চারেদিকে সাজ সাজ রব, মা আসছে তার বাবার বাড়ী। প্রতি বছর আশ্বিন এর শুক্লপক্ষ এই তিথীতে মা তার বাবার বাড়ী আসে। গোটা পৃথিবীটা সাজছে নতুন রুপে, চারেদিক এ উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আকাশে শরতের সাদা মেঘ, কাশবন সেজেছে ফুলে ফুলে, এ যেন এক অপরুপ দৃশ্য।
এ দুর্গোৎসব হল বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। দুর্গাপূজা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্গত একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকলেও, এটি বাঙালিদের বৃহত্তম উৎসব হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এই উৎসবের জাঁকজমক সর্বাধিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ও বিশেষ উৎসাহে এই উৎসব পালন করে থাকে। বর্তমানকালে পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কর্মসূত্রে অবস্থান করেন, সেখানেও মহাসমারোহে দুর্গোৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। এই কারণে সারা বিশ্বের কাছেই বর্তমানে বাংলার অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে দুর্গোৎসব।
কথিত আছে যে, পুরাকালে দেবতাদেরকে মহিষাসুর স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। স্বর্গের দেবতারা একজোট হয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার হও্য়ার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর মহেশ্বর সরনাপন্ন হন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর মহেশ্বর বুদ্ধিতে স্বর্গের দেবতাদের মিলিত শক্তি থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা। দুর্গতি থেকে ত্রাণের জন্য দেবতাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রমূর্ত রূপে প্রকাশ পায় দেবী দুর্গার প্রতীকে।
আমরা ধর্মগ্রন্থ পুরাণে দেখি, শক্তির দ্বারা অসুরকে অন্যায়কে অত্যাচারকে অশুভকে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুগে যুগে। শক্তির দেবীর হাতে ভয়ঙ্কর অসুরদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শান্তি ও কল্যাণ- পুরাণে বিভিন্ন উপাখ্যানে আমরা একথার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই।
শারদীয়া দুর্গাপূজাকে "অকালবোধন" বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় "অকালবোধন"। এই দুই পুরাণ অনুসারে, রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামায়ণে লিখেছেন, রাম স্বয়ং দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। এই জন্য স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে শরৎকালে দুর্গাপূজার বিধান দেওয়া হয়েছে। হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে, "...অকালবোধন শরতে বৈদিক যজ্ঞের আধুনিক রূপায়ণ ছাড়া আর কিছুই না।
[সোর্সঃ উইকিপিডিয়া/wiki/দুর্গাপূজা]
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীর আবির্ভাব হয়, এরপর দুর্গাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হয়, এবং বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই সার্বজনীন দুর্গোতসব।
তাই দশমী তিথিতে পূজার এক পর্যায়ে উচ্চারিত হয় এই মন্ত্র :
ওঁ গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং য দেবো মহেশ্বরঃ।
সংবৎসরব্যতীতে তু পুনরাগমনায় চ ॥
-হে দেবী তুমি দেব মহেশ্বর যেখানে আছেন, সেই স্বামীর ঘরে ফিরে যাও। এক বছর পর আবার আসবে, সেই সময়ের প্রতীক্ষায় বুক বেঁধে রইলাম।
মা তার বাবার বাড়ি বেরানো শেষে সবার সুখ-শান্তি কামনা করে ফিরে যাবেন তার আপনালয়, তার স্বামীর বাড়ীতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