বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪২ বছরে যতটুকু উন্নতি হওয়ার কথা সেরকম উন্নতি হয় নাই। যার একমাত্র কারণ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। জন্মলগ্ন থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশ কখনো উন্নয়ন বান্ধব ছিল না। প্রায় প্রতিবার গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে সবাই মেতে উঠে এই অভাগা বাঙ্গালীর রক্তের হলি খেলায়। যতগুলো সরকার বিগত সময়ে ছিল সবাই দেশের উন্নয়নের বদলে বিরোধীদল দমনে বেশী মনযোগী ছিল। তাই সব মিলিয়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হয় নাই।
অনেকেই বলে অস্তিথিশীল কিন্তু আমি বলব অসুস্থ বা বাংলাদেশের ক্যান্সার। শুধু রাজনীতিই নয়, এই রাজনীতির সাথে থেকে আজ আমরাও অসুস্থ। আমাদের বিবেকবোধ, মানবিকতাও অনেকখানি খুঁয়ে বসেছি।
এই ক্ষেত্রে আমাদের দোষও কোন অংশে কম নয়, কারণ আমরা সবাই দুই পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছি। আমরাই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সচেষ্ট নয়। আমাদের ভাগ্য আমাদের হাতে আছে তারপরও দেখে শুনে বুঝে আমরাই আমাদের নিয়তিকে ঠেলে দেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। যার ফল আমরা বিগত দিনেও পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি এবং আবার বুঝে শুনে ভুল করলে সামনেও পেতে হবে।
বাংলাদেশের দেশীয় ও ধর্মীয় যত উৎসব আছে তার সাথে জাতীয় নির্বাচন নামক উৎসবটি যোগ করতে পারি। যে উৎসবে আমাদের চিন্তা চেতনা বিবেক ঘুমিয়ে থাকে খোলা থাকে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আর চোখ দুটি। চোখ দুটি দিয়ে মার্কা দেখবো আর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ভোট দিব। কোন চিন্তা বা বিচার বিবেচনার প্রয়োজন নাই। অনেকটা পাসওয়ার্ডের মত। রাজনীতির মাঠে হরতালের ঠিক আগের স্থানের উৎসব হচ্ছে নির্বাচন। আমাদের অনেক রাজনীতিবীদ তো স্পষ্টভাবে বলেন যে- নির্বাচনের জন্য উৎসবমুখর পরিবেশ নেই।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে খাওয়া সেরে উৎসব স্থলে গিয়ে মার্কা দেখে একটা ভোট দিয়ে আসা উৎসবের প্রধান কাজ। এরপর পারলে ঘরের বউকে কিলিয়ে ঘুসিয়ে ঐ মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা, এলাকার চায়ের দোকানে বসে উৎসব সম্পর্কে বক্তৃতা প্রধান করা , হেনতেন............
এক কথায় মূখ্য হচ্ছে মার্কা। যেটি আমাদের বর্তমান মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীও বলেন –
মার্কা দেখে ভোট দিন, প্রার্থী কোন ব্যাপার নয়।
আপনি কি সবাইকে গাধা হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী?? আপনি তালগাছ প্রার্থী দিলেও নৌকা দেখে ভোট দিতে বলছেন??? আপনাকে কিভাবে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ ভাবা যায় সেটা ভেবে দেখতে হবে।
যদিও আমার আগেই উনার নিজের ছেলে উনার ভুলটা শুধরে দিলেন। তথ্য যার কাছে আছে সেই জয় সাহেব বলেন – মার্কা টার্কা কিছুই নয়, যোগ্যতা দেখে ভোট দিন।
উনার বক্তব্যকে আমি ১০০০% সমর্থন করি। এখানেও একটা প্রশ্ন থেকে যায় –
জয় সাহেব, মনে করেন আপনাকে দেশের যে কোন এক নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে নিয়ে যাওয়া হল। গিয়ে দেখলেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীর চেয়ে জামায়াতের প্রার্থী হাজারগুণে যোগ্য। তখন আপনি কার পক্ষে প্রচারণা চালাবেন?????
তখনও আপনি কিন্তু আপনার আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা চালাবেন। তাহলে উপরের উক্তিটি কেন করলেন?? ভাল সাজতে??? নিজেকে জাহির করতে??
শুধু উনার দোষ না, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই কাজটিই করে। যোগ্যতা কোন ব্যাপার না, মার্কা মিলতে হবে। আগে মার্কা তারপর যোগ্যতা।
রাজনীদির শিখরে বসে যারা প্রার্থী বাছায় করেন উনারা তো ফান্ডে বা নিজের পকেটে বড় চাঁদা পেলেই মনোনয়ন দিয়ে বসেন। নয়ত গত দুই টার্মের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলো ক্যামনে মনোনয়ন পায়।
বাবর বা মখাদের মনোনয়ন দিয়ে মন্ত্রী বানানোটাও অপরাধ। ওদের জায়গায় পার্থ বা তাজ কোন দিক দিয়ে খারাপ ছিল না।
ফান্ডে চাঁদা আর মার্কা নিয়ে আমাদের নির্বাচন।
সত্যিকার অর্থে ভোট স্বাধীন মানুষের সেই যন্ত্র ও প্রতীক যা দ্বারা সে নিজেকে বোকা বানায় এবং দেশের বারোটা বাজায়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ যুবক-যুবতী ১৮ বছর বয়স কামনা করে ভোটার হতে নয়, প্রেমের লাইসেন্স পেতে, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যাতে ডজন খানেক সীম কেনা যায়। অথচ হওয়া উচিত ছিল উলটো।
হা আমরা ধীরগতিতে হলেও আর্থিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বিবেক চিন্তা চেতনা ও মানসিকতার দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি যার কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অসুস্থ রাজনীতিই দায়ী।
সুস্থ রাজনীতিতে ক্যান্সার বাঁধিয়ে ধীরে ধীরে বড় করছি আমরা।
হ্যাঁ আমরাই দায়ী যারা যোগ্যতা বিচার না করে মার্কা দেখে ভোট দিয়ে অযোগ্যদের হাতে দেশটা তুলে দিচ্ছি।
হ্যাঁ আমরা দায়ী যারা দেশের সাধারণ জনগণ বলে পরিচয় দিই।