somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চামচিকা হয়ে যখন জীবন উপভোগ করি /বিহংগ।

২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শনের ছায়ায়,মখমলিয় ঘাসের তুলতুলিয় আসনে সমাসিন মাননীয় ব্যাঘ্র দিবা সূর্য্য চোখের ভিতর বসিয়ে হুংকার ছাড়েন। হুংকার ছাড়তেই পারেন-ক্ষমতা থাকবে আর আমাজনিয় ক্ষুধা থাকবেনা-এমন গর্হিত গরমিল তো ক্ষমতাবানদের হতে পারেনা।মহাশয়ের হুংকারে বনবিড়াল,আর শিয়ালের ত্রাহি লেজে হিসু অবস্থা। মহাশয়ের মহাদেশ শিরোধার্য্য। খাদ্য ভান্ডারের আদেশ দিয়ে ব্যাঘ্র মহাশয় গোঁফে আরাম করে তা দেন।
কিয়দপরে, ব্যাঘ্র দরবারে প্রজাসীন বনবিড়াল,শিয়াল হাজির।
বনবিড়াল কয়েকটি মুরগি বাদশাহ সমীপে এগিয়ে দেয়। শাহানশাহ খুবই পুলকিত হন।জিহ্বা দিয়ে ওস্ঠ লালায়িত করেন।স্নেহের পরশে বিড়ালকে স্নেহসিক্ত করেন।এবার পরামর্শ করেন-বলতো বিড়াল-এ মুরগীগুলো কেমন করে বন্টন করা যায়।
মহাশয়ের স্নেহের আধিক্যে বিগলিত বিড়াল বুকে একটু সাহস নিয়ে বলে-মহাশয় জীবন মানেই ক্ষুধা।আপনারও পেট আছে,আমাদেরও আছে। তাই বলি কি,পাঁচটি মুরগীর চারটিই আপনি খান। আর একটি আমি ,আমার বউ,আর সন্তানরা মিলে পেটের আগুন শীতল করি।
অতি নিরীহ বিড়ালের কথা শেষ হয়না-ব্যাঘ্র মহাশয়ের স্নেহের হাত এবার গজার কাঠ বিদীর্ন করা করাতের মতো তার গাড়ে গিয়ে পড়ে।
এবার শিয়ালের পালা।ধরে আনা ছাগলটা জাহাপনার দিকে এগিয়ে দেয়।
ব্যাঘ্র মহাশয়, স্নেহের হাত রাখেন শিয়ালের উপর।জিহ্বা চুকচুক করে বলেন-বলতো শিয়াল, খাবারগুলো কেমন করে বন্টন করা যায়।
শিয়াল বলে-মহাশয় এখানে বন্টনের কিছুই নাই। আপনি বয়সে, ওজনে,শরীরে, শিক্ষায়, বিচারে,গুনে কতবড়ো। আপনি যদি না থাকেনতো এই বনের ঐতিহ্য , অহংকার,মান সম্মান কিছুই রইলোনা। আপনাকে আমাদের মংগলে প্রতিনিয়ত অনেক চিন্তা করতে হয়। আর যতবেশী প্রজাদের চিন্তা আপনি করবেন আপনার ততবেশী ক্ষুধা হবে। আপনার সব ক্ষুধা নিবাড়নের দায়িত্ব আমাদের। তাই, বিড়ালের আনা মুরগীগুলো সকালে আপনি প্রাতঃরাশ হিসাবে খাবেন, ছাগলের চারটি পা দিয়ে আপনি দুপুরে লান্চ করে একটা ভাত ঘুম দিবেন, কারন আপনি যদি আরামের ঘুম
না দেন তাহলে প্রজাসাধারনের জন্য সুচিন্তা কেমনে করবেন। আর রাতে ছাগলের অবশিষ্ট দেহ আর মাথা খেয়ে রাতের ঘুম দিবেন।
ব্যাঘ্র মহাশয় বড়ই পুলকিত হন শিয়ালের উপর। জিগ্গাসা করেন-আসলেই তোমার মগজ অনেক তীক্ষ্ণ। শুধু জানতে চাই-এরকম সুষম খাবার বন্টন শিখলে কেমন করে।
শিয়াল বলে- মহাশয়,শিখার কি কিছুই আছে।সব আপনার দয়া, নিজের চোখের সামনেইতো বিড়ালের ভাংগা গর্দান দেখতে পাচ্ছি।
যখন কোনো জলপাইয়ের সামনে যাই,
আপন অধিকার আদায়ে,
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হয়ে পেনশনের টাকার জন্য
কোনো আমলার সামনে ,
অখ্যাত লেখক হয়ে ,কোনো প্রথিতযশা সম্পাদকের টেবিলে,
গার্মেন্টসের ষোলঘন্টা হাড়ভাংগা খাটুনি শেষে যখন,
স্ফিত চর্বির নাদুস নুদুস কোনো মালিকের সামনে ,
কিংবা সদরঘাট লন্চের কোনো টিকেট,
সরকারী রেলের একটা আসন,
হলের একটি সীটের জন্য কোনা নেতার সামনে,
পরীক্ষা পাশের কোনো সার্টিফিকেটের জন্য,সরকারী দফতরে,
নিজের ঘামে উপার্জিত টাকায় দুকেজি চালের জন্য,
কোনো আড়তদারের দোকানে,
জমির সারের জন্য কোনো ডিলারের সামনে,অথবা
অক্ষম পুত্র হয়ে-
মুমুর্ষু পিতাকে সরকারী হাসপাতালে ভর্তির কোনো মিনতি নিয়ে
চেয়ারে বসা লোকটির সামনে যাই-
ঠিক তখনি গল্পটি আমার মনে আসে,
মনে হয় পৃথিবীতে কত ক্ষুধা,-ভোগের ক্ষুধা, টাকার ক্ষুধা,অহংকারের ক্ষুধা,ক্ষমতার ক্ষুধা, যশের ক্ষুধা, মোহের ক্ষুধা,প্রতিপত্তির ক্ষুধা,
উপরির ক্ষুধা,আপন চেয়ারকে চিরস্থায়ী করার ক্ষুধা।
তাতে ,চামচিকার মতো আমাদের কোনো কিছুই করার নেয়।
আর বুকে সাহস নিয়ে যখন ন্যুনতম অধিকারের কথা বলতে চাই-
ঠিক তখনি- নিজের অজান্তেই হাতটি আমার আপন গর্দানের পাশে চলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:২৯
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চোখ, অভিজ্ঞতা আর হৃদয়—শি জিনপিংয়ের জীবনের তিন পাঠ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৮


