শনের ছায়ায়,মখমলিয় ঘাসের তুলতুলিয় আসনে সমাসিন মাননীয় ব্যাঘ্র দিবা সূর্য্য চোখের ভিতর বসিয়ে হুংকার ছাড়েন। হুংকার ছাড়তেই পারেন-ক্ষমতা থাকবে আর আমাজনিয় ক্ষুধা থাকবেনা-এমন গর্হিত গরমিল তো ক্ষমতাবানদের হতে পারেনা।মহাশয়ের হুংকারে বনবিড়াল,আর শিয়ালের ত্রাহি লেজে হিসু অবস্থা। মহাশয়ের মহাদেশ শিরোধার্য্য। খাদ্য ভান্ডারের আদেশ দিয়ে ব্যাঘ্র মহাশয় গোঁফে আরাম করে তা দেন।
কিয়দপরে, ব্যাঘ্র দরবারে প্রজাসীন বনবিড়াল,শিয়াল হাজির।
বনবিড়াল কয়েকটি মুরগি বাদশাহ সমীপে এগিয়ে দেয়। শাহানশাহ খুবই পুলকিত হন।জিহ্বা দিয়ে ওস্ঠ লালায়িত করেন।স্নেহের পরশে বিড়ালকে স্নেহসিক্ত করেন।এবার পরামর্শ করেন-বলতো বিড়াল-এ মুরগীগুলো কেমন করে বন্টন করা যায়।
মহাশয়ের স্নেহের আধিক্যে বিগলিত বিড়াল বুকে একটু সাহস নিয়ে বলে-মহাশয় জীবন মানেই ক্ষুধা।আপনারও পেট আছে,আমাদেরও আছে। তাই বলি কি,পাঁচটি মুরগীর চারটিই আপনি খান। আর একটি আমি ,আমার বউ,আর সন্তানরা মিলে পেটের আগুন শীতল করি।
অতি নিরীহ বিড়ালের কথা শেষ হয়না-ব্যাঘ্র মহাশয়ের স্নেহের হাত এবার গজার কাঠ বিদীর্ন করা করাতের মতো তার গাড়ে গিয়ে পড়ে।
এবার শিয়ালের পালা।ধরে আনা ছাগলটা জাহাপনার দিকে এগিয়ে দেয়।
ব্যাঘ্র মহাশয়, স্নেহের হাত রাখেন শিয়ালের উপর।জিহ্বা চুকচুক করে বলেন-বলতো শিয়াল, খাবারগুলো কেমন করে বন্টন করা যায়।
শিয়াল বলে-মহাশয় এখানে বন্টনের কিছুই নাই। আপনি বয়সে, ওজনে,শরীরে, শিক্ষায়, বিচারে,গুনে কতবড়ো। আপনি যদি না থাকেনতো এই বনের ঐতিহ্য , অহংকার,মান সম্মান কিছুই রইলোনা। আপনাকে আমাদের মংগলে প্রতিনিয়ত অনেক চিন্তা করতে হয়। আর যতবেশী প্রজাদের চিন্তা আপনি করবেন আপনার ততবেশী ক্ষুধা হবে। আপনার সব ক্ষুধা নিবাড়নের দায়িত্ব আমাদের। তাই, বিড়ালের আনা মুরগীগুলো সকালে আপনি প্রাতঃরাশ হিসাবে খাবেন, ছাগলের চারটি পা দিয়ে আপনি দুপুরে লান্চ করে একটা ভাত ঘুম দিবেন, কারন আপনি যদি আরামের ঘুম
না দেন তাহলে প্রজাসাধারনের জন্য সুচিন্তা কেমনে করবেন। আর রাতে ছাগলের অবশিষ্ট দেহ আর মাথা খেয়ে রাতের ঘুম দিবেন।
ব্যাঘ্র মহাশয় বড়ই পুলকিত হন শিয়ালের উপর। জিগ্গাসা করেন-আসলেই তোমার মগজ অনেক তীক্ষ্ণ। শুধু জানতে চাই-এরকম সুষম খাবার বন্টন শিখলে কেমন করে।
শিয়াল বলে- মহাশয়,শিখার কি কিছুই আছে।সব আপনার দয়া, নিজের চোখের সামনেইতো বিড়ালের ভাংগা গর্দান দেখতে পাচ্ছি।
যখন কোনো জলপাইয়ের সামনে যাই,
আপন অধিকার আদায়ে,
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হয়ে পেনশনের টাকার জন্য
কোনো আমলার সামনে ,
অখ্যাত লেখক হয়ে ,কোনো প্রথিতযশা সম্পাদকের টেবিলে,
গার্মেন্টসের ষোলঘন্টা হাড়ভাংগা খাটুনি শেষে যখন,
স্ফিত চর্বির নাদুস নুদুস কোনো মালিকের সামনে ,
কিংবা সদরঘাট লন্চের কোনো টিকেট,
সরকারী রেলের একটা আসন,
হলের একটি সীটের জন্য কোনা নেতার সামনে,
পরীক্ষা পাশের কোনো সার্টিফিকেটের জন্য,সরকারী দফতরে,
নিজের ঘামে উপার্জিত টাকায় দুকেজি চালের জন্য,
কোনো আড়তদারের দোকানে,
জমির সারের জন্য কোনো ডিলারের সামনে,অথবা
অক্ষম পুত্র হয়ে-
মুমুর্ষু পিতাকে সরকারী হাসপাতালে ভর্তির কোনো মিনতি নিয়ে
চেয়ারে বসা লোকটির সামনে যাই-
ঠিক তখনি গল্পটি আমার মনে আসে,
মনে হয় পৃথিবীতে কত ক্ষুধা,-ভোগের ক্ষুধা, টাকার ক্ষুধা,অহংকারের ক্ষুধা,ক্ষমতার ক্ষুধা, যশের ক্ষুধা, মোহের ক্ষুধা,প্রতিপত্তির ক্ষুধা,
উপরির ক্ষুধা,আপন চেয়ারকে চিরস্থায়ী করার ক্ষুধা।
তাতে ,চামচিকার মতো আমাদের কোনো কিছুই করার নেয়।
আর বুকে সাহস নিয়ে যখন ন্যুনতম অধিকারের কথা বলতে চাই-
ঠিক তখনি- নিজের অজান্তেই হাতটি আমার আপন গর্দানের পাশে চলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:২৯