সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক ওপেন করতেই হোম পেজ এ দেখলাম সবার স্ট্যাটাস’এ ‘স্বাধীনতা দিবস-এর শুভেচ্ছা’র ছড়াছড়ি। এর মাঝে এক-দুই জন আবার ইংরেজিতেও লিখেছে, ‘হ্যাপি ইনডিপেন্ডেন্স ডে’...! [মনে মনে হাসলাম। গতরাতেই বন্ধুর সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গ এলো স্বাধীনতা দিবসের। ও বলছিলো, স্বাধীনতা দিবসটা এখন অনেক মানুষের কাছেই একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। এমনও হতে পারে, কেউ খুব ভাব নিয়ে বলবে একদিন, ‘হ্যাপি ইন্ডিপেন্ডেস ডে’। সকাল হতে না হতেই ওর কথা সত্যি হয়ে গেলো!]...একজন আবার স্বাধীনতার আনন্দে লিখে ফেলেছে ‘বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা’...পরে আবার ক্ষমাও প্রার্থনা করেছে কৌতুক করে। প্রোফাইল এর ছবি আজকের দিনের জন্য পালটে গেছে লাল-সবুজের পতাকায়। কাল কিংবা দুইটা দিন পর আবারও সব হয়ে যাবে প্রতিদিনের মতো। একটা দিন আজকে আমরা দেশের প্রেমে মত্ত থাকবো। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাবো, যেন এটা কারো জন্মদিন, কিংবা খুব ফুর্তিবাজি উৎসব। নতুন বছর শুভ হোক এটা আমরা ইচ্ছা করি, কারো জীবন শুভ হোক এটা আমরা ইচ্ছা করি। স্বাধীনতা দিবস’টা কী অর্থে শুভ হবার কামনা করা হয়??...কেন কেউ এভাবে বলে না, ‘আজ স্বাধীনতার আনন্দে স্বাধীন হয়ে যাও নিজের মনে...পাখির মতো...প্রকৃতির মতো!’......
আটত্রিশ বছর আগে দেশটাকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়েছিলো। দেশের মানুষ এখনো বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ কে নিয়ে। ইতিহাস পালটে যায়। জানা কথারা চোখের সামনে অজানা হয়ে যায়। দ্বন্দ্বে পড়ে যাই, আসলে কে সত্যি?...একটা অবশ অনুভূতি নিয়ে চলি। আমি জানি না, আমার দেশের সংগ্রামের, স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। আমি জানি না, কার কথা আমি বিশ্বাস করবো। আমি জানি না, কার কথার সত্যতা কোথায়। আমি আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকে কী শিক্ষা দেবো?
আমাদের দেশে রাজনীতি হয় স্বাধীনতা নিয়ে। সবাই নিজেকে দাবি করতে চায় ‘আমি দেশ স্বাধীন করেছি’। দেশের প্রতিটা মানুষ তখন যুদ্ধ করেছে। কেবল অস্ত্র হাতে মুক্তিসেনাদেরকেই আমরা যোদ্ধা বলবো কেন? বাঁচার জন্য, বাঁচানোর জন্য যেই মানুষগুলো জীবনের সাথে যুদ্ধ করেছে তখন, তাদের আমরা কেন দলে নেই না ? স্বাধীনতাকে ইস্যু করে কত সম্মান, কত পুরস্কার। এটা যেন কোনো প্রতিযোগিতা ছিলো, যেখানে ভালো পারফরমার’রা পুরস্কৃত হচ্ছে ! কেউ ভাবে কি, এতদিন পরও দেশটা কেবল কাগজে-কলমে স্বাধীন হয়েছে, বাস্তবিকভাবে তার হাত-পা এখনো বাঁধা। রক্ষিত সীমান্তে থেকেও বাংলাদেশ আজও অরক্ষিত। এখনো আমাদের স্বাধীনতাকে খুঁজে ফিরতে হয়। এখনো যুদ্ধাপরাধী, রাজাকাররা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় চোখের সামনে, আমরা কিছু করতে পারি না। বার বার তাদের বিচার চেয়ে যাই, বিচার হয় না। তাদের ক্ষমতার কাছে সরকারের, প্রশাসনের ক্ষমতা ম্রিয়মান। রাজনৈতিক দলগুলো, নেতারা ব্যক্তিগত কাঁদা ছোড়াছুড়ি আর স্বার্থ হাসিলেই ব্যস্ত, দেশের জন্য ভাবনাটা তাদের ‘ফর্মালিটি’...
আমি একদিনের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে বিশ্বাসী নই। ‘আজকের দিনটাতে আটত্রিশ বছর আগে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিলো’ এইটুকু মনে রেখে আমি ঘুম ভেঙ্গে উঠে মনে মনে একটা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে নেই, সেই অজানা ব্যক্তির উদ্দেশে, যে স্বাধীনতা’র প্রথম বাক্যটা উচ্চারণ করেছিলো। স্বাধীনতাকে আমিও খুঁজে ফিরি, দিনের পর দিন, প্রতিদিন। নিজের স্বাধীনতা নয়, দেশের স্বাধীনতা।
আমি নিজের কথা বলি। আমি স্বাধীন। আমার নিজের মাঝে, সমাজের মাঝে, পৃথিবীর মাঝে......নিজের মতো । কিন্তু আমার দেশ, আমার পৃথিবী কি স্বাধীন ? নিজের মাঝে , নিজের মতো করে ??