আমার জীবনে যে তিনটি শিক্ষা আমাকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে, সেগুলো আমি পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। তিনটি রাতের তিনটি ন্যুডলসের থালা আর তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা জীবনের অমূল্য সত্যগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অন্ধকারাচ্ছন্ন আগামী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২০ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:২৯

গেলো কদিন যমুনা , কাকরাইল মোড় , শাহবাগ , নগরভবন মিলিয়ে যে হাউকাউ সৃষ্টি হয়েছে যা অপ্রত্যাশিত । কি হবে আমাদের , দেশের ?? কি মনে হয় ব্লগারগন ? প্রকাশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ তার সাথে দেখা হবে কবে

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৪

ছবিঃনেট


দুপুরবেলা শপিংমলটা প্রায় খালি চুপচাপ, সবাই যে যার মত লাঞ্চ করতে গিয়েছে। এসির ঠান্ডা বাতাস থাকতেও একরকম অলস গরমের আস্তরণ লেগে আছে চারপাশে। কাঁচের দেয়ালের ওপাশে রোদের ঝলকানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার ' জানা ' এখন কেমন আছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫১


ব্লগার 'জানা' সবশেষ যখন সামুতে লিখেছিলেন তখন ব্লগে আমার নিকের অস্তিত্ব ছিলো না। প্রায় একবছর পাঁচ দিন গত হয়েছে উনার নতুন কোনো ব্লগ সামুতে আসেনি। বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতা না নৈতিকতা: ইশরাক হোসেন ও বিএনপির সামনে আসল চ্যালেঞ্জ কী?

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ১:১৮


সম্প্রতি আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচন অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সামনে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। আদালতের রায় তাঁর পক্ষে গেলেও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×