ধারনা করা হয় দু থেকে চার লাখ বছর আগে মানুষ শুধু মাত্র আফ্রিকাতেই বসবাস করত। আফ্রিকা থেকে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগেছিল বেশ কিছু দিন। প্রশ্ন হল বড় দাদাদের হটাত অন্য মহাদেশে যাবার ঠেক পড়ল কেন? হতে পারে খাবারের অভাবে, পানির অভাবে, সংক্রামণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে, গোত্রপতি-কিংবা অন্য গোত্রের আক্রমণে কিংবা প্রেম করে পালিয়ে!
তবে অন্য মহাদেশে যাবার আগে নিশ্চিতভাবে মানুষ ছড়িয়ে পড়েছিলো আফ্রিকার বাকি অঞ্চলগুলোয়। সাউথ আফ্রিকার রাইজিং স্টার গুহার দেড়লাখ বছর আগেকার মানুষের তৈরি পাথরের অস্ত্র কিংবা ইথিওপিয়ায় পাওয়া মানুষের মাথার খুলি তাই প্রমাণ করে।
স্থলপথে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে যাবার পথ খুব বেশি নয়। সাহারা মরুভূমির জন্য ইউরোপে যাবার রাস্তা বন্ধই ছিল। সাড়ে তিন হাজারের বেশি বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত সাহারা পাড়ি দেয়া নিতান্তই অসম্ভব। তাহলে বাকি থাকল আরব অঞ্চলে যাবার পথ। ধারনা করা হয় দুটি ধাপে মানুষ আরবে পৌঁছেছিল।
[ছবি: আফ্রিকা থেকে বেরুবার পথ]
প্রথম ধাপে লোহিত সাগর হয়ে বর্তমান ইয়েমেন। এখনকার লোহিত সাগরের সবচেয়ে ক্ষীণ অংশের দৈর্ঘ্য আঠারো মাইলের মত। ধারনা করা হয় ৭০,০০০ থেকে ১,২৫,০০০ বছর আগে মানুষ আফ্রিকা থেকে এপথেই প্রথম আরব দেশে এসেছিলো।
আরেকটা পথ আছে মিশর হয়ে জর্ডান হয়ে বর্তমান সৌদি আরব।
তাহলে কি ধরে নেয়া যায় বর্তমান আরবরাই হল মেজদাদা! অনেকাংশে তাই। কেন ১০০% নয় কারণ আরেকদল মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সরাসরি চলে এসেছিলো আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জে ও এর আসে পাশে।
[ছবি: অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী (উপরে) এবং তামিল শিশুরা]
আরব একদল মানুষ সমুদ্রতীর ধরে চলে আসে দক্ষিণ এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। এদের বলা হয় অষ্ট্রেলয়েড। ধারনা করা হয় ৫০,০০০ বছর আগে এরা অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছিল। দেখুন না অস্ট্রেলিয়ার ভাইয়াদের সাথে তামিল দাদাদের চেহারার কেমন মিল! তবে আমাদের দেশেও এমন চেহারা বিরল নয়। আরেকটা মজার জিনিস হল ভাষাগত কিছু মিল এখনো রয়ে গেছে। যেমন ‘নগরাম’ শব্দটি তামিল এবং অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী দু ভাষাতেই আছে আর অর্থ এক ‘নগর/শহর’।
আরব থেকে একদল মানুষ চলে যায় উজবেকিস্তান কাজিকিস্তানের দিকে। কাজাকিস্তান থেকে এদের এক অংশ ভারত-নেপাল-মিয়ানমার হয়ে পূর্ব এশিয়ায় ( ছোট চোখ ভোতা নাকের চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন) আসে ৩৫,০০০ বছর আগে। এরা পরিচিত মঙ্গলয়েড নামে।
উজবেকিস্তান-কাজিকিস্তান-আরব থেকে আরেকদল ইউক্রেন-বেলারুশ হয়ে চলে যায় ইউরোপে। এরাই আজকের শাদা চামড়ার ইউরোপবাসী। ধারনা করা হয় সহস্র বছর ধরে উজবেকিস্তান কাজিকিস্তান থাকার সময় থেকে ঠাণ্ডায় রোদহীন পরিবেশে এদের গায়ের রং সাদা হতে শুরু করে। এরাই ককেশীয় নামে পরিচিত।
প্রায় ২৫,০০০ বছর আগে এশিয়ার কয়েকটি দল (মঙ্গোলিয়া, কাজিকিস্তান, চীন) রাশিরার পূর্ব প্রান্ত সাইবেরিয়া হয়ে চলে আসে উত্তর আমেরিকার। বর্তমানে আর ১৫,০০০ বছরের মাঝে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। আর তাই এদের চেহারার সাথে মঙ্গলয়েড/চৈনিক বংশোদ্ভূতদের সাদৃশ্য লক্ষণীয়। আমাদের কলম্বাস উত্তর আমেরিকায় গিয়ে এদেরই নাম দিয়েছিলেন রেড ইন্ডিয়ান।
[ছবি: আফ্রিকা থেকে সারা দুনিয়া]
আপাতত এগুলোকেই বলা যায় মানব সভ্যতার প্রথম যাত্রা। এর পরে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে গিয়েছে। দখল করেছে দেশ মহাদেশ। হাজার হাজার বছরের সে গল্পের খুব সাধারণ অংশই আমরা জানি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫২