরার কাচারীর কাছে যাবো।
রিক্সাওয়ালা ডাবল ভাড়া চেয়ে বসল। কিছুতেই সে ভাড়া কমাবে না। সারা রাতের হাঁটাহাঁটি এবং সকালের খামাখা দৌড়াদৌড়ির কারণে খুব ক্লান্ত লাগছিল। অগত্যা ওই ভাড়াতেই রাজী হয়ে গেলাম।
রিক্সায় উঠে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, এটা কোন জায়গা?
রিক্সাওয়ালা বলল, এটা পদুম শহর। বলেই পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি কোথা থেকে আসতেছেন?
-- ঘাট থেকে।
-- যাবেন কই?
-- কাচারীর কাছে।
-- আপনি কাচারীর কাছে যাবেন তো এখানে আসছেন কেন?
-- রাতে পথ ভুলে এদিকে এসেছি।
-- আপনার তো নদীর ধার দিয়ে যাওয়ার কথা, আপনি এদিকে আসলেন কার সাথে?
-- আমার সাথে কেউ ছিল না, বিলের দক্ষিণ পার্শ্বে আসার পর দেখি রাস্তা দুইটা। একটা বিলের মাঝে চলে গেছে আরেকটা উত্তর দিকে চলে গেছে। উত্তর দিকের রাস্তা দিয়ে এসে আর কোন রাস্তা পেলাম না। তখন রাস্তার কুল কিনারা না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসে বেলা উঠার জন্য প্রায় দুই ঘন্টা হলো বসে আছি।
(চলবে--)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×