বাবা,যখন বাড়ী ফিরলেন-
খড়খড়া গ্রীষ্মের ভর দুপুরে
বড় শহর থেকে ডাক্তার দেখিয়ে,
আমরা ছোটরা কিছু বুঝি, কিছু বুঝিনা বাছারা
কী নিদারুন উতকন্টায় ছিলাম।
বাবার কিছুই হয়নিতো,প্রিয় বাবার কিছু হয়নিতো।
আর হঠাত করেই আকাশ এমন ছাইয়ের মতো মেঘলা হলো কেন।
বাবা,উঠোনে পা রাখেন।
আমরা কেউ বাবার হাত,
কেউ বাবার শাদা পান্জাবির আস্তিন জড়িয়ে
বাবাকে চেয়ার বসাই।
আজ থেকে ঠিক দুমাস পরে,
আমার যে বোনটির প্রথম সন্তান হবে,
যে ভালোবেসে তার সহপাঠীকে বিয়ে করেছিলো,
সে আবার চোরারাজনীতির ,চোরাগলির,চোরাবালিতে
ধূম করে একদিন মারা গেলো,
যার বউ হলো বিধবা,আর অনাগত সন্তান হলো পিতাহীন।
সে বাবার জন্য ঠান্ডা লেবু জল নিয়ে আসে।
বাবা,চুমুকেই সব শেষ করে বলেন-আহ!
আমরা সবাই বলি, আহাঃ বাবা কী শিশু!
বাবা, বলেন-তোমরা খামোকা চিন্তা করো।
ডাক্তার বলেছেন-
অতি গরমের চাপে শুধু একটু বায়ুছড়া হয়েছিলো,আর কিছু না।
আমাদের নিশ্চিন্ত করে বাবা মিটিমিটি হাসেন।
বাবার হাসি দেখে ,আমরা আবারো বলি, আহা,বাবা কী শিশু!
আমাদের ছোট শিশু কিন্তু বুড়ো শিশুকে পেয়েছেলো মাত্র চারমাস।
বিদায়ের সব আয়োজন শেষ হয়।
বোনের ছোট বাবুটি বড় হতে থাকে।
আর বোনের মাথায় শুধু চিন্তা পিতাহীন বাবুর বেড়ে ওঠা।
কী হবে?কী হবে?
একদিন রমিজ চাচা বাড়ী আসেন।
যিনি বাবাকে শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলেন।
ছোট বাবুকে কোলে তুলে নেন।
আর তার ছোট ব্যাগ থেকে ডাক্তারি কিছু কাগজ ,
আর কিছু ছবি বের করেন।
যে ছবির কিছুই আমরা বুঝিনা,
শুধু দেখি-
কালোর ভিতর আলো লুকানো।
সবাই শুধু চাচার পানে চেয়ে থাকি।
চাচা, বলেন-ভাইজানের প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার হয়েছিলো।
ডাক্তার বলেছিলো-লাখ দশেক টাকা হলে চিকিতসা হতে পারে ।
তারপরেই ভাইজান, আমাকে নিয়ে বাড়ী ফিরেন।
আর শপথ করান,তোমাদের কাউকে কিছু না জানাতে।
চাচা, এবার আর কিছু কাগজ বের করেন।
আমাদের দীর্ঘশ্বাস প্রলম্বিত হয়।
মায়ের চোখে অশ্রুদানা,বোনের মুখে শাদা আঁচল।
বাবার স্নেহ চারপাশে ভাসতে থাকে।
চাচার হাতে ব্যাংক একাউন্টের কিছু কাগজ।
সেখানে আমাদের ছোট বাবুর নাম লিখা।
বাবা ,তার রিটায়মেন্টের পুরো দশলাখ টাকা বাবুর একাউন্টে জমা করে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারি, সবাইকে বোকা বানিয়ে বাবা কোথাও মিটিমিটি হাসছেন।
আর বুঝি, ছবির মতো-
শত কালো মানুষের ভীড়ে বাবা আলো হয়ে লুকিয়ে আছেন।