পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের দলের অভিযোগ
।। ইত্তেফাক ডেস্ক ।।
নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) অভিযোগ-সেনাবাহিনী প্রধানকে রক্ষায় প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদবের অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপের নেপথ্যে প্রভাব খাটাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এদিকে সেনা প্রধান রুকমাঙ্গুদ কাতাওয়ালকে বরখাস্ত করা নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মত বিরোধের জের হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডের গত সোমবার পদত্যাগের ঘটনায় দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েকটি দল। খবর-এপি, এএফপি, আনন্দ বাজার পত্রিকা ও রয়টার্সের।
প্রচণ্ডের দল নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র নেতা বাবুরাম ভট্টরাই অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছেন। জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় মাওবাদী নেতা প্রচণ্ডও বলেছেন, বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নিচু করে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে ইস্তফাই শ্রেয়।
প্রচণ্ডের পদত্যাগের পরেই নেপালের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। মাওবাদীরা যদিও জানিয়েছে, সরকার ছাড়লেও শান্তি ও গণতন্ত্রের পথেই তারা আন্দোলন চালাবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা বাহাদুর রায়ামাঝি বলেছেন, ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ ঘটিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। ‘আদালতে, রাস্তা ও সংসদে’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলবে মাওবাদীরা। কিন্তু তাদের এই শান্তিপ্রিয়তায় ভরসা রাখতে নারাজ রাজনৈতিক মহল। হিংসাত্মক আন্দোলনে নেপাল ফের রক্তাক্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন তারা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি অবশ্য প্রচণ্ডের ইস্তফাকে নেপালের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। প্রতিবেশী এই দেশের অশান্তি দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তার ভাষায়, স্বাভাবিকভাবেই ভারত চাইছে রাজনৈতিক শূন্যতা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নেপালে নতুন একটি অর্ন্তবর্তী সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব গ্রহণ করুক।
উল্লেখ্য, নেপালের সেনাবাহিনীতে মাওবাদী জঙ্গিদের নিয়োগের বিষয়টি নিয়েই সংঘাতের সূচনা। শান্তি প্রক্রিয়ার শর্ত মেনে গেরিলারা বহুদিন আগেই অস্ত্র সমর্পণ করে জাতিসংঘের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তাদের নিয়োগ নিয়ে সেনারা গড়িমসি করে চলেছে বলে অভিযোগ। নেপালের সেনাবাহিনীতে প্রাক্তন জঙ্গিদের নিয়োগের বিষয়ে ভারতেরও অমত রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন একাধিকবার কাঠমান্ডু সফরের সময় কাজে বিরত থাকার জন্য প্রচন্ডের কাছে আবেদন জানিয়ে যান। কিন্তু প্রচন্ডকে টলানো যায়নি।
এদিকে প্রচন্ডের ইস্তফার পরই ইউএমএল-এর নেতৃত্বে সরকার গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ১১২টি আসন নিয়ে গণপরিষদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল নেপালি কংগ্রেস সরকারের নেতৃত্ব নিতে রাজি না হলেও ইউএমএলকে শর্তাধীন সমর্থনে রাজি হয়েছে। গণপরিষদে ইউএমএল-এর ১০৮টি আসন রয়েছে। কিন্তু মাওবাদীদের বাদ দিয়ে কোনভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৩০১টি আসন তাদের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। টেলিভিশনে প্রচন্ডের ইস্তফা ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার কাঠমন্ডুর রাজপথে মাওবাদীরা বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না।
মধ্যবামপন্থী ইউএমএল পার্টি প্রধান ঈশ্বর পোখরেল বলেন, নতুন সরকার গঠনে আমরা জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠন করবো। তবে পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন, মাতবাদীদের বাদ দিয়ে নেপালি কংগ্রেস ও ইউএমএল সরকার গঠন কতে চাইলে ক্ষুদ্র জাতিগত দলগুলো ছাড়াও স্বতন্ত্র সদস্যদের সমর্থন পেতে বেগ পেতে হতে পারে। কূটনীতিকরা বলছেন, এতে করে নেপালের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ফের জটিলতার দিকে যেতে পারে। কারণ রাজতন্ত্রের অবসান হলেও দেশটির সংবিধান প্রণীত হয়নি এখনও।
লিংকঃ
Click This Link
প্রতিবেশী তো এমনই হয় কি বলেন ??
আমরাও তার প্রতিবেশী কিনা তাই আমাদেরও একই অবস্থা